সামাজিক সংগঠনের নামে অবৈধভাবে সরকারি রাস্তা দখল-নানা মহলের অভিযোগ! « বিডিনিউজ৯৯৯ডটকম

সামাজিক সংগঠনের নামে অবৈধভাবে সরকারি রাস্তা দখল-নানা মহলের অভিযোগ!

মোঃ হাসানুজ্জামান বিশেষ প্রতিনিধি।
আপডেটঃ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৮:৩৯
মোঃ হাসানুজ্জামান বিশেষ প্রতিনিধি।
আপডেটঃ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৮:৩৯
Link Copied!
সামাজিক সংগঠনের নামে অবৈধভাবে সরকারি রাস্তা দখল-নানা মহলের অভিযোগ! -- বিডিনিউজ৯৯৯ডটকম

সামাজিক সংগঠন হলেই যে তারা সব সময় সঠিক কাজটি করবে তেমন নয়। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগও পাওয়া যায়। তেমনই একটি সামাজিক সংগঠন মাতৃ-ছায়া প্রতিবন্ধী সমাজ কল্যাণ সংস্থা।
মাতৃ-ছায়া প্রতিবন্ধী সমাজ কল্যাণ সংস্থার বিরুদ্ধে সরকারি রাস্তার উপর অবৈধ স্থাপনার মাধ্যমে যায়গা দখলের অভিযোগ উঠে এসেছে। মাতৃ-ছায়া প্রতিবন্ধী সমাজ কল্যাণ সংস্থা রাজধানীর মিরপুর ১২, ধ-ব্লক এলাকায় অবস্থিত। উক্ত সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ শহীদুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি নাজমা বেগম। শহীদুল ইসলাম ও নাজমা বেগম সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী।

নাজমা বেগমকে অনেকে মামলাবাজ নাজমা বলেও অভিহিত করেন। উক্ত সংস্থাটি ছোট্ট একটি দোকান ভাড়া নিয়ে অফিস হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। সংস্থাটি ২০০৭ সাল থেকে কাজ শুরু করে এবং ২০১৫ সালে লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়। কিন্তু তাদের সংগঠনের নামে অবৈধ স্থাপনার কোন আইনগত অনুমতি নেই।

বিজ্ঞাপন

মাতৃ-ছায়া প্রতিবন্ধী সমাজ কল্যাণ সংস্থার সামাজিক কর্মকান্ড নিয়ে এলাকাবাসীর গুটিকয়েক ভালো মন্তব্য থাকলেও অধিকাংশ লোকের বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ পেয়ে সরজমিনে অনুসন্ধান করা হয়। সরজমিনে অনুসন্ধানের সময় এলাকাবাসী ও প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সবার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়।

সাক্ষাৎকারকালে সংস্থাটির সেক্রেটারি নাজমা বেগম গণমাধ্যমকে জানান, তারা অসহায়, দুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করতে হলে বিভিন্ন কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় নাজমা বেগমের কাছে জানত চাইলে তিনি তেমন কোনো প্রশিক্ষণ অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারেন নি। নাজমা বেগম ও শহীদুল ইসলাম দীর্ঘদিন যাবত সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে আসলেও তারা সরকারি কোন দপ্তরে কখনো কোন যায়গা বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন নি।

বিজ্ঞাপন

সরজমিনে অনুসন্ধানকালে স্থানীয় জনগণ নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানায়, নাজমা বেগম ও শহীদুল ইসলাম মাতৃ-ছায়ার বাইরে তেমন কোনো কাজ না করলেও তাদের নামে বে নামে অনেকগুলো সংগঠন রয়েছে। নাজমা বেগম ও শহীদুল ইসলাম বিভিন্ন ছলচাতুরী করে এই অবৈধ স্থাপনাটি করেছে। তারা স্বামী – স্ত্রী মিলে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, শাজাহান খান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যাসহ অনেকের নাম ভাঙিয়ে চলে। কিছুদিন আগেও তারা বিএনপি করতো। এখন আওয়ামী লীগ সেজে এমন অবৈধ দখলদারিত্ব চালিয়ে যাচ্ছে।

এলাকাবাসী বলেন, নাজমা বেগম ও শহীদুল ইসলাম ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে অবৈধ স্থাপনাটি করেছে। তারা বিভিন্ন মহল থেকে তাদের সংগঠনের নামে অর্থ সংগ্রহ করে। সেসব অর্থ ও সাহায্য তাদের গুটিকয়েক পছন্দের লোকদের মাঝে বিতরণ করে। কিন্তু অধিকাংশই তারা আত্মসাৎ করে এবং প্রকৃত অসহায় মানুষ সেবা পায় না।

এছাড়া তারা বিভিন্ন মানুষকে সাহায্যের কথা বলে কৌশলে জাল দলিল, চেক,স্ট্যাম্প বানিয়ে অসহায় লোকদের থেকে টাকা আদায় করে। তাছাড়া তারা সুযোগ পেলেই বিভিন্ন বাসা, দোকান, অফিসও জবরদখলের অপচেষ্টা চালায়। কিছু বলতে গেলেই মামলা ও পুলিশের ভয় দেখায়। তাই ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস করেনা।

বিভিন্ন মহলের অভিযোগ সম্পর্কে সরজমিনে অনুসন্ধানের সময় দেখা যায়, একটি রাস্তার পাশে মাতৃ-ছায়া প্রতিবন্ধী সমাজ কল্যাণ সংস্থার অফিস। তার পাশেই সরকারি রাস্তার উপর অবৈধভাবে টিনদিয়ে একটি স্থাপনা দাড় করিয়েছে।

এ বিষয়ে নাজমা বেগমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, আমরা এই স্থাপনাটি সাময়িক সময়ের জন্য করেছি। কিছুদিন পর সরিয়ে নিবো।

অভিযোগ ও অপরাধ স্বীকার করে নাজমা বেগম বলেন, আমরা যে স্থাপনাটি করেছি তা আইনগতভাবে বৈধ নয় এবং কোন অনুমতিও নিইনি।

তিনি প্রশ্ন করেন, এই এলাকায় বিভিন্ন যায়গায় এমন স্থাপনা রয়েছে। অনেকেই অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন স্থাপনা করছে। তাদেরকে কিছুই বলা হচ্ছে না। অথচ আমাকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।

অভিযোগ সম্পর্কে বিশদ অনুসন্ধানের জন্য আরও অনেকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। কিছুদিন পর ঘটনাস্থলে সরজমিনে অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায় আরেক রুপ। নাজমা বেগম অবৈধ স্থাপনাটি সরিয়ে নেননি, বরং ইট দিয়ে আগের চেয়ে পাকাপোক্তভাবে অবৈধ স্থাপনাটি মজবুত করেছেন।

উক্ত অবৈধ স্থাপনাটি যে বাড়ির পাশে রয়েছে, সেই বাড়ির মালিক একজন অসুস্থ বৃদ্ধা মহিলা। বৃদ্ধা মহিলা নাজমা বেগমকে অনেক অনুরোধ করেছেন স্থাপনাটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য। কিন্তু নাজমা বেগম কোনো কথাই কর্নপাত করেননি।

উক্ত স্থাপনাটির পাশে একটি অসহায় মহিলার ছোট্ট চায়ের দোকান রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন মাদকচোরাকারবারি ও নেশাখোরের আড্ডা,চলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ। সেই সাথে বাড়িমালিক বৃদ্ধা মহিলা বাসার জানালায় ইট ছুড়ে মারে। বৃদ্ধা মহিলা ভয়ে কাউকে কিছু বলেন নি। পরবর্তীতে তার নিকটাত্মীয় ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিককে সহযোগিতা করতে বলেন। কাউন্সিলর ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।

তখন কাউন্সিলর নাজমা বেগমের স্বামীকে ফোন করেন ঘটনা সম্পর্কে জানার জন্য। কিন্তু ফোন রিসিভ হয় না। নাজমা বেগম জানান, কাউন্সিলর মানিক আমার কাছে চাঁদা দাবি করেছে। ৩১-১২-২০২২ ইং তারিখে আমার বাসায় কাউন্সিলর মানিকের কয়েকজন গুন্ডা জোরপূর্বক প্রবেশ করে এবং আমার মেয়ের সাথে অশালীন আচরণ করে। এবিষয়ে পল্লবী থানায় নাজমা বেগম একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। (সাধারণ ডায়েরি) জিডি নং- ২৩৫৩।

নাজমা বেগম আরও বলেন, পরবর্তীতে ১৪-০১-২০২৩ ইং তারিখে কাউন্সিলর মানিক আমাদেরকে আবারও ফোনে হুমকি দেয়। তখন আমরা পল্লবী থানায় মামলা করতে চাই। কিন্তু থানা আমাদের মামলা নিতে রাজি হয় না। তাই আমরা আদালতের দারস্থ হই। নাজমা বেগম ১৯-০১-২০২৩ তারিখে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ৩২/২০২৩। মামলাটি PBI তদন্ত করছে।

এবিষয়ে কাউন্সিলর মানিকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। কাউন্সিলর মানিক জানান, নাজমা বেগম ও তার স্বামী শহীদুল ইসলাম আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। তারা আমার নামে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আমার নামে যে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে, আমি ও আমার লোকেরা এমন কোন কাজ করিনি। অভিযোগগুলো সম্পুর্ন ভিত্তিহীন।

এলাকাবাসী জানায়, নাজমা বেগম ও তার স্বামী যে সামজিক কাজ করছে করুক। কিন্তু কথিত প্রতিবন্ধী স্কুলের নামে ১৮ কোটি মানুষের সরকারি রাস্তা জবরদখল আমরা মেনে নেবো না। আমরা এর বিচার চাই এবং প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। কারণ নাজমা বেগম স্থানীয় জনগণ থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি কাউকেই মামলা থেকে রেহাই দেন না। তাই আইনের মাধ্যমেই তার কাজের জবাবদিহিতা করানো হোক।

বিষয়ঃ: