খুঁজুন
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ, ১৪৩১

উগ্রবাদী হিন্দুদের ঘৃণ্যতা, মুসলিম হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন আজ

মোঃ হাসানুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৫:১৩ অপরাহ্ণ
ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন আজ

সভ্যতার মাঝেই অসভ্য- এই বিতর্কের শুরু জন্মলগ্ন থেকেই। বিশেষ করে অমুসলিম সভ্যতায় এই বিতর্কের কোনো কমতি নেই। আর সেটা যদি হয় অদালিলিক হিন্দু সম্প্রদায়ের ইতিহাস। তাহলে সেখানে মানবিক সভ্যতা বিরাজ করবে, এটা সম্ভব নয়। কারণ বলা হয়ে থাকে, সনাতনী বা হিন্দু ধর্মের জন্মলগ্ন থেকেই রয়েছে উগ্রতা, রয়েছে বিতর্কিত অধ্যায়। তবে সেই বিতর্কের ইতি টেনে ভারতীয় উপমহাদেশে শান্তি নিয়ে আসে মুসলিম সভ্যতা।আর এই শান্তির আবাসস্থল ছিলো মুসলিমদের প্রাণের স্থান পবিত্র মসজিদ। যার মধ্যে ভারতের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

বিশেষ ও বহুল আলোচিত বাবরি মসজিদ ছিল ভারতের উত্তর প্রদেশে অবস্থিত অযোধ্যার একটি ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থাপনা। তৎকালীন মুঘল সম্রাট বাবরের আমলে ১৫২৮ সালে নির্মিত এই মসজিদ ভারতীয় উগ্র হিন্দুদের সৃষ্টি বিতর্কিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ইতিহাসেও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর হাজার হাজার করসেবকের হাতে ৪৬২ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক মসজিদটি ভেঙে ফেলা হয়। এতে ভারতের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলে। যার কারণে প্রতি বছর ৬ ডিসেম্বর ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা দুঃখ ভরে স্মরণ করে দিনটিকে।

উগ্রবাদী কট্টর হিন্দুত্ববাদের নিদর্শন হিসেবে প্রমাণ রাখতেই ধ্বংস করা বাবরি মসজিদ। কিন্তু এতো বছর অতিবাহিত হলেও ঘটনাটি আজও ভারতের রাজনীতি ও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে রয়েছে। এমনকি সমগ্র মুসলিম বিশ্বের কাছে দিনটি ও ঘটনাটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

<<<পবিত্র বাবরি মসজিদের ইতিহাস>>>

নির্মাণকাল ও স্থাপত্য:
ঐতিহাসিক মসজিদটি ১৫২৮-২৯ সালে মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি নির্মাণ করেন। সম্রাট বাবরের নাম অনুসারেই তা বাবরি মসজিদ নামে পরিচিত। পরবর্তীতে তা ওই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এমনকি ধীরে ধীরে মসজিদটির গাম্ভীর্য, পরিচালনা, মানবিকতা সমগ্র মুসলিম বিশ্বের কাছে পরিচিত হতে থাকে।

স্থাপত্যশৈলী ও শীতলীকরণ ব্যবস্থা:
অনন্য স্থাপত্যশৈলীর জন্য বাবরি মসজিদ বিশেষভাবে বিখ্যাত। এর স্থাপত্যে মুঘল শৈলীর প্রভাব ছিল। এর অভ্যন্তরীণ শব্দ-নিয়ন্ত্রণ এবং শীতলীকরণের ব্যবস্থা ষোড়শ শতকের এক বিস্ময়। বাবরি মসজিদের চিত্তাকর্ষক স্বনবিদ্যা প্রসঙ্গে ‘হিস্টোরিক স্ট্রাকচারস অব অযোধ্যা’ বইতে পাওয়া যায়, ‘মিম্বর থেকে কণ্ঠ স্থাপন ও প্রক্ষেপণ ষোড়শ শতাব্দীর একটি স্থাপনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নত। এই কাঠামোতে শব্দের অনন্য স্থাপনা দর্শনার্থীকে বিস্মিত করবে। যা সবাইকে মসজিদটির প্রতি ব্যাপকভাবে আকর্ষিত করতো।

আধুনিক স্থপতিদের মতে, বাবরি মসজিদের চিত্তাকর্ষক স্বনবিদ্যার কারণ হলো, মসজিদটির মিহরাব (মসজিদের একদিকে একটি অর্ধবৃত্তাকার দেয়াল যা কিবলা নির্দেশ করে) ও পার্শ্ববর্তী দেয়ালগুলোতে বিভিন্ন খাঁজ রয়েছে যা অনুনাদক হিসাবে কাজ করত। এই নকশা মিহরাবে অবস্থিত ইমামের কথা সবাইকে শুনতে সাহায্য করত। এছাড়াও বাবরি মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বেলেপাথর অনুনাদের কাজ করে যা মসজিদটির শব্দ-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করত।

ঘৃণ্য বিতর্কের সূত্রপাত যেভাবে:
১৮৫৩ সালে প্রথমবারের মতো মন্দির-মসজিদ বিতর্কের সূত্রপাত হয়। ওই সময়ে উগ্রবাদী হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি অংশ দাবি করে, এটি ছিল রামের জন্মস্থান। পরবর্তীতে পা-চেটে তদবির করার ফলে ব্রিটিশ শাসনকালে মসজিদটির চত্বরে হিন্দুদের পূজা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হয়। ১৯৪৯ সালে হিন্দু সক্রিয়তাবাদীরা হিন্দু মহাসভার সঙ্গে জোট করে গোপনে রামের একটি মূর্তি মসজিদের অভ্যন্তরে রেখে দেয়। এরপরই সরকার দাঙ্গা ঠেকানোর অভিপ্রায়ে পুরো মসজিদকে সিলগালা করে দেয়। পরে হিন্দু-মুসলিম উভয়ই ওই স্থানে প্রবেশাধিকার পেতে আদালতে মামলা করে। আর এভাবেই চলতে থাকে মসজিদ নিয়ে ষড়যন্ত্র।

৬ ডিসেম্বর যেভাবে বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছিল:
১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে উগ্রবাদী ও কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো যেমন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও বিজেপি সহ কয়েকটি বিতর্কিত গোষ্ঠী বাবরি মসজিদের জায়গায় রামের মন্দির পুনঃনির্মাণের দাবি জোরদার করে।
১৯৯০ সালে বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানী রথযাত্রার মাধ্যমে ব্যাপক সমর্থন অর্জন করে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর লাখো করসেবক বাবরি মসজিদের চত্বরে জড়ো হয়। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার মধ্যে তারা মসজিদের গম্বুজ ভেঙে ফেলে। নাটকীয় পাহারার নামে প্রশাসনের ব্যর্থতা ও নিরাপত্তার অভাবে মসজিদটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়। ওই ঘটনার পর পুরো ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। উগ্রবাদী হিন্দুদের আক্রমনে হাজার হাজার নিরীহ মুসলিম নিহত হয়। নামমাত্র গুটিকয়েক হিন্দুও তখন মারা যায়। মুসলিম সম্প্রদায় এই ঘটনাকে তাদের ধর্মীয় অধিকার ও অস্তিত্বের ওপর আঘাত হিসেবে দেখে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ভারতের ধর্মীয় সহিষ্ণুতা নিয়ে সমালোচনা হয়। (গোপাল সারভাপেলি, দ্যা বাবরি মসজিদ ইস্যু এন্ড দ্যা হিন্দুত্বভা এজেন্ডা, পেঙ্গুইন বুকস)

<<<বাবরি মসজিদ নিয়ে আইনি লড়াই:>>>

আইনি প্রক্রিয়া:
মসজিদের ধ্বংসের পর একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ছিল জমির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক। এলাহাবাদ হাইকোর্ট ২০১০ সালে প্রহসন মূলক রায় দেয়, বিতর্কিত জমি তিনভাগে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখাড়া, রামলালার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হোক। এর ফলে উগ্রবাদী হিন্দুরা পায় জমির তিন ভাগের দুই ভাগ। মুসলিমরা এক ভাগ। এর বিরুদ্ধে সব পক্ষই উচ্চ আদালতে আপিল করে।

সুপ্রিম কোর্টের নাটকীয় রায় (২০১৯):
২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের রায়কে রদ করে ঘোষণা দেয়, বাবরি মসজিদের ২ দশমিক ৭৭ একরের পুরো জমি এমন একটি ট্রাস্টকে দিতে হবে যারা হিন্দু মন্দির নির্মাণ করবে। একই সঙ্গে আদালত সরকারকে নির্দেশ দেয়, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে বিকল্প ৫ একর জমি দিতে হবে মসজির নির্মাণের জন্য। অতঃপর মামলার শুনানিতে ‘৯২ সালের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত’ হওয়াকে নাকচ করে বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি (পরবর্তীতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), মুরলী মনোহর জোশী, উমা ভারতীসহ মোট ৩২ জন অভিযুক্তকে আদালত সসম্মানে মুক্তি দেয়। এই রায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি করে। কারণ ধ্বংস হওয়া বাবরি মসজিদ কোনো মন্দির ধ্বংস করে এর ওপর গড়ে উঠেছে কিনা এই বিষয়ে তিনজন বিচারক একমত হতে পারেননি। (প্রতাপ ভানু, দ্য ইন্ডিয়ান জুডিশিয়ারি অ্যান্ড দ্য বাবরি মসজিদ কেস, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস)

বাবরি মসজিদ ভাঙার পরবর্তী প্রভাব:
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনা ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে। তা শুধুমাত্র ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক নয়, বরং বিশ্বমঞ্চে ভারতের পরিচিতিতেও গভীর ছাপ ফেলে।

ওই ঘটনার উল্লেখযোগ্য কিছু প্রভাব নিম্নে আলোচনা করা হলো :

>>>১. সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও উত্তেজনা:
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর ভারতে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনা মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে গভীর আঘাত হানে এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তীব্রতর হয়। ঘটনার পরপরই মুম্বাই, দিল্লি, আহমেদাবাদ, কানপুরসহ বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গায় প্রায় দুই হাজার মানুষ নিহত হয়, যার বেশিরভাগ ছিল মুসলিম। মূলত সে-সময় প্ল্যান করে মুসলিম নিধন কর্মসূচি হাত নেয় উগ্রবাদী হিন্দু রাষ্ট্রটি।

>>>২. হিন্দুত্ববাদের উত্থান:
বাবরি মসজিদ ধ্বংস ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। কারণ এ ঘটনার পরই বিজেপির মতো কট্টরপন্থী, হিন্দুত্ববাদী, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি তৈরি করে। ১৯৯৮ সালে উগ্রবাদী বিজেপি কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় আসে এবং হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রসার ঘটে। তা ছাড়া এই ঘটনা ভারতীয় রাজনীতিতে ধর্মীয় মেরুকরণকে ত্বরান্বিত করে। ফলে হিন্দুত্ববাদকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। সেই থেকে শুরু হয় ভারত থেকে মুসলিম উচ্ছেদের নারকীয় তান্ডল।

>>>৩. বিচারব্যবস্থা ও আইন প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন:
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর আদালত এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়। এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে (২০১০) বিতর্কিত জমি তিন ভাগে বিভক্ত করতে বলা হয়। আর সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ে (২০১৯) হিন্দুদের পক্ষে যায় এবং বিতর্কিত জমিতে রাম মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয় এবং মুসলিমদের জন্য বিকল্প জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। মুসলিম সম্প্রদায় আদালতের রায়কে তাদের অধিকারের প্রতি বৈষম্যমূলক হিসেবে দেখে। এতে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।

>>>৪. আন্তর্জাতিক প্রভাব ও সমালোচনা:
বাবরি মসজিদ ধ্বংস আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করে। ফলে সৌদি আরব, পাকিস্তান, ইরানসহ মুসলিম দেশগুলো এই ঘটনার এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি দেশটির আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।

>>>৫. ধর্মীয় সম্প্রীতির অবনতি:
মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ভারতের ধর্মীয় সম্প্রীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তা ভারতের ধর্মীয় বহুত্ববাদী চরিত্রের ওপর চপেটাঘাত করে। তা ছাড়া হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কে চরম অবনতি ঘটে। তা ছাড় মুসলিম সম্প্রদায় নিজেদের সামাজিক ও ধর্মীয় অধিকার নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগতে থাকে। (মুজাফফর আলম, দ্যা মুসলিম মাইনোরিটি অ্যান্ড দ্যা ইন্ডিয়ান স্টেট)

>>>৬. অর্থনৈতিক প্রভাব:
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও উত্তেজনার কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দেয়। বিশেষত শহুরে এলাকায় এর বিরূপ প্রভাব দেখা যায়। একাধিকবার মুসলমানদের দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়েও ধূলিস্যাৎ করা হয়। এতে ভারতের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার প্রতি বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ কমে যায়।

>>>৭. শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রভাব:
সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা শিক্ষাক্ষেত্রে ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ধর্মীয় উত্তেজনার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেরুকরণ দেখা দেয়। এমনকি মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাও ঘটে। তা ছাড়া ভারতীয় সংস্কৃতির বহুমাত্রিকতায় প্রভাব পড়ে। এতে ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতি সংবেদনশীলতা কমে যায়। বহু ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস করা হয় যা এখনো চলমান। (জেফারলট, দ্যা হিন্দু ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট অ্যান্ড ইন্ডিয়ান পলিটিক্স)

ঠিক ৩২ বছর পরে আজও পবিত্র বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি গভীর স্মৃতি ও বেদনার প্রতীক। তা ভারতীয় মুসলিমদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলেছে। বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনা শুধুমাত্র একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের বিলুপ্তি নয়, বরং তা ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। ৩২ বছর পরও এই ঘটনার প্রভাব পুরো দেশজুড়ে বিদ্যমান। ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই ক্ষত নিরাময় সম্ভব। তা শুধু ভারত নয়, পুরো বিশ্বের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।

একনজরে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ইতিহাস:
১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসের ৬ তারিখে কট্টরপন্থী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং এর সহযোগী সংগঠনের উগ্রবাদী হিন্দু কর্মীরা উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যাতে ষোড়শ শতাব্দীর এই ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। ঐ স্থানে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলো দ্বারা আয়োজিত এক রাজনৈতিক সমাবেশে আগত লোকজন সহিংস হয়ে উঠার পর ধ্বংসযজ্ঞটি সংঘটিত হয়। মূলত এটি তাদের পূর্ব পরিকল্পনা ছিলো।

অসমর্থিত ও বিতর্কিত হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী অযোধ্যা হল রামের জন্মভূমি। ষোড়শ শতাব্দীতে মুঘল সেনাপতি মির বাকি একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা বাবরি মসজিদ নামে পরিচিত। তিনি যে স্থানে মসজিদটি নির্মাণ করেন তা কিছু হিন্দুর কাছে রাম জন্মভূমি বলে অভিহিত হয়ে থাকে। আশির দশকে কট্টরপন্থী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তাদের (ভিএইচপি) তাদের রাজনৈতিক সহযোগী উগ্রবাদী ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) সাথে নিয়ে ঐ স্থানে রাম মন্দির নির্মাণের জন্য প্রচারাভিযান চালায়। রাম মন্দির নির্মাণের জন্য বিভিন্ন শোভাযাত্রা ও মিছিল আয়োজন করা হয়েছিল। এসব শোভাযাত্রা ও মিছিলের মাঝে অন্তর্ভুক্ত ছিল রাম রথ যাত্রা, যার নেতৃত্বে ছিলেন লাল কৃষ্ণ আদভানি। অস্ত্রসমেত সে-সব শোডাউন ছিল সন্ত্রাসী শোডাউনের প্রতীক।

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভিএইচপি ও বিজেপি ঐ স্থানে প্রায় দেড় লাখ অস্ত্রধারী করসেবককে নিয়ে একটি শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রা চলাকালে তারা সহিংস হয়ে পড়ে এবং আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে মসজিদটি ভেঙে ফেলে সন্ত্রাসীরা।

পরবর্তীতে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায় যে, ঘটনাটির সাথে ৬৮ জন জড়িত, যাদের মাঝে কিছু বিজেপি এবং ভিএইচপির নেতারও নাম বিদ্যমান। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দরুন ভারতের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মাঝে সৃষ্টি হওয়া রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কয়েকমাস ধরে চলেছিল, যা কমপক্ষে ২,০০০ জন মানুষের মৃত্যু ঘটায়। সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, সেই দাঙ্গায় বেশিরভাগ মুসলিমকেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। অনেকেই মারাত্নকভাবে জখম ও সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়। এমন নৃশংস, নারকীয় তান্ডবের ফলে পাকিস্তান ও বাংলাদেশেও হিন্দুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক কর্মসূচির শুরু হয়। সে-সময় সামান্য সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও মুসলিম নেতা ও ইমাম মাসায়েখদের হস্তক্ষেপে তা থেমে যায়।

মিরিকপুর গঙ্গাচরণ তপশিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের “পুনর্মিলনী”

মোঃ লিটন মিয়া, টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১:৫৬ অপরাহ্ণ
মিরিকপুর গঙ্গাচরণ তপশিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের “পুনর্মিলনী”

টাঙ্গাইলে বাসাইলে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে মিরিকপুর গঙ্গাচরণ তপশিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী-২০২৪ (এসএসসি ব্যাচ ১৯৯১-২০০০) অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় বর্নাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে পুনর্মিলনীর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

এ উপলক্ষে মিরিকপুর গঙ্গাচরণ তপশিলী উচ্চ বিদ্যালয় ও মাঠ প্রাঙ্গণ প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। একে অপরের সাথে প্রানের মিলনমেলায় অংশ গ্রহণ করে, স্মৃতিচারণ, শুভেচ্ছা বিনিময় করে।

কুমুদিনী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন(১৯৯১) এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক জিতেন্দ্র লাল সরকার, বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান শিক্ষক মো. হায়দার আলী খান, প্রাক্তন শিক্ষক মো. এরশাদ আলী খান, মো. আরফান আলী খান, জিলমোহন সরকার, জগদীশ চন্দ্র কর্মকার, রহিদাশ কর্মকার, হানিব খান, শ্রীদাম চন্দ্র  গোস্বামী, সুস্তোষ কুমার সরকার।

এসময উপস্থিতি ছিলেন ১৯৯১-২০০০ সালের এসএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ। পরে সন্ধ্যায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

নরসিংদীর মাধবদীতে চাঁদা না দেওয়ায় শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ

মোঃ আলম মৃধা, স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১:৫৩ অপরাহ্ণ
নরসিংদীর মাধবদীতে চাঁদা না দেওয়ায় শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ

মাধবদীতে চাঁদা না দেওয়ায় নুর মোহাম্মদ নামে এক টেক্সটাইল মালিককে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। আজ (২১ ডিসেম্বর) হত্যার পর গুমের উদ্দেশ্যে লাশ ফেলতে গিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীদের হাতে আটক হয় অভিযুক্তরা। পরে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয় স্থানীয়রা।

জানা যায়, অটককৃতরা হলো মাধবদী কাঠালিয়া গ্রামের রববানি মিয়ার ছেলে রবিন (২১), একই গ্রামের এবাদুলাল্লাহ হোসেনের ছেলে রুবেল (২২), কোলাতপুর গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে আলামিন (৪২), একই এলাকার আব্দুল রশিদ এর ছেলে রকিব হোসেন (২১)।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিন, রকিব, আলামিন ও রুবেলসহ বেশ কয়েকজন নুর মোহাম্মদের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। তবে নিহত ব্যক্তি চাঁদা দিতে অস্বীকার করেন।
এ নিয়ে তাদের সাথে টেক্সটাইল মালিকের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এরই জের ধরে গতকাল শুক্রবার রাতে নূর মোহাম্মদকে ফোন করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। পরে তাকে পাশের একটি বন্ধ কারখানায় নিয়ে যায়া। এক পর্যায়ে চাঁদা দাবিকারী রুবেল, রকিব, রবিন, আলামিনসহ অজ্ঞাত নামা ব্যক্তিরা নূর মোহাম্মদকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

হত্যার পর নিহত নূর মোহাম্মদের লাশ গুমের উদ্দেশ্যে ভোর রাতে বস্তাবন্দি করে নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার সীমান্তে ফেলে দিতে যায়। লাশ ফেলার সময় স্থানীয় লোকজন দেখে ফেলে। পরে স্থানীয়রা তাদের আটক করে মাধবদী থানা পুলিশকে খবর দেয়। দুপুরে পুলিশ ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে ও ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ৪ জনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়।

নিহত নুর মোহাম্মদ সদর উপজেলার মাধবদী কাঠালিয়া ইউনিয়নের কোলাতপুর গ্রামের আলকাস মিয়ার ছেলে।

এই হত্যার বিষয়ে জানতে মাধবদী মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ নজরুল ইসলামকে সরকারি মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলে ফোনটি রিসিভ করেননি।

রাজধানীর মগবাজারে ট্রেনের ধাক্কাই এক যুবকের মৃত্যু

আব্দুল্লাহ আল মোত্তালিব, স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮:৫১ অপরাহ্ণ
রাজধানীর মগবাজারে ট্রেনের ধাক্কাই এক যুবকের মৃত্যু

রাজধানীর মগবাজার রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মোঃ আপন (২২)নিহত হয়েছে। নিহত আপন কুড়িগ্রাম নাগেশ্বরী উপজেলার মৃত গোলাম মোস্তফার ছেলে। বর্তমানে মগবাজার এলাকায় ভাড়া থাকতো।

শনিবার(২১ ডিসেম্বর)সন্ধ্যা সোয়া ৫টা নাগাদ অচেতন অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতালে নিয়ে আসা পথচারী সোহাগ বলেন, আজ বিকেলের দিকে মগবাজার রেল ক্রসিং পারাপারের সময় কমলাপুরগামী একটি ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয় ওই যুবকটি।পরে দ্রুততাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জানান ওই যুবকটি আর বেঁচে নেই।

তিনি আরও বলে,
আমরা ওই যুবকের পকেটে থাকা কাগজে লেখা মোবাইল নাম্বারে তার পরিবারের সাথে কথা বলে তার নাম পরিচয় জানতে পেরেছি। পরিবারের সদস্যরা ঢাকা মেডিকেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মোঃ ফারুক হোসেন, ওই যুবকের মরদেহ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে। আমরা বিষয়টি ঢাকা রেলওয়ে থানা পুলিশকে জানিয়েছি।