খুঁজুন
সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০২৫, ১৭ চৈত্র, ১৪৩১

উগ্রবাদী হিন্দুদের ঘৃণ্যতা, মুসলিম হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন আজ

মোঃ হাসানুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৫:১৩ অপরাহ্ণ
ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন আজ

সভ্যতার মাঝেই অসভ্য- এই বিতর্কের শুরু জন্মলগ্ন থেকেই। বিশেষ করে অমুসলিম সভ্যতায় এই বিতর্কের কোনো কমতি নেই। আর সেটা যদি হয় অদালিলিক হিন্দু সম্প্রদায়ের ইতিহাস। তাহলে সেখানে মানবিক সভ্যতা বিরাজ করবে, এটা সম্ভব নয়। কারণ বলা হয়ে থাকে, সনাতনী বা হিন্দু ধর্মের জন্মলগ্ন থেকেই রয়েছে উগ্রতা, রয়েছে বিতর্কিত অধ্যায়। তবে সেই বিতর্কের ইতি টেনে ভারতীয় উপমহাদেশে শান্তি নিয়ে আসে মুসলিম সভ্যতা।আর এই শান্তির আবাসস্থল ছিলো মুসলিমদের প্রাণের স্থান পবিত্র মসজিদ। যার মধ্যে ভারতের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

বিশেষ ও বহুল আলোচিত বাবরি মসজিদ ছিল ভারতের উত্তর প্রদেশে অবস্থিত অযোধ্যার একটি ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থাপনা। তৎকালীন মুঘল সম্রাট বাবরের আমলে ১৫২৮ সালে নির্মিত এই মসজিদ ভারতীয় উগ্র হিন্দুদের সৃষ্টি বিতর্কিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ইতিহাসেও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর হাজার হাজার করসেবকের হাতে ৪৬২ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক মসজিদটি ভেঙে ফেলা হয়। এতে ভারতের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলে। যার কারণে প্রতি বছর ৬ ডিসেম্বর ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা দুঃখ ভরে স্মরণ করে দিনটিকে।

উগ্রবাদী কট্টর হিন্দুত্ববাদের নিদর্শন হিসেবে প্রমাণ রাখতেই ধ্বংস করা বাবরি মসজিদ। কিন্তু এতো বছর অতিবাহিত হলেও ঘটনাটি আজও ভারতের রাজনীতি ও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে রয়েছে। এমনকি সমগ্র মুসলিম বিশ্বের কাছে দিনটি ও ঘটনাটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

<<<পবিত্র বাবরি মসজিদের ইতিহাস>>>

নির্মাণকাল ও স্থাপত্য:
ঐতিহাসিক মসজিদটি ১৫২৮-২৯ সালে মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি নির্মাণ করেন। সম্রাট বাবরের নাম অনুসারেই তা বাবরি মসজিদ নামে পরিচিত। পরবর্তীতে তা ওই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এমনকি ধীরে ধীরে মসজিদটির গাম্ভীর্য, পরিচালনা, মানবিকতা সমগ্র মুসলিম বিশ্বের কাছে পরিচিত হতে থাকে।

স্থাপত্যশৈলী ও শীতলীকরণ ব্যবস্থা:
অনন্য স্থাপত্যশৈলীর জন্য বাবরি মসজিদ বিশেষভাবে বিখ্যাত। এর স্থাপত্যে মুঘল শৈলীর প্রভাব ছিল। এর অভ্যন্তরীণ শব্দ-নিয়ন্ত্রণ এবং শীতলীকরণের ব্যবস্থা ষোড়শ শতকের এক বিস্ময়। বাবরি মসজিদের চিত্তাকর্ষক স্বনবিদ্যা প্রসঙ্গে ‘হিস্টোরিক স্ট্রাকচারস অব অযোধ্যা’ বইতে পাওয়া যায়, ‘মিম্বর থেকে কণ্ঠ স্থাপন ও প্রক্ষেপণ ষোড়শ শতাব্দীর একটি স্থাপনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নত। এই কাঠামোতে শব্দের অনন্য স্থাপনা দর্শনার্থীকে বিস্মিত করবে। যা সবাইকে মসজিদটির প্রতি ব্যাপকভাবে আকর্ষিত করতো।

আধুনিক স্থপতিদের মতে, বাবরি মসজিদের চিত্তাকর্ষক স্বনবিদ্যার কারণ হলো, মসজিদটির মিহরাব (মসজিদের একদিকে একটি অর্ধবৃত্তাকার দেয়াল যা কিবলা নির্দেশ করে) ও পার্শ্ববর্তী দেয়ালগুলোতে বিভিন্ন খাঁজ রয়েছে যা অনুনাদক হিসাবে কাজ করত। এই নকশা মিহরাবে অবস্থিত ইমামের কথা সবাইকে শুনতে সাহায্য করত। এছাড়াও বাবরি মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বেলেপাথর অনুনাদের কাজ করে যা মসজিদটির শব্দ-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করত।

ঘৃণ্য বিতর্কের সূত্রপাত যেভাবে:
১৮৫৩ সালে প্রথমবারের মতো মন্দির-মসজিদ বিতর্কের সূত্রপাত হয়। ওই সময়ে উগ্রবাদী হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি অংশ দাবি করে, এটি ছিল রামের জন্মস্থান। পরবর্তীতে পা-চেটে তদবির করার ফলে ব্রিটিশ শাসনকালে মসজিদটির চত্বরে হিন্দুদের পূজা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হয়। ১৯৪৯ সালে হিন্দু সক্রিয়তাবাদীরা হিন্দু মহাসভার সঙ্গে জোট করে গোপনে রামের একটি মূর্তি মসজিদের অভ্যন্তরে রেখে দেয়। এরপরই সরকার দাঙ্গা ঠেকানোর অভিপ্রায়ে পুরো মসজিদকে সিলগালা করে দেয়। পরে হিন্দু-মুসলিম উভয়ই ওই স্থানে প্রবেশাধিকার পেতে আদালতে মামলা করে। আর এভাবেই চলতে থাকে মসজিদ নিয়ে ষড়যন্ত্র।

৬ ডিসেম্বর যেভাবে বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছিল:
১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে উগ্রবাদী ও কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো যেমন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও বিজেপি সহ কয়েকটি বিতর্কিত গোষ্ঠী বাবরি মসজিদের জায়গায় রামের মন্দির পুনঃনির্মাণের দাবি জোরদার করে।
১৯৯০ সালে বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানী রথযাত্রার মাধ্যমে ব্যাপক সমর্থন অর্জন করে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর লাখো করসেবক বাবরি মসজিদের চত্বরে জড়ো হয়। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার মধ্যে তারা মসজিদের গম্বুজ ভেঙে ফেলে। নাটকীয় পাহারার নামে প্রশাসনের ব্যর্থতা ও নিরাপত্তার অভাবে মসজিদটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়। ওই ঘটনার পর পুরো ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। উগ্রবাদী হিন্দুদের আক্রমনে হাজার হাজার নিরীহ মুসলিম নিহত হয়। নামমাত্র গুটিকয়েক হিন্দুও তখন মারা যায়। মুসলিম সম্প্রদায় এই ঘটনাকে তাদের ধর্মীয় অধিকার ও অস্তিত্বের ওপর আঘাত হিসেবে দেখে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ভারতের ধর্মীয় সহিষ্ণুতা নিয়ে সমালোচনা হয়। (গোপাল সারভাপেলি, দ্যা বাবরি মসজিদ ইস্যু এন্ড দ্যা হিন্দুত্বভা এজেন্ডা, পেঙ্গুইন বুকস)

<<<বাবরি মসজিদ নিয়ে আইনি লড়াই:>>>

আইনি প্রক্রিয়া:
মসজিদের ধ্বংসের পর একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ছিল জমির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক। এলাহাবাদ হাইকোর্ট ২০১০ সালে প্রহসন মূলক রায় দেয়, বিতর্কিত জমি তিনভাগে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখাড়া, রামলালার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হোক। এর ফলে উগ্রবাদী হিন্দুরা পায় জমির তিন ভাগের দুই ভাগ। মুসলিমরা এক ভাগ। এর বিরুদ্ধে সব পক্ষই উচ্চ আদালতে আপিল করে।

সুপ্রিম কোর্টের নাটকীয় রায় (২০১৯):
২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের রায়কে রদ করে ঘোষণা দেয়, বাবরি মসজিদের ২ দশমিক ৭৭ একরের পুরো জমি এমন একটি ট্রাস্টকে দিতে হবে যারা হিন্দু মন্দির নির্মাণ করবে। একই সঙ্গে আদালত সরকারকে নির্দেশ দেয়, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে বিকল্প ৫ একর জমি দিতে হবে মসজির নির্মাণের জন্য। অতঃপর মামলার শুনানিতে ‘৯২ সালের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত’ হওয়াকে নাকচ করে বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি (পরবর্তীতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), মুরলী মনোহর জোশী, উমা ভারতীসহ মোট ৩২ জন অভিযুক্তকে আদালত সসম্মানে মুক্তি দেয়। এই রায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি করে। কারণ ধ্বংস হওয়া বাবরি মসজিদ কোনো মন্দির ধ্বংস করে এর ওপর গড়ে উঠেছে কিনা এই বিষয়ে তিনজন বিচারক একমত হতে পারেননি। (প্রতাপ ভানু, দ্য ইন্ডিয়ান জুডিশিয়ারি অ্যান্ড দ্য বাবরি মসজিদ কেস, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস)

বাবরি মসজিদ ভাঙার পরবর্তী প্রভাব:
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনা ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে। তা শুধুমাত্র ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক নয়, বরং বিশ্বমঞ্চে ভারতের পরিচিতিতেও গভীর ছাপ ফেলে।

ওই ঘটনার উল্লেখযোগ্য কিছু প্রভাব নিম্নে আলোচনা করা হলো :

>>>১. সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও উত্তেজনা:
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর ভারতে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনা মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে গভীর আঘাত হানে এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তীব্রতর হয়। ঘটনার পরপরই মুম্বাই, দিল্লি, আহমেদাবাদ, কানপুরসহ বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গায় প্রায় দুই হাজার মানুষ নিহত হয়, যার বেশিরভাগ ছিল মুসলিম। মূলত সে-সময় প্ল্যান করে মুসলিম নিধন কর্মসূচি হাত নেয় উগ্রবাদী হিন্দু রাষ্ট্রটি।

>>>২. হিন্দুত্ববাদের উত্থান:
বাবরি মসজিদ ধ্বংস ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। কারণ এ ঘটনার পরই বিজেপির মতো কট্টরপন্থী, হিন্দুত্ববাদী, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি তৈরি করে। ১৯৯৮ সালে উগ্রবাদী বিজেপি কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় আসে এবং হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রসার ঘটে। তা ছাড়া এই ঘটনা ভারতীয় রাজনীতিতে ধর্মীয় মেরুকরণকে ত্বরান্বিত করে। ফলে হিন্দুত্ববাদকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। সেই থেকে শুরু হয় ভারত থেকে মুসলিম উচ্ছেদের নারকীয় তান্ডল।

>>>৩. বিচারব্যবস্থা ও আইন প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন:
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর আদালত এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়। এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে (২০১০) বিতর্কিত জমি তিন ভাগে বিভক্ত করতে বলা হয়। আর সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ে (২০১৯) হিন্দুদের পক্ষে যায় এবং বিতর্কিত জমিতে রাম মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয় এবং মুসলিমদের জন্য বিকল্প জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। মুসলিম সম্প্রদায় আদালতের রায়কে তাদের অধিকারের প্রতি বৈষম্যমূলক হিসেবে দেখে। এতে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।

>>>৪. আন্তর্জাতিক প্রভাব ও সমালোচনা:
বাবরি মসজিদ ধ্বংস আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করে। ফলে সৌদি আরব, পাকিস্তান, ইরানসহ মুসলিম দেশগুলো এই ঘটনার এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি দেশটির আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।

>>>৫. ধর্মীয় সম্প্রীতির অবনতি:
মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ভারতের ধর্মীয় সম্প্রীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তা ভারতের ধর্মীয় বহুত্ববাদী চরিত্রের ওপর চপেটাঘাত করে। তা ছাড়া হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কে চরম অবনতি ঘটে। তা ছাড় মুসলিম সম্প্রদায় নিজেদের সামাজিক ও ধর্মীয় অধিকার নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগতে থাকে। (মুজাফফর আলম, দ্যা মুসলিম মাইনোরিটি অ্যান্ড দ্যা ইন্ডিয়ান স্টেট)

>>>৬. অর্থনৈতিক প্রভাব:
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও উত্তেজনার কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দেয়। বিশেষত শহুরে এলাকায় এর বিরূপ প্রভাব দেখা যায়। একাধিকবার মুসলমানদের দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়েও ধূলিস্যাৎ করা হয়। এতে ভারতের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার প্রতি বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ কমে যায়।

>>>৭. শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রভাব:
সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা শিক্ষাক্ষেত্রে ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ধর্মীয় উত্তেজনার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেরুকরণ দেখা দেয়। এমনকি মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাও ঘটে। তা ছাড়া ভারতীয় সংস্কৃতির বহুমাত্রিকতায় প্রভাব পড়ে। এতে ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতি সংবেদনশীলতা কমে যায়। বহু ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস করা হয় যা এখনো চলমান। (জেফারলট, দ্যা হিন্দু ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট অ্যান্ড ইন্ডিয়ান পলিটিক্স)

ঠিক ৩২ বছর পরে আজও পবিত্র বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি গভীর স্মৃতি ও বেদনার প্রতীক। তা ভারতীয় মুসলিমদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলেছে। বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনা শুধুমাত্র একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের বিলুপ্তি নয়, বরং তা ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। ৩২ বছর পরও এই ঘটনার প্রভাব পুরো দেশজুড়ে বিদ্যমান। ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই ক্ষত নিরাময় সম্ভব। তা শুধু ভারত নয়, পুরো বিশ্বের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।

একনজরে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ইতিহাস:
১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসের ৬ তারিখে কট্টরপন্থী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং এর সহযোগী সংগঠনের উগ্রবাদী হিন্দু কর্মীরা উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যাতে ষোড়শ শতাব্দীর এই ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। ঐ স্থানে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলো দ্বারা আয়োজিত এক রাজনৈতিক সমাবেশে আগত লোকজন সহিংস হয়ে উঠার পর ধ্বংসযজ্ঞটি সংঘটিত হয়। মূলত এটি তাদের পূর্ব পরিকল্পনা ছিলো।

অসমর্থিত ও বিতর্কিত হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী অযোধ্যা হল রামের জন্মভূমি। ষোড়শ শতাব্দীতে মুঘল সেনাপতি মির বাকি একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা বাবরি মসজিদ নামে পরিচিত। তিনি যে স্থানে মসজিদটি নির্মাণ করেন তা কিছু হিন্দুর কাছে রাম জন্মভূমি বলে অভিহিত হয়ে থাকে। আশির দশকে কট্টরপন্থী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তাদের (ভিএইচপি) তাদের রাজনৈতিক সহযোগী উগ্রবাদী ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) সাথে নিয়ে ঐ স্থানে রাম মন্দির নির্মাণের জন্য প্রচারাভিযান চালায়। রাম মন্দির নির্মাণের জন্য বিভিন্ন শোভাযাত্রা ও মিছিল আয়োজন করা হয়েছিল। এসব শোভাযাত্রা ও মিছিলের মাঝে অন্তর্ভুক্ত ছিল রাম রথ যাত্রা, যার নেতৃত্বে ছিলেন লাল কৃষ্ণ আদভানি। অস্ত্রসমেত সে-সব শোডাউন ছিল সন্ত্রাসী শোডাউনের প্রতীক।

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভিএইচপি ও বিজেপি ঐ স্থানে প্রায় দেড় লাখ অস্ত্রধারী করসেবককে নিয়ে একটি শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রা চলাকালে তারা সহিংস হয়ে পড়ে এবং আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে মসজিদটি ভেঙে ফেলে সন্ত্রাসীরা।

পরবর্তীতে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায় যে, ঘটনাটির সাথে ৬৮ জন জড়িত, যাদের মাঝে কিছু বিজেপি এবং ভিএইচপির নেতারও নাম বিদ্যমান। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দরুন ভারতের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মাঝে সৃষ্টি হওয়া রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কয়েকমাস ধরে চলেছিল, যা কমপক্ষে ২,০০০ জন মানুষের মৃত্যু ঘটায়। সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, সেই দাঙ্গায় বেশিরভাগ মুসলিমকেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। অনেকেই মারাত্নকভাবে জখম ও সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়। এমন নৃশংস, নারকীয় তান্ডবের ফলে পাকিস্তান ও বাংলাদেশেও হিন্দুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক কর্মসূচির শুরু হয়। সে-সময় সামান্য সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও মুসলিম নেতা ও ইমাম মাসায়েখদের হস্তক্ষেপে তা থেমে যায়।

চলছে ষড়যন্ত্র, মূল মাস্টারমাইন্ড চিহ্নিত

জয় বাংলা ব্রিগেড প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধের পরিকল্পনা !

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০২৫, ১:০৮ পূর্বাহ্ণ
জয় বাংলা ব্রিগেড প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধের পরিকল্পনা !

গেল ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণআন্দোলনের মুখে পতন হয় স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের। তারপর থেকেই দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেকেই ভারতে পলাতক রয়েছে। আর সেই ভারত থেকেই চলছে বাংলাদেশকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও উঠে আসছে বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধের মহাষড়যন্ত্র চলছে। সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে এমন এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধের পরিকল্পনা ও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছে। এরই মধ্যে শেখ হাসিনাসহ ৭৩ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগ আরও ঘনীভূত হয়েছে কলকাতায় আয়োজিত এক ইফতার পার্টিতে সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পরিকল্পনার তথ্য প্রকাশের পর।

একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি কলকাতার রাজারহাটে এক ইফতার পার্টিতে অংশ নেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, নাসিম, মেয়র জাহাঙ্গীর, সম্রাটসহ শতাধিক আওয়ামী ঘনিষ্ঠ পলাতক নেতা। উপস্থিত ছিলেন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও তার স্ত্রী।

পরদিন একই স্থানে ছাত্রলীগের শতাধিক পলাতক নেতার আরেকটি ইফতার অনুষ্ঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল স্পষ্টভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যে কোনো মূল্যে উৎখাতের নির্দেশ দেন এবং তথ্যসূত্রের দাবি অনুযায়ী, তিনি নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করেন যে অস্ত্র ও অর্থের অভাব হবে না।

২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর “জয়বাংলা ব্রিগেড” নামে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের বৈঠকে বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধের পরিকল্পনা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করা হয় বলে সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে।

সেখানে শেখ হাসিনা পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উৎখাতের রূপরেখা ও প্রয়োজনে গৃহযুদ্ধের ডাক দেন বলে অভিযোগ। ওই বৈঠকে দেশ-বিদেশের ৫৭৭ জন অংশ নেন।

এর মধ্যে ৭৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে, এবং বাকি ৫০০ জনকে চিহ্নিত করার কাজ চলছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও দুবাইতে পালিয়ে থাকা আওয়ামী ঘনিষ্ঠ নেতারাও একই এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়। কলকাতা, দিল্লি, আগরতলা ও মেঘালয়ের মাটিও নির্বিঘ্নে ব্যবহার করছেন তারা।

গঠিত হয়েছে বিভিন্ন গ্রুপ। গঠিত হয়েছে কোর গ্রুপ। মধ্য রমজান থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত পাঁচটি বৈঠকের তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে।

যদিও শেখ হাসিনা এখনও সরাসরি কোনো বিবৃতি দেননি, তবে সিআইডির দাবি অনুযায়ী, ষড়যন্ত্রের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে তাকে মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিরুদ্ধে “জিরো টলারেন্স” নীতি অনুসরণ করা হবে। দেশের ভেতর ও বাইরে সক্রিয় নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে অভিযুক্তদের।

সূত্র: https://www.facebook.com/watch/?v=625675083619141&rdid=ezVPoexOrUH9TrsP

অন্যান্য দেশে রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে চায় চীন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০২৫, ৩:৩৬ অপরাহ্ণ
অন্যান্য দেশে রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে চায় চীন

অন্যান্য দেশে নিজেদের পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলতে চায় চীন। এজন্য বাংলাদেশে চীনা উৎপাদন কেন্দ্র স্থানান্তরে সহায়তা করবে দেশটির এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক (এক্সিম ব্যাংক)। বৃহস্পতিবার চীন সফররত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ আগ্রহের কথা জানান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান চেন হুয়াইউ।

তিনি জানান, বাংলাদেশে চীনা উৎপাদন কেন্দ্র স্থানান্তরে সহায়তা করবে তার ব্যাংক, যাতে অন্যান্য দেশে রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

চীনের এক্সিম ব্যাংক বাংলাদেশে চীনা অর্থায়িত অবকাঠামো ও জ্বালানি প্রকল্পগুলোর প্রধান অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান। তবে, এবারই প্রথম তারা বাংলাদেশে চীনা বেসরকারি শিল্প বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

চেন হুয়াইউ আজ চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান এবং মানবসম্পদ দেশটিকে চীন ও বিশ্বের অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির জন্য একটি উৎপাদনকেন্দ্রে রূপান্তরিত করতে পারে।

তিনি বলেন, আমি শীর্ষ চীনা বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে তাদের কারখানা স্থানান্তরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি এবং আমার সরকার বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় সুবিধা ও একটি বাণিজ্য করিডোর প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ চীনের পরিপূরক ভূমিকা পালন করতে পারে বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে একটি চীনা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দ্রুত বাস্তবায়নের কাজ চলছে। বাংলাদেশ বড় আকারে নতুন বন্দর তৈরি করছে, যা শুধু দেশীয় অর্থনীতির জন্য নয়, বরং নেপাল ও ভূটানের মতো স্থলবেষ্টিত দেশ এবং ভারতের উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্যের জন্যও সহায়ক হবে।

এ সময় এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান চেন হুয়াইউ বলেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান দক্ষিণ-পূর্ব ও দূরপ্রাচ্যের এশিয়ার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিম এশিয়ার বাজারের জন্য উপযুক্ত।

তিনি বলেন, চীনের বিপুলসংখ্যক কোম্পানি বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশ করছে এবং আমাদের ব্যাংক বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ ও উৎপাদন শিল্পের বিকাশে সহায়তা করবে। বাংলাদেশের টেকসই সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অবকাঠামো নির্মাণেও সহায়তা করবো আমরা।

ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের উদাহরণ তুলে ধরে চেন হুয়াইউ বলেন, চীনা ও পশ্চিমা উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করতে হলে বাংলাদেশকে তার ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করতে হবে।

সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নের দ্রুত ছাড়করণ এবং নতুন অবকাঠামো প্রকল্প যেমন দাশেরকান্দি স্যুয়েজ প্লান্টে সহায়তা চান। একইসঙ্গে প্রকল্প ব্যয় কমাতে এক্সিম ব্যাংকের প্রতিশ্রুতি ফি কমানোরও আহ্বান জানান বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।

চেন এ সময় জানান, তার ব্যাংক এসব প্রস্তাব যাচাই করে দেখবে।

একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশকে চীনা মুদ্রা রেনমিনবিতে (আরএমবি) সহজ শর্তের আরও বেশি ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দেন। চেন বলেন, উভয় দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খুব শিগগিরই পুনরায় বৈঠকে বসবেন, যাতে এই বৈঠকে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

সাক্ষাৎকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি ও পরিবহন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

ঈদের সম্ভাব্য তারিখ জানাল সুপারকো

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০২৫, ৩:০৭ পূর্বাহ্ণ
ঈদের সম্ভাব্য তারিখ জানাল সুপারকো

চলছে পবিত্র সিয়াম সাধনার মাস রমজান। পবিত্র এই মাসের তৃতীয় দশকও শেষ হতে চলেছে। এ বছরের রমজান মাসটি ২৯ নাকি ৩০ দিনের হবে সে বিষয়েও চলছে আলোচনা। এমন অবস্থায় আসন্ন ঈদুল ফিতর আগামী সোমবার (৩১ মার্চ) অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছে স্পেস অ্যান্ড আপার অ্যাটমোস্ফিয়ার রিসার্চ কমিশন (সুপারকো)।

বুধবার (২৬ মার্চ) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এবং জিও নিউজ।

(Dawn.com (@dawn_com) March 26, 2025)

পাকিস্তান স্পেস অ্যান্ড আপার অ্যাটমোস্ফিয়ার রিসার্চ কমিশন (সুপারকো) বুধবার জানিয়েছে, আগামী ২৯ মার্চ পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর ৩০ মার্চ চাঁদ দেখা যাওয়ার এবং পরদিন ৩১ মার্চ (সোমবার) ঈদুল ফিতর উদযাপিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন, জ্যোতির্বিদ্যাগত গণনা এবং আধুনিক পর্যবেক্ষণগত তথ্যের ভিত্তিতে শাওয়াল ১৪৪৬ হিজরি চাঁদ দেখার সম্ভাবনা সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়েছে এই গবেষণা কেন্দ্রটি।

সুপারকোর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সুনির্দিষ্ট জ্যোতির্বিদ্যার মডেল অনুসারে শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ (সংযোগ) আগামী ২৯ মার্চ বিকেল ৩:৫৮ মিনিটে দেখা যাবে। চাঁদের দৃশ্যমানতা নির্ভর করে চাঁদের বয়স, সূর্য থেকে এর কৌণিক বিচ্ছেদ, সূর্যাস্তের সময় উচ্চতা এবং বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর।”

দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণবিক অস্ত্রধারী দেশটির সরকারি এই সংস্থার মতে, আগামী ২৯ মার্চ সৌদি আরবে চাঁদ দেখার সম্ভাবনা প্রায় অসম্ভব এবং মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে পাকিস্তানের মতোই আগামী ৩১ মার্চ পবিত্র ঈদুল ফিরত উদযাপিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আসন্ন ঈদুল ফিতরের বিষয়ে সুপারকোর এই পূর্বাভাস পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ দেশটির আবহওয়া বিভাগও আগামী ৩১ মার্চ ঈদের পূর্বাভাস দিয়েছে।

পাকিস্তানের ফেডারেল সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদুল ফিতরের জন্য তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। দেশটির মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা এক প্রজ্ঞাপন অনুসারে, আগামী ৩১ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি চলবে।

জিও নিউজ বলছে, পাকিস্তানের জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি রুয়েত-ই-হিলালের কেন্দ্রীয় কমিটি পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার জন্য আগামী ৩০ মার্চ, ২০২৫ (রমজান ২৯, ১৪৪৬ হিজরি) রোববার সন্ধ্যায় আঞ্চলিক কমিটিগুলোর সাথে বৈঠক করবে। চাঁদ দেখা কমিটির এই সভা ধর্ম বিষয়ক ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হবে।

চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ও সামা টিভি জানিয়েছিল, জ্যোতির্বিদ্যার মডেল অনুসারে, আগামী ৩০ মার্চ পাকিস্তানে শাওয়ালের চাঁদ দেখা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আর তেমনটি হলে ২৯ রোজা শেষেই রমজান মাসের সমাপ্তি এবং পরদিন ৩১ মার্চ দেশটিতে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হতে পারে।