নতুন শিক্ষাক্রমে ৪ শ্রেণির ৩১ বইয়ে ১৪৭ ভুল « বিডিনিউজ৯৯৯ডটকম

শিক্ষাখাতে হুটহাট সিদ্ধান্তেই যত সমস্যা

নতুন শিক্ষাক্রমে ৪ শ্রেণির ৩১ বইয়ে ১৪৭ ভুল

মোঃ হাসানুজ্জামান বিশেষ প্রতিনিধি।
আপডেটঃ ৭ মে, ২০২৪ | ১:৩৩
মোঃ হাসানুজ্জামান বিশেষ প্রতিনিধি।
আপডেটঃ ৭ মে, ২০২৪ | ১:৩৩
Link Copied!
নতুন শিক্ষাক্রমে যত ভুল -- বিডিনিউজ৯৯৯ডটকম

বিজ্ঞান বলছে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় পানি উৎপন্ন হয়। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে রচিত অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) বইয়ের ৯৩ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘হাইড্রোজেন ও পানির বিক্রিয়ায় পানি উৎপন্ন হয়’। অর্থাৎ নতুন কারিকুলামে পাল্টে গেছে বিজ্ঞান। একই বইয়ের ১২৫ পৃষ্ঠায় একটি ছবির ক্যাপশনে লেখা আছে, ‘প্লাটিপাস মেরুদণ্ডী প্রাণী হলেও ডিম পাড়ে।’ এ তথ্যও ভুল। কারণ প্লাটিপাস মেরুদণ্ডী নয়, স্তন্যপায়ী প্রাণী। এ রকম ১৪৭টি ভুল ধরা পড়েছে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ৩১টি বইয়ে। এরই মধ্যে ভুলগুলো সংশোধনের সুপারিশ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটি।

বৃহৎ পরিসরে কোনো আলোচনা না করেই গত বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। চলতি বছর বাস্তবায়ন করা হয় দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে এই শিক্ষাক্রম চালু হবে। পরীক্ষামূলকভাবে এসব শ্রেণিতে প্রণয়ন করা হয়েছে পাঠ্যবই। অর্থাৎ মরণাস্ত্রের মতোই অগ্রহণযোগ্য পদ্ধতি পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হচ্ছে এদেশের শিক্ষার্থীদের ওপর।

ভুল, সমালোচনা, হুটহাট সিদ্ধান্ত, আবার সমালোচনা, কারো কথা কর্নপাত না করা…. এভাবেই চলছে। গত বছরের মতো এবারও ক্লাস শুরুর পর পাঠ্যবইয়ে থাকা নানা ভুল ও অসংগতি নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনা শুরু হয়। একপর্যায়ে নতুন বইয়ের ভুলত্রুটি ই-মেইলে জানানোর অনুরোধ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনসিটিবি। এর আগে গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ৪ বইয়ে ১৮৮ ভুল, ৫৮টি অসংগতি চিহ্নিত করে। পরে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সব বইয়ের ভুল-অসংগতিগুলোর সংশোধনী দেয় এনসিটিবি।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষাখাতের এতোসব ভুল নিয়ে এনসিটিবি সূত্র জানায়, পাঠ্যবইয়ের ভুলত্রুটি সংশোধনের লক্ষ্যে প্রতিটি বইয়ের জন্য একজন বিশেষজ্ঞকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁরা ভুলগুলো চিহ্নিত করে এনসিটিবির উচ্চপর্যায়ের কমিটির কাছে জমা দেন। সম্প্রতি এই কমিটি ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ৩১ বইয়ের ভুল ও সংশোধনীগুলো নিয়ে একটি প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ে পাঠায়। সেখান থেকে ভুলগুলোর সংশোধনী দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।

ওই প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নবম শ্রেণির ১১ বইয়ে ভুল রয়েছে ৭৭টি, অষ্টম শ্রেণির ১০টি বইয়ে ৪৯টি, সপ্তম শ্রেণির ৫টি বইয়ে ১১টি, ষষ্ঠ শ্রেণির ৫টি বইয়ে ১০টি ভুল রয়েছে। ভুলগুলোর মধ্যে বানান ভুলের পরিমাণই বেশি। এ ছাড়া কোনো কোনো বাক্য পুরোপুরি সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের স্বার্থে এনসিটিবি থেকে জানা যায়, এবার পাঁচটি পদ্ধতিতে বইগুলোর ভুলত্রুটি ও অসংগতি বের করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে সংশোধনীগুলো সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছে পাঠানো হবে। পরে শ্রেণিশিক্ষকেরা শিক্ষার্থীর পাঠ্যপুস্তকে এই ভুল ও অসংগতিগুলোর সংশোধন নিশ্চিত করবেন।

বিজ্ঞাপন

নানাবিধ ভুল ও অসংগতি নিয়ে সৃষ্ট তুলকালাম কান্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান গণমাধ্যমে বলেন, চলতি বছর পাঠ্যপুস্তকে যেসব ভুলত্রুটি সংশোধন করা প্রয়োজন, তার একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে তা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমে বিদ্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রতিষ্ঠান প্রধানেরা সংশ্লিষ্ট শ্রেণিশিক্ষকের মাধ্যমে প্রতিটি শ্রেণির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পাঠ্যপুস্তকে সংশোধন-সংযোজন নিশ্চিত করবেন।

মূলত বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, মান নির্ধারন, পরীক্ষা পদ্ধতি, মূল্যায়ন পদ্ধতি সহ নানা বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলমান। যে সরকারই ক্ষমতার মসনদে বসেছে, তারাই করেছে স্বেচ্ছাচারিতা। দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সৃষ্টি ও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় একনিষ্ঠভাবে কাজ করেনি কেউ। মুখে উন্নত বিশ্বের কথা বলে ফেনা তুলে ফেললেও বাস্তবতা সম্পূর্ণ তার উল্টো। সুযোগ্য, সুদক্ষ শিক্ষা বিশারদদের সাথে আলোচনা করে কখনোই কোনো কারিকুলাম বাস্তবায়িত হয়নি। বিশেষ করে কয়েকবছর যাবত হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে যে শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তা তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তবে কে শুনে কার কথা ?

মন চাইলেই করা যায় নতুন আইন, মন চাইলেই চালু হচ্ছে নতুন কারিকুলাম। শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষাবিদ কি বললো তা কর্নপাত করার সময় কারো নেই। যে দেশে কোনো শক্তিশালী বিরোধী রাজনৈতিক দল থাকেনা, থাকে না প্রতিবাদ করার মতো কোনো জনগোষ্ঠী। সেখানে দিনে-রাতে যেকোনো আইন বাস্তবে রূপ দেয়া কি আর এমন কঠিন কাজ ? সবশেষ শিক্ষা কারিকুলাম, পাঠ্যপুস্তকের অজস্র ভুল, নানাবিধ সমালোচনা কবে নাগাদ সংশোধন হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।

বিষয়ঃ

সর্বশেষ: