খুঁজুন
মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন, ১৪৩১

২০২০ সালের ১৭ মার্চ লেখা ‘প্রিয় বঙ্গবন্ধু’

আসিফ নজরুলের মুজিব বন্দনা, সমালোচনা তুঙ্গে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫, ১০:০১ অপরাহ্ণ
আসিফ নজরুলের মুজিব বন্দনা, সমালোচনা তুঙ্গে

বাংলাদেশের ইতিহাসে মিশ্র বাঙালির আচরণ ও সমালোচনার কমতি নেই। সেই তালিকায় বহুরূপী চরিত্রে আসিফ নজরুলের নাম প্রথম সারিতে। কারণ বিভিন্ন সময়ে সভা-সেমিনারে আওয়ামী লীগ নির্মূলের কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকারের এই আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ভিন্ন কথা বলেছেন তার ভেরিফায়েড ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টে। এর মধ্যে বেশ আলোচনায় এসেছে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ লেখা একটি কবিতা। শিরোনাম-‘প্রিয় বঙ্গবন্ধু’।

শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষ্যে লেখা কবিতাটিতে ফেসবুকে প্রায় ১৬ হাজার কমেন্টস, ৯ হাজার শেয়ার ও ৪৯ হাজার লাইক ও হা হা রিঅ্যাক্ট পড়েছে। আমাদের পাঠকদের জন্য এটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

“প্রিয় বঙ্গবন্ধু”

আমার ভালোবাসা নিন।

আমি আপনাকে ভালোবাসি

আপনাকে ভালোবাসতে হলে আওয়ামী লীগ হওয়ার প্রয়োজন নেই।

প্রয়োজন নেই লোভী হওয়ার কিংবা ভীত হওয়ার।

একচোখা বা মনগড়া ইতিহাস পড়ার, গড়ার।

প্রয়োজন নেই মানুষকে দুঃখে রেখে আতশবাজি উল্লাসের,

কিংবা বাধ্যতামূলক বা চতুর বিনয়ের।

আপনাকে ভালোবাসতে লাগে কিছুটা বিবেক

কিছুটা যুক্তিবোধ, নিজের মানচিত্র চেনা

আর সামান্য একটু মনুষ্যত্ববোধ।

আমি আপনাকে ভালোবাসি।

কিছু দুঃখ, কিছু অভিযোগ নিয়েও ভালোবাসব সকল সময়।

কারণ আপনার কাছে আমরা পেয়েছি অনেক অনেক বেশি।

কারণ আপনি তুলনাহীন আত্মত্যাগে, সাহসে আর দেশপ্রেমে।

কারণ আপনি না জন্মালে সেদিন স্বাধীন হতো না বাংলাদেশ।

আর আমিও আজকে থাকতাম না আমার জায়গায়।

আমরা কেউ থাকতাম না আমাদের জায়গায়।

আপনাকে আরো ভালোবাসি

কারণ দেখেছি আপনার অজস্র হাসি, আপনার সাথে রাসেলের ছবি।

প্রিয় বঙ্গবন্ধু, আমার ভালোবাসা নিন।

জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

আল্লাহ্ আপনাকে ভালো রাখুন।

মুজিব বন্দনায় জনগণের মন্তব্য:

বিতর্কিত উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের লেখা এই কবিতার নিচে মন্তব্যের ঘরের অধিকাংশ মন্তব্য তার বিরুদ্ধে। ওই পোস্টের কমেন্টে আশফাক উল হোসাইন নামে একজন বলেন, ‘৪০,০০০ জাসদ হত্যাকারীর জন্য এত প্রেম। হাজার হাজার জামায়াত বিএনপি ভারত বিরোধীর খুনি হাসিনার প্রতি প্রেম লুকিয়ে রাখছেন কেন?’

হাসান মাহমুদ নামের একজন মন্তব্য করেন, ‘যদি আপনি তেলবাজির জন্য লিখে থাকেন তাহলে ব্যাপারটা ভয়ঙ্কর। আর যদি নিজের বিশ্বাস থেকে লেখে থাকেন তাহলে আরও ভয়ঙ্কর। আপনার বর্তমান পদের সঙ্গে আপনার বিশ্বাস বা তেলবাজি কোনোটাই যায় না-আপনার উচিত পদত্যাগ করা।’

মো. এলাহী বক্স মন্তব্য করেন, ‘আপনার ছলচাতুরীর কারণেই গণঅভুত্থান ব্যর্থ হতে বসেছে।’

আবু শরিফ কামরুজ্জামান লেখেন, ‘আজ আপনি যে গালিগুলো খাচ্ছেন তা প্রধান কারণ হলো আপনার মনে এক ভাবনা আর মুখে বলেন ভিন্ন কথা। আপনি তো নিজেই ঠিক না তবে মানুষকে কিভাবে সঠিক পথে আনবেন।’

মোহাম্মদ রাশেদুল মামুন লেখেন, ‘আপনি আসলেই আওয়ামী লীগ।’

কমেন্ট বক্সে মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘আপনি তো পুরোটাই ঝামেলা। ৩২ নম্বর ভাঙা হলো ফ্যাসিবাদের আঁতুড়ঘর বলে। আপনার রকমারি ভালোবাসা দেশের মানুষকে বিব্রত করে।’

মো. কালাম উল্লাহ মন্তব্য করেন, ‘বহুরূপী মানুষ বড় ভয়ঙ্কর! মুখ আর মুখোশ নিয়ে মানুষ দ্বন্দ্বে পড়ে যায়! তাই পদে পদে ধোঁকা খায়!’

এমদাদ বিন আমিন নামের একজন লেখেন, ‘আপনার মতো সুশীল লোকরাই বড় ভয়ঙ্কর। আপনি জিয়াউর রহমানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে পারলেন না, কিন্তু, ঠিকই মুজিবকে জানিয়েছেন।’

ফারুক পুলক বলেন, ‘এই লোক কেমনে বিপ্লবী সরকারে থাকে?’

মুহাম্মাদ সাদ্দাম হোসাইন মন্তব্য করেন. ‘সবই তো ঠিকঠাকই আছিল, কিন্তু সেদিন আপনি না জন্মালে দেশ স্বাধীন হতো না, আমরাও আমাদের জায়গায় থাকতাম না এই কথাগুলো তো আর মেনে নেওয়া যায় না জনাব!’

আসাদুজ্জামান হিমেল লেখেন, ‘স্যার আপনাকে আমি অনেক ভালোবাসি। আপনার পোস্ট সব সময়ই নজর দেই। কিন্তু একটা লাইনের সঙ্গে একমত হতে পারলাম না। সেটা হলো আপনি লিখলেন আপনি জন্ম না হলে দেশ স্বাধীন হতো না। আপনাকে আমি বলতে চাই, এই দেশ আপামর জনতা স্বাধীন করেছে। আর জীবনবাজি রেখে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করেছেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। এটাতো পানির মতো পরিষ্কার।’

এছাড়া অনেকেই তাদের নিজস্ব মতামত লিখেছেন। সমালোচনা, গালি, গুটিকয়েক প্রশংসা সবমিলিয়ে আসিফ নজরুল বেশ বিপাকেই পড়েছেন। তবে অনেকেই বলছেন- অধিকাংশের মত বিশ্লেষণ করে এটা স্পষ্ট যে, আসিফ নজরুলের ইতিপূর্ব ইতিহাস, লোক দেখানো বক্তব্য, মুজিব বন্দনা, আর বর্তামন কার্যক্রমে তার অবস্থান সহজেই ইঙ্গিতপূর্ণ।

জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার বহাল

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫, ৮:৩০ অপরাহ্ণ
জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার বহাল

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার বহাল রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

এতে বলা হয়, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ২০০৩ সালে দেওয়া স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) সুপ্রিম কোর্টের যে রায়ের পটভূমিতে ২০১৬ সালে সরকার বাতিল করে, ওই রায়ে তাকে প্রদত্ত স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিলের কোনো নির্দেশনা না থাকায় মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অসাধারণ অবদান বিবেচনায় তার স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিলের এ সিদ্ধান্ত সরকার রহিত করেছে।

২০১৬ সালে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার। পরে জাতীয় জাদুঘর থেকে তার পুরস্কারের মেডেল ও সম্মাননাপত্র সরিয়ে ফেলা হয়।

এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একই বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ২০২৫ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।

যেসব ব্যক্তিকে এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে:

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।

ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভকারীদের লাঠিচার্জ

মহানগর প্রতিনিধি, ঢাকা
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫, ৮:২৪ অপরাহ্ণ
ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভকারীদের লাঠিচার্জ

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্মারকলিপি দিতে যাওয়ার সময় ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্লাটফর্ম সদস্যদের লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে একটি মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিতে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশ প্লাটফর্ম সদস্যরা। পথে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে তাদের বাধা দেয় পুলিশ।

এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের তীব্র বাকবিতণ্ডা হয় এবং একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের দুই দফা লাঠিপেটা করে পুলিশ। পরে বিক্ষোভকারীরাও পুলিশের ওপর চড়াও হলে তাদের লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হন।

বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বিক্ষোভকারীদের পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্লাটফর্ম সদস্যদের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা তা না করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে রওনা দেন। তবে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের আশেপাশে সভা-সমাবেশের ওপর ১৪৪ ধারা জারি থাকায় তাদের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে থামানো হয় এবং বলা হয় একটি ছোট প্রতিনিধি দল নিয়ে স্মারকলিপি দিতে।

তিনি বলেন, এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে এবং একজন পুলিশ সদস্যের ওপর চড়াও হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়।

এর আগে, দুপুর আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে যমুনা অভিমুখে রওনা হন। মিছিল থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমের পদত্যাগ চেয়ে স্লোগান দেন ও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সব ধর্ষণকাণ্ডের বিচারের দাবি জানান তারা।

সারাদেশে অপকর্মের হোতা আ'লীগ-ছাত্রলীগ

হেলমেট বাহিনী থেকে ভোল পাল্টে নতুন রূপে ‌ছাত্রলীগ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫, ৬:৫৭ অপরাহ্ণ
হেলমেট বাহিনী থেকে ভোল পাল্টে নতুন রূপে ‌ছাত্রলীগ

স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রে রাজধানীসহ সারা দেশে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও ডাকাতির মতো অপরাধ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। এর পেছনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ অনেকাংশে দায়ী। নিষিদ্ধ ঘোষিত এ সংগঠনটির মাস্টারমাইন্ডরা পরিকল্পিতভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পেশাদার অপরাধীদের নানা পন্থায় মাঠে নামাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাও যুক্ত হচ্ছে। এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারসহ বিভিন্ন অ্যাপস গ্রুপের মাধ্যমে। গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

এদিকে এ চক্রের পুরো নেটওয়ার্ককে চিহ্নিত করতে জড়িতদের তালিকা প্রণয়নসহ পাঁচ ধরনের তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের উচ্চপর্যায় থেকে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, মূলত পাঁচটি বিষয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়। এর মধ্যে রয়েছে-নিষিদ্ধ সংগঠনটির নেতাকর্মীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, সামাজিক কার্যক্রম এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে হালনাগাদ খবরাখবর রাখা। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এই নির্দেশনায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পূর্ণ নাম ও পরিচয়, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর (যদি থাকে), রাজনৈতিক পরিচয় ও সংগঠনে অবস্থান, অতীত ও বর্তমান কার্যক্রমের বিবরণ, জিডি বা মামলা থাকলে তার তথ্য জরুরি ভিত্তিতে দিতে বলা হয়েছে।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, হয়রানি বা মামলার জন্য নয়, নিষিদ্ধ এই সংগঠনটির নেতাকর্মীদের কার্যক্রম এবং গতিবিধি নজরদারিতে রাখতেই তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। তাদের দাবি, যে কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের জন্য এসব তথ্য প্রয়োজন। শুধু ছাত্রলীগ নয়, নিষিদ্ধ সব সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে।

ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান বিতর্কিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর পর থেকেই মূল দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও আত্মগোপনে চলে যান। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ছাত্র সমাজের দাবির মুখে গত বছরের ২৩ অক্টোবর ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।

গোয়েন্দা তথ্য বলছে, আত্মগোপনে থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সংগঠিত হয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে কিছুদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। যে রকম সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা করা হয়েছিল সেটি হয়নি। কিন্তু এক মাস ধরে হঠাৎ করেই সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে গেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই, ডাকাতির মতো ঘটনা বেড়ে চলেছে। তবে এসব অপরাধের বেশির ভাগ পরিকল্পিত এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাত রয়েছে। এ অবস্থায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও সতর্ক ও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, নিষিদ্ধ এই সংগঠনটির নেতাকর্মীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন বলেও মত দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

একই অভিযোগ রয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকেও। তাদের মতে, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের হাতে অবৈধ অস্ত্র ছাড়াও কালোটাকাও আছে। এ দুই শক্তিতে ভর করে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এজন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গতিবিধি অনুসরণ করতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জেলা পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর আবার জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে থানায় থানায় চিঠি দিয়ে দ্রুত তাদের তালিকা সংগ্রহ করে সদর দপ্তরে পাঠাতে বলা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর বলেছে, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন। আইন অনুযায়ী এদের সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাদের মতে, কোনো দমন-পীড়ন, হয়রানি বা মামলা করতে নয়; রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই করা হচ্ছে। শুধু ছাত্রলীগই নয়, হিজবুত তাহরির, সশস্ত্র সর্বহারা পার্টিসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত অন্যান্য দল এবং সংগঠনের বিষয়েও খোঁজখবর নিচ্ছেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।

এবিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর যুগান্তরকে বলেন, মামলার আসামিদের খোঁজখবর রাখা মামলা তদারকির নিয়মিত অংশ। তবে ছাত্রলীগের তালিকার চিঠির বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপাররা বিস্তারিত বলতে পারবেন।

এ প্রসঙ্গে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরল হুদা বলেন, কেউ রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ হলে পুলিশ তার তালিকা করবে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে-এটাই স্বাভাবিক। এটি বিশেষ কোনো দলের জন্য নয়, যে কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের জন্যই প্রযোজ্য।

অভিযোগ রয়েছে, এরই মধ্যে আত্মগোপনে থাকা সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অনেকেই ভোল পালটাতে শুরু করেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র সংগঠনে আশ্রয় নেওয়ার পথ খুঁজছেন তারা। দলগুলোও আবার নিজেদের প্রভাব বলয় ও শক্তি বাড়াতে কাছে টানছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত এই সংগঠনের নেতাকর্মীদের। এর বাইরে আত্মগোপনে থাকা সংগঠনটির অধিকাংশ নেতাকর্মী নানা উপায়ে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে তথ্য মিলেছে। জানা গেছে, ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, সিগন্যালসহ বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে এরা সংগঠিত হওয়াসহ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

এছাড়া সমাজে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে তারা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য, মাদকসেবীসহ চিহ্নিত অপরাধীদের কাজে লাগাচ্ছে। এদের ব্যবহার করে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ সংঘটিত করাচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজনমতো আর্থিক বিনিয়োগও করা হচ্ছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিছুদিন আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি অডিও ভাইরাল হয়। ঢাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে বিদেশে পলাতক আওয়ামী লীগের এই নেতা নির্দেশ দেন। এজন্য যা যা করণীয় তিনি করবেন বলেও অডিও বার্তায় শোনা যায়। অডিও বার্তায় জাহাঙ্গীর আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘যে শহরে আমাদের নেতাকর্মী দিনের বেলায় চলাচল করতে পারবে না, সে শহরে রাতে কেউ ঘুমাতে পারবে না।’ এ বক্তব্য শোনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নড়েচড়ে বসে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের পর সংগঠনটির পুনর্গঠন বা বিকল্প শক্তি তৈরির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষ করে একটানা ক্ষমতার ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের মূল লাঠিয়াল বাহিনী হিসাবেই পরিচিতি পায় নিষিদ্ধ ঘোষিত এই সংগঠনটি। এরা হেলমেট বাহিনী বলেও পরিচিত। ক্যাম্পাসগুলোতে এমন কোনো অন্যায়, অনাচার নেই, যা তাদের হাত ধরে ঘটেনি। রুম দখল, টর্চার সেল তৈরি করে নিরীহ ছাত্রদের দমন-পীড়ন, হয়রানি-নির্যাতন, টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি-জবরদখল-সর্বত্রজুড়ে ছিল ছাত্রলীগের নাম। কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে ছাত্রলীগের কথাই ছিল আইন। এই আইন অমান্যের শাস্তি ছিল ভয়াবহ এবং নির্মম। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর সেই চিরচেনা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সদস্যরা চলে যান আত্মগোপনে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল এ প্রসঙ্গে সোমবার দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম যুগান্তরকে বলেন, একটি ছেলে বা একটি মেয়ে এক সময় ছাত্রলীগ করেছে, এটা অপরাধ নয়। কিন্তু ছাত্রলীগ করার নামে যারা নানা সময়ে অপরাধ করেছে, যারা চিহ্নিত অপরাধী, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, মামলা রয়েছে-তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে এই অপরাধীরা নতুন করে সংগঠিত হয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াবে। এমনকি এরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে আশ্রয় নেওয়ারও চেষ্টা করবে। কেউ যাতে তাদের আশ্রয় না দেয়, এটিও নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি নিরপরাধ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন-তাও নিশ্চিত করতে হবে।