সিজার করাতে গিয়ে সন্তানসহ লাশ হয়ে ফিরলেন আফরোজা
অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে নিয়ে পরিবারে সবার উল্লাস। ভূমিষ্ঠ হতে যাওয়া শিশু সন্তানকে নিয়ে পরিবারের সকলের এক এক পরিকল্পনা। সকল পরিকল্পনা ও স্বপ্নের সহায় হলো না গৃহবধূর সঙ্গে ঘটে যাওয়া বাস্তবতা। সিজার করতে গিয়ে ‘ডাক্তারের ভুলে’ ফিরলেন লাশ হয়ে।
১৪ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ভোরে প্রসব বেদনা ওঠে অন্তঃসত্ত্বা আফরোজা বেগমের (৩৩)। তখনই তাকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তার স্বামী মাসুদুর রহমান।
সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে তাকে ভর্তি করা হয় কুড়িগ্রাম শহরের গ্রীন লাইফ জেনারেল হাসপাতালে। দায়িত্বরত ডাক্তার ও নার্সরা রোগীকে সিজারের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেয় সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে।
কিছুক্ষণ পরেই রোগীকে (আফরোজা বেগম) অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে দিয়ে বলা হয়,’রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক, আপনারা দ্রুত রংপুর নিয়ে যান। ‘পরে দ্রুত এম্বুল্যান্সে করে রংপুর নিয়ে যাওয়ার পথেই প্রাণ হারান আফরোজা বেগম। সেই সঙ্গে পেটে থাকা শিশুটিও মারা যায়।
রংপুরে প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর রোগী ও সন্তানের পথেই মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সেখানকার ডাক্তারেরা। পরে জানা যায়, সিজারের আগে এনেস্থিসিয়া দেয়ার ফলে রোগীর অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে, পরে তৎক্ষনাৎ আইসিইউ সাপোর্ট না মেলায় রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
বেলা ১২ টার দিকে রংপুর থেকে স্ত্রী ও তার পেটে থাকা সন্তানের লাশ নিয়ে কুড়িগ্রামের গ্রীন লাইফ জেনারেল হাসপাতালে ফিরে আসেন স্বামী মাসুদুর রহমান। দাবি করেন বিচারের। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস মেলায় লাশ নিয়ে বিকেলে নিজ বাড়িতে ফিরে যান তিনি।
নিহত আফরোজা বেগমের বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের হিজলি গোপ পাড়া গ্রামে। ১ ছেলে, ১ মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল তার। আরেকটি সন্তান কামনা করাই যেন কাল হলো। তছনছ হলো সবকিছু।
নিহতের স্বামী মাসুদুর রহমান বলেন, আমি কখনই ভাবিনি আমার স্ত্রীর সাথে এমন কিছু হবে। ডাক্তার জাহাঙ্গীর আমার স্ত্রীকে এনেস্থিসিয়া দিয়েছিল। স্ত্রী ও পেটে থাকে সন্তানকে জীবিত রাখার জন্য রংপুরে নিয়ে যেতে দেরি করিনি। তাও তাদের বাঁচাতে পারলামনা। আমি লাশ নিয়ে আবারও গ্রীন লাইফে গিয়েছিলাম বিচারের জন্য। যাতে অন্য কারও সাথে এমনটা না হয়। এখন আমি সব হারালাম।
গ্রীন লাইফ জেনারেল হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান ডা. অমিত কুমার বসু এ বিষয়ে বলেন, রোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। পরবর্তীতে যাতে এটা না হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন