ডেঙ্গু: চাই একটুখানি সতর্কতা
এবারের ডেঙ্গু যেন আমাদের অবহেলায় দিনকে দিন বেড়েই চলছে। একদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে, ফলে মৃত্যুর সংখ্যাও নিছক কম নয়। প্রতিদিন ১-৬ জন করে সংখ্যাটি শতক ছাড়িয়ে ১৩৪ জন হয় গেছে ইতোমধ্যে।
ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে আমরা জানি যে, এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা এবং গাত্রচর্মে ফুসকুড়ি।
আরও পড়ুন: ‘বেসামাল’ ডেঙ্গু: দেরিতে হাসপাতালে আসায় বাড়ছে মৃত্যু
আমরা দেখেছি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে হেমন্তের এই অসময়ে বৃষ্টির পানিতে রাস্তা পানিতে ডুবে নদীতে পরিণত হলো! এখন মশা তো মনের সুখে চক্রবৃদ্ধিহারে বংশ বৃদ্ধি করবে। ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর বসবাস কিন্তু এই আবদ্ধ পানির আশেপাশের এলাকাসহ সারা শহর জুড়েই। নারী মশাগুলো তো তার বংশবৃদ্ধির জন্য আক্রান্ত রোগীকেও কামড় দিয়ে বাহক হিসেবে কাজ করবে। যখন সুস্থ মানুষকে কামড়াবে তখনই ছড়িয়ে দেবে ডেঙ্গু ভাইরাস। নতুন করে সুস্থ থেকে আক্রান্ত হবে মানুষ।
প্রতিকার কীভাবে?
আমি, আপনি ও আমরা যদি মশা নিধন ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা গ্রহণ না করি – তাহলে এই মশা কামড়াবেই আর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।
* নিজের জন্য মশক নিধন কারী ক্রিম/ mosquito repellent ব্যবহার করুন।
* সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় দরজা জানালা বন্ধ রাখুন এবং মশার কয়েল/স্প্রে ব্যবহার করুন।
* বাসার ধূলাবালি পরিষ্কার করে ফেলুন।
* বাসায় ডেঙ্গু রোগী থাকলে মশারি টাঙিয়ে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে। কোনোভাবেই তাকে মশা কামড় দিতে না পারে খেয়াল রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: নভেম্বরের শুরুতে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমার আশা
* শিশু ও মহিলাদের আক্রান্তের সংখ্যা বেশি- কাজেই তাদের যাতে মশা কামড়াতে না পারে সেদিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।
* ফুলের টব বা গাড়ির টায়ারসহ তিন দিনের বেশি সময় ধরে জমে থাকা পানি অপসারণ করে পরিষ্কার করে ফেলুন।
*আশেপাশের পাড়া প্রতিবেশীদেরকেও উৎসাহ প্রদান করুন এবং ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সম্পর্কে জানান।
* নিকটস্থ ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ যৌথ উদ্যোগে মশার ওষুধ ড্রেন ও অন্যান্য জায়গায় স্প্রে করার ব্যাপারে উদ্যোগ নিন।
সবাই মিলে মশার বংশবৃদ্ধির চক্র ভেঙ্গে দিতে পারলেই খুব সহজেই এই অতি সাধারণ থেকে জীবননাশকারী রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ভাইরোলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ