খুঁজুন
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫, ১৮ বৈশাখ, ১৪৩২

জিয়াউলের নেতৃত্বে ‘কিলিং স্কোয়াড' চালায় গুম-খুন

ইলিয়াসকে গুম করা হয় শেখ হাসিনার নির্দেশে, গোপন তথ্য ফাঁস করলেন জড়িত র‍্যাব সদস্য

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ৩:১২ অপরাহ্ণ
ইলিয়াসকে গুম করা হয় শেখ হাসিনার নির্দেশে, গোপন তথ্য ফাঁস করলেন জড়িত র‍্যাব সদস্য

ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থ্যানে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপরই ‘আয়নাঘর’ নামক বন্দিশালা থেকে গত ১৫ বছরে আটক অনেকেই ছাড়া পান। ওই সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রটে ‘আয়নাঘরে’ পাওয়া গেছে বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীকে। পরে অবশ্য জানা যায়, ইলিয়াস আলীকে গুমের পর পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সিলেট অঞ্চলে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এম ইলিয়াস আলীকে গুম করার পর হত্যা করে মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের নেতৃত্বে একটি ‘কিলিং স্কোয়াড’। হত্যার পর খুনিচক্র ইলিয়াস আলীর লাশ যমুনা নদীতে ফেলে দেয়। এই চাঞ্চল্যকর গুম ও হত্যার নির্দেশদাতা ছিলেন খোদ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিতে র‌্যাব সদস্য সার্জেন্ট তাহেরুল ইসলাম ইলিয়াস আলীকে অপহরণের পর লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য দেন।

এ নিয়ে সোমবার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক আমার দেশ। সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানের করা সেই প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর ইলিয়াস আলী গুম ও হত্যার লোমহর্ষক ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিতে তাহেরুল বলেন, জিয়াউল আহসানের নির্দেশে ঘটনার রাতে শেরাটন হোটেল থেকে তিনি ইলিয়াস আলীকে অনুসরণ করেন।

মহাখালী পৌঁছার পর জিয়াউল আহসান নিজেই আরেকটি টিম নিয়ে ইলিয়াস আলীর গাড়ি অনুসরণ করেন। ইলিয়াস আলীর গাড়ি বনানীর ২ নং সড়কের বাসার সামনে পৌঁছার আগেই বনানীর সাউথ পয়েন্ট স্কুলের সামনে থেকে তাকে তুলে নেওয়া হয়। ইলিয়াস আলীর সঙ্গে তার ড্রাইভার আনসারকেও অপহরণ করা হয়। গাড়িটি জলখাবার হোটেলের সামনে দিয়ে বনানীর ২ নম্বর সড়কে ঢোকার পরে এই অপহরণের ঘটনা ঘটে।

ট্রাইব্যুনাল সূত্র আরও জানায়, ইলিয়াসকে হত্যা ছাড়াও র‌্যাবের জিয়াউল আহসানের কিলিং স্কোয়াডের এক সদস্য একদিনে ১১ জন এবং আরেক সদস্য ১৩ জনকে খুন করেছিল। উল্লেখ্য, জিয়াউল আহসান তখন র্যাবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি জেলে আটক রয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও গুম তদন্ত কমিশন সূত্রে আরও জানা গেছে, ইলিয়াস আলীকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত দুজন সেনাসদস্য বর্তমানে সেনাবাহিনীতে রয়েছেন। এরা হলেন— ওয়ারেন্ট অফিসার জিয়া ও ইমরুল। জিয়াউল আহসানের রানার হিসেবে গুম ও খুন মিশনের হুকুম তারা তামিল করতেন। খুনিচক্রের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর গুম তদন্ত কমিশন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত টিমের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী এ দুই সদস্যকে ক্লোজড এবং অন্তরীণ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল সন্ধ্যার পর দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ইলিয়াস আলী সভা করেন তৎকালীন শেরাটন হোটেলে (বর্তমান ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল)। সভা শেষ করে রাত ১১টায় তিনি বের হন এবং গাড়িতে করে বাসায় ফিরছিলেন। অপহরণের লক্ষ্যে জিয়াউলের নির্দেশে শেরাটন থেকেই অনুসরণ করছিলেন র্যাবের সদস্য সার্জেন্ট তাহেরুল ইসলাম। পরবর্তীতে তাকে চিহ্নিত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত টিম। তাকে তদন্ত কমিটিতে আনা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৬৪ ধারায় তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, আমার দায়িত্ব ছিল শেরাটন থেকে অনুসরণ এবং বেতার বার্তায় গতিপথ জিয়াউল স্যারকে জানানো। নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি ইলিয়াস আলীর গাড়ি অনুসরণ এবং প্রতিটি মুহূর্তে গাড়ির গতিপথ জিয়াকে অবহিত করা। মহাখালী পৌঁছার পর ইলিয়াস আলীর গাড়ি সরাসরি অনুসরণ শুরু করেন জিয়ার টিম।

মহাখালী জলখাবার হোটেলের অদূরে বনানীর ২ নম্বর সড়কে গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে থামানোর পর ড্রাইভার আনসারসহ ইলিয়াস আলীকে অপহরণ করে এই টিমের সদস্যরা। এরপরই জিয়া তাহেরুলকে বলেন, ‘তোমার ডিউটি শেষ, চলে যাও।’ নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব শেষে তিনি ফিরে যান। জিয়ার টিম ইলিয়াস আলীকে নিয়ে যাওয়ার পর কী হয়েছে সেটা তিনি বলতে পারবেন না। ’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইলিয়াস আলীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছিল। হত্যার পর তৎকালীন র্যাব কর্মকর্তা এবং পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীতে পদোন্নতি পেয়ে মেজর জেনারেল হওয়া জিয়াউল আহসান অফিসে ফিরে স্বস্তি ও আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আজ বড় একটি অপারেশনে সাকসেসফুল হলাম। শেষ করে তাকে যমুনায় ফেলে দিয়ে এসেছি।’

জিয়া এ কথাও বলেন যে, ইলিয়াস আলী অপারেশনের কথা ঊর্ধ্বতনকে জানিয়েছি। ঊর্ধ্বতন বলতে তিনি মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিকি কিংবা শেখ হাসিনাকে বুঝিয়েছেন বলে সূত্রের ধারণা। যাদের সামনে এই কথা জিয়াউল আহসান বলেছিলেন, তাদেরকেও চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত টিম।

এদিকে শেখ হাসিনার নির্দেশে বিভিন্ন ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাকে গুম এবং অপহরণের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে গুম তদন্ত কমিশন।

গুম তদন্ত কমিশন সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার নির্দেশেই ইলিয়াস আলীকে গুম এবং খুন করা হয়েছিল। শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে এসএসএফ-এর মহাপরিচালক ছিলেন লে. জেনারেল চৌধুরী হাসান সওরাওয়ার্দী। তার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ডিজিএফআইর তৎকালীন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ডেকে নিয়ে ইলিয়াস আলীকে গুম করার নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। অথচ পরবর্তী সময়ে ইলিয়াস আলীর স্ত্রীকে ডেকে এনে নাটকও করেছিলেন।

পুরাতন শাড়ি পরে জড়িয়ে ধরেছিলেন ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও কন্যাকে। এ সময় ইলিয়াস আলীর স্ত্রীকে শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে অপহরণ করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধের জের হিসেবে এটা করা হয়েছে বলে ইলিয়াস আলীর স্ত্রীকে অবহিত করেছিলেন শেখ হাসিনা।

এদিকে গুম কমিশনের প্রাথমিক রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয়েছে অনেক গুমের ঘটনা শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়েছিল। এই বিষয়ে ডিজিএফআই’র সাবেক একাধিক মহাপরিচালক গুম কমিশনের জিজ্ঞাসাবাদেও এ কথা স্বীকার করেছেন।

রাত হলেই বেলকুচি পৌরসভায় মাদকের আসর: সব জেনেও প্রশাসন নিরব

রেজাউল করিম, স্টাফ রিপোর্টার সিরাজগঞ্জ
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫, ৪:৩২ অপরাহ্ণ
রাত হলেই বেলকুচি পৌরসভায় মাদকের আসর: সব জেনেও প্রশাসন নিরব

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌরসভায় রাত হলেই বসে মাদকের আসর। সেই সাথে চলে নানা অনৈতিক কর্মকান্ড। দির্ঘদিন যাবৎ পৌরসভার হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম রফিক স্থানীয় মাদক সেবীদের সাথে নিয়ে পৌরসভায় তার নিজ কক্ষ্যে বসে এমন কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন। রফিক স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনা পৌরসভার উদ্ধতন কর্মকর্তারা ও প্রশাসন। তার এই মাদক সেবনের বিষয়ে কোন কর্মচারী কথা বললেই সেই কর্মচারীর উপরে নেমে আছে রফিকের হয়রানীর খর্গ। বিধায় তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহসও পায়না কেউ।

গত ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবারা রাত সারে ১০ টার দিকে পৌরসভার হিসাব রক্ষকের কক্ষ্যে হাউকাউ ও জোরে জোরে চিৎকার শুনতে পায় স্থানীয়রা। এতোরাতে পৌরসভায় এমন চিৎকার শুনে স্থানীয়রা ঐ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সেলর আলম প্রামানিককে ফোন করে ডেকে আনে। তখন সাবেক কাউন্সেলরকে সাথে নিয়ে স্থানীয়রা পৌরসভায় প্রবেশ করতে নিলে বাধা দেয় পিয়ন হাকিম। তিনি বলে স্যাররা বিশেষ কাজে ব্যাস্ত আছে এখন যাওয়া যাবেনা । কাউন্সেলর বাধা উপেক্ষা করে হিসাব রক্ষক রফিকের কক্ষ্যে গেলে চোখের সামনে উম্মেচিত হয়ে যায় হিসাব রক্ষক রফিকের মাদক সেবনের দৃশ্য। তিনি  তার চেয়ারে বসেই করছেন মাদক সেবন। পাশেই বসে আছেন পৌরসভার বর্তমানে ৪ ও ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সেলরের দ্বায়িত্বে থাকা  উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা দেবাশীষ ঘোষসহ স্থানীয় কিছু চিহ্নিত মাদক সেবীরা। সাবেক কাউন্সেলর ও স্থানীয়দের দেখে দ্রুত সটকে পড়ে সমাজ সেবা কর্মকর্তা ও স্থানীয় মাদক সেবীরা। এসময় রফিক মাতাল অবস্থায় উঠে এসে কাউন্সেলরের কাছে বারবার ছবি তুলতে বারন করে। এরপর ছবিগুলো ছরিয়ে পরে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে। তাৎক্ষনিক বিষয়টি বর্তমানে দ্বায়ীত্বে থাকা পৌর প্রশাসক ও বেলকুচির উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া সুলতানা কেয়াকে জানানো হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা নিতে পারেননি তখন।

বিষয়টি নিয়ে সাবেক কাউন্সেলর আলম প্রামানিক বলেন, মঙ্গলবার রাত সারে ১০ টা থেকে পোনে ১১ টার দিকে আমাকে কিছু লোক ফোন দিয়ে জানায় পৌরসভায় যেন কি হয়েছে , ভিতর থেকে কারা যেন চিৎকার করছে। শুনে আমি দৌড়ে যাই এবং স্থানীয়দের সাথে নিয়ে ভিতরে ঢুকতে গেলে পিয়ন হাকিম আমাকে বাধা দেয়। আমি পিয়ন হাকিমের বাধা উপেক্ষা করে হিসাব রক্ষক রফিকের রুমে যাই। গিয়ে দেখি সমাজ সেবা কর্মকর্তাসহ স্থানীয় মাদক সেবীদের সাথে নিয়ে রফিক তার চেয়ারে বসে মাদক সেবন করছে আর উন্মাদনায় চিৎকার করছে। তবে এসময় আকে দেখেই আমাকে দেখেই দৌড়ে সটকে পড়ে সমাজ সেবা কর্মকর্তা দেবাশীষ ঘোষ ও স্থানীয় মাদক সেবীরা। বিষয়টি তখনই আমি বর্তমান পৌর প্রশাসককে জানালে তিনি তাৎক্ষনিক কোন ব্যবস্থা না নিয়ে আমাকে লিখিত ভাবে জানাতে বলেন। আসলে দীর্ঘদিন যাবৎ এই পৌরসভায় এভাবে মাদকের আসর বসিয়ে আসছে রফিক। বিষয়টি সবাই জানার পরেও কোন ব্যবস্তা নেননা কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে পৌরসভার বর্তমানে ৪ ও ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সেলরের দ্বায়িত্বে থাকা  উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা দেবাশীষ ঘোষ বলেন, প্রশাসক  সহ আমরা সবাই বিকেলে সভা শেষে পৌরসভার বর্জ ফেলানোর জন্য  জায়গা দেখতে যাই। এরপর প্রশাসক  চলে গেলেও আমি কিছু কাজের জন্য পৌরসভায় রয়ে যাই। রাতে আমি কাজ শেষে নামার সময় সাবেক কাউন্সেলর আলম প্রামানিককে উপরে যেতে দেখি। সেখানে কি হয়েছে তা আমি জানিনা। কারন তার আগে আমি আমার অফিস কক্ষ্যেই ছিলাম। ফলে হিসাব রক্ষকের রুমে কি হয়েছে আমি তা জানিনা। 

হিসাব রক্ষক রফিকুল ইসলাম রফিক সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে স্বরযন্ত্র করা হচ্ছে। আমি এমন কোন কর্মকান্ড পৌরসভায় করিনি। এ বিষয়ে আপনাদের সাথে আর কোন কথা বলতে পারবোনা।

বেলকুচি থানার অফিসার ইনচার্জ মো: জাকেরিয়া হোসেন বলেন, কোন সরকারী অফিস কেন কোন স্থানেই কেউ মাদক সেবন করতে পারবেনা। যদি পৌর সভায় এমন কর্মকান্ড হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 এ বিষয়ে বর্তমানে দ্বায়ীত্বে থাকা পৌর প্রশাসক ও বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া সুলতানা কেয়া বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি তবে কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। কি হয়েছে তা জেনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি অনেক দু:খজনক। আমি গত রাতে জানার পরেই স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালককে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য বলেছি। তার তদন্তের পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আজ মহান মে দিবস

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫, ৪:২৭ অপরাহ্ণ
আজ মহান মে দিবস

বিশ্বের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের দিন মহান মে দিবস আজ। ১৮৮৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এই দিনে। জীবনের বিনিময়ে মালিকপক্ষের কাছ থেকে দাবি আদায়ের মধ্য দিয়েই স্বীকৃতি পেয়েছিল এই দিনটি। এরই ধারাবাহিকতায় ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে’ প্রতিপাদ্যে প্রতিবারের মতো এবারও পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস।

এদিকে এবারের মহান মে দিবসে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিশ্চিতে শ্রম আইন পাকাপোক্ত করে দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। শ্রম আইনের ব্যাপক পরিবর্তন আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আইনটা করে দিতে চাই। আমার ইচ্ছা আছে আমি থাকতে থাকতে একটা শ্রম আইন পাকাপোক্ত করে দেওয়া।

একই সঙ্গে চলতি বছরে মহান মে দিবস ঘিরে সরকারের পক্ষ থেক একগুচ্ছ আয়োজন রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।

কেন এই মে দিবস?
বিশ্বজুড়ে ১ মে, এই দিনটি শ্রম দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। তবে এই দিবস পালনের পেছনে রয়েছে ঊনবিংশ শতাব্দী ও তার আগের শ্রমিকদের বঞ্চনার করুণ ইতিহাস।

এই সংগ্রাম ও ইতিহাসের শুরুটা ঘটে যুক্তরাষ্ট্রে। ১৮৮৬ সালের এই দিনে শিকাগো শহরের হে মার্কেটে ক্রমেই জড়ো হতে থাকেন শ্রমিকরা। তাদের দাবি ছিল, ন্যায্য মজুরি এবং কাজের জন্য নির্ধারিত সময়। যুগের পর যুগ তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বঞ্চনার প্রতিবাদ ছিল এই আন্দোলন। একেকজন শ্রমিককে সেই সময় বাধ্যতামূলক খাটানো হতো ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা, বিনিময়ে পারিশ্রমিক ছিল খুবই সামান্য।

শ্রমিকদের সেই আন্দোলনে ঘটে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। হঠাৎ শ্রমিকদের ঘিরে থাকা ভিড় থেকে কেউ একজন পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করেন। ঘটনার আকস্মিকতায় সেদিন বিহ্বল ছিলেন আন্দোলনে অংশ নেওয়া প্রায় সবাই। এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। আর ঝরে পড়ে ১০ থেকে ১২টি তাজা প্রাণ। পুলিশসহ ওই ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা ছিল আরও অনেক।

বিশ্বজুড়ে শ্রমজীবী মানুষের বঞ্চনার পাশাপাশি কণ্ঠরোধের চেষ্টায় নির্মম এক ইতিহাস তৈরি হয় সেদিন। ন্যায্য দাবির জন্য আন্দোলনে প্রাণ হারানো সেই মানুষগুলোর স্মরণে প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। পরে বিশ্বজুড়ে নিজেদের অধিকার আদায়ে ইতিহাস সৃষ্টির এক নিদর্শন হিসেবে পালন করা হতে থাকে এই শ্রমিক দিবস কিংবা মে দিবস।

এরপর ১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসে, পরের বছর থেকে এই প্রতিবাদের বার্ষিকী পালন করার প্রস্তাব করেন রেমন্ড লাভিনে। সেখান থেকেই আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের সূচনা হয়। আর ১৮৯১ সালে প্যারিসেই দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। প্রথমবারের মতো স্বীকৃতি পায় মে দিবস।

এরপর ১৯০৪ সালে আমস্টারডাম শহরে সমাজতন্ত্রীরা সব গণতান্ত্রিক দল ও ট্রেড ইউনিয়নের প্রতি নতুন এক আহ্বান জানান। নিহত সেই শ্রমিকদের স্মরণে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি আদায় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে ১ মে মিছিল ও শোভাযাত্রার আয়োজন করে তারা। একই সঙ্গে সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সব শ্রমিক সংগঠন মে মাসের ১ তারিখে ‘বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না-করার’ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

১৯১৭ সালে রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবের পর থেকে বিপুল সমারোহে দেশটিতে মে দিবস উদযাপিত হতে থাকে। পাশাপাশি এই উপলক্ষে দেশটিতে সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। এরপর থেকেই এই দিবস শ্রমিকদের ওপর জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক প্রতীকী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই এটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এই দিনকে প্রতিবছর পালন করে বাংলাদেশ।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় বিশেষ বিজ্ঞাপন প্রচার।

দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান ও বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রচার।

মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুল পর্যায়ে রচনা ও প্রবন্ধ লেখার ওপর বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান।

মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস উপলক্ষে শ্রম অধিকার বিষয়ে প্রকাশিত, প্রচারিত, প্রদর্শিত মানসম্মত সংবাদ, স্থিরচিত্র যাচাই করে সাংবাদিক, রিপোর্টার, চিত্রগ্রাহক নির্বাচনপূর্বক অ্যাওয়ার্ড প্রদান।

আজ সকালে র‌্যালির আয়োজন করা হয়েছে। মেহনতি মানুষের অবদান তুলে ধরার জন্য ডকুমেন্টারি ও টিভিসি প্রচার করা হবে। এরই মধ্যে বিভিন্ন জেলায় সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে।

মহান মে দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে’ ক্ষুদেবার্তা সব মোবাইল ফোন গ্রাহকের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

‘৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেও গ্যাস-বিদ্যুৎ পাচ্ছি না’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫, ৪:২৪ অপরাহ্ণ
‘৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেও গ্যাস-বিদ্যুৎ পাচ্ছি না’

Oplus_131072

কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেও দুই বছরে গ্যাস ও বিদ্যুৎ পাননি বলে অভিযোগ করেছেন দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর এক হোটেলে অনুষ্ঠিত এনবিআরের পরামর্শক কমিটির ৪৫তম সভায় এ অভিযোগ করেন তিনি। যৌথভাবে এ সভা আয়োজন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

মোস্তফা কামাল বলেন, আমরাসহ অনেকেই কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইজেড) বিনিয়োগ করেছি। আমরা ৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছি। তবে দুই বছরেও গ্যাস ও বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। আমরা বিদেশিদের বিনিয়োগের জন্য ডাকছি, অথচ নিজের দেশের উদ্যোক্তারা জ্বালানি সংকটে ভুগছেন। এটা অবশ্যই গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে। কারণ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিনিয়োগের জন্য আবশ্যক।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কঠোর তদারকির কারণে এবার রমজানে নিত্যপণ্যের দাম সর্বকালের মধ্যে সহনীয় পর্যায়ে ছিল বলেও মন্তব্য করেন মোস্তফা কামাল।

তিনি আরও বলেন, যারা কর দেন, তাদের ওপর আরও বেশি করের চাপ আসে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেকের ব্যাংক হিসাব, করনথি তল্লাশি করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া ঢালাওভাবে তল্লাশি করে ব্যবসায়ীদের হয়রানি যেন না করা হয়- সে জন্য এনবিআরের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

জাহাজশিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়ে এই শিল্প উদ্যোক্তা বলেন, দেশের জাহাজশিল্পে যন্ত্রপাতিতে এক শতাংশ শুল্ক ছিল। ১৯৯৬ সালে জাহাজকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কয়েক মাস আগে শুল্ক বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়। ফলে গত পাঁচ-ছয় মাসে একটি জাহাজও কেনা হয়নি। গত বছর এই খাত থেকে ৭৮ কোটি ডলার এসেছে। জাহাজশিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক এক শতাংশে নামিয়ে আনলে তা কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়াতে সহায়তা করবে।

অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান।