অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটকদের ভ্রমণে বিরত থাকার যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা দ্রুত তুলে নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকালে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সম্প্রীতি সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটকদের ভ্রমণে বিরত থাকার যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা দ্রুত তুলে নেওয়া হবে। এ বিষয়ে ঢাকায় ফিরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, সম্প্রতি সাজেক ভ্রমণে গিয়ে প্রচুর পর্যটক আটকে যান। সারা দেশ থেকে যাওয়া পর্যটকেরা সেখানে আটকে পড়ায় সরকার খুব বিব্রত অবস্থায় পড়েছে। সরকারের ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমরা বিব্রত অবস্থায় পড়তে চাই না। সরকার সকল দিক বিবেচনা করে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে।
এ ছাড়া দীঘিনালায় ১৯ সেপ্টেম্বর সহিংসতার ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপদেষ্টা। সংঘাত, হামলার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এ সময় আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ারও অনুরোধও জানান তিনি।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ বলেন, এখানে যারা সাধারণ পাহাড়ি-বাঙালি আছে তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। যারা এখানে সংঘাতের সৃষ্টি করছে তাদেরকে আইনে আওতায় আনতে হবে।
এ সময় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের পাশাপাশি বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল, দীঘিনালা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রশীদ, দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ধর্মজ্যোতি চাকমা, সাবেক চেয়ারম্যান নব কমল চাকমা, উপজেলা বিএনপি সভাপতি মো.শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
৫ আগস্টের পর সংস্কারবিরোধী এবং প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতি মুজিবাদী রাজনীতিকে আবার প্রাসঙ্গিক করে তুলছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ৫ আগস্টের পরে আমাদের মধ্যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে, বিপ্লবের যারা স্টেকহোল্ডার তাদের মধ্যে কেউ কেউ সংস্কারবিরোধী রাজনীতিটা করল; মানে এটার আউটকামটা আসলে দেশের জন্য কী, এটা একটা প্রশ্ন। আরেকটা প্রশ্ন থাকে যে, কেউ কেউ রিঅ্যাকশনারি (প্রতিক্রিয়াশীল) রাজনীতিতে ঢুকে গেল এবং এই রিঅ্যাকশনারি পলিটিক্সে ঢোকার মাধ্যমে তারা মুজিববাদী রাজনীতিকে আবার প্রাসঙ্গিক করে তুলল।
তিনি বলেন, মুজিববাদী রাজনীতি একটা সময় পর্যন্ত ছিল না, যখন আপনি আবার জাতীয় সংগীতের বিতর্কে ঢুকলেন, যখন আপনি আবার এই রিঅ্যাকশন দেওয়া শুরু করলেন নতুন রাজনীতি বিনির্মাণ না করে; তখনই কিন্তু মুজিববাদী রাজনীতি আবার প্রাসঙ্গিক হওয়া শুরু করল এবং যতদিন যাচ্ছে তত বেশি প্রাসঙ্গিক করে তুলছেন আপনারা, এটা দিয়ে আসলে আমাদের কী উপকার হলো বা এর দায়টাই বা কার?
২০২৪ গণঅভ্যুত্থানের প্রাপ্তি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, যদি ২০২৪ সালের গণভুত্থানের আউটকামের বিষয়ে আলাপ আসে, আমরা গণভুত্থানের পর পর তিনটা বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছিল যে সংস্কার, বিচার এবং গণতান্ত্রিক রূপান্তর। বিচারের বিষয়ে যতটুকু অবগত আছি, অগ্রগতি হচ্ছে। আগামী ১৩ নভেম্বর একটা রায়ও হওয়ার কথা এবং এর প্রেক্ষিতে ফ্যাসিবাদী শক্তি আবার লকডাউন ডেকেছে ঢাকায়।
তিনি বলেন, অন্যদিকে যদি সংস্কারের কথা বলি, আমরা দেখেছি যারা সংস্কারের কথা সবচেয়ে বেশি বলতো ৫ আগস্টের পরে তারা কেন জানি সংস্কারবিরোধী রাজনীতিতে ঢুকে গেল। আমরা আসলে জানি না এই সংস্কারবিরোধী রাজনীতির আউটকামটা তাদের জন্য কী? আমাদের দেশের জন্য অবশ্যই ক্ষতি কিন্তু তাদের জন্য কোন দিক দিয়ে সফলতা বয়ে আনছে?
নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কী জানেন না জানিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, খুব জনপ্রিয় একটা শব্দ নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা এখনো জানি না যে আসলে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তটা কী? মানে এটা কি জিনিস? মানে কিছু পপুলিস্ট কার্যক্রম করলেই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হয়ে যায় না। এটার রূপরেখাটা কি লিখিত আছে? এখন পর্যন্ত বা সেটা কী যারা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের রাজনীতি করছেন বা নির্মাণ করার চেষ্টা করছেন, তারা এটা দিতে পেরেছেন কি না?
তিনি বলেন, আমিও আমার এই ক্যাপাসিটি থেকে বের হলে আমিও রাজনীতি করব। তখন আমার আসলে খুঁজতে হবে যে, আসলে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত জিনিসটা কী? বা এটা কোথায় আছে? আমাকে যদি কেউ একটা লিফলেট বা একটা পেপার না দিতে পারে যে, এটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তাহলে আমি কীসের আশায়, কোন নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দিকে যাব? সেটা তো আমি নিজেই কনফিউজড হয়ে যাব!
আসিফ মাহমুদ বলেন, আমাদের মতো যাদের একটু জিজ্ঞাসা আছে তাদের সবারই আসলে কনফিউশনটা আছে। কারণ কিছু পপুলিস্ট অ্যাক্টিভিটি দিয়ে তো আর নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হয় না। সেটা যে কেউ এসে করতে পারে। আপনার রূপরেখাটা কোথায়, সেটা আসলে জনগণের কাছে বিশেষ করে তরুণদের কাছে তাদের আগ্রহটা বেশি, আমার মনে হয় পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
১৯৭৫ সালের সিপাহী-জনতার বিপ্লব এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের যে প্রেক্ষাপট তাতে খুব বেশি পার্থক্য নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, যেটা ৫০ বছর ধরে বারবার বলা হয়েছে যে, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়। এখন বাস্তব পরিসরে আমরা এসে দেখি আসলে আমাদের কারো সঙ্গেই বন্ধুত্ব নেই। আমি যদি রুমে যারা আছে ১৫০, ২০০ মানুষ সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে যাই তাহলে আমার কারো সঙ্গেই আসলে প্রকৃত বন্ধুত্ব হয়ে উঠবে না। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি যে, মিনিংফুল ফ্রেন্ডশিপ যাদের সঙ্গে করা যায় তাদের সঙ্গে করা, যাদের সঙ্গে আমাদের আন্তর্জাতিক পরিসরের স্বার্থটা মেলে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদের সঞ্চালনায় এই গোলটেবিল বৈঠকে কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, পুসাবের স্থায়ী কমিটির সদস্য ফাহমিদুর রহমান, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট মোহাম্মদ সজল বক্তব্য দেন।
রাজশাহীর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
শনিবার (৮ নভেম্বর) সকালে পরিদর্শন শেষে সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা তাকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করলেও, তিনি এর কোনো জবাব দেননি। সে সময় আসিফ নজরুল বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে আমি রাজশাহীতে আসিনি।’
পরে তিনি বলেন, ‘প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)। সারাদেশে শতাধিক টিটিসি আছে। এখানে যারা কাজ করেন, তারা কর্মসংস্থানের জন্য দেশে-বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মেয়েদের যে টিটিসি রাজশাহীতে অবস্থিত সেটি বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম।
এর আগে সকাল সোয়া ১০টার দিকে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বিভিন্ন কার্যক্রম ঘুরে দেখেন ও প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় রাজশাহী জেলা প্রশাসকসহ টিটিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে হবে। প্রধান উপদেষ্টা, অন্য উপদেষ্টামণ্ডলী সবাই কাজ করছেন। নির্বাচন নিয়ে কোনো সংশয় নেই।
শনিবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
গণভোট ইস্যু নিয়ে তিনি বলেন, এখন যদি পলিটিক্যাল পার্টিগুলো ডিসিশন না নিতে পারে তাহলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ডিসিশন নেবে। অনকেই বলছেন জুলাই চার্টার করতে কৃষক, নারী, লেবারদের সঙ্গে কথা হয়নি। তাহলে পলিটিক্যাল পার্টিগুলো কি এসব মানুষদের রিপ্রেজেন্ট করে না?
তিনি বলেন, জুলাই চার্টারে সব কিছুই এসেছে। নির্বাচনের পর নতুন করে আনার ডায়ালগ হতে পারে।
শফিকুল আলম বলেন, শেখ হাসিনা ১৮ কোটি মানুষকে টেররিস্ট বলেছে। তার মানে দেশের সবাই টেররিস্ট। সবাইকে হত্যা করে উনি ক্ষমতায় আসবে। আমার মনে হয় শেখ হাসিনা-আওয়ামী লীগ নিয়ে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন