হতে চলছে স্মরণকালের বৃহত্তর আন্দোলন
বিশ্বিবদ্যালয়ের দাবিতে তিতুমীর ঐক্যের বারাসাত ব্যারিকেড
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে তিতুমীর কলেজের সকল শিক্ষার্থীরা। তবে সোমবার (১৮ নভেম্বর) কলেজটির ইতিহাসে বৃহত্তম আন্দোলন হতে চলেছে বলে জানিয়েছে তিতুমীর ঐক্য প্লাটফর্ম।
তিতুমীর ঐক্যের উপদেষ্টা আবদুল হামিদ বলেন, আমরা আমাদের একটি যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। আমরা আমাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রথমে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করি। সেই কর্মসূচিতে আমরা আমাদের দাবির পক্ষে ৯৪ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠায় এবং আমাদের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরি।
তারা আরো বলেন, কিন্তু তাতেও আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো কর্তৃপক্ষের নজরে না আসলে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কলেজ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করি। তার পর বাংলা ব্লকেড নামে কর্মসূচি পালন করি। এই কর্মসূচির স্থায়িত্ব ছিলো অল্প। কারণ আমরা জনদূর্ভগের কথা চিন্তা করে এ কর্মসূচি সীমিত আকারে করা হয়।
তিতুমীর ঐক্য জানায় আমরা ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু মহাখালী ‘ এবং ‘ডেথ অব এডুকেশ ‘ নামে কর্মসূচি ও পালন করি, তারপরও কর্তৃপক্ষ এতেও আমাদের সাথে আলোচনায় না আসার কারনে বাধ্য হয়ে আমরা শান্তিপূর্ন ভাবে কর্মসূচির পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
দাবিতে অনড় থাকার উল্লেখ করে তিতুমীর ঐক্য থেকে জানানো হয়, আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায় না হওয়া প্রর্যন্ত পিছ পা হবো না। কারন এ দাবি আমাদের দীর্ঘ ২৭ বছরের লালিত দাবি। তারা বলেন রাজধানীর অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হয় ২০০৫ সালে। ঠিক তখনই সর্বমহল থেকে তাদের সাথে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি ওঠে। তিতুমীর কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার জন্য সকল যোগ্যতা থাকার পরও রাজনৈতিক কারনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হয়। অথচ বঞ্চিত হয় ঐতিহ্যবাহী সরকারি তিতুমীর কলেজ।
দাবির পক্ষে তিতুমীর ঐক্যের নেতৃবৃন্দ বলেন, আজ আমারা তাদের দিকে তাকালে দেখতে পাই তাদের লেখা পড়ার কতোটা উন্নত হয়েছে। একটা রাষ্ট্রের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো শিক্ষা ব্যবস্থা। সেই শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতি করতে এত টাল বাহানা কেন? রাষ্ট্রের দায়িত্ব একজন নাগরিককে তার মৌলিক অধিকার গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে তা পূরণ করা। তাই শিক্ষা যেহেতু একটি অন্যতম মৌলিক অধিকার, তাই আমরা এখান থেকে দূরে থাকবো কেন? আমাদেরকে বঞ্চিত করার অধিকার কারো নেই।
মূলত তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার লক্ষ্যে তিতুমীর ঐক্য থেকে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা এই আন্দোলনের ডাক দেন।
তারা বলেন, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি আমাদের লক্ষ না। আমরা প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়েছি। কিন্তু এতে কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত না করায় আমরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামছি। এর দায়ভার সম্পূর্ণভাবে সরকারকেই বহন করতে হবে।
তিতুমীর ঐক্য আরো বলে, আমরা এই আন্দোলনে সড়ক ও রেলপথ অবোধ করবো। আমরা বেলা ১১ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তিতুমীর ঐক্য জানায়, কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য করায় জন-ভোগান্তির দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে। এমনকি দাবি আদায়ের পূর্ব প্রর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যহত থাকবে বলেও জানায় তারা।
কর্মসূচিতে তারা শ্লোগান তোলেনঃ
“শিক্ষা মোদের অধিকার
শিক্ষা হবে জনতার”
”ব্যারিকেড ব্যারিকেড
বারাসাত ব্যারিকেড”
“বাশের কেল্লা গঠন করো
তিতুমীর স্বাধীন করো”
“পেতে চাইলে মুক্তি,
ছাড়ো ঢাবি ভক্তি“
“তিতুমীর চায় কি
ভার্সিটি, ভার্সিটি”
“অধ্যক্ষ না ভিসি,
ভিসি, ভিসি “
“Demand for north city
Titumir University“
“সেন্ট্রাল না স্বতন্ত্র
স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র”
“আমার সোনার বাংলায়
বৈষম্যের ঠাঁই নাই”
“শিক্ষা নিয়ে বানিজ্য
মানিনা মানবো না”
“ঢাবির আগ্রাসন
ভেঙ্গ দাও,গুড়িয়ে দাও”
মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি ৭টি নামকরা কলেজকে নিয়ে টম-জেরি খেলা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। পড়ালেখার মান উন্নয়নের নামে এই ৭টি কলেজের শিক্ষার্থীদের হয়রানির শেষ নেই। বিশেষ করে সর্বাধিক শিক্ষার্থীর প্রাণকেন্দ্র সরকারি তিতুমীর কলেজ এগিয়ে আছে সামগ্রিকভাবে।
অনেকে অভিযোগ করে বলেন, তিতুমীর কলেজ সম্পূর্ণ ইউনিভার্সিটি হওয়ার যোগ্যতা রাখে। তাদের দাবি যাতে না মানতে হয়, সেজন্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি সহ কর্তৃপক্ষের কুচক্রী যোগসাজশে ৭টি কলেজকে নিয়ে নাটকের মঞ্চ তৈরি করা হয়। আমরা এই নাটকের পরিসমাপ্তি চাই।
আপনার মতামত লিখুন