ওরা আমাদের সর্বশান্ত করেছে; আমরা বাঁচতে চাই « বিডিনিউজ৯৯৯ডটকম

ওরা আমাদের সর্বশান্ত করেছে; আমরা বাঁচতে চাই

উমর ফারুক মাহী, স্টাফ রিপোর্টার
আপডেটঃ ১৫ মে, ২০২৪ | ১২:৫০
উমর ফারুক মাহী, স্টাফ রিপোর্টার
আপডেটঃ ১৫ মে, ২০২৪ | ১২:৫০
Link Copied!

প্রতারকরা আমাদের সরলতার সুযোগে বিশ্বাস স্থাপন করে প্রতারনা করে সর্বশান্ত করেছে; আমরা বাঁচতে চাই, আমাদেরকে বাঁচান। ওরা আমাদের বিশ্বাসকে কবর দিয়েছে, ওদের বিচার চাই। এমনটা বলে আকুতি করেছেন গাজীপুরের দুই মিনি গার্মেন্টস ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন ও কবির হোসেন। একটি প্রতারক চক্র তাদেরকে বিদেশী সংস্থার ঋন দেবার কথা বলে কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হবার পর ক্ষতিগ্রস্ত দু’জনের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় দু’টি পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ বিচার বিভাগ ও পুলিশ-প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত করে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। কবির হোসেন আর গিয়াস উদ্দিনের মত আর যেন কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হন তাই তারা পুরো ঘটনাটির নিরপেক্ষ তদন্তেরও দাবি করেছেন; যাতে দেশে আর কেউ এমন প্রতারক চক্রের দ্বারা হয়রানীর শিকার না হন।

জানাগেছে, মিনি গার্মেন্টেন্সের মালিক গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর এলাকার কবির হোসেন ও কোনাবাড়ি এলাকার গিয়াস উদ্দিনকে ব্যবসার বিপরীতে ঋন দেবার কথা বলে কৌশলে হিপ্রোটাইস করে তাদের দু’জনের কাছ থেকে এক কোটি ১৫ লাখ টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেয়। এদের মধ্যে কবির হোসেনকে ঢাকার ফার্মগেট এলাকার গ্রীন রোডের গ্রীন হোটেলে নিয়ে এবং গিয়াস উদ্দিনকে উত্তরা ১ নং সেক্টরের ১৩ নং রোডের এয়ার ইন হোটেলে নিয়ে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নেয়।

বিজ্ঞাপন

এদের মধ্যে ভুক্তভোগী ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়ার সন্তান কালিয়াকৈর এলাকায় বসবাসরত কবির হোসেনের কাছ থেকে গত ৪ জানুুয়ারি ২০২৪ তারিখে ৬৫ লাখ টাকা ও বরিশালের উজিরপুরের সন্তান কোনাবাড়ি এলাকার গিয়াস উদ্দিনের কাছ থেকে ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। তারা টাকা হাতিয়ে নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি তাদের বিরুদ্ধে দুই কোটি টাকার মামলা করে টাকা আদায়সহ জেল খাটানোর অব্যাহত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে; ভিকটিম দুজনই এখন তারা আইনের মারপ্যাঁচে নিরুপায়, উল্টো পুলিশ খুঁজছে তাদের।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, প্রতারক চক্রটি দু’জনের কাছে দুই কোটি টাকা পাবে এমন ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে চক্রটির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে পৃথক দুটি মামলা করেছে। এদের একটির বাদী সেজেছে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানার অন্তর্গত লাটশালা গ্রামের লিয়াকত আলী মন্ডলের পুত্র প্রতারক চক্রের অন্যতম সদস্য শাহাদাৎ হোসেন সাজু। অপর মামলাটি গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে তার কাছেও এক কোটি টাকা পাবে বলে ঢাকার আদালতে মামলাটি দায়ের করেছে চাঁদপুরের চাপিনা গ্রামের আসান আলীর পুত্র প্রতারক চক্রের অন্যতম হোতা ফরিদ উদ্দিন। তারা কবির হোসেন ও গিয়াস উদ্দিনের কাছে পৃথক দুই কোটি টাকা পাবে দাবি করে চেক এবং স্ট্যাম্প আদালতে দাখিল করে মামলা দুটি দায়ের করেছে। ইতিমধ্যে গিয়াস উদ্দিনের মামলায় ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে। সম্প্রতি তাকে বিমানবন্দর থানা পুলিশ আটক করে আদালতে পাঠালে জামিনে মুক্তি পান। প্রতারক চক্রটির সদস্য সাজু ও ফরিদ উদ্দিন এখন বিভিন্ন লোকজন নিয়ে কবির হোসেন ও গিয়াস উদ্দিনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ধারেকাছে গিয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাও চালাচ্ছে।

এদিকে ব্যাংকের চেক এবং স্ট্যাম্প প্রসঙ্গে ভিকটিম কবির হোসেন ও গিয়াস উদ্দিন বাংলা পোর্টালকে জানান; তাদের দু’জনেরই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল শাহাদাৎ হোসেন সাজুর সাথে। সাজু প্রতারক চক্রের সদস্য ছিলেন তা আমরা জানতাম না। কবির হোসেন জানান, সাজু আমার সাথে কাজ করতো। সাজুর সাথে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ ভালো সম্পর্ক ছিল। আমার ব্যবসায়ীক মন্দাভাব চলায় সাজু বিদেশী সংস্থা থেকে ঋন তুলে দেবার আশ্বাস দিয়ে একদিন ফরিদ উদ্দিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। পরিচয়ের সূত্র ধরে আমাকে ঋণ দেবার আশ্বাস দেন এবং ঢাকায় যেতে বলেন। আমি তাদের কথামত সাজুকে নিয়ে ফরিদ উদ্দিনের সাথে দেখা করার পর তারা আমাকে ক্লাইন্ট করে নেয় এবং দুই লাখ টাকা জমা দিলে ৪ লাখ টাকা ঋন দিবে জানালে আমি ২ লাখ টাকা জমা দিয়ে ৪ লাখ টাকা গ্রহন করি। এভাবে তিন চার বার টাকা উঠাই। হঠাৎ সাজু আমাকে জানায় যে, আপনি কোম্পানির গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন এখন এক কোটি টাকাও গ্রহন করতে পারেন। তাদের কথায় আমি বিশ্বাস করে আমার গার্মেন্টস এবং জমাজমি বিক্রি করে, বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধারদেনা করে গত তারিখ ৫০ লাখ টাকা নিয়ে ফার্মগেট এলাকায় যাই। সেখানে তারা একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে দুপুরে উন্নতমানের খাবার খাওয়া শেষে জুস খেতে দেয়। জুসের সাথে যেকোন ধরনের বিশেষ কোন মেডিসিন মিশিয়ে আমাকে হিপ্রোটাইস করে ফেলে তারা স্ট্যাম্প এবং চেকে সাক্ষর করতে বলেন। আমি সরল বিশ্বাসে সাক্ষর প্রদান করি। এ সময় তারা আমাকে ১ কোটি টাকার একটি ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দিয়ে পরদিন ভোররাতে ২৬ মিনিট চুলায় জ্বালিয়ে খুলতে বলে। এমন কেনো করতে হবে জানতে চাওয়ায় তারা জানান, টাকাটা কাচা। সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আনা। আমি তাদের কথামত ভোররাতে গ্যাসের চুলার ওপর রাখার ৫-৭ মিনিটের মধ্যে বিকট শব্দ এবং ধোয়ায় বিস্ফোরন ঘটে। ব্যাগে কোন টাকা ছিলোনা। ব্যাগে ছিল বালু আর বারুদ। পরে বুঝতে পারি তারা আমার সাথে প্রতারনা করেছে। এমনটি ঘটনা ঘটেছে গিয়াস উদ্দিনের সাথেও।

বিজ্ঞাপন

অনুসন্ধানে চক্রটির সাথে ফরিদ উদ্দিন ওরফে নিশাত, শাহাদাত হোসেন সাজু, হেলাল উদ্দিন ওরফে জামান এবং মি: মাওলার নাম উঠে এসেছে। চক্রটির কবলে পড়ে জমা-জমি, গার্মেন্টস কারখানা হারিয়ে দু’টি পরিবার আজ নি:স্বপ্রায়। একদিকে ব্যাংক ঋন অন্যদিকে দেনাদারদের চাপে দিশেহারা।

অভিযোগের ব্যাপারে শাহাদাৎ হোসেন সাজু প্রতারণার এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জানান, আমাদের সাথে কবির হোসেন ও গিয়াস উদ্দিনের সাথে শেয়ার ব্যবসা চলতো। আমরা তাদের কাছে শেয়ার ব্যবসার টাকা পাই।

এদিকে এ ঘটনায় কবির হোসেন ও গিয়াস উদ্দিনের পক্ষ থেকে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে পৃথক জিডি এবং মামলাও দায়ের করা হয়েছে। এখন অপেক্ষার পালা কে বা কারা জিতে আর হারে, প্রতারক চক্র নাকি ভুক্তভোগী ক্ষতিগ্রস্ত কবির ও গিয়াস।

বিষয়ঃ

সর্বশেষ: