সনাতনী শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় মন্দির নিয়ে প্রশাসনের যত অবহেলা « বিডিনিউজ৯৯৯ডটকম

সনাতনী শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় মন্দির নিয়ে প্রশাসনের যত অবহেলা

মোঃ আসিব ইকবাল
আপডেটঃ ২৫ মে, ২০২৪ | ৬:৩১
মোঃ আসিব ইকবাল
আপডেটঃ ২৫ মে, ২০২৪ | ৬:৩১
Link Copied!

বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি।
সনাতনী শিক্ষার্থীদের অর্থায়নে নির্মিত মন্দিরে তীব্র অবহেলার স্বীকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সাদামাটাভাবে নির্মিত(উপরে টিন আর ইটের দেওয়াল) মন্দিরের উন্নয়নে প্রশাসন যেন উদাসীন। গত কয়েক বছরে একাধিকবার আবেদন করেও পর্যাপ্ত পরিমানে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেনা সনাতনী শিক্ষার্থীরা।

অনুষ্ঠানে রান্নাবান্নার জন্য নেই কোনো রান্নাঘর। খোলা মাঠে মন্দির নির্মাণ করায় সামান্য বৃষ্টি হলেই মন্দিরের রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে যায়। মন্দিরে নেই সুপেয় জলের ব্যবস্থা। নিয়োগ দেওয়া হয়নি পুরোহিত। এমনকি শৌচাগার নির্মাণ করে দেওয়ার কথা বলেও নিরব ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন। এমনই নানান অভিযোগে জর্জড়িত গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(বশেমুরবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় মন্দির।

জানা যায়, ২০১৪সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য নাসিরুদ্দিন একই সময়ে মসজিদ এবং মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের পর যথাসময়ে মসজিদ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়। তবে অবহেলায় পড়ে থাকে সনাতনী শিক্ষার্থীদের প্রতিক্ষিত মন্দির নির্মাণের কাজ।

বিজ্ঞাপন

এরপর শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু করে। এতেও প্রশাসন বাঁধা প্রদান করে বলে জানা যায়। কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে দেওয়ারও হুমকি প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

দীর্ঘদিন যাবৎ মন্দিরে নেই কোনো পুরোহিত। তাই সনাতনী শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করে থাকে। পুরোহিত নিয়োগের বিষয়ে একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করার পরেও প্রশাসন সেখানে দায় এড়িয়ে গিয়েছে বলে জানা যায়।

এবিষয়ে জানতে চাইলে মন্দিরের ২০২০-২১কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখর সরকার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মন্দিরে একজন পুরোহিত থাকাটা স্বাভাবিক বিষয়, কারন মন্দিরটি যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত তাই পুরোহিত নিয়োগ দেওয়াটাও প্রশাসনের দায়িত্বের মধ্যে পরে। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে মন্দিরের অবস্থান ১০বছর অতিবাহিত হলেও প্রশাসন থেকে মন্দিরের দিকে তেমন কোনো সুনজর পরেনি। তিনি আরো বলেন, মন্দিরে পুরোহিত নিয়োগের জন্য প্রশাসন বরাবর আমরা একাধিকবার অনুরোধ জানিয়েছি, এমনকি দরখাস্তও প্রদান করেছি কিন্তু প্রশাসন থেকে আশ্বাস ব্যতিত কোনো ফলাফল পাইনি।

বিজ্ঞাপন

মন্দিরে খাবার জল ও শৌচাগারের ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ ২০১৮-১৯শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী পার্থ প্রতিম কুন্ডু বলেন, আমরা আসলে নিরুপায় হয়ে গেছি। এবিষয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব জায়গায় খাবার জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে, কিন্তু বাকি রইলো সনাতনীদের মন্দির। তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে মন্দিরে ৩০০-৪০০সনাতনী শিক্ষার্থী প্রার্থনা করান জন্য আসে। ৩-৪ঘন্টা তীব্র গরমে মন্দিরের ভিতরে থাকে। দীর্ঘ সময় পরে স্বাভাবিকভাবে প্রকৃতির ডাকে তাকে শৌচাগারে যেতে হয়। কিন্তু এখানে একটি শৌচাগার নির্মাণ করে দেয়নি। এটি বঙ্গবন্ধুর নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আসলেই লজ্জাজনক বলে মনে করি।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতি সপ্তাহে বিভাগ ভিত্তিক সনাতনী শিক্ষার্থীরা মন্দিরে প্রার্থনা সভার আয়োজন করে। এতে প্রায় তিন থেকে ৪শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত হন। মন্দিরে অনুষ্ঠানের রান্নাবান্নার জন্য এবং খাবার জলের প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে নেই কোনো খাবার জলের ব্যবস্থা। এমনকি রান্নাবান্নার জন্যও কোনো ঘর নির্মাণ করা হয়নি। শিক্ষার্থীরা গাছতলায় খোলা আকাশের নিচে রান্না করে। কখনো তপ্ত রোদ, কখনোবা বৃষ্টির মধ্যে তাদেরকে এসব কাজ করতে হয়।

রিভার্স অসমোসিস পদ্ধিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল জায়গায় খাবার জলের ব্যবস্থা থাকলেও মন্দিরে এর ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীরা প্রতি সপ্তাহে বাহির থেকে ২০০লিটারের অধিক জল ক্রয় করে তাদের অনুষ্ঠান সমাপ্ত করে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতনী শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, মন্দিরের পাশে কোনো শৌচাগার নেই। শৌচাগার নিমার্ণের জন্য শিক্ষার্থীরা একাধিকবার আবেদন করলেও প্রশাসন থেকে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছেনা বলে জানা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতনী শিক্ষার্থীরা মন্দিরে এত সমস্যায় ভুগছে, কিন্তু প্রশাসন নিরব কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব বলেন, এসব বিষয়ে তারা আমার কাছে এসেছিলো। আমি এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য প্রকৌশল দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারকে বলেছি। কিন্তু তারা এখনো এই কাজটি শেষ করেনি।

উপাচার্যের অনুমতি পাওয়ার পরেও পরিকল্পনা দপ্তর কাজ শুরু করেনি, তাহলে কি পরিকল্পনা দপ্তর উপাচার্যের কথা মানছেনা? নাকি অন্যকিছু!

এই প্রশ্নের উত্তর জানতে যোগাযোগ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার এস.এম. এস্কান্দার আলীর সাথে। কিন্তু তার সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। প্রতিবারই মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

একই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী(সিভিল) মো. মেজবা উদ্দিনের(চুক্তিভিত্তিক) কাছে। মুঠোফোনে তিনি বলেন, এবিষয়টি সম্পর্কে আমি একবার শুনেছিলাম। কিন্তু প্রধান প্রকৌশলী(এস্কান্দার) স্যার আমাদেরকে নিয়ে কোনো মিটিং করেনি। কিভাবে কি করা হবে সেবিষয়ে কোনো কিছু জানানো হয়নি। তাই আমরা প্রজেক্টটি বাস্তবায়ন করতে পারিনি।

বিষয়ঃ

সর্বশেষ: