খুঁজুন
মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

উগ্রবাদী হিন্দুদের ঘৃণ্যতা, মুসলিম হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন আজ

মোঃ হাসানুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৫:১৩ অপরাহ্ণ
ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন আজ

সভ্যতার মাঝেই অসভ্য- এই বিতর্কের শুরু জন্মলগ্ন থেকেই। বিশেষ করে অমুসলিম সভ্যতায় এই বিতর্কের কোনো কমতি নেই। আর সেটা যদি হয় অদালিলিক হিন্দু সম্প্রদায়ের ইতিহাস। তাহলে সেখানে মানবিক সভ্যতা বিরাজ করবে, এটা সম্ভব নয়। কারণ বলা হয়ে থাকে, সনাতনী বা হিন্দু ধর্মের জন্মলগ্ন থেকেই রয়েছে উগ্রতা, রয়েছে বিতর্কিত অধ্যায়। তবে সেই বিতর্কের ইতি টেনে ভারতীয় উপমহাদেশে শান্তি নিয়ে আসে মুসলিম সভ্যতা।আর এই শান্তির আবাসস্থল ছিলো মুসলিমদের প্রাণের স্থান পবিত্র মসজিদ। যার মধ্যে ভারতের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

বিশেষ ও বহুল আলোচিত বাবরি মসজিদ ছিল ভারতের উত্তর প্রদেশে অবস্থিত অযোধ্যার একটি ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থাপনা। তৎকালীন মুঘল সম্রাট বাবরের আমলে ১৫২৮ সালে নির্মিত এই মসজিদ ভারতীয় উগ্র হিন্দুদের সৃষ্টি বিতর্কিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ইতিহাসেও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর হাজার হাজার করসেবকের হাতে ৪৬২ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক মসজিদটি ভেঙে ফেলা হয়। এতে ভারতের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলে। যার কারণে প্রতি বছর ৬ ডিসেম্বর ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা দুঃখ ভরে স্মরণ করে দিনটিকে।

উগ্রবাদী কট্টর হিন্দুত্ববাদের নিদর্শন হিসেবে প্রমাণ রাখতেই ধ্বংস করা বাবরি মসজিদ। কিন্তু এতো বছর অতিবাহিত হলেও ঘটনাটি আজও ভারতের রাজনীতি ও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে রয়েছে। এমনকি সমগ্র মুসলিম বিশ্বের কাছে দিনটি ও ঘটনাটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

<<<পবিত্র বাবরি মসজিদের ইতিহাস>>>

নির্মাণকাল ও স্থাপত্য:
ঐতিহাসিক মসজিদটি ১৫২৮-২৯ সালে মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি নির্মাণ করেন। সম্রাট বাবরের নাম অনুসারেই তা বাবরি মসজিদ নামে পরিচিত। পরবর্তীতে তা ওই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এমনকি ধীরে ধীরে মসজিদটির গাম্ভীর্য, পরিচালনা, মানবিকতা সমগ্র মুসলিম বিশ্বের কাছে পরিচিত হতে থাকে।

স্থাপত্যশৈলী ও শীতলীকরণ ব্যবস্থা:
অনন্য স্থাপত্যশৈলীর জন্য বাবরি মসজিদ বিশেষভাবে বিখ্যাত। এর স্থাপত্যে মুঘল শৈলীর প্রভাব ছিল। এর অভ্যন্তরীণ শব্দ-নিয়ন্ত্রণ এবং শীতলীকরণের ব্যবস্থা ষোড়শ শতকের এক বিস্ময়। বাবরি মসজিদের চিত্তাকর্ষক স্বনবিদ্যা প্রসঙ্গে ‘হিস্টোরিক স্ট্রাকচারস অব অযোধ্যা’ বইতে পাওয়া যায়, ‘মিম্বর থেকে কণ্ঠ স্থাপন ও প্রক্ষেপণ ষোড়শ শতাব্দীর একটি স্থাপনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নত। এই কাঠামোতে শব্দের অনন্য স্থাপনা দর্শনার্থীকে বিস্মিত করবে। যা সবাইকে মসজিদটির প্রতি ব্যাপকভাবে আকর্ষিত করতো।

আধুনিক স্থপতিদের মতে, বাবরি মসজিদের চিত্তাকর্ষক স্বনবিদ্যার কারণ হলো, মসজিদটির মিহরাব (মসজিদের একদিকে একটি অর্ধবৃত্তাকার দেয়াল যা কিবলা নির্দেশ করে) ও পার্শ্ববর্তী দেয়ালগুলোতে বিভিন্ন খাঁজ রয়েছে যা অনুনাদক হিসাবে কাজ করত। এই নকশা মিহরাবে অবস্থিত ইমামের কথা সবাইকে শুনতে সাহায্য করত। এছাড়াও বাবরি মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বেলেপাথর অনুনাদের কাজ করে যা মসজিদটির শব্দ-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করত।

ঘৃণ্য বিতর্কের সূত্রপাত যেভাবে:
১৮৫৩ সালে প্রথমবারের মতো মন্দির-মসজিদ বিতর্কের সূত্রপাত হয়। ওই সময়ে উগ্রবাদী হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি অংশ দাবি করে, এটি ছিল রামের জন্মস্থান। পরবর্তীতে পা-চেটে তদবির করার ফলে ব্রিটিশ শাসনকালে মসজিদটির চত্বরে হিন্দুদের পূজা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হয়। ১৯৪৯ সালে হিন্দু সক্রিয়তাবাদীরা হিন্দু মহাসভার সঙ্গে জোট করে গোপনে রামের একটি মূর্তি মসজিদের অভ্যন্তরে রেখে দেয়। এরপরই সরকার দাঙ্গা ঠেকানোর অভিপ্রায়ে পুরো মসজিদকে সিলগালা করে দেয়। পরে হিন্দু-মুসলিম উভয়ই ওই স্থানে প্রবেশাধিকার পেতে আদালতে মামলা করে। আর এভাবেই চলতে থাকে মসজিদ নিয়ে ষড়যন্ত্র।

৬ ডিসেম্বর যেভাবে বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছিল:
১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে উগ্রবাদী ও কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো যেমন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও বিজেপি সহ কয়েকটি বিতর্কিত গোষ্ঠী বাবরি মসজিদের জায়গায় রামের মন্দির পুনঃনির্মাণের দাবি জোরদার করে।
১৯৯০ সালে বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানী রথযাত্রার মাধ্যমে ব্যাপক সমর্থন অর্জন করে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর লাখো করসেবক বাবরি মসজিদের চত্বরে জড়ো হয়। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার মধ্যে তারা মসজিদের গম্বুজ ভেঙে ফেলে। নাটকীয় পাহারার নামে প্রশাসনের ব্যর্থতা ও নিরাপত্তার অভাবে মসজিদটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়। ওই ঘটনার পর পুরো ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। উগ্রবাদী হিন্দুদের আক্রমনে হাজার হাজার নিরীহ মুসলিম নিহত হয়। নামমাত্র গুটিকয়েক হিন্দুও তখন মারা যায়। মুসলিম সম্প্রদায় এই ঘটনাকে তাদের ধর্মীয় অধিকার ও অস্তিত্বের ওপর আঘাত হিসেবে দেখে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ভারতের ধর্মীয় সহিষ্ণুতা নিয়ে সমালোচনা হয়। (গোপাল সারভাপেলি, দ্যা বাবরি মসজিদ ইস্যু এন্ড দ্যা হিন্দুত্বভা এজেন্ডা, পেঙ্গুইন বুকস)

<<<বাবরি মসজিদ নিয়ে আইনি লড়াই:>>>

আইনি প্রক্রিয়া:
মসজিদের ধ্বংসের পর একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ছিল জমির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক। এলাহাবাদ হাইকোর্ট ২০১০ সালে প্রহসন মূলক রায় দেয়, বিতর্কিত জমি তিনভাগে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখাড়া, রামলালার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হোক। এর ফলে উগ্রবাদী হিন্দুরা পায় জমির তিন ভাগের দুই ভাগ। মুসলিমরা এক ভাগ। এর বিরুদ্ধে সব পক্ষই উচ্চ আদালতে আপিল করে।

সুপ্রিম কোর্টের নাটকীয় রায় (২০১৯):
২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের রায়কে রদ করে ঘোষণা দেয়, বাবরি মসজিদের ২ দশমিক ৭৭ একরের পুরো জমি এমন একটি ট্রাস্টকে দিতে হবে যারা হিন্দু মন্দির নির্মাণ করবে। একই সঙ্গে আদালত সরকারকে নির্দেশ দেয়, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে বিকল্প ৫ একর জমি দিতে হবে মসজির নির্মাণের জন্য। অতঃপর মামলার শুনানিতে ‘৯২ সালের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত’ হওয়াকে নাকচ করে বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি (পরবর্তীতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), মুরলী মনোহর জোশী, উমা ভারতীসহ মোট ৩২ জন অভিযুক্তকে আদালত সসম্মানে মুক্তি দেয়। এই রায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি করে। কারণ ধ্বংস হওয়া বাবরি মসজিদ কোনো মন্দির ধ্বংস করে এর ওপর গড়ে উঠেছে কিনা এই বিষয়ে তিনজন বিচারক একমত হতে পারেননি। (প্রতাপ ভানু, দ্য ইন্ডিয়ান জুডিশিয়ারি অ্যান্ড দ্য বাবরি মসজিদ কেস, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস)

বাবরি মসজিদ ভাঙার পরবর্তী প্রভাব:
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনা ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে। তা শুধুমাত্র ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক নয়, বরং বিশ্বমঞ্চে ভারতের পরিচিতিতেও গভীর ছাপ ফেলে।

ওই ঘটনার উল্লেখযোগ্য কিছু প্রভাব নিম্নে আলোচনা করা হলো :

>>>১. সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও উত্তেজনা:
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর ভারতে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনা মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে গভীর আঘাত হানে এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তীব্রতর হয়। ঘটনার পরপরই মুম্বাই, দিল্লি, আহমেদাবাদ, কানপুরসহ বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গায় প্রায় দুই হাজার মানুষ নিহত হয়, যার বেশিরভাগ ছিল মুসলিম। মূলত সে-সময় প্ল্যান করে মুসলিম নিধন কর্মসূচি হাত নেয় উগ্রবাদী হিন্দু রাষ্ট্রটি।

>>>২. হিন্দুত্ববাদের উত্থান:
বাবরি মসজিদ ধ্বংস ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। কারণ এ ঘটনার পরই বিজেপির মতো কট্টরপন্থী, হিন্দুত্ববাদী, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি তৈরি করে। ১৯৯৮ সালে উগ্রবাদী বিজেপি কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় আসে এবং হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রসার ঘটে। তা ছাড়া এই ঘটনা ভারতীয় রাজনীতিতে ধর্মীয় মেরুকরণকে ত্বরান্বিত করে। ফলে হিন্দুত্ববাদকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। সেই থেকে শুরু হয় ভারত থেকে মুসলিম উচ্ছেদের নারকীয় তান্ডল।

>>>৩. বিচারব্যবস্থা ও আইন প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন:
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর আদালত এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়। এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে (২০১০) বিতর্কিত জমি তিন ভাগে বিভক্ত করতে বলা হয়। আর সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ে (২০১৯) হিন্দুদের পক্ষে যায় এবং বিতর্কিত জমিতে রাম মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয় এবং মুসলিমদের জন্য বিকল্প জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। মুসলিম সম্প্রদায় আদালতের রায়কে তাদের অধিকারের প্রতি বৈষম্যমূলক হিসেবে দেখে। এতে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।

>>>৪. আন্তর্জাতিক প্রভাব ও সমালোচনা:
বাবরি মসজিদ ধ্বংস আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করে। ফলে সৌদি আরব, পাকিস্তান, ইরানসহ মুসলিম দেশগুলো এই ঘটনার এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি দেশটির আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।

>>>৫. ধর্মীয় সম্প্রীতির অবনতি:
মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ভারতের ধর্মীয় সম্প্রীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তা ভারতের ধর্মীয় বহুত্ববাদী চরিত্রের ওপর চপেটাঘাত করে। তা ছাড়া হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কে চরম অবনতি ঘটে। তা ছাড় মুসলিম সম্প্রদায় নিজেদের সামাজিক ও ধর্মীয় অধিকার নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগতে থাকে। (মুজাফফর আলম, দ্যা মুসলিম মাইনোরিটি অ্যান্ড দ্যা ইন্ডিয়ান স্টেট)

>>>৬. অর্থনৈতিক প্রভাব:
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও উত্তেজনার কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দেয়। বিশেষত শহুরে এলাকায় এর বিরূপ প্রভাব দেখা যায়। একাধিকবার মুসলমানদের দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়েও ধূলিস্যাৎ করা হয়। এতে ভারতের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার প্রতি বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ কমে যায়।

>>>৭. শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রভাব:
সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা শিক্ষাক্ষেত্রে ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ধর্মীয় উত্তেজনার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেরুকরণ দেখা দেয়। এমনকি মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাও ঘটে। তা ছাড়া ভারতীয় সংস্কৃতির বহুমাত্রিকতায় প্রভাব পড়ে। এতে ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতি সংবেদনশীলতা কমে যায়। বহু ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস করা হয় যা এখনো চলমান। (জেফারলট, দ্যা হিন্দু ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট অ্যান্ড ইন্ডিয়ান পলিটিক্স)

ঠিক ৩২ বছর পরে আজও পবিত্র বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি গভীর স্মৃতি ও বেদনার প্রতীক। তা ভারতীয় মুসলিমদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলেছে। বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনা শুধুমাত্র একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের বিলুপ্তি নয়, বরং তা ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। ৩২ বছর পরও এই ঘটনার প্রভাব পুরো দেশজুড়ে বিদ্যমান। ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই ক্ষত নিরাময় সম্ভব। তা শুধু ভারত নয়, পুরো বিশ্বের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।

একনজরে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ইতিহাস:
১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসের ৬ তারিখে কট্টরপন্থী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং এর সহযোগী সংগঠনের উগ্রবাদী হিন্দু কর্মীরা উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যাতে ষোড়শ শতাব্দীর এই ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। ঐ স্থানে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলো দ্বারা আয়োজিত এক রাজনৈতিক সমাবেশে আগত লোকজন সহিংস হয়ে উঠার পর ধ্বংসযজ্ঞটি সংঘটিত হয়। মূলত এটি তাদের পূর্ব পরিকল্পনা ছিলো।

অসমর্থিত ও বিতর্কিত হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী অযোধ্যা হল রামের জন্মভূমি। ষোড়শ শতাব্দীতে মুঘল সেনাপতি মির বাকি একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা বাবরি মসজিদ নামে পরিচিত। তিনি যে স্থানে মসজিদটি নির্মাণ করেন তা কিছু হিন্দুর কাছে রাম জন্মভূমি বলে অভিহিত হয়ে থাকে। আশির দশকে কট্টরপন্থী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তাদের (ভিএইচপি) তাদের রাজনৈতিক সহযোগী উগ্রবাদী ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) সাথে নিয়ে ঐ স্থানে রাম মন্দির নির্মাণের জন্য প্রচারাভিযান চালায়। রাম মন্দির নির্মাণের জন্য বিভিন্ন শোভাযাত্রা ও মিছিল আয়োজন করা হয়েছিল। এসব শোভাযাত্রা ও মিছিলের মাঝে অন্তর্ভুক্ত ছিল রাম রথ যাত্রা, যার নেতৃত্বে ছিলেন লাল কৃষ্ণ আদভানি। অস্ত্রসমেত সে-সব শোডাউন ছিল সন্ত্রাসী শোডাউনের প্রতীক।

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভিএইচপি ও বিজেপি ঐ স্থানে প্রায় দেড় লাখ অস্ত্রধারী করসেবককে নিয়ে একটি শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রা চলাকালে তারা সহিংস হয়ে পড়ে এবং আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে মসজিদটি ভেঙে ফেলে সন্ত্রাসীরা।

পরবর্তীতে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায় যে, ঘটনাটির সাথে ৬৮ জন জড়িত, যাদের মাঝে কিছু বিজেপি এবং ভিএইচপির নেতারও নাম বিদ্যমান। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দরুন ভারতের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মাঝে সৃষ্টি হওয়া রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কয়েকমাস ধরে চলেছিল, যা কমপক্ষে ২,০০০ জন মানুষের মৃত্যু ঘটায়। সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, সেই দাঙ্গায় বেশিরভাগ মুসলিমকেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। অনেকেই মারাত্নকভাবে জখম ও সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়। এমন নৃশংস, নারকীয় তান্ডবের ফলে পাকিস্তান ও বাংলাদেশেও হিন্দুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক কর্মসূচির শুরু হয়। সে-সময় সামান্য সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও মুসলিম নেতা ও ইমাম মাসায়েখদের হস্তক্ষেপে তা থেমে যায়।

ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরকীয়া; গুঞ্জন নিয়ে যা বললেন সারিকা

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ২ জুন, ২০২৫, ১১:৫৯ অপরাহ্ণ
ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরকীয়া; গুঞ্জন নিয়ে যা বললেন সারিকা

ব্যবসায়ী মাহিম করিম খানের সঙ্গে প্রথম বিয়ে ভাঙার পর জি এস বদরুদ্দিন আহমেদ (রাহী) কে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও মডেল সারিকা সাবরিন। কিন্তু বিয়ের তিন বছর পেরোতেই আবারও বিবাহবিচ্ছেদের গুঞ্জন উঠেছে তার জীবনে। আর এজন্য দায়ী করা হয়েছে পরকীয়াকে। গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ায় বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খোলামেলা কথা বলেন অভিনেত্রী।

শোবিজ পাড়ায় গুঞ্জন উঠেছে, গুলশানের এক কেমিক্যাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়েছেন সারিকা। স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহ বেড়ে যাওয়ায় নতুন এক ব্যবসায়ীকে মন দিয়েছেন।

ভক্তমহল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরকীয়ার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন সারিকা। সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে টুকটাক বনিবনা না হওয়া বা ন্যাচারাল ১৯-২০ যেমন ঝগড়া হয়, ওটাই হয়েছে। ৩ বছর পেরিয়ে ৪ বছরের সংসার জীবনে আছি। দীর্ঘ সময়ে আমরা এক রাতও আলাদা থাকিনি।’

পরকীয়া-বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে এ অভিনেত্রী বলেন, ‘এমন তথ্য একেবারেই ভিত্তিহীন। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি আমার স্বামী-সন্তানের সঙ্গে গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিলাম। ঘুরতে যেয়েই ভুয়া খবরটি পেলাম। এমন খবর কে বা কারা ছড়ায় জানতে পারলে সমাধান বলতে পারতাম।’

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ব্যবসায়ী মাহিম করিম খানকে ভালোবেসে বিয়ে করেন সারিকা। পরের বছরই তাদের ঘর আলো করে আসে একমাত্র কন্যাসন্তান। কন্যা সন্তানের বয়স ১ বছর হতেই ২০১৬ সালে বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন তারা। এরপর ৬ বছর একাই ছিলেন। ২০২২ সালে দুই পরিবারের সম্মতিতে জি এস বদরুদ্দিন আহমেদ (রাহী) কে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন অভিনেত্রী।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার-আহতদের জন্য ৪০৫ কোটি বরাদ্দ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ২ জুন, ২০২৫, ১১:৫৪ অপরাহ্ণ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার-আহতদের জন্য ৪০৫ কোটি বরাদ্দ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহতদের জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সোমবার বিকেলে বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সময় তিনি এই বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানান।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস ও চেতনাকে রাষ্ট্রীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে নানা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শহীদ পরিবার ও আহতদের ভাতা, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের বিষয়টি এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

তিনি বলেন, শিগগির জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের পরিবার এবং আহতদের জন্য ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এছাড়া, তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহতদের জন্য ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যাপ্তি এবং গুরুত্ব বিবেচনায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি। এক্ষেত্রে পেনশন ব্যতীত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়াবে ৯১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা।

তিনি আরও বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় দরিদ্র, প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানোর বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে।

বৈঠকে অনুমোদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি একটি অধ্যাদেশ জারি করে বাজেটটি কার্যকর করবেন, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

ঈদযাত্রায় ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধের দাবি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ২ জুন, ২০২৫, ১১:৫২ অপরাহ্ণ
ঈদযাত্রায় ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধের দাবি

ঈদযাত্রায় যাত্রী দুর্ভোগ, দুর্ঘটনা, যানজট ও মানুষের ভোগান্তি কমাতে সব পথে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধের দাবি জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। আজ সোমবার সকালে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই দাবি জানান সমিতির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ জকরিয়া ও মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর।

এতে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদে ফিটনেসবিহীন, লক্কড়-ঝক্কড় বাস, ট্রাক, লেগুনা, টেম্পু, মাইক্রোবাস, কার, নছিমন-করিমন ও সিটি সার্ভিসের বাস-মিনিবাস দূরপাল্লার বহরে যাত্রীপরিবহনে নেমে পড়ে। মেয়াদ উত্তীর্ণ নৌযান দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করে। রেলপথেও মেয়াদ উত্তীর্ণ কোচ, ইঞ্জিন, রেলপথের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ও লাইনচ্যুতির ঘটনায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি যানজট ও ভোগান্তি তৈরি করে। এবারের ঈদে সকলপথে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

সারাদেশে প্রায় ৫ লক্ষাধিক যানবাহনের ফিটনেস নেই। ৫ লাখ ইজিবাইক, ৬০ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৭ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা, ১ লাখ নছিমন করিমন, ২০ লাখ মোটরসাইকেল প্রতিদিন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচল করছে। এছাড়াও মহাসড়কের পাশে পশুরহাট, পশুবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে যানবাহন দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসের গতি কমানোর পাশাপাশি যানজটের সৃষ্টি করছে। এসব যানবাহন জাতীয় মহাসড়ক থেকে জরুরি ভিত্তিতে উচ্ছেদ করতে হবে। সড়ক-মহাসড়কের প্রতি ইঞ্চি বেদখলমুক্ত করে বাধাহীন যানবাহন চলাচলে উদ্যোগ নিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।

এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ আনফিট নৌযানের চলাচল বন্ধ করা, প্রতিটি নৌযানের লোডলাইন অনুযায়ী অতিরিক্ত যাত্রীবহন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। সবপথের প্রতিটি রুটে যাত্রীসাধারণের নিরাপত্তা বিধান করা, বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল, ও রেলস্টেশনে অপেক্ষমান যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা করা, ব্যবহার উপযোগী প্রয়োজনীয় শৌচাগারের ব্যবস্থা করা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তার বিধান নিশ্চিত করা জরুরি। বাসা থেকে বের হলেই পথে পথে ছিনতাই, অজ্ঞানপাটি, মলমপাটি, টানাপাটিসহ যে কোনও দুষ্কৃতিকারীদের নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো, গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হচ্ছে।