ঢেউ খেলানো রাস্তা যেন ভয়ংকর মৃত্যুর ফাঁদ « বিডিনিউজ৯৯৯ডটকম

ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কে দীর্ঘদিনের বিড়ম্বনা

ঢেউ খেলানো রাস্তা যেন ভয়ংকর মৃত্যুর ফাঁদ

মোঃ হাসানুজ্জামান বিশেষ প্রতিনিধি।
আপডেটঃ ৬ মে, ২০২৪ | ১০:৪০
মোঃ হাসানুজ্জামান বিশেষ প্রতিনিধি।
আপডেটঃ ৬ মে, ২০২৪ | ১০:৪০
Link Copied!
মহাসড়কের ভয়ংকর অবস্থা -- বিডিনিউজ৯৯৯ডটকম

বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থায় সমালোচনার শেষ নেই। সময়ের পরিক্রমায় নিত্যনতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও কিছু অঞ্চল যেনো বরাবরই এতিম, সুবিধাবঞ্চিত। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্য। বিশেষ করে ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কে চোখে পড়ে বিরক্তিকর ঢেউ খেলানো রাস্তা। মহাসড়কের ব্যস্ততম বাজার বিষয়খালী সহ কিছু এলাকা এখন যেন মৃত্যু ফাঁদ। ঢেউ খেলানো রাস্তায় প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। আর প্রতিটি দুর্ঘটনাই কেড়ে নিচ্ছে অজস্র তাজা প্রাণ অথবা করে দিচ্ছে পঙ্গু।

মূলত ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের বেশ কিছু স্থান দেবে গিয়ে ঢেউয়ের মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কটি যেন রীতিমতো মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে। যানবাহনের ক্ষতির পাশাপাশি ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। যেন দেখার কেউ নেই। কারণ হিসেবে সড়ক বিভাগ বলছে তীব্র তাপদাহের কারণে পিচ গলে যাওয়া এবং সড়কে চলাচল করা গাড়ি ওভার লোডিংয়ের কারণে এমনটি হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঝিনাইদহ থেকে কালীগঞ্জ যাওয়ার পথে তেঁতুলতলা বাজার, বিষয়খালী বাজার, সালাভরা, খয়েরতলা বাকুলিয়াসহ একদম যশোর সীমানা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি জায়গায় ৮০০-১২০০ মিটার রাস্তা ঢেউয়ের মতো অবস্থায় রয়েছে। যেন সড়ক বিড়ম্বনার আরেক নাম এই মহাসড়ক। প্রতিনিয়ত এসব রাস্তা পার হতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। রাস্তার এমন অবস্থায় চলার পথে বিকল হচ্ছে যানবাহন। গত দুই সপ্তাহ ধরে এই সড়কটি এতটাই বেহাল যে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

বিজ্ঞাপন

এই সড়কটি দেখলে বোঝার উপায় নেই এটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়ক। বেঁকে যাওয়া জায়গাগুলো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হচ্ছে। সড়কটি এমনভাবে মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা হলেও বর্ষা মৌসুমে খানাখন্দে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সড়কটি এখন পথচারী এবং যানবাহনের জন্য গলার কাঁটা। কারণ বিগত সময়ের পরিস্থিতির পরিসংখ্যান এটাই বলছে।

তথ্য বলছে, দুই মাস হলো ঝিনাইদহ-যশোর সড়ক উইকেয়ার সেকশন (ফেজ-১) ছয় লেন প্রকল্পের অধীনে সড়কটি হস্তান্তর করা হয়েছে। যার ফলে ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের অধীনে নেই। সড়কের সকল সমস্যা প্রকল্পের মাধ্যমে সমাধান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৮০০ মিটার রাস্তার সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো শুরু করেছে মেরামত।

বিষয়খালী এলাকার স্থানীয় একজন বলেন, এই সড়কের বেহাল দশা দীর্ঘদিনের। মাঝে মধ্যেই মোটরসাইকেল, ইজিবিইক দুর্ঘটনার শিকার হয়। কোনো প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। এখন রাস্তাটি যেভাবে মেরামত করা হচ্ছে, এটা বেশি দিন টেকসই হবে না। আমরা রাস্তাটি ভালোভাবে মেরামত করার দাবি জানাচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

ইজি বাইক চালক মিন্টু বিশ্বাস জানান, এই রাস্তায় চলাচল করতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। যাত্রী নিয়ে সব সময় ঝুঁকি নিয়ে পথ চলতে হয়। খুব দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন। মূলত কেউ দায়িত্ব নিয়ে কাজ না করার ফলেই সড়কের এই অবস্থা। কিন্তু আমরা চাইলেও সব বলতে পারিনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন ড্রাইভার বলেন, ১৫-২০ দিন‌ হলো সড়কটি বেশি খারাপ হয়ে গেছে। যাত্রীরা ঠিকমতো গাড়িতে বসতে পারে না। এমনকি তার গাড়ির হাফচেম্বার ভেঙে গাড়ি পড়ে গিয়ে ইঞ্জিন সিস করেছিল। খুবই সমস্যার মধ্যে আছেন।

এবিষয়ে ঝিনাইদহ-যশোর সড়ক উইকেয়ার সেকশন (ফেজ-১) ৬ লেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. নিলন আলী গণমাধ্যমকে বলেন, তীব্র তাপদাহের কারণে বিটুমিন গেলে গেছে। এর পাশাপাশি সড়কে চলাচলকারী গাড়িগুলো ওভার লোডিংয়ের কারণে সড়কে এমন ঢেউ খেলানো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি মেরামত করে চলাচলের জন্য উপযোগী করে তোলা হচ্ছে।

তবে ঝিনাইদহ-যশোর সড়ক উইকেয়ার সেকশন (ফেজ-১) ৬ লেন প্রকল্পের অধীনে সড়কটি হস্তান্তর করার কারণে ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের করার কিছু নেই। এখন সড়কের সকল সমস্যা প্রকল্পের মাধ্যমে সমাধান করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

দীর্ঘ এই মহাসড়কের দুরবস্থার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরতে আমরা অন্যান্য গণমাধ্যমের চেয়ে কিছুটা বিলম্ব করি। কারণ সড়কের সার্বিক অবস্থা, কিছু ব্যক্তির পরিচয় গোপন রাখা ও কোনো এক অজানা ভয়ে তারা সরাসরি কথা বলতে চাইনি। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, সড়কে এমন সমস্যা থাকলেও সবাই সরাসরি বলতে চান না। তবে সবাই সড়ক সংস্থারের পক্ষে। তাই এখন দেখার অপেক্ষা, মৌসুমি বৃষ্টি শেষ হলে সড়কের অবস্থা কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে।

বিষয়:

সর্বশেষ: