কক্সবাজারে নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগর যাত্রায় প্রস্তুত জেলেরা
সাগরে মাছ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ
![](https://bdnews999.com/wp-content/themes/Mega%20News/pitw-assets/pitw-image/user_default.png)
![](https://bdnews999.com/wp-content/uploads/2022/10/cox-1-2.jpg)
ইলিশের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে সাগরে মাছ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ রাত ১২টায় সাগর যাত্রায় নামছেন জেলেরা। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই জেলে পল্লীতে দেখা দিয়েছে উৎসবের আমেজ। দীর্গ ২২ দিন ধরে বোট মেরামত ও জেলে শ্রমিকরা ছুটি শেষে চুড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে ফিশিং বোটে ছুটে এসেছেন। শহর ও শহরতলীসহ জেলার সামুদ্রিক নৌঘাটগুলোতে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ জানান, ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত সাগরে মাছ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় কক্সবাজারের ট্রলারগুলো পোতাশ্রয়ে, ডকে অথবা কূলে তুলে রাখা হয়েছে। ফলে কক্সবাজারের লক্ষাধিক জেলে-মৎস্যজীবী কার্যত এতদিন বেকার ছিল। জেলার সামুদ্রিক মৎস্যঘাট ও অবতরণ কেন্দ্রগুলো আবারও কর্ম চঞ্চল হয়ে উঠেছে। নির্জনতা কাটিয়ে জেলেরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। নিষেধাজ্ঞার সময় ফুরিয়ে আসায় জেলেরা বোটে তেল, ডাল,জালানী খাবারের রশদপাতি সংগ্রহ করেছেন। অনেক জেলে শ্রমিক এই ২২ দিন অভাব অনটনের মধ্য কাটিয়েছেন। কবে মৎস্য আহরণ করে ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন সেই দিনই গুণছিলেন মৎস্যজীবীরা।
শহরের দরিয়ানগর, কলাতলী, উখিয়ার ইনানী, টেকনাফের শামলাপুর,শাহ পরীর দ্বীপ,সেন্টমার্টিন, জালিয়াপাড়া, কক্সবাজারের নুনিয়াছড়া, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, ৬ নং জেটিঘাট,মাঝিরঘাট,কুরুশকুল,চৌফলদন্ডি,চকরিয়ার ডুলাহাজারা, খুটাখালী, চামারফাড়ি,বদরখালী, পেকুয়ার মগনামা,উজানটিয়া, রাজাখালী,টৈটং,কুতুবদিয়া বড়ঘোপ,আলীআকবর ডেইল, কৈয়ারবিল, উত্তর ধূরং, দক্ষিণ ধূরং লেমশীখালী,মহেশখালীর, কালারমারছড়া, হোয়ানক,মাতারবাড়ি, ধলঘাটা,ঘটিভাঙ্গা,তাজিয়াকাটা,সোনাদিয়া, গোরকঘাটা,শাপলাপুর ও মুদিরছড়া সৈকতে দেখা যায়, সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসাবে জেলেদের কেউ কেউ বাড়িতে চালসহ বাজার করে দিয়ে ফিশিং বোটে চলে এসেছেন। ইতিমধ্যে মেরামত করছেন ট্রলারের যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক অংশ।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, কক্সবাজারে ছোট-বড় প্রায় ৮ হাজার ফিশিং বোট রয়েছে। এর মধ্যে আকার ভেদে একেকটি বড় নৌ-যানে ৩০ থেকে ৪০ জন ও ছোট নৌ-যানে ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে ২ জন জেলে। এর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে ও বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে থাকে। যে কারণে ইলিশ জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে ও বিহিন্দি জালের বোটগুলো সাগরে মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। বিহিন্দি জালে ইলিশ ব্যতীত ছোট আকারের প্রায় পাঁচ প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়।
শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে শহরের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ছাড়াও শহরের বরফ কলগুলো বন্ধ রয়েছে। আগামীকাল ২৯ অক্টোবর মাছ ধরা শুরু হলেও সাগর থেকে ট্রলারগুলো মাছ নিয়ে ফিরতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে। ফলে চলতি মাসে আর ইলিশের দেখা মিলছে না। সেই সাথে বন্ধ রয়েছে শুটকি পল্লীতে শুটকি উৎপাদনও।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদরুজ্জামান জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় সাগরে মাছ ধরতে গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। মধ্যরাত থেকে সাগরে যেতে পারবেন জেলেরা।
মহেশখালীর জেলে শফিক আহমেদ বলেন, মাছ ধরা বন্ধ থাকলেও প্রতিদিনই ঘাটে আসি। নৌকা ও জাল ঠিকমত আছে কিনা দেখতে আসি। মধ্যরাত থেকে সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে। তাই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি সাগর যাত্রায়। দীর্ঘদিন ঋণ করে চলতে হয়েছে, এবার অন্তত ঋণ শোধ করতে পারবো বলে আশা করছি।
এ দিকে টেকনাফের জেলে বহদ্দার আবুল কালাম বলেন, এই ২২ দিনে আমার দুটি বোটের ৬৮ জন জেলেদের পেছনে এবং বোটের মেরামত খরচ মিলে পাঁচ লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়েছে। অথচ এক টাকা আয় রোজগার হয়নি।
কুতুবদিয়ার জালাল মাঝি জানান,মালিকের তিনটি বোট আমি পরিচালনা করি।শতাধিক জেলে শ্রমিকদের অগ্রিম দাদন দিতে হয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা।কক্সবাজার নজিরআহমদ কোম্পানি বলেন,আমার দুটি ফিশিং বোট ছাড়াও একটি বরফ মিল আছে এই ২২ দিন সবই বন্ধ ছিল। নতুনকরে মাছ ধরার ট্রলার নামাতে দেনা হয়েছে চার লক্ষ টাকা। তিনি বলেন, সব ফিশিংবোট মালিকের একই অবস্থা। সামনে বোটে মাছ ধরতে পারলে আশা করছি দেনা শোধ করবো।আবহাওয়া অনুকূল থাকলে সাগরে মাছ পাওয়া গেলে ঘুরে দাড়াতে বেশী সময় লাগবেনা বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।