‘ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লাভ-লোকসান যাই হোক কর নেবে সরকার’

আগে ব্যবসায় লাভ হলে তার ওপরে কর নিতো সরকার। এখন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসান যাই হোক, শতকে এক টাকা করে কর দিতে হবে।
আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে এ কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বাজেটে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের টার্নওভার ট্যাক্স বা লেনদেন কর হবে ১ শতাংশ, যা শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ আছে। লাভ ও লোকসান নির্বিশেষে এ কর দিতে হবে।
সাধারণভাবে ১০০ টাকার বিপরীতে ১ টাকাকে কম মনে হতে পারে। তবে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ও অন্যান্য করের বাইরে সরকার এই ১ শতাংশ অর্থ নেবে আয়কর হিসেবে। এটা ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের জন্য কঠিন হবে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও যেহেতু প্রচুর কেনাবেচা করছে, তাদেরও ব্যয় বাড়বে অনেক।
এ বিষয়ে টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতাহার তসলিম বলেন, সাধারণভাবে ব্যবসায়ীরা লাভের উপরে কর দিতো। এখন লোকসান করলেও দিতে হবে। অর্থাৎ একটি পণ্য ১০০ টাকায় কিনে ৯৯ টাকা বিক্রি করে লোকসান হলেও সরকার কর নেবে-এটা যুক্তিযোগ্য মনে হচ্ছে না। এতে অনেক ব্যবসায়ী নিরুৎসাহীত হবে। এটা ব্যাংকের সুদের মতো হয়ে যাচ্ছে, যেমন লোন নিলে শোধ না করা পর্যন্ত অনবরত সেটা দিতে হয়। তেমন ব্যবসা করলে কর নিবেই সরকার।
অন্যদিকে, ব্যবসা পরিচালনার জন্য রাজধানীর প্রায় সব প্রতিষ্ঠানকে স্থান-স্থাপনা ভাড়া নিতে হয়। স্থান-স্থাপনা ভাড়ার উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। সাধারণত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেই এ খরচ বহন করতে হয়। ব্যবসার প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম করতে কনভেনশন হল, কনফারেন্স সেন্টার ভাড়া নিতে হয়। এ ধরনের হল ভাড়ার উৎসে কর দ্বিগুণ করে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। স্থান-স্থাপনা ভাড়া বা কনফারেন্স সেন্টার ভাড়ার ওপর উৎসে কর বাড়ানোয় ব্যবসা খরচ বাড়বে।
এ ছাড়া শিল্পের কর অবকাশ সুবিধাও বাতিল করা হয়েছে। বর্তমানে ৩১টি শিল্প খাত ১০ বছরের জন্য অঞ্চলভেদে ক্রমহ্রাসমান হারে কর অবকাশ সুবিধা ভোগ করছে। শিল্প খাতগুলো হচ্ছে, অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রিডিয়েন্ট, কৃষি যন্ত্রপাতি, ব্যারিয়ার কন্ট্রাসেপটিভ ও রাবার ল্যাটেক্স, ইলেকট্রনিক্সের মৌলিক উপাদান (রেজিস্টর, ক্যাপাসিটর, ট্রানজিটর, ইন্ট্রিগ্রেটেড সার্কিট ও মাল্টিলেয়ার পিভিসি); বাইসাইকেল ও এর যন্ত্রাংশ, বায়ো ফার্টিলাইজার; বায়োটেকনলজিভিত্তিক কৃষি পণ্য, বয়লারের খুচরা যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জামসহ, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, আসবাবপত্র, হোম অ্যাপ্লায়েন্স (ব্লেন্ডার, রাইস কুকার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেন, ওয়াশিং মেশিন, ইনডাকশন কুকার, ওয়াটার ফিল্টার), কীটনাশক ও বালাইনাশক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, এলইডি টিভি, ফলমূল ও শাকসবজি প্রক্রিয়াকরণ, মোবাইল ফোন, পেট্রোকেমিক্যাল; ফার্মাসিউটিক্যালস; প্লাস্টিক রিসাইক্লিং; টেক্সটাইল মেশিনারি; টিস্যু গ্রাফটিং; খেলনা উৎপাদন; টায়ার ম্যানুফেকচারিং, ইলেকট্রিক্যাল ট্রান্সফরমার, ম্যানমেইড ফাইবার উৎপাদন, অটোমোবাইল যন্ত্রাংশ ম্যানুফেকচারিং, রোবটিক্স ডিজাইন, এআইভিত্তিক সিস্টেম ডিজাইন, ম্যানুফেকচারিং, ন্যানোটেকনোলজিভিত্তিক পণ্য ম্যানুফেকচারিং এবং এয়ারক্রাফট হেভি মেইনটেন্যান্স সার্ভিস ও খুচরা যন্ত্রাংশ ম্যানুফেকচারিং।
আপনার মতামত লিখুন