খুঁজুন
মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন, ১৪৩১

মোদির ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি নিয়ে কেনো বিতর্ক ?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:৪২ অপরাহ্ণ
মোদির ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি নিয়ে কেনো বিতর্ক ?

ভারতে ‘এক দেশ, এক ভোট’ (ওয়ান নেশন ওয়ান ভোট) ব্যবস্থাকে বাস্তবায়িত করার পথে একধাপ অগ্রসর হলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। সাবেক রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সুপারিশ মেনে নিয়ে বুধবার এ প্রস্তাব পাশ করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন করার উদ্দেশ্যে এই ব্যবস্থা।

কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রথম দফায় লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভাগুলোর নির্বাচন একসঙ্গে হবে। দ্বিতীয় দফায় ভোট গ্রহণ করা হবে পুরসভা ও পঞ্চায়েতে। প্রথম ও দ্বিতীয় দফার মধ্যে সর্বাধিক ব্যবধান হতে পারে ১০০ দিনের। সব নির্বাচনের জন্য একটি ভোটার তালিকা নির্ধারিত করার সুপারিশ মেনে নিয়েছে কেন্দ্র।

এই পদক্ষেপ অনুযায়ী ২০২৯ সালে যে লোকসভা নির্বাচন হওয়ার কথা, তার সঙ্গে রাজ্যগুলোর বিধানসভা নির্বাচন সেরে ফেলতে হবে। কিন্তু ২০২৯ সালে লোকসভার মেয়াদ শেষ হলেও সব রাজ্য বিধানসভার মেয়াদ ফুরোবে না।

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট হবে ২০২৬ সালে। পাঁচ বছর পর ২০৩১ সালে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। অন্যান্য অনেক রাজ্যের ক্ষেত্রে একই সমস্যা রয়েছে। সেক্ষেত্রে কীভাবে পাঁচ বছর পর একযোগে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন দেশজুড়ে সম্পন্ন হবে, তা স্পষ্ট করতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার।

মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, সরকার দেশ জুড়ে এ বিষয়ে মতৈক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নেবে, সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এরপর শুরু হবে সুপারিশ বাস্তবায়নের আইনি প্রক্রিয়া। তার দায়িত্ব দেয়া হবে একটি বিশেষ কমিটিকে। তবে ২০২৯-এ সব রাজ্যের বিধানসভার মেয়াদ না ফুরোলে কী একত্রে ভোট হবে, এই প্রশ্নের সদুত্তর বৈষ্ণব দিতে পারেননি।

মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কিছু পরেই এক্স হ্যান্ডেলে নিজের মত জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তিনি এক দেশ এক ভোট নীতির উদ্দেশ্য সম্পর্কেও বলেন। লেখেন, দেশের গণতন্ত্রকে আরো জোরালো ও সকলের অংশগ্রহণের পক্ষে অনুকূল করে তোলার লক্ষ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

সাবেক রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বাধীন কমিটি ৪৭টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছিল। এ নিয়ে আগেই আপত্তি জানিয়েছে ১৫টি দল। এর মধ্যে রয়েছে কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে বলেছেন, সরকারের এই পদক্ষেপ সংবিধান, গণতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরোধী। দেশের জনতা একে সমর্থন করবে না। এর মাধ্যমে আসল সমস্যা থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

তৃণমূলের সংসদ সদস্য ডেরেক ও ব্রায়েনের বলেন, এটা গণতন্ত্র বিরোধী বিজেপির একটা চমক। এর আগে বিজেপি যেমন ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এটাও সেরকমই একটা উদ্যোগ।

বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শরিকরাও কেন্দ্রের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেন, বিজেপি আগে তাদের নিজেদের সাংগঠনিক স্তরে সব নির্বাচন একসঙ্গে করুক। তারপর দেশের কথা ভাবা যাবে।

বিরোধীদের প্রশ্ন, কেন্দ্র যেখানে একযোগে ভোট করানোর কথা বলছে, সেখানে হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে কেন উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা আসনগুলোর উপনির্বাচন করা হচ্ছে না?

প্রধানমন্ত্রী এই পদক্ষেপকে গণতন্ত্রের পক্ষে ইতিবাচক বললেও বিরোধীরা এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে।

অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্ম (এডিআর)-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার সঞ্চালক উজ্জয়িনী হালিম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর এটা পরোক্ষ আঘাত। আঞ্চলিক দলগুলোর জন্য খারাপ খবর। মানুষ ভিন্ন ভিন্ন নির্বাচনের সময়, ভিন্ন ইস্যুতে ও ভিন্ন নিরিখে ভোট দেয়, এটা নানা গবেষণা থেকে প্রমাণিত। একসঙ্গে নির্বাচন হলে ভোটারদের একটা দলকে ভোট দেওয়ার প্রবণতা বাড়ে, তাদের ভোটদান একপ্রকার প্রভাবিত হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র বলেন, সরকার সবসময় পাঁচ বছর থাকে না, মাঝপথে ভেঙে যায়। অনাস্থা এলে সরকারের পতন হতে পারে। নতুন নীতিতে মাঝেমধ্যে নির্বাচন হওয়ার বিষয়টিকে কেন্দ্র নিরুৎসাহিত করছে। এটা গণতন্ত্রের পরিসরকে কমিয়ে আনতে পারে বলে বিরোধীরা মনে করছেন।

এদিকে শাসক-শিবিরের পক্ষ থেকে দুটি যুক্তি জোরালোভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। প্রথমত, সারা দেশে একযোগে নির্বাচন হলে খরচ অনেকটাই কমবে। আলাদা আলাদা নির্বাচন করার ব্যয় বেশি।

উজ্জয়িনী হালিম বলেন, বড় দলগুলো নির্বাচনে যেভাবে সারা দেশে খরচ করতে পারবে, ছোট দল তাদের সামনে কোথায় দাঁড়াবে! নির্বাচনের খরচ কমানোর জন্য দরকার রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর লাগাম টানা। খরচ কমানোর জন্য আরো অনেক পথ অবলম্বন করা যায়, এক দেশ এক নির্বাচনে তা হবে না।

শাসক শিবিরের দ্বিতীয় জোরালো যুক্তি, একযোগে নির্বাচন উন্নয়নের কাজকে মসৃণ করবে। বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন সময়ে ভোট হলে উন্নয়নের গতি থমকে যেতে পারে নির্বাচনী আচরণবিধির জন্য।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মইদুল ইসলাম ডয়চে ভেলে’কে বলেন, আলাদা ভোট হলে উন্নয়ন থমকে থাকবে না। ১৯৬৮-২০২৪ পর্যন্ত তো উন্নয়ন হয়েছে, যে সময়ে একসঙ্গে নির্বাচন হয়নি। নতুন নিয়মের ফলে জাতীয় দল বা কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিরোধী এবং আঞ্চলিক দলগুলির তুলনায় বেশি সুবিধা পেতে পারে।

হালিমের মতে, আচরণবিধির জন্য উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এই যুক্তি মানা যায় না। যে কোনো রাজ্যের নির্বাচনী ইতিহাস দেখুন, পাঁচ বছরে কতবার ভোট হয়েছে আর তার জন্য উন্নয়নের কাজ কতটা থেমেছে? অন্য সময় উন্নয়নের গতি কি খুব সাবলীল?

খাদিজা-আসিফ নজরুল বিতর্কে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫, ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ
খাদিজা-আসিফ নজরুল বিতর্কে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ

“আমি শুধু একটি নাম, কিন্তু আমার কণ্ঠস্বর থেমে থাকবে না,” ঠিক এভাবেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরা তার বক্তৃতা শুরু করেন। এই তরুণী, যিনি ২০১৯ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৫ মাস কারাভোগ করেছিলেন, সম্প্রতি তার অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন। আর যা নিয়ে রীতিমতো তৈরি হয়ে নতুন বিতর্ক।

খাদিজা তার বক্তব্যে দাবি করেন, সরকারের শাসনব্যবস্থা, বিশেষত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার, একটি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিপদগ্রস্ত।

খাদিজা তার বক্তৃতায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেন, বলেছিলেন, “আমাকে একটি উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। যেনো বলা হয়, যে কোনো মেয়ে—শিক্ষার্থী হলেও যদি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাকে গায়ের ওপর আঘাত সহ্য করতে হবে।” তার ভাষায়, “সরকারের শাসন এখন ফ্যাসিস্ট শাসন হয়ে গেছে, আর আমার ওপর যে নৃশংসতা করা হয়েছে, তা ফ্যাসিজমের সবচেয়ে বাজে উদাহরণ হতে পারে।”

এখন প্রশ্ন উঠেছে, খাদিজার বক্তব্যে যে প্রধান অভিযোগ ছিল তা হচ্ছে সরকারের উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের প্রতি তার ক্ষোভ। খাদিজা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমরা স্টুডেন্টরা বিশ্বাস করে আজকের উপদেষ্টাদের বসিয়েছি। কিন্তু যদি আসিফ নজরুল স্যার বিচারগুলো সঠিকভাবে না করতে পারেন, তাহলে আপনি নেমে যান।” তার এই মন্তব্য শুধু আসিফ নজরুলের দায়িত্বহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে না, বরং সরকারের প্রতি তার অবিশ্বাসের গভীর প্রমাণ হিসেবে দাঁড়ায়।

খাদিজা আরও এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেন, ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় মেজর দেলোয়ারের সঙ্গে একটি লাইভ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে “ফ্যাসিস্ট” বলে মন্তব্য করার পর তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে দুই বছর পর, তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং গ্রেপ্তার করার ঘটনা এক প্রশ্নের জন্ম দেয়—”কেন তখন হয়নি, আর কেন এখন?” খাদিজা বলেন, “এটি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালানো মামলা, যার পেছনে সরকারের অপ্রকাশিত উদ্দেশ্য ছিল।”

নারী দিবসের প্রসঙ্গে খাদিজা বলেন, “সমতা মানে শুধু পুরুষদের মতো হওয়া নয়, বরং নারীদের ইসলাম অনুযায়ী যথাযোগ্য সম্মান ও অধিকার দেওয়া উচিত।” এর মাধ্যমে তিনি নারীদের প্রকৃত মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানালেন।

অবশেষে, খাদিজা সরকারের পতনের পর যে বিচারহীনতা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “সরকার বদলেছে, কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এখনো রয়েছে, এবং যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ রয়েছে, তাদের বিচার হচ্ছে না।”

তিনি অব্যাহত নারী নির্যাতন এবং শিশু ধর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “কখনও কখনও নারীরা এমন আন্দোলনে অংশ নেন না, যেখানে তাদের থাকা প্রয়োজন।” এই বক্তব্যটি একদিকে যেমন নারীর অধিকার রক্ষার কথা বলে, তেমনি সমাজের সংকটময় সময়ে নারীদের সক্রিয় ভূমিকা রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপরও আলোকপাত করে।

খাদিজার বক্তব্যে উঠে এসেছে একদম নতুন রাজনৈতিক প্রশ্ন— আসলেই কি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, নাকি এটি সরকার বিরোধীদের দমন করার একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে? এই বিতর্কের পেছনে রয়েছে একটি বড় ধরনের সামাজিক এবং রাজনৈতিক লড়াই, যা শুধু আইন ও শাসনব্যবস্থা নিয়ে নয়, বরং দেশের ভবিষ্যৎও নির্ধারণ করতে পারে।

ছেলের উচ্চশিক্ষার নামে এক সেমিস্টারে ৪০০ কোটি টাকা পাচার: শফিকুল আলম

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫, ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ
ছেলের উচ্চশিক্ষার নামে এক সেমিস্টারে ৪০০ কোটি টাকা পাচার: শফিকুল আলম

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, অনেক ছেলেমেয়ে বিদেশে পড়তে যায়। এক কেসে দেখা গেছে, ছেলের একটি সেমিস্টারের টিউশন ফি হিসেবে ৪০০ কোটি টাকা বিদেশে পাঠানো হয়েছে। মানি লন্ডারিংটা কীভাবে হয়েছে দেখেন। তবে তদন্তের স্বার্থে আমরা ব্যক্তির নাম প্রকাশ করছি না।

তিনি বলেন, কতোটা ইনোভেটিভ প্রক্রিয়ায় টাকা পাচার হয়েছে। আমরা জানতাম ওভার ইনভয়েসিং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে, ব্যাংকিং সিস্টেমে বা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা চলে গেছে। কিন্তু দেখা গেছে কিছু কিছু জায়গায় লুপ হোল খুঁজে ৪০০ কোটি…। পৃথিবীতে কারও টিউশন ফি ৪০০-৫০০ কোটি টাকা আছে?

সোমবার (১০ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমি মিলনায়তনে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন সকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনতে টাস্কফোর্সের সভায় এই তথ্য জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।

এ-সময় প্রেস সচিব বলেন, পাচার করা টাকা উদ্ধারের জন্য প্রথম থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার তৎপর ছিল। প্রফেসর ইউনূস প্রথম থেকেই বলে আসছেন যে এটা বাংলাদেশের মানুষের টাকা। আমাদের টপ প্রায়োরিটির ভেতরে এটা থাকবে। অন্তর্বর্তী সরকারের ফোকাস ছিল পাচার করা টাকা কীভাবে আনা যায়। সেজন্য গত সেপ্টেম্বর মাসে ১১ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নর।

জনাব শফিকুল আলম বলেন, টাকাটা ফেরত আনার প্রচেষ্টা কতদূর এগোলো, সেটার ওপর আজ একটা বড় মিটিং হয়। মিটিংয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা। সেই মিটিংয়ে অনেক সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাচার করা টাকা কীভাবে আনা যায়, সেটি ত্বরান্বিত করার জন্য একটা বিশেষ আইন খুব শিগগিরই করা হবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে আপনারা এই আইনটা দেখবেন।

তিনি বলেন, প্রচুর ল ফার্মের সঙ্গে সরকার ও টাস্কফোর্স কথা বলছে। ল ফার্মের সঙ্গে অ্যাগ্রিমেন্ট করতে এ আইনটা সাহায্য করবে। ২০০টি ল ফার্মের সঙ্গে আমরা অলরেডি কথা বলেছি। তবে এখনও সিলেকশন হয়নি। একটা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিলেকশন হবে। ৩০টির মতো ল ফার্মের সঙ্গে অ্যাগ্রিমেন্টে যাবো। সেটি নিয়েও কথাবার্তা হচ্ছে।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এগুলো বাংলাদেশের মানুষের টাকা। যত দ্রুত টাকা ফেরত আনা যায়, এটার বিষয়ে প্রতি মাসে হাই পাওয়ার মিটিং হবে। ঈদের পর আরেকটা মিটিং তিনি ডেকেছেন। এখন থেকে এ বিষয়ে প্রতি মাসে মিটিং হবে, বলেন প্রেস সচিব।

শফিকুল আলম আরও বলেন, যে পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, সেটা কতটুকু হয়েছে? আমরা যতটুকু জেনেছি, এটা আরও ডিটেইলসে জানার জন্য প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন।

২০২০ সালের ১৭ মার্চ লেখা ‘প্রিয় বঙ্গবন্ধু’

আসিফ নজরুলের মুজিব বন্দনা, সমালোচনা তুঙ্গে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫, ১০:০১ অপরাহ্ণ
আসিফ নজরুলের মুজিব বন্দনা, সমালোচনা তুঙ্গে

বাংলাদেশের ইতিহাসে মিশ্র বাঙালির আচরণ ও সমালোচনার কমতি নেই। সেই তালিকায় বহুরূপী চরিত্রে আসিফ নজরুলের নাম প্রথম সারিতে। কারণ বিভিন্ন সময়ে সভা-সেমিনারে আওয়ামী লীগ নির্মূলের কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকারের এই আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ভিন্ন কথা বলেছেন তার ভেরিফায়েড ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টে। এর মধ্যে বেশ আলোচনায় এসেছে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ লেখা একটি কবিতা। শিরোনাম-‘প্রিয় বঙ্গবন্ধু’।

শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষ্যে লেখা কবিতাটিতে ফেসবুকে প্রায় ১৬ হাজার কমেন্টস, ৯ হাজার শেয়ার ও ৪৯ হাজার লাইক ও হা হা রিঅ্যাক্ট পড়েছে। আমাদের পাঠকদের জন্য এটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

“প্রিয় বঙ্গবন্ধু”

আমার ভালোবাসা নিন।

আমি আপনাকে ভালোবাসি

আপনাকে ভালোবাসতে হলে আওয়ামী লীগ হওয়ার প্রয়োজন নেই।

প্রয়োজন নেই লোভী হওয়ার কিংবা ভীত হওয়ার।

একচোখা বা মনগড়া ইতিহাস পড়ার, গড়ার।

প্রয়োজন নেই মানুষকে দুঃখে রেখে আতশবাজি উল্লাসের,

কিংবা বাধ্যতামূলক বা চতুর বিনয়ের।

আপনাকে ভালোবাসতে লাগে কিছুটা বিবেক

কিছুটা যুক্তিবোধ, নিজের মানচিত্র চেনা

আর সামান্য একটু মনুষ্যত্ববোধ।

আমি আপনাকে ভালোবাসি।

কিছু দুঃখ, কিছু অভিযোগ নিয়েও ভালোবাসব সকল সময়।

কারণ আপনার কাছে আমরা পেয়েছি অনেক অনেক বেশি।

কারণ আপনি তুলনাহীন আত্মত্যাগে, সাহসে আর দেশপ্রেমে।

কারণ আপনি না জন্মালে সেদিন স্বাধীন হতো না বাংলাদেশ।

আর আমিও আজকে থাকতাম না আমার জায়গায়।

আমরা কেউ থাকতাম না আমাদের জায়গায়।

আপনাকে আরো ভালোবাসি

কারণ দেখেছি আপনার অজস্র হাসি, আপনার সাথে রাসেলের ছবি।

প্রিয় বঙ্গবন্ধু, আমার ভালোবাসা নিন।

জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

আল্লাহ্ আপনাকে ভালো রাখুন।

মুজিব বন্দনায় জনগণের মন্তব্য:

বিতর্কিত উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের লেখা এই কবিতার নিচে মন্তব্যের ঘরের অধিকাংশ মন্তব্য তার বিরুদ্ধে। ওই পোস্টের কমেন্টে আশফাক উল হোসাইন নামে একজন বলেন, ‘৪০,০০০ জাসদ হত্যাকারীর জন্য এত প্রেম। হাজার হাজার জামায়াত বিএনপি ভারত বিরোধীর খুনি হাসিনার প্রতি প্রেম লুকিয়ে রাখছেন কেন?’

হাসান মাহমুদ নামের একজন মন্তব্য করেন, ‘যদি আপনি তেলবাজির জন্য লিখে থাকেন তাহলে ব্যাপারটা ভয়ঙ্কর। আর যদি নিজের বিশ্বাস থেকে লেখে থাকেন তাহলে আরও ভয়ঙ্কর। আপনার বর্তমান পদের সঙ্গে আপনার বিশ্বাস বা তেলবাজি কোনোটাই যায় না-আপনার উচিত পদত্যাগ করা।’

মো. এলাহী বক্স মন্তব্য করেন, ‘আপনার ছলচাতুরীর কারণেই গণঅভুত্থান ব্যর্থ হতে বসেছে।’

আবু শরিফ কামরুজ্জামান লেখেন, ‘আজ আপনি যে গালিগুলো খাচ্ছেন তা প্রধান কারণ হলো আপনার মনে এক ভাবনা আর মুখে বলেন ভিন্ন কথা। আপনি তো নিজেই ঠিক না তবে মানুষকে কিভাবে সঠিক পথে আনবেন।’

মোহাম্মদ রাশেদুল মামুন লেখেন, ‘আপনি আসলেই আওয়ামী লীগ।’

কমেন্ট বক্সে মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘আপনি তো পুরোটাই ঝামেলা। ৩২ নম্বর ভাঙা হলো ফ্যাসিবাদের আঁতুড়ঘর বলে। আপনার রকমারি ভালোবাসা দেশের মানুষকে বিব্রত করে।’

মো. কালাম উল্লাহ মন্তব্য করেন, ‘বহুরূপী মানুষ বড় ভয়ঙ্কর! মুখ আর মুখোশ নিয়ে মানুষ দ্বন্দ্বে পড়ে যায়! তাই পদে পদে ধোঁকা খায়!’

এমদাদ বিন আমিন নামের একজন লেখেন, ‘আপনার মতো সুশীল লোকরাই বড় ভয়ঙ্কর। আপনি জিয়াউর রহমানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে পারলেন না, কিন্তু, ঠিকই মুজিবকে জানিয়েছেন।’

ফারুক পুলক বলেন, ‘এই লোক কেমনে বিপ্লবী সরকারে থাকে?’

মুহাম্মাদ সাদ্দাম হোসাইন মন্তব্য করেন. ‘সবই তো ঠিকঠাকই আছিল, কিন্তু সেদিন আপনি না জন্মালে দেশ স্বাধীন হতো না, আমরাও আমাদের জায়গায় থাকতাম না এই কথাগুলো তো আর মেনে নেওয়া যায় না জনাব!’

আসাদুজ্জামান হিমেল লেখেন, ‘স্যার আপনাকে আমি অনেক ভালোবাসি। আপনার পোস্ট সব সময়ই নজর দেই। কিন্তু একটা লাইনের সঙ্গে একমত হতে পারলাম না। সেটা হলো আপনি লিখলেন আপনি জন্ম না হলে দেশ স্বাধীন হতো না। আপনাকে আমি বলতে চাই, এই দেশ আপামর জনতা স্বাধীন করেছে। আর জীবনবাজি রেখে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করেছেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। এটাতো পানির মতো পরিষ্কার।’

এছাড়া অনেকেই তাদের নিজস্ব মতামত লিখেছেন। সমালোচনা, গালি, গুটিকয়েক প্রশংসা সবমিলিয়ে আসিফ নজরুল বেশ বিপাকেই পড়েছেন। তবে অনেকেই বলছেন- অধিকাংশের মত বিশ্লেষণ করে এটা স্পষ্ট যে, আসিফ নজরুলের ইতিপূর্ব ইতিহাস, লোক দেখানো বক্তব্য, মুজিব বন্দনা, আর বর্তামন কার্যক্রমে তার অবস্থান সহজেই ইঙ্গিতপূর্ণ।