বাংলাদেশের ইতিহাসে মিশ্র বাঙালির আচরণ ও সমালোচনার কমতি নেই। সেই তালিকায় বহুরূপী চরিত্রে আসিফ নজরুলের নাম প্রথম সারিতে। কারণ বিভিন্ন সময়ে সভা-সেমিনারে আওয়ামী লীগ নির্মূলের কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকারের এই আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ভিন্ন কথা বলেছেন তার ভেরিফায়েড ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টে। এর মধ্যে বেশ আলোচনায় এসেছে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ লেখা একটি কবিতা। শিরোনাম-‘প্রিয় বঙ্গবন্ধু’।
শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষ্যে লেখা কবিতাটিতে ফেসবুকে প্রায় ১৬ হাজার কমেন্টস, ৯ হাজার শেয়ার ও ৪৯ হাজার লাইক ও হা হা রিঅ্যাক্ট পড়েছে। আমাদের পাঠকদের জন্য এটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
“প্রিয় বঙ্গবন্ধু”
আমার ভালোবাসা নিন।
আমি আপনাকে ভালোবাসি
আপনাকে ভালোবাসতে হলে আওয়ামী লীগ হওয়ার প্রয়োজন নেই।
প্রয়োজন নেই লোভী হওয়ার কিংবা ভীত হওয়ার।
একচোখা বা মনগড়া ইতিহাস পড়ার, গড়ার।
প্রয়োজন নেই মানুষকে দুঃখে রেখে আতশবাজি উল্লাসের,
কিংবা বাধ্যতামূলক বা চতুর বিনয়ের।
আপনাকে ভালোবাসতে লাগে কিছুটা বিবেক
কিছুটা যুক্তিবোধ, নিজের মানচিত্র চেনা
আর সামান্য একটু মনুষ্যত্ববোধ।
আমি আপনাকে ভালোবাসি।
কিছু দুঃখ, কিছু অভিযোগ নিয়েও ভালোবাসব সকল সময়।
কারণ আপনার কাছে আমরা পেয়েছি অনেক অনেক বেশি।
কারণ আপনি তুলনাহীন আত্মত্যাগে, সাহসে আর দেশপ্রেমে।
কারণ আপনি না জন্মালে সেদিন স্বাধীন হতো না বাংলাদেশ।
আর আমিও আজকে থাকতাম না আমার জায়গায়।
আমরা কেউ থাকতাম না আমাদের জায়গায়।
আপনাকে আরো ভালোবাসি
কারণ দেখেছি আপনার অজস্র হাসি, আপনার সাথে রাসেলের ছবি।
প্রিয় বঙ্গবন্ধু, আমার ভালোবাসা নিন।
জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
আল্লাহ্ আপনাকে ভালো রাখুন।
মুজিব বন্দনায় জনগণের মন্তব্য:
বিতর্কিত উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের লেখা এই কবিতার নিচে মন্তব্যের ঘরের অধিকাংশ মন্তব্য তার বিরুদ্ধে। ওই পোস্টের কমেন্টে আশফাক উল হোসাইন নামে একজন বলেন, ‘৪০,০০০ জাসদ হত্যাকারীর জন্য এত প্রেম। হাজার হাজার জামায়াত বিএনপি ভারত বিরোধীর খুনি হাসিনার প্রতি প্রেম লুকিয়ে রাখছেন কেন?’
হাসান মাহমুদ নামের একজন মন্তব্য করেন, ‘যদি আপনি তেলবাজির জন্য লিখে থাকেন তাহলে ব্যাপারটা ভয়ঙ্কর। আর যদি নিজের বিশ্বাস থেকে লেখে থাকেন তাহলে আরও ভয়ঙ্কর। আপনার বর্তমান পদের সঙ্গে আপনার বিশ্বাস বা তেলবাজি কোনোটাই যায় না-আপনার উচিত পদত্যাগ করা।’
মো. এলাহী বক্স মন্তব্য করেন, ‘আপনার ছলচাতুরীর কারণেই গণঅভুত্থান ব্যর্থ হতে বসেছে।’
আবু শরিফ কামরুজ্জামান লেখেন, ‘আজ আপনি যে গালিগুলো খাচ্ছেন তা প্রধান কারণ হলো আপনার মনে এক ভাবনা আর মুখে বলেন ভিন্ন কথা। আপনি তো নিজেই ঠিক না তবে মানুষকে কিভাবে সঠিক পথে আনবেন।’
মোহাম্মদ রাশেদুল মামুন লেখেন, ‘আপনি আসলেই আওয়ামী লীগ।’
কমেন্ট বক্সে মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘আপনি তো পুরোটাই ঝামেলা। ৩২ নম্বর ভাঙা হলো ফ্যাসিবাদের আঁতুড়ঘর বলে। আপনার রকমারি ভালোবাসা দেশের মানুষকে বিব্রত করে।’
মো. কালাম উল্লাহ মন্তব্য করেন, ‘বহুরূপী মানুষ বড় ভয়ঙ্কর! মুখ আর মুখোশ নিয়ে মানুষ দ্বন্দ্বে পড়ে যায়! তাই পদে পদে ধোঁকা খায়!’
এমদাদ বিন আমিন নামের একজন লেখেন, ‘আপনার মতো সুশীল লোকরাই বড় ভয়ঙ্কর। আপনি জিয়াউর রহমানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে পারলেন না, কিন্তু, ঠিকই মুজিবকে জানিয়েছেন।’
ফারুক পুলক বলেন, ‘এই লোক কেমনে বিপ্লবী সরকারে থাকে?’
মুহাম্মাদ সাদ্দাম হোসাইন মন্তব্য করেন. ‘সবই তো ঠিকঠাকই আছিল, কিন্তু সেদিন আপনি না জন্মালে দেশ স্বাধীন হতো না, আমরাও আমাদের জায়গায় থাকতাম না এই কথাগুলো তো আর মেনে নেওয়া যায় না জনাব!’
আসাদুজ্জামান হিমেল লেখেন, ‘স্যার আপনাকে আমি অনেক ভালোবাসি। আপনার পোস্ট সব সময়ই নজর দেই। কিন্তু একটা লাইনের সঙ্গে একমত হতে পারলাম না। সেটা হলো আপনি লিখলেন আপনি জন্ম না হলে দেশ স্বাধীন হতো না। আপনাকে আমি বলতে চাই, এই দেশ আপামর জনতা স্বাধীন করেছে। আর জীবনবাজি রেখে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করেছেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। এটাতো পানির মতো পরিষ্কার।’
এছাড়া অনেকেই তাদের নিজস্ব মতামত লিখেছেন। সমালোচনা, গালি, গুটিকয়েক প্রশংসা সবমিলিয়ে আসিফ নজরুল বেশ বিপাকেই পড়েছেন। তবে অনেকেই বলছেন- অধিকাংশের মত বিশ্লেষণ করে এটা স্পষ্ট যে, আসিফ নজরুলের ইতিপূর্ব ইতিহাস, লোক দেখানো বক্তব্য, মুজিব বন্দনা, আর বর্তামন কার্যক্রমে তার অবস্থান সহজেই ইঙ্গিতপূর্ণ।
আপনার মতামত লিখুন