সিনওয়ার নিহত, হামাসের দুর্গে আরেকটি বড় আঘাত
ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুর পর আরেকটি বড় হোঁচট খেল ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ নিশ্চিত করেছেন, হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হয়েছেন।
সিনওয়ারের মৃত্যুর খবর বিভিন্ন মিত্র দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছেও পাঠিয়েছেন কাটজ।
সিনওয়ারকে গতবছরের ৭ অক্টোবরের ‘গণহত্যা ও নৃশংসতার’ মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বর্ণনা করে ইরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বুধবার সেনারা তাকে হত্যা করেছে।
“এটি ইসরায়েলের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সামরিক ও নৈতিক অর্জন। একইসাথে ইরানের নেতৃত্বে ইসলামের যে উগ্রপন্থা, তার বিপক্ষে মুক্ত বিশ্বের বিজয়।”
সিনওয়ারের মৃত্যুতে হামাসের হাতে আটক অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির সম্ভাব্নাও তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সিনওয়ারকে হত্যার খবর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীও (আইডিএফ) নিশ্চিত করে বলেছে, এক বছর ধরে লেগে থাকার পর সেনারা দক্ষিণ গাজায় অভিযান চালিয়ে হামাস নেতাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়।
এক বার্তায় আইডিএফ বলেছে, গত এক বছর ধরে গাজার নিরীহ বেসামরিক মানুষের আড়ালে এবং হামাসের তৈরি সুড়ঙ্গের ভেতরে-বাইরে আত্মগোপনে থাকা সিনওয়ারকে অবশেষে নির্মূল করা গেছে।
আইডিএফ বলেছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হামাসের শীর্ষ নেতাদের অবস্থান শনাক্তের পর ইসরায়েলি সেনারা দক্ষিণ গাজায় অভিযান চালায়। আইডিএফের ৮২৮ ব্রিগেডের সেনারা সেখানে তিনজনের অবস্থান শনাক্ত এবং তাদেরকে হত্যা করে। পরে তাদের একজন সিনওয়ার বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।
গতবছর ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে ঢুকে হামাস যোদ্ধাদের নজিরবিহীন হামলায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং আরও শত শতজন জিম্মি হওয়ার ঘটনার হোতা এই সিনওয়ারই ছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
গাজায় চালানো সামরিক অভিযানে ইসরায়েলের এক নম্বর টার্গেট ছিলেন এই সিনওয়ার।
বিবিসি জানায়, গ্রাফিক কয়েকটি ছবিতে সিনওয়ারের মতো দেখতে একটি লাশ বাড়িঘরের ধ্বংসস্তুপের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
ইসরায়েলের দুটো সম্প্রচারমাধ্যম কান এবং চ্যানেল ১২ ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সিনওয়ার নিহত হয়েছেন। তবে কয়েকটি খবরে বলা হয়, সিনওয়ারের পরিচয় নিশ্চিত হতে একটি মৃতদেহের ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে।
ডিএনএ পরীক্ষার পরই সিনওয়ারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে ইসরায়েল।
সিনওয়ারের মৃত্যু ইসরায়েলের জন্য এক বিরাট সফলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০১১ সালে সিনওয়ার বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় ইসরায়েলের জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন। এরপর তিনি হামাসের কট্টরপন্থি এবং অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা হয়ে ওঠেন।
সিনওয়ার ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক পন্থায় সমস্যা সমাধান করা নয় বরং ইসরায়েলকে মোকাবেলায় সশস্ত্র সংঘাতের পথ বেছে নেন। গাজায় যুদ্ধ চলার বেশির ভাগ সময়েই সিনওয়ার ইসরায়েলি জিম্মিদের মানবঢাল বানিয়ে একটি সুড়ঙ্গ ঘিরে রেখে তাতে লুকিয়ে থেকেছেন বলে ধারণা করা হয়।
বিশেষ করে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সিনওয়ার সর্বেসর্বা হয়ে ওঠার পর তার জন্য এই সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যদিও ইসরায়েলের আইডিএফ এর কয়েকটি খবরে বলা হয়েছে ওই স্থানে কোনও জিম্মিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আপনার মতামত লিখুন