‘চিন্ময়কে নিয়ে সংঘর্ষে পুলিশের ইন্ধন ছিল’
বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের বিতর্কিত মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন না মঞ্জুর করাকে ঘিরে গত মঙ্গলবার আদালত এলাকায় সংঘর্ষ হয়। সেখানে বিক্ষুব্ধ সনাতনী লোকদের আক্রমণে মারা যান এক আইনজীবী। তবে এই ঘটনায় পুলিশের নিস্ক্রিয়তা এবং ইন্ধন থাকার অভিযোগ তুলেছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। এ অভিযোগে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগও চেয়েছেন তিনি।
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সমাবেশে এসব অভিযোগ করেন সিনিয়র আইনজীবী নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ‘ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এই সমাবেশের আয়োজন করে।
কারাগারে নেওয়ার জন্য প্রিজনভ্যানে থাকা অবস্থায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস কীভাবে হ্যান্ডমাইকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন, তার হাতে হ্যান্ডমাইক এলো কীভাবে, এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।
আইনজীবী আলিফ হত্যার প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো আদালত বর্জন করেন চট্টগ্রামের আইনজীবীরা। ফলে এদিন আদালতে কোনও মামলার শুনানি হয়নি। এতে আদালত প্রাঙ্গণে এসে বিপাকে পড়েন বিচারপ্রার্থীরা।
নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চিন্ময় দাসকে প্রিজনভ্যানে তোলার পর পুলিশের নিস্ক্রিয়তা, প্রিজনভ্যানে তার হাতে হ্যান্ডমাইক কীভাবে গেল, তার জবাব চাই। আলিফকে হত্যার সময় কিছুটা দুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে পর্যাপ্ত পুলিশ, আর্মি, বিজিবি ছিল, কিন্তু ঘটনা নিয়ন্ত্রণে তাদের কেন ডাকা হয়নি।
আদালত চত্বরে ইসকনপন্থীরা চিন্ময় দাসকে বহনকারী প্রিজন ভ্যান ঘিরে রাখলে পুলিশ তা ফেলে সেখান থেকে চলে যায় বলে মন্তব্য করেন নাজিম উদ্দিন। এজন্য চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেন, নইলে টেনে হিঁচড়ে নামানোর হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
এই আইনজীবী বলেন, আমি অনুরোধ করব, যতগুলো মামলা হবে তাতে যেন চিন্ময় দাসকে এক নম্বর আসামি করা হয়। তা না হলে আমরা মানবো না।
তার এমন সব অভিযোগের জবাবে চট্টগ্রাম মেট্রেপলিটন পুলিশের মুখপাত্র কাজী তারেক আজিজ কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী গ্রেপ্তার হওয়ার পর দেশে বিক্ষোভ-বিদেশে শুরু হয় প্রতিক্রিয়া। তাকে জড়িয়ে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিও তোলে একটি পক্ষ।
এসবের মধ্যে কারাগারে রাখা চিন্ময়কে কোন ধারায় ডিভিশন দেওয়া হয়েছে জানতে চেয়ে আইনজীবী নেতা নাজিম উদ্দিন বলেন, জেল কোডের নিয়ম এবং আইনের কোন ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামিকে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে?
জেল সুপার এবং সিনিয়র জেল সুপারের কাছে তার ডিভিশন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, তাকে সাধারণ কয়েদির সঙ্গে রাখবেন।
সমাবেশে চট্টগ্রামের সরকারী এবং বেসরকারী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর পক্ষে আদালতে আইনজীবী হিসেবে না দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে সনাতন জাগরণ মঞ্চের ব্যানারে যে সমাবেশ হয়, তার অন্যতম সংগঠক ছিলেন চিন্ময় ব্রহ্মচারী। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় তখন ইসকনেরও নেতা ছিলেন।
২৫ অক্টোবর সেই সমাবেশের দিন চট্টগ্রাম নগরীর নিউ মার্কেট মোড়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপরে ইসকনের গেরুয়া রঙের আরেকটি পতাকা ওড়ানোর অভিযোগে চিন্ময়সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন স্থানীয় এক বিএনপি নেতা।
সেই মামলায় গত সোমবার চিন্ময়কে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাকে চট্টগ্রামের আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয় কারাগারে। চিন্ময়ের অনুসারীরা আদালতে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে বাধে সংঘাত, তার মধ্যে ধারাল অস্ত্রের আঘাতে খুন করা হয় সাইফুল ইসলাম নামে এক আইনজীবীকে। কারাগারে পাঠানোর পথে তাকে বহনকারী প্রিজনভ্যানটি অনেকটা সময় আদালত প্রাঙ্গণেই আটকে রাখেন বিক্ষোভকারীরা।
আপনার মতামত লিখুন