করিডোর ইস্যু ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল। সরকারের গোপন আলোচনার খবর প্রকাশিত হওয়ায় করিডোর বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
একইসাথে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জোরালো হয়েছে।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ভূ-রাজনৈতিক নিরাপত্তা: প্রেক্ষিত মানবিক করিডর’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ সব কথা উঠে আসে।
বিএনপির আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, করিডরের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কি কথা বলব? আমরা জানিই না সরকারের পরিকল্পনা কী। উপদেষ্টা বলেছেন, জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা বিস্মিত। এত বড় সিদ্ধান্ত সরকার কীভাবে নিলো? জাতিসংঘ এই আলোচনায় কোনো মতামত দিতে পারে না। এটি দুই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। জাতিসংঘ এখানে কেবল নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তে যুক্ত হতে পারে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন রেজুলেশন পাস হয়নি।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার প্রথমে বলেছিল আলোচনাই হয়নি, কিন্তু আমরা দেখছি আলোচনা চলছে। কাতারে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পুরো বিষয়টি এত গোপন কেন? এই সরকারের এখতিয়ারে এটা নেই। প্রধান উপদেষ্টার মুখ থেকে জানানো দরকার আসলে সরকার কি চায়। করিডোর ইস্যু শেষ হয়নি।
খসরু বলেন, করিডোর বিতর্কের পর সরকার এখন ‘চ্যানেল’ ইস্যু নিয়ে কথা বলছে। কিন্তু করিডোর আর চ্যানেল, শব্দের পার্থক্য থাকলেও মূল কথা এক। সরকার বিষয়টি স্পষ্ট করুক। আরাকান আর্মি আনুষ্ঠানিক সরকার নয়, ভারতের সঙ্গেও তাদের আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। যুদ্ধ-অস্থিরতা চলছে, সেখানে করিডোর নিয়ে আলোচনা কতটা যৌক্তিক? রোহিঙ্গাদের করিডোর দিয়ে ফেরানোর কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু তাদের সম্মানজনকভাবে ফেরানোর অধিকার আছে। করিডোরের প্রয়োজন কেন?
তিনি আরও বলেন, দেশে স্থিতিশীলতা সবচেয়ে বেশি দরকার। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়েছেন। এখন নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে সরকার আলোচনা করছে না।
আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, করিডোরের মাধ্যমে আরাকানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু মগ জালদস্যুদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকারেরই নেয়া উচিত। নির্বাচন তাড়াতাড়ি করা হলে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, করিডোর সিদ্ধান্ত সরকারের এখতিয়ারের বাইরে। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে গোপন তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। অনেক জায়গায় মানবিক করিডোর সামরিক করিডরে রূপ নিয়েছে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আরেকজন রোহিঙ্গাকেও আমরা চাই না। করিডোরের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। গোপনে নয়, চুক্তিভিত্তিক কাজ করতে হবে।
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ঘোষণার পরও নতুন করে প্রবেশ করছে। করিডোরের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। এমন সিদ্ধান্তে সরকারের যাওয়া উচিত হয়নি। সরকারের মূল কাজ ছিল নির্বাচন দেয়া, বিচার-সংস্কারের দোহাই দিয়ে নির্বাচন বিলম্বের সুযোগ নেই। বিএনপি একা নয়, অনেক দলই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব ও মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর গভর্নন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যানালাইসেসের নির্বাহী পরিচালক কর্নেল (অব) জগলুল আহসান।
আপনার মতামত লিখুন