বিদায়ী বছরে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে নতুন দুটি রেকর্ড তৈরি হয়েছে। প্রবাসীরা ২০২৪ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈধভাবে দুই হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার (২৬ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন) সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়েছেন।
দেশের ইতিহাসে এটি এক বছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এছাড়া এ বছরের ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স, যা একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ড। বুধবার (১ জানুয়ারি) এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী বছরে রেমিট্যান্স আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার বা ২০ দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৩ সালের ১২ মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ২ হাজার ১৯২ কোটি (২১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন) ডলার।
বিদায়ী বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২৬৪ কোটি ডলার। একক মাসে এত বেশি রেমিট্যান্স সাম্প্রতিক সময়ে আসেনি। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৬০ কোটি ডলার এসেছিল। হিসাব অনুসারে, সেটাই ছিল একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর থেকে প্রবাসী আয় বাড়তে থাকে, যা বছরের শেষ মাস পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এ সময় প্রতি মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে। এর ফলে গোটা বছরের হিসাবে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে।
রেমিট্যান্সকে দায়হীন বৈদেশিক মুদ্রার আয় বলা হয়। যে কারণে প্রবাসী আয় যাই-ই আসে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনে ইতিবাচক সাড়া ফেলে। এর জন্য কোনো টাকা খরচ করতে হয় না। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উপাদান হলো এ প্রবাসী আয়। যা ব্যাংকগুলো সংগ্রহ করার পর নিজেদের দৈনন্দিন খরচ ছাড়াও একটি নির্দিষ্ট অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করে। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে যোগ হয়। রেমিট্যান্স বৃদ্ধি মানে বৈদেশিক মুদ্রার হ্রাস বন্ধের পাশাপাশি বৃদ্ধি ঘটে।
২০২৪ সাল শেষে প্রবাসী আয়ের নতুন রেকর্ডের পাশাপাশি নিট রিজার্ভও ২১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
বছরে মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স:
২০২৪ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স আসে ২১১ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ডলার, মার্চে ১৯৮ কোটি, এপ্রিলে ২০৪ কোটি, মে মাসে ২২৫ কোটি, জুনে ২৫৩ কোটি, জুলাইয়ে দেশে এসেছে ১৯১ কোটি ডলার। শেখ হাসিনার বিদায়ের মাস আগস্টে আসে ২২২ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি, অক্টোবরে ২৪০ কোটি, নভেম্বরে ২২০ কোটি এবং সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে এসেছে ২৬৪ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
বছরভিত্তিক প্রবাসী আয়:
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে দুই হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার। ২০২৩ সালে এসেছিল দুই হাজার ১৯২ কোটি ডলার। তার আগে ২০২২ সালে আসে দুই হাজার ১২৯ কোটি, ২০২১ সালে দুই হাজার ২০৭ কোটি ডলার। ২০২০ সালে রেমিট্যান্স আসে দুই হাজার ১৭৪ কোটি ডলার। ২০১৯ সালে আসে এক হাজার ৮৩৩ কোটি ডলার।
২০১৮ সালে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৫৫৫ কোটি ডলার। ২০১৭ সালে এসেছিল এক হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার। তার আগের বছর ২০১৬ সালে আসে এক হাজার ৩৬১ কোটি ডলার। ২০১৫ সালে এসেছে এক হাজার ৫৩১ কোটি ডলার আর ২০১৪ সালে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৪৯২ কোটি ডলার।
আপনার মতামত লিখুন