বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, বিগত ১৭ বছর পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ ও তার দোসররা অসংখ্য বিএনপির নেতা-কর্মীকে গুলি, জবাই ও নির্যাতন করে হত্যা করেছে। হত্যা, খুন গুলো করছে অমানবিকতা ভাবে। নাটক সাজিয়ে করে কথিত ক্রসফায়ার হত্যা করেছে।
গুম করে ইলিয়াস, চৌধুরী আলম সুমন সহ বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীকে।
তিনি আরও বলেন, হাজার হাজার নেতাকর্মীদের অপরিসীম আত্মত্যাগ ও ২৪ এর জুলাই – আগস্ট ছাত্র গণআন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম স্বৈরশাসকের পতন ও পলায়নে দেশের মানুষ মুক্ত হয়েছে,বাক স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। শহিদদের আত্নত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না,সবার আগে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হলেই শহিদদের আত্নত্যাগ পূর্ণতা পাবে।
রবিবার ২৩ ফেব্রুয়ারী দুপুরে সিরাজগঞ্জ শহরের বাজার স্টেশন মুক্তির সোপানে ‘ আমরা বিএনপি পরিবার ‘ সিরাজগঞ্জের আয়োজনে, ২০২৪ খ্রিঃ জুলাই- আগষ্ট ছাত্র গণআন্দোলন শহিদ পরিবারদের স্বজন ও আহতদের সাথে সাক্ষাৎকার ও সহযোগিতা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু আরো বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে সুবিধাবাদী, লুটপাটকারী,গণতন্ত্র ও গণহত্যাকারী ও পলায়নকারী দল। একাত্তরের তাদের প্রধান নেতা স্বেচ্ছায় হানাদার বাহিনীর নিকট আত্নসমর্পণ করে নিরাপদ স্থানে চলে গিয়েছিল, শীর্ষ নেতারা পালিয়ে গিয়ে পাশ্ববর্তী দেশে যেয়ে আরাম-আয়েশে জীবন যাপনে মত্ত ছিল। পচাত্তরের পটপরিবর্তনেও তারা পালিয়েছিলো এবং জুলাই আগষ্টের গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সহ পাতি নেতা,ছোট নেতা সবাই পালিয়ে গেছে,অনেকেই গর্তের ভিতর লুকিয়েছে,কিন্ত বিএনপি পালায় না, বিএনপির একজন কর্মীও কোনদিন পালিয়ে যায়নি,বিএনপি হচ্ছে ফিনিক্স পাখির মতো,ধ্বংসস্তুপের মধ্যে থেকে বিএনপি বারংবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই হচ্ছেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংস্কারক,তিনি বাকশাল থেকে জাতিকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তণ করে ছিলেন,সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরে দিয়ে ছিলেন। আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে নয় বছর লাগাতার সংগ্রাম করে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে ছিলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করেছেন, তার চিন্তা চেতনা,সব কথা ও বক্তব্য জনগণ ইতিবাচক হিসেবে দেখে তা গ্রহণ করছেন,তিনি ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছেন,তাতে সব সেক্টরে সংস্কারের কথা বলা হয়েছ,এমন কি কেউ দুইবারের বেশী প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না এবং প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্যের কথা ৩১ দফা কর্মসূচিতে বলা হয়েছে। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু অন্তবর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন,সংস্কার করা আপনাদের কাজ না,আপনাদের প্রধান কাজ হচ্ছে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়া। নির্বাচিত সরকার ও জাতীয় সংসদই দেশের জন্য যা যা মঙ্গল তার সকল কিছুই সংস্কার করবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি আমরা বিএনপি পরিবারের আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমন তার বক্তব্যে বলেন,২৪ এর জুলাই আগষ্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা এখন ভয়হীনভাবে কথা বলছি,নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারছি,কিন্ত যারা শহিদ হয়েছেন,পঙ্গুত্ব বরণ করেছে সেই সকল শহিদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা বাক রুদ্র হয়ে পড়েছেন,বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের পাঠিয়েছেন, শহিদ পরিবার ও আহতদের পাশে দাঁড়াতে, তাদের পাশে আমরা বিএনপির পরিবার সব সময় আছি,থাকবো। তিনি অন্তবর্তী সরকারের উদ্দেশ্য বলেন,আপনারা তিন মাসের জায়গায়, ছয় মাস অতিবাহিত করছেন,জনআকাঙ্খার দিকে নজর না দিয়ে বারবার সংস্কারের কথা বলছেন,আপনারা ছয় মাসে কি সংস্কার করছেন,জনগণ তা জানতে চায়,সংস্কারের তালিকা প্রকাশ করুন,প্রশাসনে নামে মাত্র কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন,প্রশাসনের স্তরে স্তরে পতিত সরকারের ভূত লুকিয়ে আছে,তাদেরকে বিতারিত করুণ,নির্বাচন দিন,বিএনপি জয়লাভ করলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফার আলোকে নির্বাচিত সরকার দেশের প্রয়োজনে সকল সংস্কার করা হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদ,বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য খান সাইদ হাসান,জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কন্ঠশিল্পী রুমানা মোরশেদ কনকচাঁপা,আমরা বিএনপি পরিবারের সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মমিন মিঠুন,আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল,আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা মোঃ আবুল কাশেম।
শহিদ পরিবারের পক্ষে বক্তব্য রাখেন শহিদ আব্দুর রশিদের মেয়ে রুমা খাতুন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আমরা বিএনপি পরিবারের সদস্য ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান ও আমরা জিয়া পরিবারের সদস্য মুস্তাকিম বিল্লাহ।
অনুষ্ঠানে আমরা বিএনপি পরিবার পক্ষ থেকে জুলাই আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র গণআন্দোলন সিরাজগঞ্জে ১১ ( এগারো) জন শহিদ সোহানুর রহমান রনজু,সুমন সেখ,আব্দুল লতিফ, আব্দুল আলীম,আব্দুর রশিদ, শিহাব উদ্দিন,হাফেজ সিয়াম,ইয়াহিয়া আলী,জাহাঙ্গীর আলম,নজরুল ইসলাম ও শহিদ লেবুর পরিবারকে সহযোগিতা প্রদান করা হয় এবং আহতের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা প্রদান করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন