খুঁজুন
রবিবার, ৪ মে, ২০২৫, ২১ বৈশাখ, ১৪৩২

তালিকায় শীর্ষে বিতর্কিত হারুন

এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ১৮৭ পুলিশ কর্মকর্তা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২:০৭ অপরাহ্ণ
এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ১৮৭ পুলিশ কর্মকর্তা

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে এখনো লাপাত্তা পুলিশের ১৮৭ জন সদস্য। এ তালিকায় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছাড়াও বিভিন্ন স্তরের পুলিশ সদস্য রয়েছেন। গত ৫ আগস্টের পর যারা আর কর্মস্থলে ফেরেননি। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা চাকরিতে ফিরতে পারবেন না। বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়াসহ এদের অনেকের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দায়ের হওয়া ফৌজদারি মামলার তদন্ত ও বিচারকাজ আইন অনুযায়ী চলবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র গণমাধ্যমকে এমন তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের যেসব প্রভাবশালী কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে তারাও পলাতক। তবে পলাতক শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম দোসর হিসেবে চিহ্নিত প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তারা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার উপর গুলির নির্দেশ দিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাদের গ্রেপ্তার না হওয়ায় জনমনে ক্ষোভ অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিশেষ করে গ্রেপ্তার নিশ্চিত না করে যারা তাদেরকে পালিয়ে যাবার সুযোগ করে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে।

তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, পুলিশের পলাতক কর্মকর্তাদের তালিকায় শীর্ষে আছেন ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার ডিআইজি হারুন অর রশীদ। এখনো চাকরিচ্যুত নন পুলিশ সদর দপ্তরের এই তালিকায় তাকে এক নম্বরে রাখা হয়েছে। ৫ আগস্টের আগে-পরে সংগঠিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামির তালিকায়ও তিনি শীর্ষে।

এসব মামলার মধ্যে ২০১১ সালে যে ঘটনাকে কেন্দ্র এই কর্মকর্তা লাইমলাইটে আসেন সেই তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বিএনপি নেতা জয়নাল আবদিন ফারুককে নির্যাতনের মামলাও আছে। জয়নাল আবদিন ফারুক নিজেই বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। এ পর্যন্ত আলোচিত এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৩৮টি মামলায় তার নাম পাওয়া গেছে। সর্বশেষ এই কর্মকর্তা ডিএমপি ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে বেশি সমালোচিত হন। ৫ আগস্টের পর থেকে তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। রাজনীতিকসহ আলোচিত বেশ কয়েকজনকে দুপুরের খাবার পরিবেশন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে সমালোচিত হন হারুন। একপর্যায়ে ডিবি কার্যালয়কে ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ হিসেবে অনেকে ব্যঙ্গ করতে শুরু করেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

পুলিশ সদস্যদের পলাতক তালিকায় আলোচিত ৫ জন অতিরিক্ত ডিআইজি। তাদেরকেও কর্মস্থলে অনুপস্থিত হিসেবে দেখানো হয়েছে। পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বিতীয় সারিতে আছেন ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। ছাত্র-জনতাসহ নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২৭টি। ৫ আগস্টের পর তাকেও আর পাওয়া যায়নি। আলোচিত-সমালোচিত এই কর্মকর্তা কর্মস্থলে আর যোগদান করেননি। ২০১১ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদিন ফারুককে সংসদ ভবনের সামনে মারধরের ঘটনা ভাইরাল হলে তিনি বিগত সরকারের গুডবুকে চলে আসেন। ওই সময় তেজগাঁও জোনের এডিসি ছিলেন বিপ্লব সরকার। এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দফায় দফায় পদোন্নতিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চাকরি করার সুযোগ পেয়ে যান। যে কজন পুলিশ কর্মকর্তা সরকারের শীর্ষে অবস্থান করছিলেন তাদের মধ্যে বিপ্লব সরকার অন্যতম। প্রায় ১৩ বছর পর সেই জয়নাল আবদিন ফারুককে মারধরের ঘটনায় আলোচিত সেই হারুন-বিপ্লব জুটির মামলাটি করেন জয়নুল আবদিন ফারুক নিজেই।

এছাড়া কর্মস্থলে যাচ্ছেন না অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার নুরুন্নবী, অতিরিক্ত ডিআইজি এসএম মেহেদী হাসান ও অতিরিক্ত ডিআইজি সঞ্জিত কুমার রায়। যাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের আগে-পরে সংঘটিত হতাহতের ঘটনায় একাধিক মামলা করা হয়েছে। অসুস্থতার আবেদন করে কর্মস্থলে যাচ্ছেন না অতিরিক্ত ডিআইজি উত্তম কুমার পাল, এসপি আবু মারুফ হোসেন, শাহ নুর আলম পাটোয়ারী, র‌্যাবের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রওশানুল হক সৈকত, এএসপি মফিজুর রহমান পলাশ, এএসপি আরিফুজ্জামান, এএসপি আল ইমরান হোসেন, এএসপি ইফতেখার মাহমুদ। চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বহুল আলোচিত আরেক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান।

এছাড়া এএসপি মি. জন রানা ৫ আগস্টের আগেই চাকরি ছেড়ে দেওয়ার তথ্য জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। তিনি ২ আগস্ট পুলিশের চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। রংপুর ডিআইজি কার্যালয় থেকে সেটি পুলিশ সদর দপ্তর হয়ে ২৮ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হয়। পলাতকের ১৮৭ জনের এই তালিকায় ৫ জন ইন্সপেক্টরও আছেন। এ ছাড়া ১৪ জন এসআই, ৯ জন এএসআই, ৭ জন নায়েক এবং ১৩২ জন কনস্টেবল রয়েছেন। এই কনস্টেবলদের মধ্যে দুজন নারী সদস্যও আছেন।

এদিকে চাকরিতে অনুপস্থিত থাকলেও বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিতর্কিত তালিকার কয়েকজনকে সংযুক্ত/পদায়ন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে উত্তম কুমার পালকে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত, পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ার্দারকে রাজশাহীর রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত, আরএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেনকে এন্টিটেরোরিজম ইউনিটে পুলিশ সুপার, ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ খন্দকার নুরুন্নবীকে নোয়াখালীর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে সংযুক্ত এবং ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার সঞ্জিত কুমার রায়কে খুলনা পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে সংযুক্ত করার আদেশ জারি হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশের যে অবনতি হয়েছে স্বাধীনতার ৫৩ বছরের ইতিহাসে এটা নজিরবিহীন। শুধু তাই নয়, চরম ইমেজ সংকটেও পড়েছে এই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রায় দেড় মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও দেশের কোথাও এখন আর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার মতো সক্ষমতা পুলিশ গড়ে তুলতে পারেনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে যেভাবে নির্বিচারে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। এর সব দায় এখন পুলিশের সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর পড়েছে।

এদিকে মনোবল ভেঙে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের উজ্জীবিত করতে কাজ করছেন প্রায় ২০ বছর ধরে পদ-পদোন্নতি বঞ্চিত ১২, ১৫, ১৭, ১৮, ২০, ২২ ও ২৪ বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের সিনিয়র কর্মকর্তারা। ছাত্র আন্দোলনের মতো পুলিশেও আছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। তবে এটা বাইরে প্রকাশ হয় না। ভেতরে জ্বলেপুড়ে অঙ্গার হয়েছেন এমন অফিসারের সংখ্যাও কম নয়। অন্তত দুই দশক ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা মানসিক ট্রমা নিয়ে বেঁচে আছেন। অথচ দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকা পুলিশের এ কর্মকর্তাদের এই সংকটময় মুহূর্তে কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, যেসব পুলিশ কর্মকর্তা জুলাই-আগস্ট ম্যাসাকারে জড়িত তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা যাতে দেশ থেকে পালাতে না পারেন সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের অনুপস্থিতির বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। একমাত্র অতিরিক্ত ডিআইজি সঞ্জিত রায় ছাড়া কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে অতিরিক্ত ডিআইজি সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, ‘৫ আগস্ট সরকারের পদত্যাগের পর শান্তিপূর্ণ পরিবেশের অপেক্ষায় ছিলাম। এরপর পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা মেনে আমি কর্মস্থল ডিএমপিতে যোগদান করেছি। এ বিষয়টি পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাও অবগত আছেন। দীর্ঘ চাকরি জীবনে আমার বিরুদ্ধে অপেশাদার কোনো কর্মকাণ্ড নেই। বরং দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমি নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা হওয়ার কারণে, প্রতিদিন অফিসে হাজিরা দিচ্ছি না এটা ঠিক। কিন্তু আমি চাকরি ছেড়ে দেইনি।’

সূত্র: যুগান্তর।

যুদ্ধের শঙ্কায় বাঙ্কার সংস্কারে ব্যস্ত কাশ্মীরিরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ৪ মে, ২০২৫, ১:০৫ পূর্বাহ্ণ
যুদ্ধের শঙ্কায় বাঙ্কার সংস্কারে ব্যস্ত কাশ্মীরিরা

পহেলগাম হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত এবং পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে বেসামরিক নানা বিধিনিষেধ ঘোষণার পরও কাশ্মীরের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন, পরিস্থিতি হয়তো এর চেয়ে খারাপ হবে না। কিন্তু গত সপ্তাহে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গুলি বিনিময়ের কারণে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন কাছাকাছি বসবাসকারী মানুষেরা।

ভারতশাসিত কাশ্মীরের উরি সেক্টরের তুতমার গলি পোস্ট এবং পাকিস্তান শাসিত লিপা সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গত সপ্তাহে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। তবে এখনে পর্যন্ত ওই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এহসান-উল-হক শামি পাকিস্তান শাসিত লিপা উপত্যকার বাসিন্দা। ওই অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার এবং সেখানকার বেশিরভাগ মানুষই আইন মেনে চলেন।

নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাড়ি শামির। ভারতীয় এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গুলি বিনিময়ে ২০১৯ সালে তার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি জানিয়েছেন, একইভাবে ২০০২ ও ১৯৯৮ সালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তার বাড়ি।

পেশায় আইনজীবী এহসান-উল-হক শামি বলেন, পহেলগামের ঘটনার পর গত শুক্রবার ও শনিবার পাকিস্তান ও ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় হয়েছে। শুক্রবার ও শনিবারের মধ্যবর্তী রাতে সাড়ে ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় চলে। এরপর শনিবার রাতে ফের গুলি বিনিময় শুরু হয়। ওইদিন রাত ১০টায় গুলি বিনিময় শুরু হয়ে ভোর ৫টা পর্যন্ত চললেও সাধারণ মানুষকে কিন্তু নিশানা হতে হয়নি।

ভারতশাসিত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সবচেয়ে স্পর্শকাতর এলাকা উত্তর কাশ্মীরের কুপওয়ারা ও বারামুল্লা জেলায় অবস্থিত। শুক্রবার কুপওয়ারার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একটা নির্দেশ জারি করে জানিয়েছিলেন, কুপওয়ারার নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন অঞ্চলে যেতে হলে আগাম অনুমতি নিতে হবে।

আতঙ্কে সাধারণ মানুষ:
কুপওয়ারায় এখন পর্যন্ত সীমান্তে গুলি বিনিময়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে নিয়ন্ত্রণরেখার খুব কাছাকাছি যারা বাস করেন, তাদের মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। কুপওয়ারার কারনাহ সেক্টরের বাসিন্দারা ব্যক্তিগত ব্যয়ে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার তৈরির কাজ শুরু করেছেন বা সেগুলো পুনর্নির্মাণ করছেন।

পহেলগামের ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ির নিচে বাঙ্কার তৈরির কাজ যারা শুরু করেছেন, তাদেরই একজন পীরজাদা সৈয়দ।

তিনি বলেন, সীমান্তে গোলাগুলির পরিণতি আমরা এরই মধ্যে দেখেছি। জীবনহানি হয়েছে, অতীতে কৃষিকাজের অভাবের কারণে মানুষও অনাহারে মারা গেছে। আল্লাহ করুন যেন কিছু না হয়, কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে যে কোনো সময় কিছু একটা ঘটে যেতে পারে। সে কারণেই আমরা ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার বানাচ্ছি যাতে কিছু হলে আমরা সেখানে আশ্রয় নিতে পারি।

কুপওয়ারার একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত সামরিক তৎপরতা’ এবং রাতের আকাশে জেট বোমারু বিমানের আওয়াজ তাদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।

কুপওয়ারার নিয়ন্ত্রণ রেখার জিরো লাইনে অবস্থিত টোড গ্রামের এক বাসিন্দার কথায়, ২০১৭ সালে যখন গোলাবর্ষণ হচ্ছিল, তখন আমাদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে একটা শেল এসে পড়েছিল এবং তার মৃত্যু হয়।

‘কিন্তু ২০২১ সালে যখন ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কঠোরভাবে অস্ত্রবিরতি মেনে চলতে রাজি হয়। তারপর গত চার বছর জীবন শান্তিপূর্ণ ছিল। এখানে কৃষিকাজ হয়েছে, বাচ্চারা স্কুলে গিয়েছে, ব্যবসা হয়েছে। কিন্তু এখন আশঙ্কা হচ্ছে, আগের মতো পরিস্থিতি হয়ত ফিরে আসতে পারে।’

পীরজাদা সৈয়দ বলেন, দু’দিন আগে নামবরদার এসে এখানকার বাসিন্দাদের বাঙ্কার পরিষ্কার করতে এবং তার চারপাশের আগাছা বা কাঠের জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলতে বলেছিলেন। এই ঘোষণার কারণে সবাই হতবাক হয়েছে। কিন্তু বাঁচতে হবে তাই সকলে বাঙ্কার পরিষ্কার করতে বা সেগুলো পুনর্নির্মাণ করতে শুরু করে দিয়েছে।
‘সারা রাত ঘুমাতে পারিনি’

এহসান-উল-হক শামি জানান, তার এলাকায় প্রায় প্রতিটা বাড়িতেই ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার রয়েছে। বাড়ির কাজে এই বাঙ্কার ব্যবহার করা হয়। বাঙ্কারগুলো এমনিতে মজবুত কিন্তু সব ধরনের বিপদ এড়াতে সক্ষম নয়। তিনি বলেন, বাঙ্কারগুলো বেশ মজবুত। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এটি বুলেট বা গোলা থেকে রক্ষা করতে পারলেও ভারী অস্ত্রের শেল সরাসরি বাঙ্কারে পড়লে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

‘আমরা যে বাড়িতে থাকি সেটি ২০০২ এবং ১৯৯৯ সালেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আমরা নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর আছি। এই কারণে আশঙ্কা থেকে যায় যে, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেই পারি। অবশ্য এমনিতেই গুলি চললে কারও পক্ষে ঘুমানো সম্ভব নয়।’

শামির মতো ওই অঞ্চলের অন্য বাসিন্দারাও বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন। তার কথায়, প্রায় পুরো এলাকার মানুষই গোটা রাত জেগে ছিল। তারা একে অপরের মঙ্গল কামনা করেছে। তবে আমাদের কাছে তথ্য আছে যে এখন পর্যন্ত এই গোলাগুলিতে বেসামরিক জনগণের কোনো ক্ষতি হয়নি।’

‘বাঙ্কারগুলো অবস্থান করার মতো যোগ্য নয়’

উরি সেক্টরেও নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন মানুষ। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এই সেক্টরের ভাটগ্রান ও চরন্দা এলাকায় ১৬টি বাঙ্কার নির্মাণ করা হলেও স্থানীয়দের অভিযোগ, সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ ও পানির ব্যবস্থা নেই।

ভাটগ্রানের বাসিন্দা মোহাম্মদ কুদ্দুস বলেন, কেউ কেউ নিজের খরচে বাঙ্কার তৈরি করেছেন, কিন্তু দরিদ্র মানুষরা যাবে কোথায়। এখন আমরা এই একই বাঙ্কারগুলোই পরিষ্কার করবো।

‘আল্লাহ দয়া করুন, যাতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সমস্ত কিছু ঠিক থাকে আর গুলিবিনিময় বন্ধ হওয়ার পর জীবনযাত্রা আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়,’ বলেন কুদ্দুস।

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা।

২৩ মে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি করবে হেফাজতে ইসলাম

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ৪ মে, ২০২৫, ১:০১ পূর্বাহ্ণ
২৩ মে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি করবে হেফাজতে ইসলাম

Oplus_131072

নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আগামী তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় সম্মেলন এবং নারী সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে আগামী ২৩ মে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

শনিবার (৩ মে) দুপুরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসমাবেশে নতুন এই দুই কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংগঠনটির মহাসচিব সাজিদুর রহমান।

তিনি বলেন, নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আগামী তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় সম্মেলন করা হবে। আগামী ২৩ মে বাদ জুমা চার দফা দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।

এর আগে ১২ দফা ঘোষণাপত্র পাঠ করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক।

সমাবেশে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের দেশ এখন বহুমুখী সঙ্কটে রয়েছে। সেইসাথে আগ্রাসী ভারতের ষড়যন্ত্রও থেমে নেই। উপরন্তু, মানবিক করিডোরের নামে সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের ভূরাজনৈতিক লড়াইয়ের স্বার্থে আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশকে নতুন যুদ্ধের ক্ষেত্র বানাতে পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমাদের জাতীয় ঐক্য আরো সুদৃঢ় করতে হবে। বাংলাদেশ নিয়ে আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ষড়যন্ত্র ঠেকাতে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ নানা সঙ্কট মোকাবেলায় আমাদেরকে জুলাই-আগস্টের মতো ইস্পাত-কঠিন জাতীয় ঐক্য ও সংহতি আবারও গড়ে তুলতে হবে।

তিনি আরো বলেন, দেশে ইসলামবিরোধী গোষ্ঠী আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সম্প্রতি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন কোরআনবিরোধী প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সাম্রাজ্যবাদের ফান্ডখোর কুখ্যাত নারীবাদীরা এদেশের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, বিধি-বিধান, ঐতিহ্য ও পরিবারকাঠামো ধ্বংস করার পশ্চাত্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, এনজিওবাদী গোষ্ঠীর প্ররোচনায় এমন কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিবেন না, যা কোরআন-সুন্নাহর বিরুদ্ধে যায়। এক্ষেত্রে আমরা কোনো ছাড় দেবো না। এই বিতর্কিত কমিশন ও কোরআনবিরোধী প্রতিবেদন অবিলম্বে বাতিল করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম অংশীদার আলেম-ওলামার পরামর্শ নিয়ে নতুন কমিশন গঠন করুন।

হেফাজতে ইসলাম নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আমরা সরকারের নিকট দাবি জানাচ্ছি, দেশের যৌতুকপ্রথা বন্ধে কঠোর আইন করুন। শিক্ষা ও কর্ম ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। এছাড়া, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন ফৌজদারি দণ্ডবিধি ও সাইবার সিকিউরিটি আইন থেকে ধর্ম অবমাননার শাস্তি সংক্রান্ত ধারাগুলো বাদ দেয়ার সুপারিশ করেছে, এটি আরেক গভীর ষড়যন্ত্র। সংখ্যাগুরু কিংবা সংখ্যালঘু— কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অধিকার অন্য কারো নেই। তাই ধর্ম অবমাননার শাস্তির আইনি ধারাগুলো বহাল রেখে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের ওই নির্দিষ্ট সুপারিশগুলো বাদ দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর নামে কটূক্তি বা বিষোদ্গার বন্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির আইন করতে হবে। ৫ আগস্টের এই বিজয়কে আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে হবে। এমন একটি ন্যায়ভিত্তিক সংবিধান ও সরকারব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে করে এই বাংলাদেশের মাটিতে আর কখনো কোনো ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের জন্ম না হয়।

তিনি আরো বলেন, আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে সংখ্যালঘুসহ সব নাগরিকের জান-মালের নিরাপত্তা, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ধর্ম পালনের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে। নাস্তিকতা ও মুক্তমনা চর্চার নামে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার সুযোগ থাকবে না। সংখ্যালঘুদের রাজনীতির বলির পাঁঠা বানানো যাবে না। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এমন একটি বিভেদমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যেখানে কাউকে গুম-খুন, জেল-জুলুম ও পুলিশি নির্যাতন করা হবে না। গণহত্যার বিচারের পাশাপাশি ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দালালদেরও বিচার করা হবে। আমরা এদেশে ন্যায়বিচার ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

সমাবেশের সভাপতি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় এই মহাসমাবেশ।

এ সময় মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাহমুদুর হাসান কাশেমী, নায়েবে আমির আহমেদ কাশেমী, জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক প্রমুখ।

কোনো ফ্যাসিস্টের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই: ফারুক আহমেদ

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ৪ মে, ২০২৫, ১২:৫৯ পূর্বাহ্ণ
কোনো ফ্যাসিস্টের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই: ফারুক আহমেদ

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদ সম্প্রতি বিভিন্ন সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি গঠনমূলক সমালোচনার পাশাপাশি তার ভালো কাজগুলোর প্রশংসাও করার আহ্বান জানিয়েছেন।

শনিবার (৩ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে ফারুক আহমেদ বলেন, “আমি জানি না কেন এত সমালোচনা হচ্ছে। ভালো কাজ করছি, সেটা কেউ বলছে না কেন? সবার কাছে অনুরোধ, সবাই যেন গঠনমূলক সমালোচনা করে। ”

তিনি আরও বলেন, “কোনো ফ্যাসিস্টের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই, বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা থাকলে আমি এখানে আসতে পারতাম না। ”

টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে শুক্রবার বলা হয়, কাশ্মীরের পেহেলগামে সম্প্রতি সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। সেই উত্তাপ উপমহাদেশের ক্রিকেট সূচিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের সাবেক এক সামরিক কর্মকর্তার বিতর্কিত ফেসবুক পোস্টের কথাও উল্লেখ করা হয়, যেখানে তিনি উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো দখলের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এসব বিষয় উল্লেখ করে বলা হয়, ভারতীয় দলের বাংলাদেশ সফর ‘অনিশ্চিত’ হতে পারে।

তবে বিসিবি জানায়, সফর নিয়ে তাদের হাতে এমন কোনো তথ্য নেই যা সংশয় সৃষ্টি করতে পারে। সফরটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) ভবিষ্যৎ সফর সূচির (এফটিপি) অংশ হিসেবে আগে থেকেই নির্ধারিত। গত ১৫ এপ্রিল বিসিবি ও বিসিসিআই যৌথভাবে পূর্ণাঙ্গ সূচি ঘোষণা করে।

এ নিয়ে কাল বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদিন শনিবার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “ভারতীয় দল সফরে নাও আসতে পারে—এমন কোনো আভাস বা ইঙ্গিত আমরা পাইনি। দুই দেশের বোর্ডের সম্পর্ক চমৎকার ও অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। আমাদের বিশ্বাস, সফরটি ভালোভাবেই সম্পন্ন হবে। ”

আজ ফারুক আহমেদ আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “ভারত কিছু জানায়নি। একটা পত্রিকা শুধু বলছে, তবে বিসিসিআইয়ের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সিরিজ নিশ্চিত আছে। “