খুঁজুন
রবিবার, ১ জুন, ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

উগ্রবাদী হিন্দুদের ঘৃণ্যতা, মুসলিম হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন আজ

মোঃ হাসানুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৫:১৩ অপরাহ্ণ
ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন আজ

সভ্যতার মাঝেই অসভ্য- এই বিতর্কের শুরু জন্মলগ্ন থেকেই। বিশেষ করে অমুসলিম সভ্যতায় এই বিতর্কের কোনো কমতি নেই। আর সেটা যদি হয় অদালিলিক হিন্দু সম্প্রদায়ের ইতিহাস। তাহলে সেখানে মানবিক সভ্যতা বিরাজ করবে, এটা সম্ভব নয়। কারণ বলা হয়ে থাকে, সনাতনী বা হিন্দু ধর্মের জন্মলগ্ন থেকেই রয়েছে উগ্রতা, রয়েছে বিতর্কিত অধ্যায়। তবে সেই বিতর্কের ইতি টেনে ভারতীয় উপমহাদেশে শান্তি নিয়ে আসে মুসলিম সভ্যতা।আর এই শান্তির আবাসস্থল ছিলো মুসলিমদের প্রাণের স্থান পবিত্র মসজিদ। যার মধ্যে ভারতের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

বিশেষ ও বহুল আলোচিত বাবরি মসজিদ ছিল ভারতের উত্তর প্রদেশে অবস্থিত অযোধ্যার একটি ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থাপনা। তৎকালীন মুঘল সম্রাট বাবরের আমলে ১৫২৮ সালে নির্মিত এই মসজিদ ভারতীয় উগ্র হিন্দুদের সৃষ্টি বিতর্কিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ইতিহাসেও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর হাজার হাজার করসেবকের হাতে ৪৬২ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক মসজিদটি ভেঙে ফেলা হয়। এতে ভারতের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলে। যার কারণে প্রতি বছর ৬ ডিসেম্বর ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা দুঃখ ভরে স্মরণ করে দিনটিকে।

উগ্রবাদী কট্টর হিন্দুত্ববাদের নিদর্শন হিসেবে প্রমাণ রাখতেই ধ্বংস করা বাবরি মসজিদ। কিন্তু এতো বছর অতিবাহিত হলেও ঘটনাটি আজও ভারতের রাজনীতি ও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে রয়েছে। এমনকি সমগ্র মুসলিম বিশ্বের কাছে দিনটি ও ঘটনাটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

<<<পবিত্র বাবরি মসজিদের ইতিহাস>>>

নির্মাণকাল ও স্থাপত্য:
ঐতিহাসিক মসজিদটি ১৫২৮-২৯ সালে মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি নির্মাণ করেন। সম্রাট বাবরের নাম অনুসারেই তা বাবরি মসজিদ নামে পরিচিত। পরবর্তীতে তা ওই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এমনকি ধীরে ধীরে মসজিদটির গাম্ভীর্য, পরিচালনা, মানবিকতা সমগ্র মুসলিম বিশ্বের কাছে পরিচিত হতে থাকে।

স্থাপত্যশৈলী ও শীতলীকরণ ব্যবস্থা:
অনন্য স্থাপত্যশৈলীর জন্য বাবরি মসজিদ বিশেষভাবে বিখ্যাত। এর স্থাপত্যে মুঘল শৈলীর প্রভাব ছিল। এর অভ্যন্তরীণ শব্দ-নিয়ন্ত্রণ এবং শীতলীকরণের ব্যবস্থা ষোড়শ শতকের এক বিস্ময়। বাবরি মসজিদের চিত্তাকর্ষক স্বনবিদ্যা প্রসঙ্গে ‘হিস্টোরিক স্ট্রাকচারস অব অযোধ্যা’ বইতে পাওয়া যায়, ‘মিম্বর থেকে কণ্ঠ স্থাপন ও প্রক্ষেপণ ষোড়শ শতাব্দীর একটি স্থাপনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নত। এই কাঠামোতে শব্দের অনন্য স্থাপনা দর্শনার্থীকে বিস্মিত করবে। যা সবাইকে মসজিদটির প্রতি ব্যাপকভাবে আকর্ষিত করতো।

আধুনিক স্থপতিদের মতে, বাবরি মসজিদের চিত্তাকর্ষক স্বনবিদ্যার কারণ হলো, মসজিদটির মিহরাব (মসজিদের একদিকে একটি অর্ধবৃত্তাকার দেয়াল যা কিবলা নির্দেশ করে) ও পার্শ্ববর্তী দেয়ালগুলোতে বিভিন্ন খাঁজ রয়েছে যা অনুনাদক হিসাবে কাজ করত। এই নকশা মিহরাবে অবস্থিত ইমামের কথা সবাইকে শুনতে সাহায্য করত। এছাড়াও বাবরি মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বেলেপাথর অনুনাদের কাজ করে যা মসজিদটির শব্দ-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করত।

ঘৃণ্য বিতর্কের সূত্রপাত যেভাবে:
১৮৫৩ সালে প্রথমবারের মতো মন্দির-মসজিদ বিতর্কের সূত্রপাত হয়। ওই সময়ে উগ্রবাদী হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি অংশ দাবি করে, এটি ছিল রামের জন্মস্থান। পরবর্তীতে পা-চেটে তদবির করার ফলে ব্রিটিশ শাসনকালে মসজিদটির চত্বরে হিন্দুদের পূজা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হয়। ১৯৪৯ সালে হিন্দু সক্রিয়তাবাদীরা হিন্দু মহাসভার সঙ্গে জোট করে গোপনে রামের একটি মূর্তি মসজিদের অভ্যন্তরে রেখে দেয়। এরপরই সরকার দাঙ্গা ঠেকানোর অভিপ্রায়ে পুরো মসজিদকে সিলগালা করে দেয়। পরে হিন্দু-মুসলিম উভয়ই ওই স্থানে প্রবেশাধিকার পেতে আদালতে মামলা করে। আর এভাবেই চলতে থাকে মসজিদ নিয়ে ষড়যন্ত্র।

৬ ডিসেম্বর যেভাবে বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছিল:
১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে উগ্রবাদী ও কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো যেমন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও বিজেপি সহ কয়েকটি বিতর্কিত গোষ্ঠী বাবরি মসজিদের জায়গায় রামের মন্দির পুনঃনির্মাণের দাবি জোরদার করে।
১৯৯০ সালে বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানী রথযাত্রার মাধ্যমে ব্যাপক সমর্থন অর্জন করে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর লাখো করসেবক বাবরি মসজিদের চত্বরে জড়ো হয়। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার মধ্যে তারা মসজিদের গম্বুজ ভেঙে ফেলে। নাটকীয় পাহারার নামে প্রশাসনের ব্যর্থতা ও নিরাপত্তার অভাবে মসজিদটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়। ওই ঘটনার পর পুরো ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। উগ্রবাদী হিন্দুদের আক্রমনে হাজার হাজার নিরীহ মুসলিম নিহত হয়। নামমাত্র গুটিকয়েক হিন্দুও তখন মারা যায়। মুসলিম সম্প্রদায় এই ঘটনাকে তাদের ধর্মীয় অধিকার ও অস্তিত্বের ওপর আঘাত হিসেবে দেখে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ভারতের ধর্মীয় সহিষ্ণুতা নিয়ে সমালোচনা হয়। (গোপাল সারভাপেলি, দ্যা বাবরি মসজিদ ইস্যু এন্ড দ্যা হিন্দুত্বভা এজেন্ডা, পেঙ্গুইন বুকস)

<<<বাবরি মসজিদ নিয়ে আইনি লড়াই:>>>

আইনি প্রক্রিয়া:
মসজিদের ধ্বংসের পর একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ছিল জমির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক। এলাহাবাদ হাইকোর্ট ২০১০ সালে প্রহসন মূলক রায় দেয়, বিতর্কিত জমি তিনভাগে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখাড়া, রামলালার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হোক। এর ফলে উগ্রবাদী হিন্দুরা পায় জমির তিন ভাগের দুই ভাগ। মুসলিমরা এক ভাগ। এর বিরুদ্ধে সব পক্ষই উচ্চ আদালতে আপিল করে।

সুপ্রিম কোর্টের নাটকীয় রায় (২০১৯):
২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের রায়কে রদ করে ঘোষণা দেয়, বাবরি মসজিদের ২ দশমিক ৭৭ একরের পুরো জমি এমন একটি ট্রাস্টকে দিতে হবে যারা হিন্দু মন্দির নির্মাণ করবে। একই সঙ্গে আদালত সরকারকে নির্দেশ দেয়, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে বিকল্প ৫ একর জমি দিতে হবে মসজির নির্মাণের জন্য। অতঃপর মামলার শুনানিতে ‘৯২ সালের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত’ হওয়াকে নাকচ করে বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি (পরবর্তীতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), মুরলী মনোহর জোশী, উমা ভারতীসহ মোট ৩২ জন অভিযুক্তকে আদালত সসম্মানে মুক্তি দেয়। এই রায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি করে। কারণ ধ্বংস হওয়া বাবরি মসজিদ কোনো মন্দির ধ্বংস করে এর ওপর গড়ে উঠেছে কিনা এই বিষয়ে তিনজন বিচারক একমত হতে পারেননি। (প্রতাপ ভানু, দ্য ইন্ডিয়ান জুডিশিয়ারি অ্যান্ড দ্য বাবরি মসজিদ কেস, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস)

বাবরি মসজিদ ভাঙার পরবর্তী প্রভাব:
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনা ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে। তা শুধুমাত্র ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক নয়, বরং বিশ্বমঞ্চে ভারতের পরিচিতিতেও গভীর ছাপ ফেলে।

ওই ঘটনার উল্লেখযোগ্য কিছু প্রভাব নিম্নে আলোচনা করা হলো :

>>>১. সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও উত্তেজনা:
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর ভারতে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনা মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে গভীর আঘাত হানে এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তীব্রতর হয়। ঘটনার পরপরই মুম্বাই, দিল্লি, আহমেদাবাদ, কানপুরসহ বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গায় প্রায় দুই হাজার মানুষ নিহত হয়, যার বেশিরভাগ ছিল মুসলিম। মূলত সে-সময় প্ল্যান করে মুসলিম নিধন কর্মসূচি হাত নেয় উগ্রবাদী হিন্দু রাষ্ট্রটি।

>>>২. হিন্দুত্ববাদের উত্থান:
বাবরি মসজিদ ধ্বংস ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। কারণ এ ঘটনার পরই বিজেপির মতো কট্টরপন্থী, হিন্দুত্ববাদী, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি তৈরি করে। ১৯৯৮ সালে উগ্রবাদী বিজেপি কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় আসে এবং হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রসার ঘটে। তা ছাড়া এই ঘটনা ভারতীয় রাজনীতিতে ধর্মীয় মেরুকরণকে ত্বরান্বিত করে। ফলে হিন্দুত্ববাদকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। সেই থেকে শুরু হয় ভারত থেকে মুসলিম উচ্ছেদের নারকীয় তান্ডল।

>>>৩. বিচারব্যবস্থা ও আইন প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন:
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর আদালত এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়। এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে (২০১০) বিতর্কিত জমি তিন ভাগে বিভক্ত করতে বলা হয়। আর সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ে (২০১৯) হিন্দুদের পক্ষে যায় এবং বিতর্কিত জমিতে রাম মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয় এবং মুসলিমদের জন্য বিকল্প জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। মুসলিম সম্প্রদায় আদালতের রায়কে তাদের অধিকারের প্রতি বৈষম্যমূলক হিসেবে দেখে। এতে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।

>>>৪. আন্তর্জাতিক প্রভাব ও সমালোচনা:
বাবরি মসজিদ ধ্বংস আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করে। ফলে সৌদি আরব, পাকিস্তান, ইরানসহ মুসলিম দেশগুলো এই ঘটনার এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি দেশটির আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।

>>>৫. ধর্মীয় সম্প্রীতির অবনতি:
মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ভারতের ধর্মীয় সম্প্রীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তা ভারতের ধর্মীয় বহুত্ববাদী চরিত্রের ওপর চপেটাঘাত করে। তা ছাড়া হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কে চরম অবনতি ঘটে। তা ছাড় মুসলিম সম্প্রদায় নিজেদের সামাজিক ও ধর্মীয় অধিকার নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগতে থাকে। (মুজাফফর আলম, দ্যা মুসলিম মাইনোরিটি অ্যান্ড দ্যা ইন্ডিয়ান স্টেট)

>>>৬. অর্থনৈতিক প্রভাব:
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও উত্তেজনার কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দেয়। বিশেষত শহুরে এলাকায় এর বিরূপ প্রভাব দেখা যায়। একাধিকবার মুসলমানদের দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়েও ধূলিস্যাৎ করা হয়। এতে ভারতের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার প্রতি বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ কমে যায়।

>>>৭. শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রভাব:
সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা শিক্ষাক্ষেত্রে ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ধর্মীয় উত্তেজনার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেরুকরণ দেখা দেয়। এমনকি মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাও ঘটে। তা ছাড়া ভারতীয় সংস্কৃতির বহুমাত্রিকতায় প্রভাব পড়ে। এতে ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতি সংবেদনশীলতা কমে যায়। বহু ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস করা হয় যা এখনো চলমান। (জেফারলট, দ্যা হিন্দু ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট অ্যান্ড ইন্ডিয়ান পলিটিক্স)

ঠিক ৩২ বছর পরে আজও পবিত্র বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি গভীর স্মৃতি ও বেদনার প্রতীক। তা ভারতীয় মুসলিমদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলেছে। বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনা শুধুমাত্র একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের বিলুপ্তি নয়, বরং তা ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। ৩২ বছর পরও এই ঘটনার প্রভাব পুরো দেশজুড়ে বিদ্যমান। ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই ক্ষত নিরাময় সম্ভব। তা শুধু ভারত নয়, পুরো বিশ্বের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।

একনজরে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ইতিহাস:
১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসের ৬ তারিখে কট্টরপন্থী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং এর সহযোগী সংগঠনের উগ্রবাদী হিন্দু কর্মীরা উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যাতে ষোড়শ শতাব্দীর এই ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। ঐ স্থানে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলো দ্বারা আয়োজিত এক রাজনৈতিক সমাবেশে আগত লোকজন সহিংস হয়ে উঠার পর ধ্বংসযজ্ঞটি সংঘটিত হয়। মূলত এটি তাদের পূর্ব পরিকল্পনা ছিলো।

অসমর্থিত ও বিতর্কিত হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী অযোধ্যা হল রামের জন্মভূমি। ষোড়শ শতাব্দীতে মুঘল সেনাপতি মির বাকি একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা বাবরি মসজিদ নামে পরিচিত। তিনি যে স্থানে মসজিদটি নির্মাণ করেন তা কিছু হিন্দুর কাছে রাম জন্মভূমি বলে অভিহিত হয়ে থাকে। আশির দশকে কট্টরপন্থী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তাদের (ভিএইচপি) তাদের রাজনৈতিক সহযোগী উগ্রবাদী ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) সাথে নিয়ে ঐ স্থানে রাম মন্দির নির্মাণের জন্য প্রচারাভিযান চালায়। রাম মন্দির নির্মাণের জন্য বিভিন্ন শোভাযাত্রা ও মিছিল আয়োজন করা হয়েছিল। এসব শোভাযাত্রা ও মিছিলের মাঝে অন্তর্ভুক্ত ছিল রাম রথ যাত্রা, যার নেতৃত্বে ছিলেন লাল কৃষ্ণ আদভানি। অস্ত্রসমেত সে-সব শোডাউন ছিল সন্ত্রাসী শোডাউনের প্রতীক।

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভিএইচপি ও বিজেপি ঐ স্থানে প্রায় দেড় লাখ অস্ত্রধারী করসেবককে নিয়ে একটি শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রা চলাকালে তারা সহিংস হয়ে পড়ে এবং আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে মসজিদটি ভেঙে ফেলে সন্ত্রাসীরা।

পরবর্তীতে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায় যে, ঘটনাটির সাথে ৬৮ জন জড়িত, যাদের মাঝে কিছু বিজেপি এবং ভিএইচপির নেতারও নাম বিদ্যমান। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দরুন ভারতের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মাঝে সৃষ্টি হওয়া রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কয়েকমাস ধরে চলেছিল, যা কমপক্ষে ২,০০০ জন মানুষের মৃত্যু ঘটায়। সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, সেই দাঙ্গায় বেশিরভাগ মুসলিমকেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। অনেকেই মারাত্নকভাবে জখম ও সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়। এমন নৃশংস, নারকীয় তান্ডবের ফলে পাকিস্তান ও বাংলাদেশেও হিন্দুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক কর্মসূচির শুরু হয়। সে-সময় সামান্য সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও মুসলিম নেতা ও ইমাম মাসায়েখদের হস্তক্ষেপে তা থেমে যায়।

করিডোর ইস্যুতে সরকারের অবস্থান জানতে চাইল বিএনপি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ১ জুন, ২০২৫, ৩:১৭ অপরাহ্ণ
করিডোর ইস্যুতে সরকারের অবস্থান জানতে চাইল বিএনপি

করিডোর ইস্যু ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল। সরকারের গোপন আলোচনার খবর প্রকাশিত হওয়ায় করিডোর বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

একইসাথে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জোরালো হয়েছে।

শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ভূ-রাজনৈতিক নিরাপত্তা: প্রেক্ষিত মানবিক করিডর’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ সব কথা উঠে আসে।

বিএনপির আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, করিডরের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কি কথা বলব? আমরা জানিই না সরকারের পরিকল্পনা কী। উপদেষ্টা বলেছেন, জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা বিস্মিত। এত বড় সিদ্ধান্ত সরকার কীভাবে নিলো? জাতিসংঘ এই আলোচনায় কোনো মতামত দিতে পারে না। এটি দুই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। জাতিসংঘ এখানে কেবল নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তে যুক্ত হতে পারে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন রেজুলেশন পাস হয়নি।

তিনি অভিযোগ করেন, সরকার প্রথমে বলেছিল আলোচনাই হয়নি, কিন্তু আমরা দেখছি আলোচনা চলছে। কাতারে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পুরো বিষয়টি এত গোপন কেন? এই সরকারের এখতিয়ারে এটা নেই। প্রধান উপদেষ্টার মুখ থেকে জানানো দরকার আসলে সরকার কি চায়। করিডোর ইস্যু শেষ হয়নি।

খসরু বলেন, করিডোর বিতর্কের পর সরকার এখন ‘চ্যানেল’ ইস্যু নিয়ে কথা বলছে। কিন্তু করিডোর আর চ্যানেল, শব্দের পার্থক্য থাকলেও মূল কথা এক। সরকার বিষয়টি স্পষ্ট করুক। আরাকান আর্মি আনুষ্ঠানিক সরকার নয়, ভারতের সঙ্গেও তাদের আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। যুদ্ধ-অস্থিরতা চলছে, সেখানে করিডোর নিয়ে আলোচনা কতটা যৌক্তিক? রোহিঙ্গাদের করিডোর দিয়ে ফেরানোর কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু তাদের সম্মানজনকভাবে ফেরানোর অধিকার আছে। করিডোরের প্রয়োজন কেন?

তিনি আরও বলেন, দেশে স্থিতিশীলতা সবচেয়ে বেশি দরকার। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়েছেন। এখন নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে সরকার আলোচনা করছে না।

আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, করিডোরের মাধ্যমে আরাকানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু মগ জালদস্যুদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকারেরই নেয়া উচিত। নির্বাচন তাড়াতাড়ি করা হলে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, করিডোর সিদ্ধান্ত সরকারের এখতিয়ারের বাইরে। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে গোপন তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। অনেক জায়গায় মানবিক করিডোর সামরিক করিডরে রূপ নিয়েছে।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আরেকজন রোহিঙ্গাকেও আমরা চাই না। করিডোরের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। গোপনে নয়, চুক্তিভিত্তিক কাজ করতে হবে।

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ঘোষণার পরও নতুন করে প্রবেশ করছে। করিডোরের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। এমন সিদ্ধান্তে সরকারের যাওয়া উচিত হয়নি। সরকারের মূল কাজ ছিল নির্বাচন দেয়া, বিচার-সংস্কারের দোহাই দিয়ে নির্বাচন বিলম্বের সুযোগ নেই। বিএনপি একা নয়, অনেক দলই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব ও মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর গভর্নন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যানালাইসেসের নির্বাহী পরিচালক কর্নেল (অব) জগলুল আহসান।

দেশে ফিরে এভারেস্ট জয়ের গল্প শোনালেন গর্বিত শাকিল

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ১ জুন, ২০২৫, ৩:১৫ অপরাহ্ণ
দেশে ফিরে এভারেস্ট জয়ের গল্প শোনালেন গর্বিত শাকিল

সংগ্রামী ‘সি টু সামিট’ অভিযান শেষে নেপাল থেকে দেশে ফিরেছেন এভারেস্টজয়ী বাংলাদেশি পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল। ২৯ মে বিকেলে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নেমেই তিনি হাজির হন রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। এ অনুষ্ঠানে এভারেস্ট জয়ের পথে নানা চ্যালেঞ্জ ও সফলতার গল্প শোনান তিনি।

শাকিল বলেন, ‘এভারেস্টে ওঠার পথে বেজক্যাম্পে তাঁবুতে রাত্রি যাপন করতে হয়। কিন্তু তাঁবুতে ঘুম হতো না। এভারেস্ট জয় করে দেশে এসে কী কী গল্প শোনাব, রাত জেগে এসব ভাবতাম। জয়ের পর আমরা সবাই উদ্‌যাপন করি। কিন্তু এর পেছনেও অনেক গল্প থাকে, যা সবার জানা দরকার।’

এভারেস্ট জয়ের পরতে পরতে ছিল বিপদের হাতছানি। এসব অভিজ্ঞতা স্মরণ করে শাকিল বলেন, ‘এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে যাওয়ার পথে একাধিক পর্বতারোহীর মৃতদেহ দেখেছি। একসময় মানসিকভাবে ভেঙেও পড়েছিলাম। তবে হাল ছেড়ে দিইনি। আর যেদিন চূড়ায় উঠলাম, সেই মুহূর্তে কোনো অনুভূতি ছিল না। শুধু মনে হচ্ছিল, দেশের পতাকা উড়িয়েছি, এখন বেঁচে ফিরতে হবে। কারণ, আবহাওয়া অনুকূলে ছিল না।’

ইকরামুল হাসানকে এই সংবর্ধনা দিয়েছে তাঁর অভিযানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রাণ। অনুষ্ঠানে প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা বলেন, ‘আজ শুধু উদ্‌যাপন নয়, শাকিলের অদম্য ইচ্ছা এবং ইচ্ছা থাকলেই যে অর্জন করা যায়, সেই অনুপ্রেরণাকে তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই। তাহলে তারাও অসাধ্যকে সাধন করতে পারবে। দেশের জন্য অর্জন করবে সম্মান। ইতিহাস সৃষ্টি করার জন্য প্রাণ গ্রুপের পক্ষ থেকে শাকিলকে ধন্যবাদ।’

অনুষ্ঠানে ইকরামুল হাসানের পরিবার, তাঁর ক্লাব বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের (বিএমটিসি) সদস্যরা, তাঁর অভিযানের স্ন্যাকস পার্টনার মিস্টার নুডলসের জেনারেল ম্যানেজার তোষন পালসহ প্রাণ গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংবর্ধনার অংশ হিসেবে ইকরামুল হাসান ও তাঁর মায়ের হাতে বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার তুলে দেয় প্রাণ।

পরিব্রাজক ও বিএমটিসির সদস্য তারেক অণু বলেন, ‘এভারেস্টে ওঠা আনন্দের সংবাদ, তবে তার চেয়েও আনন্দের সংবাদ হলো শাকিলের সুস্থভাবে ফিরে আসা। আমার বড় আগ্রহের জায়গা ছিল ওর পরিবেশ নিয়ে কাজ করার বিষয়টি। সে প্লাস্টিক ফ্রি ও পরিবেশ সচেতনতার বাণী ছড়িয়েছে। সেই সুযোগ করে দেওয়ায় পৃষ্ঠপোষককেও ধন্যবাদ।’

ইকরামুল হাসান সমুদ্র থেকে শৃঙ্গ ছোঁয়ার এই অভিযানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার পর্বতারোহী টিম ম্যাকার্টনি-স্নেপের কাছে। ১৯৯০ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো এভারেস্ট শৃঙ্গে আরোহণের পরিকল্পনা করেন। তাঁর একক অভিযানটির নাম দেন ‘সি টু সামিট এক্সপেডিশন’। অর্থাৎ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হেঁটে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পৌঁছানোর প্রয়াস। টিম করেছিলেনও তা-ই, ভারতের গঙ্গাসাগর থেকে ৯৬ দিনে ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পা রাখেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে। ৩৫ বছর আগের ম্যাকার্টনির সেই কৃতিত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশের পর্বতারোহী ইকরামুল হাসানও তাঁর অভিযানের নাম দেন ‘সি টু সামিট’, অর্থাৎ সমুদ্র থেকে শৃঙ্গ। সেই লক্ষ্যেই গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্রসৈকত থেকে এভারেস্ট চূড়ার উদ্দেশে হাঁটা শুরু করেন। চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা ও মুন্সিগঞ্জ হয়ে ১২ দিন পর ঢাকায় পৌঁছান। কয়েক দিন বিরতি দিয়ে আবার হাঁটা শুরু করে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ হয়ে ২৮ মার্চ পৌঁছান পঞ্চগড়ে। ইকরামুল হাসান পরদিন বাংলাদেশ থেকে প্রবেশ করেন ভারতে। সে দেশের জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং হয়ে ৩১ মার্চ পা রাখেন নেপালে। এভাবে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার পথ হেঁটে গত ২৯ এপ্রিল এভারেস্ট বেজক্যাম্পে পৌঁছান ইকরামুল হাসান।

তার পর থেকে সেখানেই অবস্থান করছিলেন ইকরামুল হাসান। মাঝে ৬ মে রোটেশনে বের হন। একে একে ক্যাম্প–৩ পর্যন্ত পৌঁছে আবার বেজক্যাম্পে নেমে আসেন ১০ মে। এই পুরো রোটেশন এভারেস্ট অভিযানের মূল শৃঙ্গারোহণের প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এরপর মূল অভিযানের জন্য বেজক্যাম্প থেকে ১৬ মে ক্যাম্প–২-এ পৌঁছান ইকরামুল হাসান। ১৭ মে ক্যাম্প-৩ এবং ১৮ মে ক্যাম্প-৪-এ পৌঁছান। এই ক্যাম্প থেকেই সামিট পুশ (সর্বশেষ ক্যাম্প থেকে চূড়ার পানে যাত্রা) করেন শাকিল। ১৯ মে বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ছয়টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

ছাত্রদল সভাপতি রাকিবের পদ হারানোর গুঞ্জন

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ৩১ মে, ২০২৫, ১:৪৯ অপরাহ্ণ
ছাত্রদল সভাপতি রাকিবের পদ হারানোর গুঞ্জন

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার খবর ভিত্তিহীন ও অসত্য বলে জানিয়েছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদ। এ ধরনের গুজবে কান না দিতে এবং বিভ্রান্ত না হতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য জানান।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শারীরিক অসুস্থতার কারণে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পূর্ণ বিশ্রামে রয়েছেন।

সে কারণে তিনি আপাতত দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না। তবে তিনি আগামী রবিবার থেকে পুনরায় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। তাঁর দ্রুত সুস্থতার জন্য সব নেতাকর্মী ও সমর্থকদের দোয়া কামনা করা হচ্ছে।’
এ ছাড়া শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ও গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে ছাত্রদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয় রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে ছাত্রদল সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এসব খবরে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। এমন অবস্থায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদ থেকে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।