প্রবাসীদের নিয়ে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র
শেখ হাসিনার নতুন ফোনালাপ ফাঁস, ষড়যন্ত্রের যা জানা গেলো
গত ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকার পতন হলে তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। তার কয়েক দিন পর থেকে এখন পর্যন্ত কিছুদিন পর পরই ফাঁস হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা সাদৃশ্য অডিও কল রেকর্ড। সেই কল রেকর্ডে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেশের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতেও শোনা যায় তাকে। ওসব কল রেকর্ডে থাকে বর্তমান ইউনূস সরকারের কঠোর সমালোচনা, এই সরকারকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক দাবি করে দেওয়া হয় নানা হুমকিও।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) আবারও শেখ হাসিনার কণ্ঠ সাদৃশ্য নতুন একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়ে ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক, টুইটার, এক্স ও ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ওই ফোনালাপে শেখ হাসিনার কণ্ঠের মতো একজনকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা ও আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতে শোনা যায়।
এদিন নতুন ফাঁস হওয়া ওই ফোন কলের রেকর্ডে জানা যায়, সেটি সুইডেন আওয়ামী লীগের একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠান ছিলো যেখানে শেখ হাসিনা ফোন কলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেন।
অডিওর শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং সমন্বয়কদের খুনি অ্যাখ্যা দিয়ে এসময় নেতাকর্মীদের ফোন কল রেকর্ড করার কথা বলতে শোনা যায়।
অডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, এই অবৈধ সরকারের অত্যাচারে সারা দেশের মানুষ জর্জরিত। কৃষক-শ্রমিকরা বেকার হয়ে গেছে, শিল্প কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। শ্রমিকেরা আন্দোলন করেছে, সাথে সাথে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। চাকরির বয়স নিয়ে আন্দোলন করতে যমুনার সামনে গেলো, সাথে সাথে গুলি করলো। সেখানে একজন মারা গেলো এবং পিটিয়ে উঠিয়ে দিলো।
শেখ হাসিনা বলেন, ৭ জুলাই থেকে এই ছাত্ররা যখন আন্দোলন করে ১৪ জুলাই পর্যন্ত। তারা সহিংস হওয়ার আগে গায়ে একটা টোকাও পড়েনি। তাদের মতো তারা আসছে-বসছে, আমরা তো তাদের কিছুই বলিনি। পুলিশের কাছে কোনো মেটাল বুলেটও ছিলো না। নির্দেশ দিয়েছি কোনো গুলি করবা না। পুলিশের ব্যারিকেড উঠিয়ে তারা ইচ্ছে মতো আন্দোলন করেছে। শুরু থেকে তো অনেক কিছু করা যেতো, আমরা তো সেসব করিনি।
তিনি বলেন, এই কোটা তো আমিই বাতিল করে দিয়েছি। যেখানে কোনো কোটাই নাই, সেখানে আন্দোলনটা কিসের জন্যে ছিলো? তারপর আমাদের মন্ত্রীরা তাদের সাথে বসে, তাদের সব দাবি মানা হয়। দাবি মানার পরে আবার এক দফা। শেখ হাসিনাকে খুন করো, এই তো কথা? তাদের টার্গেট ছিলো আমাকে হত্যা করা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শেয়ার মার্কেটের টাকা উধাও, ব্যাংকে টাকা নাই। ব্যাংকের টাকা উধাও। সেসব টাকা গেলো কোথায়? ২০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমি রেখে আসছি। ১ কোটি পরিবারের জন্যে টিসিবি কার্ড দিয়েছি।
ওই ফোন কলে দেশের জনসাধারণকে তার দেওয়া বিভিন্ন ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করতে শোনা যায় শেখ হাসিনাকে।
তিনি বলেন, দেশে যে অরাজকতা চলছে তার বিচার হবে ইনশাল্লাহ। এদের বিচার আমি করবোই ইনশাল্লাহ।
ওই ফাঁস হওয়া ফোন কলে একই সাথে বেশকিছু নেতা কর্মীকেও কথা বলতে শোনা যায় এবং তাদেরকেও বিভিন্ন বিষয়ে শেখ হাসিনার সাথে একমত পোষণ করতে শোনা যায়। ওই নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে আপা সম্বোধন করে বিভিন্ন সাংগঠনিক দিক নির্দেশনার তার কাছে কামনা করেন, পাশাপাশি শেখ হাসিনা সুস্থতা কামনা করে তারা বলেন, ‘আপনি সুস্থ থাকলে, সুস্থ থাকবে বাংলাদেশ’। এছাড়া ওই কথপোকথনের মধ্যেই নেতাকর্মীদের ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার’, ‘শেখ হাসিনা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ ইত্যাদি নানা শ্লোগান দিতে শোনা যায়।
ওই অডিও কল রেকর্ড থেকে জানা যায়, সুইডেন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ওই দেশে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন সেখানে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
ফাঁস হওয়া নতুন কল রেকর্ডটির শেষাংশের দিকে ওই দলীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাবু সুভাষ ঘোষ, লিংকন মোল্ল্যা, খোকন মজুমদার, নঈম বাবু, মোহম্মদ শহীদ, মাহবুবুর রহমান, লিমন, কবির, সাব্বির প্রমুখ নেতৃবৃন্দের নাম উল্লেখ করে আরও অনেকেই সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন বলে শেখ হাসিনাকে অবহিত করেন ওই কল রেকর্ডে থাকা নেতাকর্মীরা।
আপনার মতামত লিখুন