বেসরকারি খাতের আরও তিনটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো– এনআরবি কমার্শিয়াল, এনআরবি ও মেঘনা ব্যাংক।
বুধবার (১২ মার্চ) এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘মেঘনা ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক এবং এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ (বোর্ড) ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সিদ্ধান্তের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দেওয়া হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক তিনটির পরিচালনা পর্ষদে অনিয়ম ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ পর্যালোচনা শেষে এ সিদ্ধান্ত নেয়।
বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা আনতে এবং আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে।
প্রসঙ্গত, সরকার পতনের পর থেকে এ নিয়ে ১৪টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমালকে সরিয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাবেক এমডি আলী হোসেন প্রধানিয়ার নেতৃত্বে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে। মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক এমপি এএইচ এন আশিকুর রহমানকে সরিয়ে প্রাণ গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরীর নেতৃত্বে পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে। আর এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান অপসারণ করে ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ ওবিইকে আনা হয়েছে। প্রতিটি পর্ষদে চেয়ারম্যানসহ সাত জন সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুনভাবে গঠন করা হলো।’ বেশ আগ থেকে ব্যাংকগুলো পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার আলোচনায় ছিল। তবে পর্ষদ ভাঙলেই আমানত উত্তোলনের চাপ তৈরি হওয়ায় মাঝে বিরতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই মধ্যে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফেরায় এক দিনে তিনটি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে কেবল এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকটিতে নিয়োগ পাওয়া আলী হোসেন প্রধানিয়াসহ সবাই স্বতন্ত্র পরিচালক। তিনি ছাড়াও পরিচালক নিয়োগ পেয়েছেন– বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. আবুল বশর ও আনোয়ার হোসেন, সোনালী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি মো. নুরুল হক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. শফিকুর রহমান, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট মুহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ।
মেঘনা ব্যাংকে উদ্যোক্তা পরিচালকদের মধ্যে উজমা চৌধুরী এবং ক্যাসিওপিয়া ফ্যাশনের প্রতিনিধি তানভীর আহমেদ পরিচালক হয়েছেন। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে কারও নাম দেওয়া হয়নি। পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক ডেকে এখন নিজেরা ঠিক করবে। আর স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. মামুনুল হক ও রজব আলী, যমুনা ব্যাংকের সাবেক এমডি মো. নজরুল ইসলাম, প্রাইম ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক হাবিবুর রহমান এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট মো. আলি আকতার রিজভী এফসিএ।
এনআরবি ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া পরিচালকদের মধ্যে ইকবাল আহমেদ ওবিই ছিলেন ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালক। তাকে সরিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের পদ আকড়ে ছিলেন মাহতাবুর রহমান। নতুন পর্ষদে ইকবাল আহমেদ ওবিই ছাড়া অন্য সবাই স্বতন্ত্র পরিচালক। অন্যদের মধ্যে আছেন– গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ফেরদৌস আরা বেগম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শেখ মো. সেলিম, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক এমডি মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী, প্রাইম ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি শেখ মতিউর রহমান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শরীফ নুরুল আহকাম এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট মিজানুর রহমান এফসিএ।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংক ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করেছিল। এর মধ্যে এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা হয়– ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, গ্লোবাল, ইউনিয়ন, ন্যাশনাল ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের পর্ষদ। তার ভাই আব্দুস সামাদ লাবুর নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা হয় আল–আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। এছাড়া এস আলমের মামাতো ভাই সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ পরিবার মুক্ত করা হয়েছে ইউসিবি। আর ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবির দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার মুক্ত করা হয়েছে এক্সিম ব্যাংক।
আপনার মতামত লিখুন