খুঁজুন
বুধবার, ৭ মে, ২০২৫, ২৪ বৈশাখ, ১৪৩২

আওয়ামী পন্থী হিসেবে পরিচিত তিনি

বিতর্কিত নির্মাতা ফারুকী হলেন উপদেষ্টা, সমালোচনার ঝড়

মোঃ হাসানুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সোমবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৪, ৩:০৮ অপরাহ্ণ
বিতর্কিত নির্মাতা ফারুকী হলেন উপদেষ্টা, সমালোচনার ঝড়

সাবেক স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার শাসনামলে রীতিমতো নাজেহাল দেশ ও দেশের মানুষ। আইসিইউতে থাকা রোগীর মতো দেশের অবস্থাও যখন করুণ। তখন বাধ্য হয়ে রাজপথে নামে এদেশের ছাত্র জনতা। অবশেষে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সর্বাত্নক আন্দোলনে যুগান্তকারী পতন ঘটে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার। লেজ গুটিয়ে ভারতে পালিয়ে গেলেও শেখ হাসিনার পেতাত্নারা এখনো দেশে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর তার সাথে যোগ হয়েছে ড.ইউনুসের বিতর্কিত উপদেষ্টা পরিষদ। কারণ যারা স্বৈরাচারের দোসর, আওয়ামী পন্থী হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত, তাদেরকেই আশ্রয় দেয়া হচ্ছে এই রঙ্গমঞ্চের চেয়ারে। নতুন করে যোগ হয়েছে ফ্যাসিস্ট হাসিনার অন্যতম চাটুকার বহুল বিতর্কিত নাট্য নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

ইতিপূর্বেও আসিফ নজরুল সহ অনেককে নিয়েই বিতর্ক রয়েছে। তার মধ্যেই বিতর্কের নতুন সংস্করণ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠিত এজেন্ট ফারুকী। কারণ বিন্দুমাত্র যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও অনেকটা ম্যাজিক দেখিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে জায়গা করে নিয়েছে বিতর্কিত নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। রবিবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর বঙ্গভবনে শপথ নেন তিনি। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় এই নাট্য নির্মাতাকে। তবে তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন মহলে শুরু হয়েছে তুমুল সমালোচনা। এমনকি ফারুকীকে উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়ায় সমালোচনা হচ্ছে সরকারেরও।

এরইমধ্যে বিতর্কিত ফারুকীকে উপদেষ্টা পদ থেকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত বিভিন্নজনের অভিযোগ, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে উপদেষ্টা করা গণঅভ্যুত্থানে নিহত সকল শহীদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। তার মতো নেহাত অযোগ্য, বিতর্কিত লোকটি কিভাবে এমন বিপ্লবী সরকারে যায়গা পায়, এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।

ফারুকীকে নিয়ে মানুষের ক্ষোভের কারণ কী?

অনুসন্ধানে জানা যায়, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বিভিন্ন সময় তার লেখনী ও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার গুণগান করেছেন। সংগত কারণেই বিগত বছরগুলোতে ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রিয়ভাজন ছিলেন তিনি। এই সুবাদে সরকারের বিভিন্ন সুবিধাও গ্রহণ করেছেন তিনি। ফারুকীর বিভিন্ন চাটুকার, বিতর্কিত নাটক, সিনেমাই তার প্রমাণ।

শুধু তিনিই নন, তার গুণধর স্ত্রী অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশাও গ্রহণ করেছেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নানা সুবিধা। যার ফলে অনেকেই ক্ষুব্ধ তাদের ওপর। আর উপদেষ্টা হাওয়ায় সকলের ক্ষোভের মাত্রা এখন বিপদ সীমার বাইরে বলা যায়।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ফারুকীকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি ফারুকীর উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন। প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া লিখেছেন, ‘রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড ফাজলামো না, এটা বোঝার মত কাণ্ডজ্ঞান থাকা উচিত। ফারুকী উপদেষ্টা হওয়ার কোন প্রকারের যোগ্যতা রাখেন না। এতটা বছর লীগের আস্থাভাজন থেকে কাজ পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে গেছেন তিনি। ফ্যাসিবাদ একদিনে তৈরি হয় না, চুপ থেকে সমর্থন করার মধ্যেও ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়। এরকম প্রমাণ আরো অনেকের বিরুদ্ধেই আছে। প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনার জামিন সংক্রান্ত ভেতরের খবর আলাপ করলে অনেকের কাপড় খুলে যাবে।’

অনুসন্ধান বলছে, ফারুকী নিজেকে ‘বঙ্গবন্ধুর ভক্ত’ হিসেবে বিভিন্ন লেখায় তুলে ধরেছেন। এমনকি প্রথম আলো পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে তাকে তার সবচেয়ে প্রিয় একটি বইয়ের কথা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইয়ের কথা উল্লেখ করেছিলেন। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার প্রিয় বই অনেক। কিন্তু এখানে যেহেতু একটা বইকে বেছে নিতে হবে, সেহেতু বলব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর কথা। এটি প্রথম পড়েছিলাম বের হওয়ার পরপরই। কিছুদিন আগে একটা কাজে আবার পড়তে হয়েছে। বইটি আমার খুবই প্রিয়। কারণ, এটি আমার নিজেকে চিনতে সাহায্য করেছে। বাংলাদেশের ডিসকোর্সটা কী, কোথা থেকে কেমন করে আমরা এলাম, তার উত্তর আছে এই অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে। আর এ বইয়ের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো বঙ্গবন্ধুর ভণিতাহীন বর্ণনা।’ এ ছাড়াও বিভিন্ন লেখায়, বক্তব্যে ফেসবুক পোস্টে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নিজের মুগ্ধতার কথা প্রকাশ করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার একনায়কতন্ত্রে দেশের মানুষের যখন নাভিশ্বাস। তখন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে নিয়েও অসংখ্যবার বিভিন্ন লেখায়, বক্তব্যে ফেইসবুক পোস্টে প্রশংসা করেছেন ফারুকী। শেখ হাসিনার লেখা ‘শেখ ফজিলাতুন নেছা— আমার মা’ শিরোনামে লেখার প্রশংসা করে তিনি রিভিউ পোস্ট করেছেন। সেখানে ফারুকী উল্লেখ করেছেন, ‘ইতিহাস বেশির ভাগ সময় বিজয়ী এবং পুরুষের চোখেই লেখা হয়। শেখ হাসিনার এই লেখাটায় একটা ভিন্ন জানালা দিয়ে আমাদের ইতিহাসটাকে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। খুবই ইন্টারেস্টিং পার্সপেক্টিভ। পড়তে পড়তে অনেক জায়গায় আমার নিজের মাকে দেখতে পেয়েছি, নানাকে দেখতে পেয়েছি, মায়ের সংগ্রাম দেখতে পেয়েছি, বাবাকে দেখতে পেয়েছি। পার্থক্য হইলো, বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক কারণে কয়দিন পরপর জেলে যাইতেন আর আমার বাবা ব্যবসায় ধরা খাইতেন। দুই সময়ই বিরুদ্ধ স্রোতের মুখে সিনা টান করে তরী সামলাইতেন ‘মা’। বাঙলার বধূ এবং মায়েদের ইতিহাস বোধ হয় সবকালেই এক। দল-মত-নির্বিশেষে পড়তে পারেন।’

ফেইসবুকে অসংখ্যবার তিনি আওয়ামী লীগ সকারের প্রশংসা করে পোস্ট করেছেন। পতিত সকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রশংসা করে ও ছবি দিয়ে প্রায়শই ফেইসবুকে পোস্ট করতেন ফারুকী। এমন অসংখ্য পোস্ট এখন ফেইসবুকে ঘুরছে, চলছে তিব্র সমালোচনা।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বিরুদ্ধে বিতর্ক, সমালোচনা, চাটুকারিতা, দালালির ডায়েরিটা বৃহৎ। বিগত সময়ে স্বৈরাচারী আ’লীগের ভোট চুরির নির্বাচন ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ করার অভিযোগ রয়েছে অনেক আগে থেকেই। এ সম্পর্কিত একটি পোস্ট ভাইরাল হয় ফেইসবুকে। প্রায় ২ হাজার লাইকের এই পোস্টে উল্লেখ আছে, সাবেক মেয়র আনিসুল হকের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে ফারুকীর সংশ্লিষ্টতা। পোস্টে ফারুকীকে উপদেষ্টা বানানো জুলাই বিপ্লবের সাথে প্রতারণা বলেও উল্লেখ রয়েছে। আর পোস্টকারীর পরিচয় হলো আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা সাদিকুর রহমান খান। ফেসবুকে তার প্রায় ১ লক্ষ ফলোয়ার রয়েছে।

সাদিকুর রহমান তার ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, “ভোট চুরি করে মেয়র হওয়া আনিসুল হকের পক্ষে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন করেছিলেন ফারুকী। ‘মুজিব’ সিনেমায় অভিনয় করার জন্য আরেফিন শুভর প্লট বাতিল হলো। অথচ ফারুকীর বউ নিজেও তো প্লট পেয়েছিলেন। তিনিও মুজিব মুভির অভিনেত্রী। তার প্লট তো বাতিল হয়নি কেন?’

ওই পোস্টে আরও লেখা হয়েছে, ‘বিপ্লবের পরেও ফারুকী ৬ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ড. ইউনূসকে এসে দেখে যেতে বলেছিলেন, এবং বাড়িটি মেরামত ও জাদুঘরও চালু করতে বলেছিলেন ফারুকী। সেই ফারুকীকেই যদি মন্ত্রী করা হয়, তাহলে রাজপথে আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদকেও ছেড়ে দেওয়া হোক। হাঁকডাক ডেকে, পোলাপাইনকে রাস্তায় আনবেন, আওয়ামী লীগ আর মুজিববাদকে দমন করার জন্য। পোলাপাইন সারা রাত, সারা দিন আওয়ামী লীগ পাহারা দেবে। আপনাদেরকে রক্ষা করবে। আর আপনারা এসি রুমে বসে মুজিবপূজারী ফারুকীর পুনর্বাসন করবেন। তাকে মন্ত্রী বানাবেন। তাহলে রাজপথেও মুজিববাদ পুনর্বাসন হোক। রাজপথে ‘প্রতিরোধ প্রতিরোধ খেলে’ ভোটচোরের পক্ষে ক্যাম্পেইন করা ফারুকীকে উপদেষ্টা বানানো হিপোক্রেসি এবং বিপ্লবের সঙ্গে প্রতারণা।’

একটি বিশ্বস্ত সূত্রের তথ্য বলছে, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নির্মিত চলচ্চিত্র ‘শনিবার বিকেল’ আওয়ামী লীগ সরকার সেন্সরে আটকে দেয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত চলচ্চিত্র বাংলাদেশ-জার্মানি-রাশিয়া যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘শনিবার বিকেলে’ মুক্তির অপেক্ষায় আছে অনেকদিন ধরেই। ২০১৯ সালে ছবিটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়েছিল ৪১তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। তবে আওয়ামী লীগ সরকার এটি দেশে মুক্তি দেয়নি। যার ফলে পতিত শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে তৈরি হয় তার দূরত্ব। ফায়দা হাসিল করতে না পেরেই তিনি বিরাগভাজনে পরিনত হন।সবমিলিয়ে তাকে সুবিধা বাদ, জিন্দাবাদ বলেও অভিহিত করেন অনেকে।

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া তিতুমীর কলেজের ছাত্রনেতা আব্দুল হামিদ বলেন, সবশেষ গণঅভ্যুত্থানের গতি পর্যবেক্ষণ করে তিনি বুঝতে পারেন শেখ হাসিনা সরকার টিকতে পারবে না। ক্ষমতায় থাকতে পারবে না বুঝে ফারুকী তখনই ‘পল্টিবাজী’ করেন। তাছাড়া ছাত্র জনতার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমও ফারুকীকে উপদেষ্টা করার সমালোচনা করেছেন।

ফারুকীকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভঃ

সদ্য শপথ গ্রহণ করা সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে উপদেষ্টা পদ থেকে অপসারণের দাবিতে এদিন রাতেই বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সহ সর্ব মহলের শিক্ষার্থীরা। অনতিবিলম্বে তাকে অপসারণ না করা হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা করে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (১০ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন তারা।

বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে, মুজিববাদী সরকারে’, ‘মুজিববাদের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘ মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ, ‘ সাঈদ নূর আসাদ ভাই, দোসরের জায়গা নাই’, ‘মুজিববাদের ঠিকানা, বাংলাদেশে হবে না’,‘এক দুই তিন চার, ফারুকী তুই গদি ছাড়’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গন্ডি পেরিয়ে ফারুকীর সমালোচনা চলছে সকল মহলে। অনেকে বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মাঝে আওয়ামী সরকারের অনেক গুলো এজেন্ট রয়েছে। তারা কৌশলে এক এক করে আওয়ামী দালালদের দলে টানছে। দেশকে অস্থিতিশীল করতে তাদের সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্রের অংশ এগুলো। এভাবে চলতে থাকলে ইউনুসের সরকার শীঘ্রই বড় ধাক্কা খাবে। কারণ প্রফেসর সলিমুল্লাহ স্যারের মতো মানুষেরা যখানে উপদেষ্টা পরিষদে যায়গা পান না। সেখানে ফারুকীর মতো অযোগ্য লোকেরা যখন চেয়ার দখল করে রাখে। তখন দেশের বারোটা বাজতে খুব বেশি সময় লাগবে না।

মোঃ মাহফুজুর রহমান, সিনিয়র রিপোর্টার
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৬ মে, ২০২৫, ১০:১১ অপরাহ্ণ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস তরুণদের তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে এবং তাদের নিজ নিজ সমাজে অর্থবহ পরিবর্তন আনতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আরও বেশি অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

নরওয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একদল তরুণ রাজনৈতিক কর্মী মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তাঁর সাথে দেখা করতে গেলে প্রধান উপদেষ্টা এই আহ্বান জানান।

‘আমরা তরুণদের রাজনীতিতে যোগদানের জন্য উৎসাহিত করছি; অন্যথায় তারা নীতি নির্ধারণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারবে না,’ প্রধান উপদেষ্টা সফররত রাজনৈতিক কর্মীদের বলেন।

সফররত নরওয়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে রয়েছেন সমাজতান্ত্রিক যুব সংগঠনের উপ-নেতা নাজমা আহমেদ; AUF-এর আন্তর্জাতিক নেতা এবং কেন্দ্রীয় বোর্ডের সদস্য ফাওজি ওয়ারসাম; সেন্টার পার্টির সদস্য ডেন স্কোফটারড; কনজারভেটিভ পার্টির সদস্য ওলা স্ভেনবি; খ্রিস্টান ডেমোক্র্যাটসের সদস্য হ্যাডল রাসমাস বুল্যান্ড; গ্রিন পার্টি-অনুমোদিত গ্রুপ গ্রিন ইয়ুথের সদস্য টোবিয়াস স্টোকল্যান্ড; এবং ইয়ং লিবারেলসের প্রাক্তন নেতা থাইরা হাকনসলোক্কেন।

প্রধান উপদেষ্টা তাদের রাজনৈতিক পটভূমি, দৃষ্টিভঙ্গি এবং কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি নরওয়ের মূলধারার রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণের শতাংশ সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করেন।

সফররত রাজনৈতিক কর্মীরা বাংলাদেশের তরুণদের সাথে দেখা করার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন, বলেন যে এই তরুণ বাংলাদেশিদের অনেকেই তাদের জীবদ্দশায় ভোটও দিতে পারেননি।

তারা জিজ্ঞাসা করেন যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য কী করছে।

‘নতুন সরকারের মূল প্রতিশ্রুতি হলো পদ্ধতিগত সংস্কার। গত ১৫ বছর ধরে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তিন মেয়াদে একটি ভুয়া ভোটদান ব্যবস্থা চালু ছিল; কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল যে এটি একটি বিশাল সাফল্য, বাস্তবে কেউ ভোট দিতে পারেনি। তাই তরুণরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলির সংস্কার প্রয়োজন,’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন।

দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে “পুরাতন” বলে অভিহিত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে প্রধান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে তা হল ‘উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া জঞ্জাল পরিষ্কার করা’।

‘ধ্বংসস্তূপ থেকে টুকরো তুলে নতুন শুরুতে নতুন কাঠামো তৈরি করাই চ্যালেঞ্জ,’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন।

‘এটি আমাদের জন্য একটি ক্রান্তিকাল। আমি আশা করি এই ক্রান্তিকাল সংক্ষিপ্ত হবে,’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন।

ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি ও তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করে জাতীয় সরকারের প্রস্তাব

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৬ মে, ২০২৫, ৪:২৬ অপরাহ্ণ
ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি ও তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করে জাতীয় সরকারের প্রস্তাব

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে নতুন দল জাতীয় ঐক্য ও সংহতি পরিষদ। আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আত্মপ্রকাশ করে নতুন রাজনৈতিক দলটি।

মো. নাজিমুল হককে আহ্বায়ক করে ২০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির এই নতুন দল জাতীয় সরকারের রূপরেখা ও নতুন মন্ত্রিসভার আনুপাতিক হারের একটি প্রস্তাবও তুলে ধরে। ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি, বদিউল আলম মজুমদারকে উপরাষ্ট্রপতি, তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী ও ডা. শফিকুর রহমানকে উপপ্রধানমন্ত্রী করে জাতীয় সরকারের রূপরেখা প্রস্তাব করেন সভায় উপস্থিত ঐক্য ও সংহতি পরিষদের নেতারা।

এ ছাড়া নতুন মন্ত্রিসভার আনুপাতিক হারও প্রকাশ করেন তারা। তাদের প্রস্তাব অনুসারে, বিএনপি ২৫ শতাংশ, জামায়াত ২০ শতাংশ, এনসিপি ১৫ শতাংশ, ইসলামি আন্দোলন ৫ শতাংশ, বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ১০ শতাংশ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে ২৫ শতাংশ সদস্য নিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাব পেশ করেন নতুন এ দলটি।

সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাবের আহমেদ চৌধুরী, জাতীয় শিক্ষা-সেবা পরিষদের চেয়ারম্যান ড. হাসনান আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এসএম ফরমানুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

রোহিঙ্গা ও বিদেশিদের এনআইডি ডাটাবেজে ঢুকতে দেবে না ইসি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ৫ মে, ২০২৫, ১০:২৯ অপরাহ্ণ
রোহিঙ্গা ও বিদেশিদের এনআইডি ডাটাবেজে ঢুকতে দেবে না ইসি

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ও বিদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ডাটাবেজে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।

হুমায়ুন কবীর বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আগে সিদ্ধান্ত ছিল, তথ্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে এপিআইয়ের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হবে। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তথ্য তাদের কাছেই থাকবে। আমরা যেখান থেকেই হোক, রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাই করতে পারলেই চলবে।

তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গাদের তথ্য সংরক্ষণের জন্য কোন মন্ত্রণালয়ে সার্ভার থাকবে, সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সরকার বিকল্প কোনও সিদ্ধান্ত নিলে এনআইডি কর্তৃপক্ষ সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

এনআইডি সংশোধন প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদেরও এনআইডি সংশোধনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। মানুষের যৌক্তিক আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কমিশন ও সচিবালয় একযোগে কাজ করছে।

তিনি জানান, এনআইডি সংশোধনের বিপুল সংখ্যক আবেদন ঝুলে রয়েছে। সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কর্মকর্তা পর্যায়ে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। পাশাপাশি এনআইডি সেবা সহজ করতে কর্মকর্তা পর্যায়ে কিছু ক্ষমতা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।

হুমায়ুন কবীর বলেন, বর্তমানে ডাটাবেজে ৫০০-এর বেশি ডাবল এনআইডি রয়েছে। প্রতিটি তথ্য আলাদাভাবে যাচাই করা সম্ভব নয়। তবে কোনও অভিযোগ এলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিই।

তিনি আরও জানান, এনআইডি সংশোধন প্রক্রিয়ায় আগামী সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিডিয়ার প্রতিনিধিদের নিয়ে এনআইডি বিষয়ক সেমিনার আয়োজনের চিন্তা আছে। যারা এনআইডি সেবাকে সহজ করতে ভূমিকা রাখছেন তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি রাখা হবে কিনা তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সম্প্রতি ৫৬টি বিশেষ উপজেলাসহ দেশব্যাপী নিবন্ধন কাজ শেষ করেছি। আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার কারণে রোহিঙ্গারা ভোটার হতে পারবে না। নিবন্ধনের সময় কঠোর যাচাই-বাছাই করা হবে।

প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন প্রসঙ্গে এনআইডি মহাপরিচালক জানান, বর্তমানে ৮টি দেশে এ কার্যক্রম চলছে এবং আগামী সপ্তাহে কানাডাতেও চালু হবে। এতে মোট ৯টি দেশে প্রবাসীদের ভোটার তালিকাভুক্ত করার কাজ চলবে।

তিনি বলেন, অন্যান্য দেশে কার্যক্রম সম্প্রসারণে দূতাবাসে স্থান সংকট একটি বড় সমস্যা। অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিটিং করেছি। আগামী সপ্তাহে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সমস্যাগুলো চিহ্নিত ও সমাধান করে অন্তত ৪০টি দেশে কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এছাড়া, আমেরিকায় এখনও অনুমোদন না পাওয়ায় সেখানকার কার্যক্রম শুরু করা যায়নি বলেও জানান তিনি।