খুঁজুন
সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৫ পৌষ, ১৪৩১

তিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪, ৬:০৩ অপরাহ্ণ
তিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

ঢাকাস্থ তিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

রবিবার (৬ অক্টোবর) সকাল ৯টা ২০ মিনিটে গুলশান সুইডিশ রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে এ বৈঠক হয়।

বৈঠকে সুইডিশ রাষ্ট্রদূত নিকোলাস লিনাস রাগনার উইকস, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন আরালড গুলব্র্যান্ডসেন এবং ড্যানিশ দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন অ্যান্ডার্স বি কার্লসেন উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ ও আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল উপস্থিত ছিলেন।

অতিরিক্ত সচিবের পদ পেলেন ১২ কর্মকর্তা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮:১৯ অপরাহ্ণ
অতিরিক্ত সচিবের পদ পেলেন ১২ কর্মকর্তা

যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১২ জন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। পদোন্নতির পর তাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করা হয়েছে।

গত (২৪ ডিসেম্বর) থেকে তাদের পদোন্নতি কার্যকর করা হবে বলে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

পদোন্নতিপ্রাপ্তরা হলেন- কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্মসচিব) সৈয়দ মেহদী হাসান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সিপিপি পরিচালক (যুগ্মসচিব) আহমাদুল হক, ভূমি সংস্কার বোর্ডের উপ-ভূমি সংস্কার কমিশনার (যুগ্মসচিব) মো: রেজাউল কবীর, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) সদস্য (যুগ্মসচিব) মোজাফফর আহমেদ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের পরিচালক (যুগ্মসচিব) হাওলাদার মো: রকিবুল বারী, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো: ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের পরিচালক (যুগ্মসচিব) এ টি এম কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. কামাল উদ্দীন বিশ্বাস, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব জালাল উদ্দিন আহম্মেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো: শাহজাহান মিয়া, ২০টি চাইল্ড ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) শবনম মোস্তারী এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের মহাপরিচালক (যুগ্মসচিব) আবদুল্লাহ আল মামুন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পদোন্নতির আদেশে উল্লিখিত কর্মস্থল থেকে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দপ্তর/কর্মস্থল ইতোমধ্যে পরিবর্তন হলে কর্মরত দপ্তরের নাম/ঠিকানা উল্লেখ করে যোগদানপত্র দাখিল করবেন।

অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিধি মোতাবেক আর্থিক সুবিধা প্রাপ্য হবেন।

পরে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো বিরূপ//ভিন্নরূপ তথ্য পাওয়া গেলে তার ক্ষেত্রে এ আদেশের প্রয়োজনীয় সংশোধন//বাতিল করার অধিকার কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করে।

সরকারের অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সরাসরি সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর অথবা নিম্নবর্ণিত ই-মেইলে অনলাইনে যোগদানপত্র দাখিল করতে পারবেন (ই-মেইল sa1@mopa.gov.bd)

ফিরে দেখা ২০২৪

তাবলীগের সংঘাত, হাফেজদের বিশ্বজয়, ইসলামী অঙ্গনে আলোচিত যত ঘটনা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮:০৮ অপরাহ্ণ
তাবলীগের সংঘাত, হাফেজদের বিশ্বজয়, ইসলামী অঙ্গনে আলোচিত যত ঘটনা

সময়ের নিয়মেই শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে ২০২৪। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো ২০২৪ সালও ছিল ঘটনাবহুল। আন্দোলন, অস্থিরতা, অভ্যুত্থানের নতুন কিছু স্মৃতি যুক্ত হয়েছে এ বছর। মুক্তির স্বাদ, বিজয় রক্ষার নতুন চ্যালেঞ্জ সময়কে করেছে আরও কঠিন। আন্দোলন-অভ্যুত্থানের বছরে দেশের ইসলামী অঙ্গনের বেশ কিছু ঘটনাও ছিল আলোচিত। কোনোটা স্বস্তির, আবার কোনো ঘটনা বিব্রতকর। কিছু ঘটনা নতুন করে ভাবনার জন্ম দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

২০২৪ সালে ইসলামী অঙ্গনে আলোচিত ঘটনা প্রবাহ স্মৃতির অ্যালবামে যুক্ত করতে সালতামামির এই আয়োজন—

বছরজুড়ে আন্তজার্তিক কোরআন প্রতিযোগিতায় হাফেজদের বিশ্বজয়

বিজ্ঞাপন

২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক কোরআন ও কিরাত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়েছেন একাধিক কোরআনের হাফেজ। অনেকেই সরাসরি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন, কেউ কেউ ভার্চুয়াল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন।

ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল কোরআনের হাফেজদের জয়রথ। সর্বশেষ ডিসেম্বরেও বিজয়ী হয়েছে দুইজন কোরআনের হাফেজ।

বিজ্ঞাপন

এক নারীসহ ১৫জন বিশ্বজয়ী কোরআনের হাফেজের তালিকায় রয়েছেন রাজধানীর মারকাযু ফয়জিল কুরআন আল ইসলামীর দুই হাফেজ, হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ ও হাফেজ আনাস মাহফুজ।

এছাড়াও বিজয়ী হয়েছেন রাজধানীর মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনালের শিক্ষার্থী হাফেজ বশির আহমাদ ও হাফেজ আনাস বিন আতিক।

আরও বিজয়ী হয়েছেন তাহফিজুল কুরআন ওয়াসসুন্নাহর দুই শিক্ষাথী হাফেজ মুশফিকুর রহমান ও হাফেজ হুজাইফা।

তাহফিজুল কুরআন ওয়াসসুন্নাহর আরও বেশ কিছু শিক্ষার্থী ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত বিভিন্ন কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন। এই তালিকায় হাফেজ সাদিকুর রহমান, হাফেজ জাকারিয়া, হাফেজ আকমাল আহমাদের নাম রয়েছে।

এই প্রতিষ্ঠান থেকে মিশরে কিরাত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন হাফেজ তানভির আহমাদ, আবুধাবীতে হদর তিলাওয়াতে বিজয়ী হয়েছেন হাফেজ আম্মার বিন মাসুম।

এই তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী আরও দুইজন হাফেজ হলেন হাফেজ আবু রায়হান ও হাফেজ মাহমুদুল হাসান। কিরাত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন কারি আবু জর গিফারী।

তরুণ হাফেজদের বাইরেও এ বছর কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন নারী হাফেজ হুমাইরা মাসউদ।

দেশের ইতিহাসে প্রথম আলেম উপদেষ্টা

২০২৪ সালে অন্যতম আকর্ষণীয় ঘটনা ছিল স্বাধীনতার পর দেশের সরকার ব্যবস্থায় প্রথম কোনো আলেম উপদেষ্টার নিয়োগ। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত করে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। এতে দেশের বিভিন্ন স্তরের নাগরিকদের প্রতিনিধি রাখা হয়। উপদেষ্টা তালিকায় রাখা হয়েছে দেশের শ্রদ্ধাভাজন আলেম মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেনকে

আ ফ ম খালিদ হোসেন ইসলামি অঙ্গনে তুমুল জনপ্রিয়। আ ফ ম খালিদ হোসেনের মূল নাম আবুল ফয়েজ মুহাম্মদ খালিদ হোসেন। তিনি ১৯৫৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত সাতকানিয়া উপজেলার মাদার্শা ইউনিয়নের মক্কার বাড়ির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

বিশ্ব মুসলীম লীগের মুখপাত্র দ্যা ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগ জার্নালসহ বিভিন্ন সাময়িকীতে আ ফ ম খালিদ হোসেনের দুই শতাধিক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষ দ্বিতীয় সংস্করণের ৩ থেকে ৯ খণ্ড ও সীরাত বিশ্বকোষ সম্পাদনা করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০ টি। এছাড়াও তিনি ৪টি জাতীয় পত্রিকার নিয়মিত লেখক।

বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষ

২০২৪ সালের দুঃখজন একটি ঘটনা ছিল বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের মাঝে সংর্ঘষ। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত খতিব মাওলানা রুহুল আমিনকে ঘিরে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে।

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বেশ কিছুদিন অনুস্থিত ছিলেন খতিব মাওলানা রুহুল আমিন। অসুস্থতার কারণে তিনি ছুটিতে ছিলেন জানিয়ে ২০ সেপ্টেম্বর বায়তুল মোকাররমে জুমা পড়াতে আসেন।

তবে সেদিন পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী জুমা পড়ানোর দায়িত্ব ছিল ড. আবু সালেহ আহম্মেদ পাটোয়ারীর। খতিব রুহুল আমিন জুমার নামাজ পড়ানোর জন্য মসজিদে এলে মুসল্লিরা তার পেছনে নামাজ পড়তে অস্বীকৃতি জানান।

এ সময় খতিব জটিলতায় থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন মুসল্লি ও সাবেক খতিবের সমর্থকরা। এ সময় মসজিদের ভেতরে ভাঙচুর করা হয়। দরজা জানালার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

বায়তুল মোকাররমে নতুন খতিব

সেপ্টেম্বরে বায়তুল মোকাররমে খতিব নিয়ে সংঘর্ষ, জটিলতার পর অক্টোবরে নতুন খতিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় দেশের ইসলামী অঙ্গনের পরিচিত মুখ মাওলানা আবদুল মালেককে

এর আগে আন্তর্জাতিক ও দেশের ইসলামী অঙ্গনে পরিচিত থাকলেও খতিব হিসেবে নিয়োগের পর দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন বিনয়ী ও শ্রদ্ধাভাজন এই আলেম।

মুফতি আবদুল মালেক দেশ-বিদেশের প্রসিদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইসলামিক স্টাডিজ, হাদিস ও ফিকহের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনকারী একজন পণ্ডিত ব্যক্তি। বিশ্বখ্যাত মুফতি বিচারপতি তাকী ওসমানী তার ওস্তাদ। আরব বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামি পণ্ডিত ও সৌদি আরবের রিয়াদে অবস্থিত ইমাম মোহাম্মদ ইবনে সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উসুলুদ্দীন অনুষদের অধ্যাপক শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহর (রহ.) অধীনে তিনি দুই বছর হাদিস ও ইসলামি আইন বিষয়ে উচ্চতর গবেষণা পরিচালনা করেন।

আবদুল মালেক মক্কা, মদিনা, পাকিস্তান, ভারত ও তুরস্ক সফর করেছেন এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। তিনি ইতোমধ্যে বাংলা, আরবি, ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় মোট ১৬টি গ্রন্থ রচনা করেছেন।

জুলাই অভ্যুত্থানে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভূমিকা

জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসে এক নতুন আখ্যান। এতে অন্য সবার মতো স্বতঃর্স্ফূত অংশগ্রহণ ছিল দেশের মাদরাসার শিক্ষার্থীদের। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। আন্দোলনের শুরু থেকেই রাজধানীর প্রায় সব মিছিলে তাদের সরব ‍উপস্থিতি ছিল। আন্দোলনের সময় মাদরাসার ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করে কওমি শিক্ষার্থী ও আলেমদের সংগঠন ‘সাধারণ আলেম সমাজ’

যাত্রাবাড়ী এলাকায় স্বৈরাচার বাহিনীর বিরুদ্ধে দুর্গ গড়তে সাহায্য করেন মাদরাসার ছাত্র ও আলেম সমাজ। এই আন্দোলনে প্রায় ৭০ জনের মতো মাদরাসা শিক্ষার্থী শহিদ হন।

বিভিন্ন মামলায় মাওলানা মামুনুল হকসহ আলেমদের জামিন

শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলে বিভিন্ন সময় দেশের আলেমদের ওপর নিপীড়ন ও জেল, জুলুমের ঘটনা ঘটেছে। অনেককে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করে কারাগারে বন্দি করা হয়। দুই, তিন বছর কারাগারে বন্দি ছিলেন অনেকেই। এই তালিকায় মাওলানা মামুনুল হকের নাম ছিল শীর্ষে

২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল ঢাকার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার হন মাওলানা মামুনুল হক। তিন বছর পর ২০২৪ সালের মে মাসে জামিনে মুক্ত হন তিনি। এরপর আরও একাধিক আলেম কারাগার থেকে মুক্ত হন।

তাবলিগের শূরায়ে নেজামপন্থিদের ইসলামী মহাসম্মেলন

মাওলানা সাদের বিতর্কিত অবস্থানকে ঘিরে ২০১৭ সাল থেকে তাবলিগ জামাতের মাঝে বিভাজন দেখা দেয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে বিভাজন দ্বন্দ্বে পরিণত হয়। দ্বন্দ্বের পর থেকে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে ইজতেমা করছেন তাবলীগের একাংশ শুরায়ে নেজাম, যাদের সঙ্গে মাওলানা জোবায়েরসহ কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক আলেমগণ রয়েছেন।

অন্যদিকে, দ্বিতীয় পর্বে ইজতেমা করে আসছেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা। তারা ২০২৫ সালের প্রথম পর্বে বিশ্ব ইজতেমা করার জন্য এবং মাওলানা সাদকে আনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান।

বিষয়টিকে চক্রান্ত হিসেবে ঘোষণা দিয়ে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক আলেমগণ এবং শুরায়ে নেজাম ইসলামি মহাসম্মেলনের ঘোষণা দেন ৫ নভেম্বর। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী ময়দানে আয়োজিত ওই সম্মেলনে মাওলানা সাদকে আসতে না দেয়া, সাদ অনুসারীদের পৃথক পর্ব না রাখার ঘোষণা দেয়া হয়।

ইজতেমার মাঠে সংঘাত

২০২৪ সালে দুঃখজন আরেকটি ঘটনা ছিল বিশ্ব ইজতেমার মাঠে তাবলিগের সাথীদের মাঝে সংঘাত। দিল্লির নিজামুদ্দীনের মাওলানা সাদ অনুসারী ও শূরায়ে নিজাম (মাওলানা জুবায়েরপন্থি) এর অনুসারীদের মাঝে সংঘাতের ঘটনা ঘটে

এতে আগে থেকেই ইজতেমা ময়দানে অবস্থান করা শূরায়ে নিজামপন্থিদের (মাওলানা জুবায়েরপন্থি) ওপর গভীর রাতে মাওলানা সাদ অনুসারীদের অতর্কিত হামলার অভিযোগ উঠে। তবে মাওলানা সাদ অনুসারীদের পক্ষ থেকে শূরায়ে নিজামপন্থিদের বিরুদ্ধে প্রথমে ইটপাটকেল ছোঁড়ার অভিযোগ করা হয়। এ ঘটনায় ৩ জন নিহতের সংবাদ পাওয়া যায়।

সংঘাতের ঘটনায়  শূরায়ে নিজামপন্থিদের পক্ষ থেকে মাওলানা সাদ অনুসারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এতে গ্রেপ্তার হয়েছেন সাদপন্থী নেতা মাওলানা মুয়াজ বিন নূর

৪ বছর পর মিজানুর রহমান আজহারীর দেশ ও মাহফিলে ফেরা

২০২৪ সালে আলোচিত আরেকটি ঘটনা ছিল সাড়ে চার বছর পর মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীর দেশে ফেরার ঘটনা। পারিপার্শ্বিক কারণ ও গবেষণার কাজের জন্য ২০২০ সালে দেশ ছাড়লেও আওয়ামী দুঃশাসনেরকালে তাকে আর দেশে ফিরতে দেখা যায়নি।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে ২ অক্টোরব দেশে ফেরেন তিনি। এক সপ্তাহ দেশে থেকে আবারো মালয়েশিয়ান যান। এবার ২৬ ডিসেম্বর দেশে ফিরে মাহফিলে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। দেশের প্রত্যেকটি বিভাগে মাহফিলে অংশ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) কক্সবাজারের পেকুয়ায় এক মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বয়ান করেন তিনি। রাত সাড়ে ৯টায় মঞ্চে ওঠেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী। ৯টা ৩৫ মিনিট থেকে রাত ১০টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টা বয়ান করেন তিনি। মাহফিলে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হওয়ায় অতিরিক্ত মানুষের চাপে দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মোবাইল ইন্টারনেটসেবা কিছুটা ব্যহত হয়।

মাহফিলে বক্তাদের অসংযত বক্তব্য

২০২৪ সালে আলোচিত ও সমালোচিত ঘটনার তালিকায় উঠে এসেছে মাহফিলের মঞ্চে বক্তাদের অসংযত বক্তব্য। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাহফিলের মঞ্চে বক্তাদের বক্তব্যে বরাবরই অসংযত বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। যা ধর্মপ্রাণ মানুষদের বিব্রত করেছে। এর কারণে মাহফিলের ভাবগাম্ভীর্যও ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

এ বছর মাহফিলের মঞ্চে সিনেমার নায়িকার নাম উচ্চারণ করে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন বক্তা আমির হামজা। সর্বশেষ ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। মাহফিলের মঞ্চে পুলিশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন ইসলামী বক্তা তাহেরীও। পরবর্তীতে এক মাহফিলে পুলিশের আগমনের কারণে তার পালিয়ে যাওয়ার সংবাদও এসেছিল গণমাধ্যমে।

হজের খরচ ও হাজীদের মৃত্যু

২০২৪ সালে মাত্রাতিরিক্ত হজের খরচের বিষয়টি ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। কোটা খালি রেখে শেষ হয় এ বছরের হজের নিবন্ধন। হজের সময় অতিরিক্ত তাপমাত্রার ফলে অধিক সংখ্যায় হজযাত্রীর মৃত্যু ঘটে এ বছর। এবার হজে ৬৫ জন বাংলাদেশি মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়

আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি হজের খরচ কমানোর জন্য দুটির বদলে তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করেন খাবার খরচ ছাড়াই।

সরকারি এ হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া জানায় বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো। তাদের দাবি, হজের খরচ কমেনি, বরং বেড়েছে। তবে হজ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, সৌদি রিয়ালের দাম বেড়ে যাওয়ায় হজ খরচ বেশি একটা কমানো যায়নি।

এছাড়া, বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন ‘হজ এজেন্সিজ অব এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (হাব)-এর কমিটি ভেঙে দেয়া হয় দুর্নীতির অভিযোগে। এরপর হাব দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। হাবে সরকার থেকে প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে প্রতিবাদ জানায় সংগঠনটির একাংশ। এরপর বেসরকারি হজ প্যাকেজ নিয়ে পাল্টাপাল্টি ঘোষণা দিতেও দেখা যায়।

 বিভিন্ন জায়গায় মাজারে হামলার ঘটনা

আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মাজারে হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় মানুষজন হতাহতও হন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইভেন্ট খুলেও মাজার ভাঙার আহ্বান জানাতে দেখা যায়।

এক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জের দেওয়ানবাগ মাজারে হামলার ঘটনা এবং সিলেটের শাহপরান মাজারে গান-বাজনা নিষিদ্ধ করার ঘটনা বেশি আলোচিত ছিল। গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজার ভাঙার জন্য ফেসবুকে প্রচারিত একটি ইভেন্ট দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

ইসলামী বইমেলা

২০২৪ সালে অন্যতম আলোচিত ও নজরকাড়া বিষয় ছিল এবারের ইসলামী বইমেলা। প্রতি বছর রবিউল আওয়াল মাসে ইসলামী বইমেলা সংঘটিত হলেও এবার কিছুটা দেরিতে হয়েছিল ইসলামী বইমেলা। এবার ইসলামী বইমেলা হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দেয়। দীর্ঘ দিন ইসলামী বইমেলা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় প্রতিবাদ জানায় ইসলামী প্রকাশনীগুলো।

এর প্রেক্ষিতে এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গীকে সাজানো হয় বইমেলা। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের পরিবর্তে বায়তুল মোকাররমের পূর্ব চত্বরে সাজানো হয়  ইসলামী বইমেলার পূর্ণ আয়োজন। দক্ষিণ গেটে রাখা হয় হকারদের প্রকাশনীগুলো।

এবারের ইসলামী বইমেলা সবার দৃষ্টি আকষর্ণ করতে সক্ষম হয়। এবারের মেলায় মোট ১৫১টি স্টল স্থান পেয়েছে। মেলায় পবিত্র কোরআনের অনুবাদ, তাফসীর, হাদিসগ্রন্থসহ ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মৌলিক ও গবেষণামূলক বিভিন্ন বই ছিল মেলায়। এছাড়াও মেলায় প্রকাশিত হয়েছে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে একাধিক ম্যাগাজিন।

জুলাই বিপ্লবে হতাহত ও ফেনীর বন্যার্তদের পাশে আস-সুন্নাহ

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয় ফেনী জেলা। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। তাৎক্ষণিক ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল ফেনীতে ৭১ কোটি টাকার পুনর্বাসন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। ৪২ হাজার আবেদনকারীর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ১০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়াও জুলাই বিপ্লবে হতাহতদের চিকিৎসাসেবায় এ পর্যন্ত ৫ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশন পরবর্তীতে আরও ৫ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে।

ফিরে দেখা ২০২৪

অভ্যুত্থানে অগ্নিগর্ভ ছিল ময়মনসিংহ, মণ্ডা-পায়েসের জিআই স্বীকৃতি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮:০৬ অপরাহ্ণ
অভ্যুত্থানে অগ্নিগর্ভ ছিল ময়মনসিংহ, মণ্ডা-পায়েসের জিআই স্বীকৃতি

কালের আবর্তে বিদায় নিয়েছে ঘটনাবহুল আরও একটি বছর। দুয়ারে উঁকি দিচ্ছে নতুন বছর। আওয়ামী লীগের বিতর্কিত ডামি নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ২০২৪ শুরু হলেও শেষ হয়েছে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের মধ্যে দিয়ে। ময়মনসিংহ বিভাগে অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী হিসেবে বিদায় নেওয়া বছরটিতে ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থান রয়েছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই বিভাগের পতিত সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিদের একসঙ্গে ‘পলায়ন’ এর বিষয়টিও ছিল নজিরবিহীন। 

বিজ্ঞাপন

ছাত্র-জনতার লাশের সারি আর দীর্ঘ না করতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ আর নন্দিত ভাবমূর্তির প্রশংসা কুড়িয়েছে তার নিজ জেলা শেরপুরেও। তার বলিষ্ঠ পদক্ষেপে সেনাবাহিনীর সহায়তায় সারাদেশের মতো ময়মনসিংহ রেঞ্জের ৩৬টি থানাতে পূর্ণোদ্যমে কাজে ফিরেছে পুলিশ। জনরোষ থেকে সচল হয়ে ওঠেছে থানাগুলোর নানাবিধ কার্যক্রম। বেশ কয়েকবার সেনাপ্রধান স্বচক্ষে শেরপুর ও গৌরীপুরের কার্যক্রম পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতনদের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বক্ষণিক তৎপরতায় সব শঙ্কা কাটিয়ে নির্বিঘ্নে ১ হাজার ৭৬৫টি পূজা মণ্ডপে উৎসবের আমেজে নির্দ্বিধায় দুর্গোৎসব পালন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সাফল্য-ব্যর্থতার বছরটিতে ময়মনসিংহ বিভাগের সীমান্তবর্তী তিন জেলার মানুষকে সামলাতে হয়েছে আকস্মিক বন্যার ধকল। বিদায়ী বছরটিতেই জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে মুক্তাগাছার মণ্ডা ও শেরপুরের ‘ছানার পায়েস’। মাদক বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ৫ নভেম্বর ২৮ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) কর্তৃপক্ষের বহিষ্কারের বিষয়টিও ছিল চর্চিত। পরবর্তী সময়ে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তি করে মমেক ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ৮ শিক্ষার্থী ও ইর্ন্টান চিকিৎসককে কলেজ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। নিজের সহোদর চাচার হাতে ওমর ফারুক সৌরভ (২৪) নামে এক যুবকের লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড কাঁদিয়েছে সবাইকে।

বিজ্ঞাপন

সাফ ফুটবলে বিজয়-বৈজয়ন্তী উড়ানো বাংলার ৬ বাঘিনী দেশের নারী ফুটবলের জাগরণের গ্রাম হিসেবে পরিচিত ধোবাউড়ার কলসিন্দুর গ্রামকে করেছে আলোকোজ্জ্বল। বছরজুড়ে ক্রীড়াঙ্গণে স্থবিরতা থাকলেও শেষ সময়ে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট ও জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করে নিন্দিত লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মির নিজ বিভাগ ময়মনসিংহেও ছিলেন আলোচিত-সমালোচিত।

বিজ্ঞাপন

এসব কারণেই গ্রেগেরিয়ান ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে খসে পড়া বছরটি ময়মনসিংহবাসীর স্মৃতিতে উদ্ভাসিত থাকবে অনন্ত সময়। অতীতের সব দুঃখ-গ্লানি, বেদনা আর হতাশাকে ভুলে বৈষম্য দূরীকরণ আর সাম্য ফিরিয়ে আনার নতুন প্রত্যয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ এই অঞ্চলের বাসিন্দারা।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমালোচিত তাপসী তাবাসসুম

ডামি নির্বাচন, অতঃপর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের বিতর্কিত ডামি ভোটে ময়মনসিংহের ২৪টি সংসদীয় আসনে জয় লাভ করে আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ না করলেও ভোটারবিহীন নির্বাচনে ২৪টি আসনেই জয় পায় আওয়ামী লীগ। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছিল চরমে। যার প্রভাব পড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে। গত ৫ আগস্টের পর থেকেই দলটির রাঘব-বোয়াল সব নেতারা ‘পলাতক’ রয়েছেন। তাদের খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ঢেউ লাগে রাজনৈতিক সচেতন জেলা ময়মনসিংহেও। ২০২৪ সালের ৬ জুলাই ময়মনসিংহে সর্বপ্রথম বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন নগরীর ঐতিহ্যবাহী আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয়  কলেজ থেকে শিক্ষার্থীদের বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিলটি নগরীর টাউন হলে এসে শেষ হয়। ধীরে ধীরে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে শুরু করে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে ১৯ জুলাই নগরীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সশস্ত্র হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও পুলিশ। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন কলেজ শিক্ষার্থী রোদোয়ান হাসান সাগর (১৯)। এদিন ময়মনসিংহসহ সারাদেশে উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে জারি হয় কারফিউ। পরদিন ২০ জুলাই কারফিউ ভঙ্গ করে সারাদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম গৌরীপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নির্বিচারে গুলি চালালে নূরে আলম রাকিব, বিপ্লব হাসান ও জুবায়ের আহমেদ শহীদ হন। এরপর ময়মনসিংহসহ সারাদেশে আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করলে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীসহ ময়মনসিংহের মন্ত্রী ও এমপিরা। ওই সময় স্থানীয় মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।

পালিয়ে যান দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

আওয়ামী লীগ নেতাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে গণঅভ্যুত্থানে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সৌমিত্র শেখর। এ নিয়ে শিক্ষাঙ্গনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. ফজলুল হক এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে।

ফুটবলকন্যা সানজিদা-তহুরা

ক্রীড়াঙ্গণে কলসিন্দুরের নারী ফুটবলারদের কৃতিময় সাফল্য  

আন্তর্জাতিক ফুটবলে ছেলেদের কোনো সাফল্য না থাকলেও আশা জাগিয়েছে নারী ফুটবল। সাফের শিরোপা ধরে রাখার পাশাপাশি মেয়েরা অনুর্ধ্ব-১৬ ও অনুর্ধ্ব-১৯ আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। দেশের নারী ফুটবলে শক্তি ও সম্ভাবনার কথা জানান দেওয়া ফুটবলের আকাশে চাঁদ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার সিনিয়র, শামসুন্নাহার জুনিয়র, তহুরা খাতুন, সানজিদা আক্তার ও শিউলি আজিম ময়মনসিংহের সীমান্তঘেষা শেষ উপজেলা ধোবাউড়ার কলসিন্দুর গ্রামের সন্তান। সাফ শিরোপাতেও তারা রেখেছেন নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের ছাপ। ওই টুর্নামেন্টে তহুরা ভুটানের বিপক্ষে ৩টি, ভারতের বিপক্ষে ২টি ও শামসুনাহার জুনিয়র একটি গোল করে আন্তর্জাতিক মহলে উজ্জ্বল করেন বাংলাদেশের মুখ। বছরের শেষ প্রান্তে এসে জেগে ওঠে ময়মনসিংহের ক্রীড়াঙ্গণ। জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এবং আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের সফল আয়োজন অনন্য মর্যাদায় মহিয়ান করেছে ময়মনসিংহকে।

যুবদল নেতার মৃত্যুতে তোলপাড়, বহিষ্কার অ্যাকশনে বিএনপি

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ময়মনসিংহের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ ঘটে। মাঠ থেকে আওয়ামী লীগ লাপাত্তা থাকলেও পুরোদমে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় রয়েছে বিএনপি, জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। এরই মধ্যে ঘটে যায় একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ নগরীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলামের (৪০) মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গণে তোলপাড় শুরু হয়। এদিকে, দলে শৃঙ্খলায় আনতে হার্ডলাইন কৌশল গ্রহণ করে বিএনপি। বহিষ্কারের মুখে পড়েন দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ও ভালুকা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফখরউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুসহ প্রায় ডজন খানেক নেতা। এ ঘটনায় আতঙ্কে ছিলেন দলটির বেশিরভাগ শীর্ষ সারির নেতারাও। দলটির নির্বাহী কমিটিতে জায়গা করে নেন আন্দোলন-সংগ্রামের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ। তিনি দলটির নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে অভিষিক্ত হন।

জিআই পণ্য হিসাবে মুক্তাগাছা মণ্ডা ও ছানার পায়েস এর স্বীকৃতি  

স্বাদে-ঘ্রাণে অতুলনীয় মুক্তাগাছার মণ্ডার কদর দেশজুড়েই। অনন্য এই মিষ্টিকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। একইভাবে শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী ‘ছানার পায়েস’ পেয়েছে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি। তারা মণ্ডা ও ছানার পায়েসের স্বাদসহ গুণগত মান বজায় রাখতে নিজেদের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছেন।

জামালপুর কারাগারে বিদ্রোহে নিহত হন ৬ বন্দি

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন কারাগারে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। ময়মনসিংহ বিভাগের মধ্যে একমাত্র জামালপুর কারাগারে বিদ্রোহে নিহত হন ৬ বন্দি। জেলারসহ আহত হন ১৯ জন। প্রায় ১০ ঘণ্টা গোলাগুলির পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় স্থানীয় প্রশাসন। এরপর কারা অধিদপ্তরের নির্দেশনায় শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করে জামালপুর কারাগার। বিদায়ী বছরটিতে আলোচিত এই ঘটনা ছাড়াও বিএনপির রাজনীতিতে অভ্যন্তরীণ বিরোধ দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

এরই জের ধরে গত ৩১ আগস্ট শহরের দেওয়ানপাড়া মোড়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হন ৩০ নেতাকর্মী। এছাড়া মামলা থেকে নাম কাটার জন্য স্থানীয় বকশিগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব মাহবুবুর রহমান লাভলুকে ফোন করেন যুবমহিলা লীগের সভাপতি জহুরা বেগম। এ ঘটনার একটি অডিও কল রেকর্ড ফাঁস হলে যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান লাভলুকে কেন্দ্র থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে মারা যাওয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতার নামে মামলা, র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়ে হাসপাতালে বশেফমুবিপ্রবির শিক্ষার্থী, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ক্যাম্পাস ছাড়েন দুই শিক্ষক। এছাড়া গত ১১ সেপ্টেম্বর জামালপুরের মেলান্দহে নিজ ঘর থেকে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় শাহিনা বেগম নামে এক সেনা সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নেত্রকোণায় পুলিশের অস্ত্র ও গুলি লুট; টংক আন্দোলনের নেতার মৃত্যু

গত ৪ আগস্ট সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন চলাকালে নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার শ্যামগঞ্জ বাজারে পুলিশের গাড়িতে হামলা করে ৭টি অস্ত্র ও ৪২০ রাউন্ড গুলি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় উত্তেজিত আন্দোলনকারীরা ৬ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে আহত করে। এতে ভাঙচুর হয় পুলিশের গাড়ি। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ৭ আগস্ট শিক্ষার্থীরা রং তুলি দিয়ে শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম মুছে দিয়ে ‘নেত্রকোণা বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি ব্যানার বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের সামনে ঝুলিয়ে দেয়। এরপর শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এর আগে এই বছরের গত ২৩ মার্চ উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেরাতলী গ্রামের বাড়িতে মারা যান ঐতিহাসিক টংক আন্দোলনের সংগ্রামী নারী কুমুদিনী হাজং। ৯২ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মারা যান। কমিউনিস্ট নেতা কমরেড মনি সিংহের নেতৃত্বে টংক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হয় দুর্গাপুরের হাজং সম্প্রদাযয়ের কুমুদিনী হাজংয়ের স্বামী লংকেশ্বর হাজং। তৎকালীন পুলিশ ১৯৪৬ সালে কুমুদিনী হাজংকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে রাশিমনি হাজংয়ের নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। সেখানে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান রাশিমনি হাজং ও সুরেন্দ্র হাজং। এ সময় পুলিশের দুইজন সদস্য নিহত হন ওই ঘটনায়। যা ছিল দেশের তৎকালীন সময়ে বিশ্বব্যাপী আলোচিত একটি ঘটনা।

৪ মাস পর শেরপুর কারাগারের কার্যক্রম শুরু

বিগত ৪ আগস্ট শেরপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকারি গাড়ির ধাক্কায় দুই কলেজ ছাত্রের মৃত্যুতে শেরপুর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই দিনই শেরপুর কারাগারেও ঘটে হামলার ঘটনা। এতে অস্ত্র লুট, বন্দি পালিয়ে যাওয়াসহ নানা অঘটনের সূত্রপাত হয়। প্রায় ৪ মাস কারাগারের কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর গত ১২ ডিসেম্বর ফের শুরু হয়েছে  শেরপুর জেলা কারাগারের কার্যক্রম।

সেই সঙ্গে বিগত ৩৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে আকস্মিক বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় জেলার ৫টি উপজেলার দুই লাখেরও বেশি মানুষ। এতে ৪৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। ভেঙে পড়ে প্রায় ৮ হাজার ঘড়বাড়ি। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে শেরপুর সদরের দোজা পীরের দরবারে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ছিল বহুল আলোচিত।

এই প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছেন নেত্রকোণা জেলা প্রতিনিধি চয়ন দেবনাথ মুন্না, জামালপুরের জেলা প্রতিনিধি মুত্তাছিম বিল্লাহ এবং শেরপুরের জেলা প্রতিনিধি মো. নাইমুর রহমান।