বিশ্ব মা দিবস আজ « বিডিনিউজ৯৯৯ডটকম

যে ভালোবাসায় ছেদ পড়ে না কোনোকালে

বিশ্ব মা দিবস আজ

মোঃ হাসানুজ্জামান বিশেষ প্রতিনিধি।
আপডেটঃ ১২ মে, ২০২৪ | ১০:৪১
মোঃ হাসানুজ্জামান বিশেষ প্রতিনিধি।
আপডেটঃ ১২ মে, ২০২৪ | ১০:৪১
Link Copied!
মা দিবস ও বিচিত্র মায়ের ছবি -- বিডিনিউজ৯৯৯ডটকম

“মা” পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম ডাক। ছোট্ট এ শব্দের অতলেই লুকিয়ে থাকে গভীর স্নেহ, মমতা আর পৃথিবীর সবচেয়ে অকৃত্রিম ভালোবাসা। যে ভালোবাসায় নেই কোনো জটিল সমীকরণ, নেই কোনো শর্ত-স্বার্থ। শৈশব থেকে আনন্দ-বেদনা-ভয় কিংবা উদ্দীপনা- প্রতিটি মানবিক অনুভূতিতে জড়িয়ে থাকে মায়ের নাম। যে ভালোবাসায় ছেদ পড়ে না কোনোকালে। “তাইতো পৃথিবীতে শান্তি ও পবিত্র ধর্ম ইসলামে বলা হয়েছে- মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত।” জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের সবশেষ আশ্রয়স্থল মা নামের ওই মমতাময়ী নারীর আঁচল। আজ পৃথিবীর সেই সকল মমতাময়ীর সম্মানে বিশ্ব মা দিবস। প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী বিশেষ মর্যাদায় পালিত হয় দিনটি।

আসলে ভালোবাসার ধারক-বাহক মাকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাতে কোনো দিনক্ষণের প্রয়োজন হয় না। প্রতিটি মায়েরই সন্তানের ভালোবাসা প্রাপ্য প্রতিদিনই। তবুও দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করে যে মা সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখান, নিজের সব স্বাদ-আহ্লাদ সন্তানের নামে করে দেন যে মা, তার সম্মানে আলাদা করে একটু ভালোবাসা জানাতেই আজকের দিনটি। তাই দিনটি অবশ্যই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

মায়ের সম্মানে উৎসর্গ যতকিছুঃ
একমাত্র মা-সন্তানের ভালোবাসাই নিখাঁদ। মায়ের সঙ্গে সন্তানের আত্মিক বন্ধন জন্ম-জন্মান্তরের। অটুট এ বন্ধনের প্রাগাঢ় আবেগে তাড়িত হয়ে যুগে যুগে রচিত হয়েছে বহু গান, কবিতা, গল্প, আর উপন্যাস। সৃষ্টি হয়েছে বহু কালজয়ী শিল্পকর্ম। এমনকি প্রতিটি ধর্মেই রয়েছে মা সম্পর্কে বিশেষ দিকনির্দেশনা। বিশেষ করে পবিত্র ইসলাম ধর্মে মায়ের আসন সবচেয়ে উপরে। বাংলা সাহিত্যে মাকে নিয়ে রচিত হয়েছে অসংখ্য কবিতা। আমাদের প্রিয় কবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মা কবিতা সারাবিশ্বে আলোচিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মনে পড়া’, শামসুর রাহমানের ‘কখনো আমার মাকে’, হুমায়ুন আজাদের ‘আমাদের মা’, আল মাহমুদের ‘নোলক’, কালিদাসের ‘মাতৃভক্তি’ এমনই কিছু কালজয়ী বন্দনা। সম্প্রতি পাঠকপ্রিয় যুবকদের আইকন আরিফ আজাদের “মা মা মা এবং বাবা” নামক বইটি দেশব্যাপী অসাধারণ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। যেখানে মায়ের প্রতি ভালোবাসার নতুন ধারা সৃষ্টি হয়েছে অনেক স্বার্থপর সন্তানের হৃদয়ে।

বিজ্ঞাপন

ধর্মীয় দৃষ্টিতে মায়ের সম্মানঃ
মধুর শব্দ মা সম্পর্কে পৃথিবীর সকল যুগে, সকল ধর্মেই সম্মান রাখা হয়েছে সবচেয়ে উঁচুতে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভধারণ করে। তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার শোকরিয়া ও তোমার মা-বাবার শোকরিয়া আদায় করো।’ (সুরা লোকমান, আয়াত: ১৪)।

মা ডাকের মিলঃ
না কাকতালীয়, না সাধারণ- অবাক করার বিষয়: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষায় ‘মা’ ডাকের শব্দগুলোর মধ্যেও আছে উচ্চারণগত অদ্ভূত এক মিল। সবগুলো শব্দের শুরুই ‘এম’ অথবা ‘ম’বর্ণটি দিয়ে। জার্মান ভাষায় ‘মাট্টার’, ওলন্দাজ ভাষায় ‘ময়েদার’, ইতালিয়ান ভাষায় ‘মাদর’, চীনা ভাষায় ‘মামা’, প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় ‘মাত’, সোয়াহিলি ভাষায় ‘মামা’ এবং আফ্রিকান, হিন্দি ও বাংলা ভাষায় ‘মা’।

মা ডাক ও বিজ্ঞানঃ
কীভাবে এই সাদৃশ্য ঘটল তা আজও এক বিরাট রহস্য। তবে ভাষাবিদ রোমান জ্যাকবসন এর পেছনে যুক্তি দেখিয়েছেন যে, শিশুরা যখন তার মায়ের দুধ পান করে, তখন তারা তাদের মুখভর্তি অবস্থায় কিছু শব্দ করে। সেই শব্দগুলো নাক দিয়ে বের হয় বলে উচ্চারণগুলো অনেকটা ‘ম’-এর মতো শোনা যায়। তাই প্রায় সব ভাষায়ই ‘মা’ ডাকে ব্যবহৃত শব্দগুলো ‘ম’ বা ‘এম’ দিয়ে শুরু হয়।

বিজ্ঞাপন

তাছাড়া ‘মা’ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘মম’, যা পূর্বে ব্যবহৃত শব্দ ‘মাম্মা’র পরিবর্তিত রূপ। ধারণা করা হয়, ইংরেজি শব্দ মাম্মা এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘মাম্মা’ থেকে। যা ‘স্তন’ বোঝাতে ব্যবহৃত হতো। এই শব্দ থেকে ‘ম্যামেল’ উত্পত্তি। যা কিনা স্তন্যপায়ী প্রাণীর ইংরেজি প্রতিশব্দ।

মা দিবসের ইতিহাসঃ
ইতিহাস বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ থেকে জানা যায়, মা দিবসের সূচনা হয়েছিল প্রাচীন গ্রীসে। সেখানে প্রচলিত ছিল মাতৃরূপী দেবী সিবেল ও দেবী জুনোর আরাধনা। এছাড়া ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে প্রচলিত ছিল মাদারিং সানডের মতো বেশ কয়েকটি আচার-অনুষ্ঠান। সবসময় মায়েদের সম্মানে মাদারিং সানডে পালিত হতো নির্দিষ্ট একটি রোববার। তবে সেটি নির্দিষ্ট মাসের দ্বিতীয় রোববারে করা হতো বলে বেশি মত পাওয়া যায়।

প্রচলিত মা দিবসঃ
তবে গ্রীস বা রোমের আদলে মা দিবস পালিত হয়, বিষয়টা এমন নয়। বর্তমানে প্রচলিত মা দিবসের সূচনা হয় ১৯০৮ সালে। এইতো গত শতাব্দীর শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার এক স্কুলশিক্ষিকা অ্যানা জারভিস সেখানকার পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা দেখে মর্মাহত হয়ে মায়ের জন্য বিশেষ দিন পালনের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করার কথা ভাবলেন। নিজের সেই মহৎ ভাবনা বাস্তবায়নের আগেই ১৯০৫ সালের ৯ মে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুর পর মেয়ে অ্যানা এম জারভিস মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করেন। বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে ১৯০৮ সালে তার মা ফিলাডেলফিয়ার যে গির্জায় উপাসনা করতেন, সেখানে সব মাকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মা দিবসের সূচনা করেন। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিকভাবে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মায়েদের জন্য উত্সর্গ করে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন।
তারপর থেকেই মে মাসের দ্বিতীয় রোববার আন্তর্জাতিক মা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়ে থাকে।

মা দিবসে বাংলাদেশঃ
বিশ্বের অন্য সব দেশের মতো এবার রোববার (১২ মে) আমাদের দেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে বিশ্ব মা দিবস। সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকেও বিশ্ব মা দিবস ২০২৪ উদযাপন করতে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তাই সারাদেশে বিশেষ সম্মান ও ভালোবাসার সাথেই পালিত হচ্ছে প্রিয় মা দিবস।

এতে জেলা পর্যায়ে উপপরিচালকদের জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, আবাসিক বা অনাবাসিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং ডে-কেয়ার কর্মকর্তাদেরও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে দিবসটি উদযাপন করতে কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া দিবসটি উদযাপন করতে জেলা, উপজেলা, আবাসিক ও অনাবাসিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ডে-কেয়ার সেন্টারে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে বাজেট পাঠানো হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।

মা সকলের উর্ধ্বেঃ
মূলত মা শব্দটিই যেখানে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, সেখানে দিবস পালনের জন্য আলাদা কোনো আদেশেরও প্রয়োজন পড়ে না। কারণ মা-বাবা পরিবার বিশেষ করে মা’কে ভালোবাসে না এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মা সম্পর্কে আমাদের এই সামান্য লেখায় সবকিছু বোঝানোও সম্ভব নয়। তাইতো এককথায় বলতে হয়, ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মা, বৃদ্ধাশ্রম নয়- পরিবার ও সন্তান নিয়েই সুখে থাকুক সকল গর্ভধারিণী।

বিষয়ঃ

সর্বশেষ: