বরগুনার পাথরঘাটা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষ করে ফেরার পথে নাসির হাওলাদার (৩৮) নামে এক যুবদল নেতাকে পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় সন্দেহের জেরে তিনটি বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও উপজেলা শিবিরের সভাপতিকে মারধর করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
বুধবার উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সত্তার মিলিটারির বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বরগুনার পুলিশ সুপার ইব্রাহিম খলিল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পাথরঘাটা সার্কেল মোহাম্মদ আবু ছালেহ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান।
নিহত নাসির হাওলাদার পাথরঘাটা পৌর এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে এবং ওয়ার্ড যুবদলের সদস্য।
প্রত্যক্ষদর্শী আনসার মোল্লা জানান, আজ দুপুরে বাড়ির সামনে চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি নাসির রাস্তার পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে রাব্বি, ইব্রাহিম ও হাসান মোটরসাইকেলে করে দ্রুত পালিয়ে যান। রাব্বির হাতে একটি রামদা ছিল। এর আগে একাধিক মোটরসাইকেল দ্রুত চলে যায়।
জানা গেছে, রাব্বি (১৮) মাহবুব হোসেনের ছেলে, হাসান (১৯) ফরিদ গাজীর এবং ইব্রাহিম (১৮) আবু হানিফের ছেলে। এঁদের বাড়ি উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে।
উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন, একসময়ের ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা-কর্মীরা জামায়াত-শিবিরের মাধ্যমেই এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। নাসিরের হত্যাকারী রাব্বি ও হাসান আগে ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। বর্তমানে তাঁরা জামায়াত–শিবিরে যোগদান করে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এদিকে যুবদলের নেতা নাসির হত্যার প্রতিবাদে শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে পাথরঘাটা বিএনপি। মিছিলে কয়েক শত নেতা-কর্মী অংশ নিয়ে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
এর আগে ঘটনার পরপর রাব্বি, ইব্রাহিম ও হাসানের বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। সন্ধ্যার দিকে পাথরঘাটা উপজেলা শিবিরের সভাপতি রাকিব হাসানকে মারধর করা হয়। পরে স্থানীয়রা তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি মারুফ হোসেন বলেন, ‘আমরা দেখেছি নাসির আওয়ামী লীগের আমলে ১৫ থেকে ২০টি কোপ খেয়েও বেঁচে রয়েছে। কিন্তু শিবিরের রগ কাটার কৌশলের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। ছাত্রলীগ এখন শিবির লীগ হয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘নাসির যুবদলের সক্রিয় কর্মী। দলীয় প্রোগ্রাম শেষে নাসির শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে তার মোটরসাইকেলের গতি রোধ করে ৮-১০ জনের একটি গ্রুপ তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে যায়।’ অভিযুক্তরা আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও বর্তমানে জামায়াত–শিবিরের রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় এলাকায় অরাজকতা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
নিহত নাসিরের বাবা শাহজাহান বলেন, ‘আমি জামায়াত আর আওয়ামী লীগ চিনি না। আমার একমাত্র ছেলেকে যারা হত্যা করেছে, আমি তাদের সর্বোচ্চ বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা জামায়াতের সভাপতি হাফেজ মাওলানা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমার বাবা অসুস্থ থাকায় তাকে নিয়ে ঢাকায় চিকিৎসায় এসেছি। এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার শাহাদাত হোসেন জানান, নাসিরকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাঁর দুই পায়ের রগ কাটা ছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান জানান, যুবদল নেতা নাসিরের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনায় পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাব্বি ও তাঁর বাবা মাহবুবকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন