রেকর্ডের মালা গেঁথে নতুন ইতিহাস গড়ল অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার জয়টি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। অবশ্য কেবল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই নয়, আইসিসির যেকোনো টুর্নামেন্টেই এটা সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড।
টস জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে যেন বিপাকে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। বেন ডাকেটের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে রেকর্ড সংগ্রহ গড়ে ইংল্যান্ড। যে রান পাড়ি দিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাস পাল্টাতে হতো অজিদের। এমন রান পাহাড় পাড়ি দেওয়া অস্ট্রেলিয়া পেল নায়ক জশ ইংলিসকে, সঙ্গে থাকলো ম্যাথু শর্ট, অ্যালেক্স ক্যারি, মার্নাস লাবুশেন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলদের অবদানও। তাতে কেবল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিই নয়, যেকোনো আইসিসি টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড গড়ে বিজয় নিশান ওড়ালো অস্ট্রেলিয়া।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানের লাহোর গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। টস হেরে আগে ব্যাটিং করা ইংল্যান্ড ডাকেটের সেঞ্চুরি ও জো রুটের হাফ সেঞ্চুরিতে ৮ উইকেটে ৩৫১ রান তোলে, যা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কোনো দলের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। আগের সর্বোচ্চ ছিল নিউজিল্যান্ডের, ২০০৪ সালের আসরে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ৪ উইকেটে ৩৪৭ রান তোলে কিউইরা।
জবাবে ম্যাচসেরা ইংলিসের সেঞ্চুরি, শর্ট ও ক্যারির হাফ সেঞ্চুরি এবং শেষ দিকে ম্যাক্সওয়েলের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ১৫ বল হাতে রেখেই (৪৭.৩ ওভারে) জিতে যায় অস্ট্রেলিয়া। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। এতোদিন সফল রান তাড়ার রেকর্ডটি ছিল শ্রীলঙ্কার দখলে, ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের দেওয়া ৩২২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জেতে লঙ্কানরা। কেবল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই নয়, আইসিসির যেকোনো টুর্নামেন্টেই এটা সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড।
রেকর্ডটি ছিল পাকিস্তানের দখলে, ২০২৩ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৪৫ রান তাড়া করে জেতে তারা। অস্ট্রেলিয়ার জয়টি ওয়ানডের ইতিহাসে অষ্টম সর্বোচ্চ রান তাড়া। ফরম্যাটটিতে এটা অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া। এই ফরম্যাটে তাদের সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডটি ভারতের বিপক্ষে। ২০১৯ সালে ভারতের দেওয়া ৩৫৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জেতে অজিরা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এটা তাদের সফলতম রান তাড়া, আগের সর্বোচ্চ সফল রান তাড়া ছিল ৩৩৪।
লক্ষ্য তাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন ইংলিস। ডানহাতি অজি এই ব্যাটসম্যান ৮৬ বলে ৮টি চার ও ৬টি ছক্কায় ১২০ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন। এটা তার প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি ও ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। ওপেনার শর্ট ৬৬ বলে ৬৩ রান করেন। ট্রাভিস হেড ও অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ রানের দেখা পাননি। হেড ৬ ও স্মিথ ৫ রান করেন। লাবুশেন ৪৫ বলে ৪৭ রান করেন।
ইংলিসের সঙ্গে ১৪৬ রানের জুটি গড়া ক্যারি ৬৩ বলে ৬৯ রানে মূল্যবান ইনিংস খেলেন। শেষ দিকে গিয়ে ঝড় তোলা ম্যাক্সওয়েল ১৫ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন। ইংল্যান্ডের মার্ক উড, জফরা আর্চার, ব্রাইডন কার্স, আদিল রশিদ ও লিয়াম লিভিংস্টোন একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ইংল্যান্ডকে পথ দেখান ডাকেট। ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে ৪৮তম ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করেন তৃতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া বাঁহাতি এই ওপেনার। ১৪৩ বলে ১৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১৬৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন তিনি। ডাকেডের ইনিংসটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস। ২১ বছর রেকর্ডটি দখলে রেখেছিলেন নাথান অ্যাস্টল। ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে আসরটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ গড়ার দিন অপরাজিত ১৪৫ রান করেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক এই ওপেনার।
ডাকেটের সঙ্গে ১৫৮ রানের জুটি গড়া রুটও অসাধারণ ব্যাটিং করেন। ইংলিশ ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৭৮ বলে ৪টি চারে ৬৮ রান করেন তিনি। ইংল্যান্ডের ইনিংসে এই দুটি নামই কেবল বড়, অন্যরা ইনিংস বড় করতে পারেননি। জেমি স্মিথ ১৫, অধিনায়ক জস বাটলার ২৩, লিভিংস্টোন ১৪ ও পেসার জফরা আর্চার ২১ রান করেন। অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি পেসার বেন ডুয়ারশুইস সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট পান অ্যাডাম জ্যাম্পা ও লাবুশেন। একটি উইকেট নেন ম্যাক্সওয়েল।
আপনার মতামত লিখুন