রাষ্ট্রীয় মদদেই কি র্যাবের এতো নাটক ?
সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত থেকে সরানো হলো বিতর্কিত র্যাবকে
বাংলাদেশের ইতিহাসে বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ইস্যুগুলোর মধ্যে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ড অন্যতম। বিশেষ করে একটি চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ১১৩ বার তারিখ পরিবর্তন করার নাটকীয় কারসাজি হয়তো পৃথিবীতে বিরল। অবশেষে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার মামলার তদন্তের দায়িত্ব থেকে বিতর্কিত র্যাবকে সরিয়ে দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে আগামী ৬ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এ সংক্রান্ত একটি রিট শুনানির পর এই আদেশ দেন আদালত।
এদিন হাইকোর্ট বলেন, “এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার থেকে র্যাবকে সরানো হলো। এটি পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, বিভিন্ন সংস্থার অভিজ্ঞ, যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের মাধ্যমে তদন্ত করাতে পারবে সরকার।”
২০১২ সাল থেকে র্যাব সহ সরকারের বিভিন্ন মহল সাগর-রুনির পরিবার, এদেশের সাংবাদিক সহ সকলকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছে এই মামলার ইস্যুতে। ছাত্রজনতার তুমুল আন্দোলনের পরই পট পরিবর্তন হয় সবকিছুর। অবশেষে গত রোববার সাগর-রুনি হত্যা মামলায় প্রথমবারের মতো আইনজীবী শিশির মনিরকে নিয়োগ করেন মামলার বাদী ও রুনির ভাই নওশের আলী রোমান।
নিয়োগ পেয়ে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘ক্রিমিনাল মামলার বিচারের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু আইনে আছে কোনো ভুক্তভোগী কিংবা অভিযোগকারী চাইলেও ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৩ ধারা অনুযায়ী স্বাধীন আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন।’
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় খুন হন। যা নিয়ে সারাদেশে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি হয়। ওই রাতে পাঁচ বছর বয়সি তাদের একমাত্র ছেলে মাহির সারোয়ার মেঘ ওই বাড়িতেই ছিল। পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডে রুনির ভাই নওশের আলী রোমান শেরেবাংলা থানায় মামলা করেন।
বিতর্কিত নাটকের মঞ্চস্থের শুরু এখান থেকেই। মামলার পর শেরেবাংলা নগর থানাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিন দিন পর মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হয়তো কোনো দরবেশ বাবার ছোঁয়াতে তারাও ব্যর্থ হয়। তাদের ব্যর্থতার পর ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলাটি র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ব্যস, দেশের ইতিহাসে বহুল বিতর্কিত ও সমালোচিত র্যাবের অনুসন্ধান ও তদন্ত আজও শেষ হয়নি।
অত্যন্ত নির্লজ্জতার সাথে বহুল আলোচিত এই সাংবাদিক দম্পতি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ এখন পর্যন্ত ১১৩ বার পেছানো হয়েছে। যা বাংলাদেশ তো বটেই, হয়তো বিশ্বেও বিরল ঘটনা।
আলোচিত এ হত্যা মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমান, বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীসহ আসামি মোট আট জন। প্রত্যেককে একাধিকবার রিমান্ডে নেওয়া হলেও কেউই হত্যার দায় স্বীকার করেন নি। আটজনের মধ্যে দুজন জামিন পেয়েছেন, বাকিরা এখনো কারাগারে রয়েছেন।
তবে সচেতন মহল বলছেন, ‘যারা অপরাধী, তারা সুক্ষ্মভাবেই হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে। তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। কারণ আসামি যদি আটকই হবে। তাহলে তদন্ত প্রতিবেদন এতো বার পেছাবে কেনো ? সরকারের উর্ধ্বতন কোনো পক্ষ জড়িত না থাকলে এতোদিনে এর রহস্য বের হয়ে আসতো। এতো নাটক দেখে অবশ্যই আন্দাজ করা যায়, এই হত্যাকান্ডের পেছনে বড় কোনো মহল জড়িত আছে।’
আপনার মতামত লিখুন