বিতর্কিত খতিবকে নিয়ে সমালোচনা
বায়তুল মোকাররমের অপসারিত খতিব রুহুল আমিনের বিচার দাবি
নানা বিতর্কের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মো. রুহুল আমিনকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। তবে শুধু অপসারণ নয়, তাকে গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নেটিজেনরা।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারত চলে যান। এরপর রাজনীতিবিদদের মতো আত্মগোপনে চলে যায় দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অনেক মানুষ। যাদের একজন ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের বিতর্কিত খতিব মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন। গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে তিনি আর মসজিদে নামাজ পড়াতে আসেননি। এরপর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে নতুন খতিব হিসেবে নিয়োগ পান হাফেজ মাওলানা ড. মুফতি ওয়ালিয়ুর রহমান খান আজহারী।
দেড় মাস আত্মগোপনে থাকার পর গত শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) তার অনুসারীদের নিয়ে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আসেন মুফতি রুহুল আমিন। এ সময় জোরপূর্বক জুমা নামাজ পড়াতে গেলে মুসল্লিদের বাধার মুখে পড়েন তিনি। এ সময় রুহুল আমিনের অনুসারীদের সঙ্গে সাধারণ মুসল্লিদের সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। মসজিদের কয়েকটি দরজা ভাঙচুর করা হয়। একপর্যায়ে দলবল নিয়ে পালিয়ে যান স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে কওমি জননী স্বীকৃতিদাতা মুফতি রুহুল আমিন।
মসজিদের মতো পবিত্র জায়গায় আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আমলে নিয়োগ পাওয়া রুহুল আমিনের এমন কাণ্ডে সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এরই ধারবাহিকতায় রোববার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিবের পদ থেকে তাকে অপসারণ করে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এদিকে রুহুল আমিনকে অপসারণের খবরে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। অনেকেই ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তবে শুধু অপসারণে খুশি নন নেটিজেনবাসী। তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা।
রফিকুল আনসারি লিখেছেন, শুধু অপসারণ করলেই হবে না, এই ন্যক্কারজনক কাজের জন্য উনাকে বিচারের আওতায় আনা হোক।
ফখরুল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, মসজিদে সন্ত্রাসীদের মতো আচরণ করার জন্য দ্রুত রুহুল আমিনকে গ্রেফতার করুন।
রতন ভুঁইয়া লিখেছেন, আওয়ামী লীগের আমলে এর চাইতে ভণ্ড হুজুর ছাড়া আর কিছু আশা করা যায় না।
মহিবুল্লাহ নামে একজন লিখেছেন, অপসারণের সিদ্ধান্ত অনেকে দেরিতে হলো। তবে শুধু অপসারণ যথেষ্ট নয়। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী গং কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দালাল এই ইমামকে আল্লাহর ঘর মসজিদে ফ্যাসাদ সৃষ্টির দায়ে তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি করা সমীচীন হয়।
রাইসা লিখেছেন, শুধু অপসারণ করলে হবে না, গ্রেফতার করতে হবে। এই লোকের শাস্তি দাবি করছি। আওয়ামী লীগের এই দালালকে গ্রেফতার দেখতে চাই।
এমএইচ হোসাইন লিখেছেন, শুধু অপসারণ করলেই হবে না, আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করেন।
কেএম বনি আমিন খান লিখেছেন, তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হোক।
আব্দুল্লাহ আল মামুন লিখেছেন, আরও আগেই অপসারণ করা উচিত ছিল তাকে, আইনের আওতায় আনা হোক। উনার কারণে পবিত্র মসজিদের ভেতর গণ্ডগোল লেগেছে।
নিজাম নামে একজন লিখেছেন, বায়তুল মোকাররমে হামলাকারী সন্ত্রাসী রুহুল আমিনের বিচার জরুরি।
সানোয়ার হোসাইন পাঠান লিখেছেন, চাটুকার, দালালের বিদায় হলো।
মুফতি রুহুল আমিনকে তার মাদ্রাসার পদ থেকেও অপসারণের দাবি জানিয়েছেন ইয়াকুব আলী জহির নামে এক ব্যক্তি।
খান সাহেব লিখেছেন, শুধু অপসারণ করলে হবে না, সে জাতীয় মসজিদে হামলার করেছে, তাকে গ্রেফতার করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের সম্মুখীন করা উচিত।
আল্লাহর ঘর মসজিদকে অপবিত্র করার অপরাধে তার বিচার হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন মোস্তফা জামান নামের আরেক নেটিজেন।
আব্দুল মুয়িদ নামে একজন বলেছেন, এসব আলেমকে এখন সমাজের অধিকাংশ মানুষ জালেম মনে করে। কারণ, এরা স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী ও দোসর। এসব আলেম নামধারী জালেমদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
নিরব মনসুর লিখেছেন, এই বাটপারকে আরও আগেই অপসারণ করা দরকার ছিল এবং তার শাস্তি দাবি করছি।
মো. সরোয়ার উদ্দিন বলেছেন, জাতীয় মসজিদকে কলঙ্ক করেছে। এদের বিচার না হলে মুসলিম জাতির লজ্জা ছাড়া আর কিছু নাই।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের মার্চে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব হিসেবে নিয়োগ পার মুফতি রুহুল আমিন। তার বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গওহরডাঙ্গা গ্রামে। তিনি গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মুহতামিম (প্রিন্সিপাল)।
আপনার মতামত লিখুন