সতর্ক থাকুন, সচেতন হোন: ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধে করণীয়

দেশে ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাস সমানভাবে ফের চোখ রাঙাচ্ছে। নতুন করে বাড়ছে প্রাণঘাতী করোনা সংক্রমণ। একই সঙ্গে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপও চলতি মাসে দ্রুত বেড়েছে। প্রায় ঘরে ঘরে এখন জ্বর ও সর্দি রোগীর খবর পাওয়া যাচ্ছে। মৃত্যুও হচ্ছে উভয় রোগে। আর বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকির একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে মানবসভ্যতা। সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাস (COVID-19) মহামারির ভয়াল রূপ ও প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব আমাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে—শুধু চিকিৎসা নয়, এই রোগগুলোর প্রতিরোধে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো জনসচেতনতা। সঠিক তথ্য, কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এসব রোগ নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব। এ প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, কীভাবে ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে এবং তা বাস্তবায়নে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ডেঙ্গু ও করোনার পরিসংখ্যান:
ডেঙ্গু: চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত দেশে মোট ৫ হাজার ৫৭০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ নারী।প্রায় জেলায় ডেঙ্গু দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৬১ জন ও মৃত্যু ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন ও মৃত্যু ৩ জন, মার্চ মাসে আক্রান্ত ৩৩৬ জন, এপ্রিল মাসে আক্রান্ত ৭০১ জন ও মৃত্যু ৭ জন, মে মাসে আক্রান্ত ১ হাজার ৭৭৩ জন ও মৃত্যু ৩ জন এবং জুন মাসের ১৩ তারিখ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২২৫ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের।
করোনা: চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৫৩ জন, মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। আর দেশে ৫ বছরে শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮০০ জনে। আর এতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ২৯ হাজার ৫০২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ সময়ে শনাক্তের হার ছিল ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। মোট করোনা পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এখন পর্যন্ত করোনায় সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৯ হাজার ৪০১ জনে।
ডেঙ্গু পরিচিতি ও প্রেক্ষাপট:
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা মূলত এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। প্রতি বছর বর্ষাকালে বাংলাদেশে এর প্রকোপ ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন (DENV-1, DENV-2, DENV-3, DENV-4) রয়েছে। একজন ব্যক্তি একাধিকবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারে।
লক্ষণসমূহ:
* জ্বর * তীব্র মাথাব্যথা * চোখের পেছনে ব্যথা * মাংসপেশিতে যন্ত্রণা * ত্বকে লালচে র্যাশ * বমি ও দুর্বলতা।
গুরুতর ক্ষেত্রে এটি হেমোরেজিক ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে পরিণত হতে পারে, যা প্রাণঘাতী।
করোনাভাইরাস: বৈশ্বিক আতঙ্ক ও বাস্তবতা
২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস দ্রুতই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এটি একটি শ্বাসযন্ত্রজনিত রোগ যার সংক্রমণ হয় এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ, হাঁচি-কাশি বা সংক্রমিত জিনিস ছোঁয়ার মাধ্যমে।
লক্ষণসমূহ:
* জ্বর ও কাশি * শ্বাসকষ্ট * গলা ব্যথা * স্বাদ ও গন্ধ হারিয়ে যাওয়া * ক্লান্তি ও দুর্বলতা।কিছু ক্ষেত্রে এটি নিউমোনিয়া, শ্বাসরোধ এবং মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
ডেঙ্গু ও করোনার পার্থক্য ও মিল:
দুটো রোগের উপসর্গ এক হলেও চিকিৎসা পদ্ধতিতে আছে বিস্তর পার্থক্য। কারো যদি দুটি রোগ একইসঙ্গে হয়; সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য জটিলতা বাড়তে পারে। পাশাপাশি চিকিৎসা পদ্ধতির জটিলতা ও অনেক। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন কেন?
কোভিড এ রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বেড়ে যায়। এজন্য রক্ত পাতলা করার ওষুধ ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে ডেঙ্গুতে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা বা ব্লিডিং টেনডেনসি থাকে। তাই রক্ত পাতলা করার ওষুধ দিলে আরো মারাত্মক পরিস্থিতি হবার আশঙ্কা থাকে।
এরই মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি প্রায় হাজার খানেক রোগী। যার অনেকেই আবার ভুগছেন কোভিডেও। দুটি রোগের লক্ষ্মণ যেহেতু কাছাকাছি, তাই জ্বর আসলে এখন আর কোন অবহেলা করা যাবেই না। জ্বর আসলে অবশ্যই পরীক্ষা করাতে হবে।
কোভিড এ সাধারণত জ্বরের সঙ্গে গলাব্যথা, নাকে ঘ্রাণ না পাওয়া, মুখে স্বাদ না পাওয়া, শ্বাসকষ্ট- এই উপসর্গগুলো থাকে। অপরদিকে ডেঙ্গুতে জ্বর, আর তার সাথে তীব্র গা ব্যথা, মাথাব্যথা, শরীরে র্যাশ আসতে পারে।
দুটো রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা ঘরে বসে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে নেওয়া যায়। প্রচুর তরল খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। কোভিড ও ডেঙ্গু শনাক্তকরণ এর জন্য টেস্ট করাতে হবে।
যারা গর্ভবতী, শিশু, বৃদ্ধ, স্থূল স্বাস্থ্যের অধিকারী, দীর্ঘদিন যাবত ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, কিডনি, হার্ট, লিভার বা অন্য কোন দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন, তারা খুব সতর্ক থাকবেন ও নিজ চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করবেন।তাই উপরের তুলনায় বোঝা যায়, প্রতিটি রোগের কারণ ও বিস্তারের ধরন আলাদা হলেও প্রতিরোধের ক্ষেত্রে একটি বড় মিল রয়েছে—সচেতনতা।
জনসচেতনতার অভাব: ঝুঁকির মূল কারণ
বাংলাদেশে বহু মানুষ ডেঙ্গু বা করোনার উপসর্গ সম্পর্কে জানেন না। অনেকেই বিশ্বাস করেন এসব “সাধারণ জ্বর” মাত্র। আবার অনেকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে দেরি করেন, যা জটিলতা সৃষ্টি করে। করোনা সংক্রমণের সময়ও অনেকেই মাস্ক ব্যবহার না করে, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে ঘোরাফেরা করেছেন, যা সংক্রমণ বাড়িয়েছে।
ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও দেখা যায়, লোকজন বাসার চারপাশে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করেন না, যেখানে এডিস মশা বংশবিস্তার করে।
জনসচেতনতা বৃদ্ধির উপায়:
১. গণমাধ্যমের ভূমিকা:
টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্র এবং সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে নিয়মিত প্রচার চালাতে হবে।
২. স্কুল-কলেজে স্বাস্থ্যশিক্ষা:
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ ক্লাস ও সেমিনার আয়োজন করা যেতে পারে। ছোটদের মাধ্যমে পরিবারেও সচেতনতা ছড়াতে সাহায্য করবে।
৩. ইমাম ও ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা:
মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে ধর্মীয় নেতারা স্বাস্থ্যবিষয়ক বার্তা প্রদান করলে তা সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
৪. স্থানীয় পর্যায়ের কার্যক্রম:
ওয়ার্ড বা ইউনিয়নভিত্তিক সচেতনতা কর্মসূচি যেমন মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য দেওয়া—এসব কার্যকর উদ্যোগ হতে পারে।
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ:
সরকারের বিভিন্ন বিভাগ যেমন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা নিয়মিতভাবে পরিচ্ছন্নতা অভিযান, মশক নিধন কর্মসূচি, করোনা টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণও গুরুত্বপূর্ণ। তারা মাঠপর্যায়ে পৌঁছে মানুষকে সচেতন করে তোলে।
উদাহরণ: ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মশা নিধন অভিযান। করোনা মোকাবেলায় জাতীয় টিকা কার্যক্রম।
ব্যক্তিগত উদ্যোগ: সচেতনতায় প্রত্যেকে যোদ্ধা
প্রত্যেক নাগরিককে সচেতন ও দায়িত্ববান হতে হবে। আমরা নিজেরা যদি নিচের কাজগুলো করি, তাহলে সমাজে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে:
* নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার ও হাত ধোয়া * টিকা গ্রহণ * জ্বর-কাশি হলে আইসোলেশনে থাকা
* বাড়ির আশেপাশে পানি জমতে না দেওয়া * জমে থাকা পানির পাত্র উল্টে রাখা * অন্যকে সচেতন করা
সামাজিক আন্দোলন হিসেবে সচেতনতা:
জনসচেতনতা কেবল ব্যক্তিগত নয়, এটি একটি সামাজিক আন্দোলন হতে হবে। যেমন “নো মাস্ক, নো সার্ভিস” নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো সচেতনতা তৈরি করতে পারে। বিদ্যালয়, অফিস, বাজার—সব জায়গায় দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করতে হবে।
প্রযুক্তির ব্যবহার:
স্মার্টফোন অ্যাপ, এসএমএস সার্ভিস, হেল্পলাইন নম্বর ইত্যাদির মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য সহজে মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। যেমন:- Corona Info অ্যাপ, 333 স্বাস্থ্য তথ্যসেবা, স্থানীয় সিটি কর্পোরেশনের অভিযোগ ও রিপোর্টিং লাইন
গণপরিবহন ও বাজার ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা
পরিবহন ও হাট-বাজার হলো রোগ বিস্তারের বড় মাধ্যম। এসব স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মানা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ রাখা ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন ও সাধারণ জনগণের যৌথ উদ্যোগ দরকার।
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ:
তাদের উচিত রোগ লক্ষণ দেখলে জনগণকে সময়মতো চিকিৎসা নিতে উদ্বুদ্ধ করা, ভুল ধারণা দূর করা এবং স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া। চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ সহজ করতে টেলিমেডিসিন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে।
ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সচেতনতা:
বয়স্ক, গর্ভবতী নারী, শিশুসহ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের জন্য আলাদা সচেতনতা কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। তাদের টিকা, পুষ্টিকর খাবার ও নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা নিশ্চিত করা উচিত।
ভবিষ্যতের প্রস্তুতি: মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতনতা
ডেঙ্গু ও করোনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে ভবিষ্যতেও নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি আসতে পারে। তাই দীর্ঘমেয়াদি সচেতনতা কর্মসূচি, দুর্যোগ প্রস্তুতি, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক পাঠ্যক্রম চালু করা জরুরি।
ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধের উপায়:
কোভিডের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, বাইরে গেলে মাস্ক পড়ার বিকল্প নাই। ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব যতটুকু সম্ভব মেনে চলতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে না যাওয়াই শ্রেয়।
আর ডেঙ্গুর জন্য প্রতিহত করতে হবে এর বাহক এডিস মশাকে। ডেঙ্গুর কোনো ভ্যাক্সিন নেই। ডেঙ্গু ভাইরাস ৪ ধরনের। ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের মূল উপায় হলো, এর বাহকের বিস্তার রোধ করা। যাতে মশা কামড়াতে না পারে; তার ব্যবস্থা করা।
মনে রাখতে হবে, এডিস একটি এলিট মশা, ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেনের পানিতে এরা বসবাস করে না, বরং অভিজাত এলাকায় বড় বড় সুন্দর সুন্দর দালান কোঠায় এদের বাস। স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে এই মশা ডিম পাড়ে।
তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং একই সাথে মশক নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এই রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো ব্যক্তিগত সতর্কতা এবং এডিস মশা প্রতিরোধ।
এডিস মশা মূলত দিনের বেলা, সকাল ও সন্ধ্যায় কামড়ায়, তবে রাত্রে উজ্জ্বল আলোতেও কামড়াতে পারে। তাই দিনের বেলা যথাসম্ভব শরীর ভালোভাবে কাপড়ে ঢেকে রাখতে হবে, পায়ে মোজা ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাচ্চাদের হাফপ্যান্টের বদলে ফুলপ্যান্ট বা পায়জামা পড়াতে হবে। মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য দিনে ও রাতে মশারী ব্যবহার করতে হবে। দরজা-জানালায় নেট লাগাতে হবে। প্রয়োজনে মসকুইটো রিপেলেন্ট, স্প্রে, লোশন বা ক্রিম, কয়েল, ম্যাট ব্যবহার করা যেতে পারে।
যেহেতু এডিস মশা মূলত জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে, তাই বাড়ি-ঘরে এবং আশপাশে যেকোনো পাত্র বা জায়গায় জমে থাকা পানি ৩-৫ দিন পরপর ফেলে দিলে এডিস মশার লার্ভা মারা যাবে। ঘরের কোথাও জমানো পানি ৫ দিনের বেশি যেন না থাকে। একুরিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ার কন্ডিশনারের নিচে এবং মুখ খোলা পানির ট্যাংকে যেন পানি জমে না থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
বাড়ির ছাদে অনেককে বাগান করতে দেখা যায়, সেখানে টবে বা পাত্রে যেনো জমা পানি ৫ দিনের বেশি না থাকে, সেদিকেও যত্নবান হতে হবে। বাড়ির আশপাশের ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বসতবাড়ির বাইরে মশার বংশ বিস্তার রোধ করার দ্বায়িত্ব প্রশাসনে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের।
একমাত্র সচেতনতা ও প্রতিরোধের মাধ্যমেই এই কোভিড – ডেঙ্গুর হাত থেকে মুক্তি সম্ভব। কেউ কারো থেকে কম নয়। দুটো রোগই সমানে সমান।
পরিশেষে বলতে চাই, করোনা সামলাতে চিকিৎসকদের আগের মতো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু অক্সিজেনের সাপ্লাই, ডায়াগনোসিস, টেস্ট—সবই পুনরায় দ্রুত চালু করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অবহেলা করার সুযোগ নেই। ডেঙ্গু ও কভিড এ বছর যেভাবে চোখ রাঙাচ্ছে, সতর্ক না হলে ভয়াবহ বিপদ হতে পারে।তাই ডেঙ্গু ও করোনা—উভয় রোগের প্রকোপ ও ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে শুধু ওষুধ, চিকিৎসা কিংবা সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। এর সঙ্গে দরকার সচেতন নাগরিক সমাজ। প্রতিটি পরিবার, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও প্রতিটি ব্যক্তি যদি সচেতন ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে, তবে এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। আমাদের স্মরণ রাখা দরকার—”সচেতনতা নিজেকে রক্ষা করে, সমাজকেও নিরাপদ রাখে।”
আপনার মতামত লিখুন