বুধবার (১২ মার্চ) ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে জানান, আমেরিকা ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে ক্রেমলিন রাজি হবে বলেই তাঁর আশা। এই প্রস্তাবে রাজি না হলে অর্থনৈতিক অবরোধের মুখেও পড়তে পারে রাশিয়া।
হুঁশিয়ারি দিয়েছিল আমেরিকা। তাতেই কি ‘কাজ’ হল! বৃহস্পতিবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানালেন, ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আমেরিকা যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তাতে রাজি তারা। পাশাপাশি তাঁর দাবি, যুদ্ধবিরতি থেকে ক্রমে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে হাঁটতে হবে এবং যুদ্ধের কারণও নির্মূল করতে হবে। তবে আমেরিকার প্রস্তাব কী ভাবে কার্যকর হবে, সেই নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাঁর দাবি, এর মধ্যে কিছু ‘সূক্ষ জটিলতা’ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে কথা বলার পরে সরকারি বাসভবন ক্রেমলিনে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন পুতিন। তখনই তিনি বলেন, “যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে আমরা রাজি।” সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইউক্রেনে যুদ্ধিবিরতির প্রস্তাবে রাজি হলেও যুদ্ধের কারণ নির্মূল করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন তিনি। পুতিনের কথায়, “আমরা মনে করি, যুদ্ধবিরতি থেকে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে হাঁটা উচিত। এই সঙ্কটের কারণও নির্মূল করা উচিত।”
গত তিন বছর ধরে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার যুদ্ধ চলছে। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ইউক্রেনে প্রবেশ করতে শুরু করেছে রুশ সেনা। এখন পর্যন্ত সে দেশের পাঁচ ভাগের এক ভাগ দখল করেছে তারা। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি এই যুদ্ধ থামিয়েই ছাড়বেন। বুধবার তিনি হোয়াইট হাউসে জানান, আমেরিকা ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে ক্রেমলিন রাজি হবে বলেই তাঁর আশা। এই প্রস্তাবে রাজি না হলে অর্থনৈতিক অবরোধের মুখেও পড়তে পারে রাশিয়া বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ইউক্রেন আগেই জানিয়েছে যে, তারাও এই প্রস্তাবে সমর্থন করবে।
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির এক দিন পরে, বৃহস্পতিবার পুতিন জানালেন, আমেরিকার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে তিনি রাজি। সেই সঙ্গে যুদ্ধে ইতি টানতে উদ্যোগী হওয়ার জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদও দিয়েছেন তিনি। এর পরেই পুতিন বলেন, ‘‘এই চিন্তাভাবনা একেবারেই সঠিক। আমরা সমর্থন করি।’’ তবে তিনি মনে করেন কিছু বিষয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। কী ভাবে আমেরিকার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব কার্যকর করা হবে, তা নিয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন’ রয়েছে তাঁর। তিনি জানতে চান, ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির অর্থ কী। পুতিনের কথায়, ‘‘সেখানে (ইউক্রেনে) যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা কি যুদ্ধ করবেন না? এই বিষয়টিতে নজরদারি চালাবে কে? আমি মনে করি এই নিয়ে আমাদের আমেরিকান সহকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলা দরকার।’’ রুশ প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পকে ফোন করেও কথা বলতে পারেন। তাঁর কথায়, ‘‘শান্তির মাধ্যমে যুদ্ধে ইতি টানার চিন্তাভাবনাকে আমরা সমর্থন করি।’’
রাশিয়ার সঙ্গে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইউক্রেন। সৌদি আরবের জেড্ডায় আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠকের পর স্পষ্ট ভাষায় এ কথা জানান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। এই পরিস্থিতিতে তিন বছর ধরে চলা রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে সাময়িক বিরতি হবে কি না, তা নির্ভর করছিল ক্রেমলিনের উপর। এ বার রাশিয়া জানাল, তারা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আমেরিকার প্রস্তাবে রাজি। তবে কার্যকর কী ভাবে করা হবে, তা নিয়ে তাদের প্রশ্ন রয়েছে। তার আগে আমেরিকার সঙ্গে কথা বলতে চায় তারা। তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসান হয় কি না, সেটাই দেখার।
আপনার মতামত লিখুন