মোঃ সাইফুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টারঃ রাজশাহী হতে বগুড়া গিয়ে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পাঁচ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার (২৪ মার্চ) বিকালে আরএমপি কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান এ সিদ্ধান্ত নেন। এদিকে, এ ঘটনায় এক ভিকটিমের বাবা ছয় পুলিশ সদস্যসহ সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা করছেন।
এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানান, ‘তারা কোনও অভিযানে যায়নি বা কাউকে জানিয়েও যায়নি। নিজেদের ইচ্ছায় গেছে এবং সেখানে আটক হয়েছে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিকালে আমি তাদের সাময়িক বরখাস্ত করেছি। এখন তদন্ত হবে, এরপর বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বরখাস্ত হওয়া পাঁচ পুলিশ সদস্য হলেন– আরএমপির গোয়েন্দা শাখার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহিন মোহাম্মদ অনু ইসলাম, কনস্টেবল রিপন মিয়া, আবুল কালাম আজাদ, মাহবুব আলম ও বাশির আলী। এ ছাড়া, তাদের সঙ্গে থাকা মাইক্রোবাসচালক মেহেদী হাসানকেও আটক করা হয়েছে।
রাজশাহী মহানগর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘ওই পাঁচ পুলিশ সদস্য আরএমপির ডিবিতে কর্মরত। গতরাতে আমি রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অফিসে ছিলাম, কিন্তু তারা আমাকে কিছু না জানিয়েই বগুড়া গেছে। কেন গেছে, তা তারাই ভালো বলতে পারবে।’
বগুড়ার কুন্দারহাট হাইওয়ে থানার পুলিশ সদস্যরা রবিবার দিনগত রাত ৩টার দিকে বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের বীরগ্রাম এলাকা থেকে পাঁচ পুলিশ সদস্য ও তাদের মাইক্রোবাসচালককে আটক করেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ২ লাখ টাকা ও পুলিশের একটি ওয়াকিটকি জব্দ করা হয়।
বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) জেদান আল মুসা বলেন, অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশ সদস্য রবিবার ধুনট উপজেলায় গিয়ে জুয়া খেলার অভিযোগে দীঘরকান্দি গ্রামের রাব্বী ও জাহাঙ্গীর নামে দুই ব্যক্তিকে আটক করেন। এরপর শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর এলাকায় গাড়ি থামিয়ে তাদের কাছে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরে দর-কষাকষির পর নগদ ২ লাখ এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আরও ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা আদায় করে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরে বগুড়া জেলা পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে শেরপুর ও শাজাহানপুর থানার সহযোগিতায় মাইক্রোবাসটি আটক করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে হাইওয়ে পুলিশের সহায়তায় শাজাহানপুর থানার বীরগ্রাম এলাকায় গাড়িটি আটক করা হয়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, অভিযুক্তদের তথ্যদাতা হিসেবে কাজ করেছেন আরএমপির গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত আবদুল ওয়াহাব নামে এক পুলিশ সদস্য। তিনি ছুটি নিয়ে দুই দিন আগে বগুড়ার ধুনটে নিজ গ্রামে যান। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ওই পাঁচ জন সেখানে গিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কুন্দারহাট হাইওয়ে থানার ওসি মনোয়ারুজ্জামান বলেন, পুলিশ পরিচয়ে দুই জনকে অপহরণের পর টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি অবহিত হন। এরপর সোমবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার খরনা ইউনিয়নের বীরকেদার এলাকায় বগুড়া-নাটোর মহাসড়কে ধাওয়া করে একটি মাইক্রোবাস থামানো হয়। মাইক্রোবাস থেকে রাজশাহী ডিবি পুলিশের এসআই শাহীন মোহাম্মদ অনু ইসলাম, কনস্টেবল রিপন মিয়া, কনস্টেবল আবুল কালাম আজাদ, কনস্টেবল মাহবুব আলম, কনস্টেবল বাশির আলী ও সিভিল মাইক্রোবাস ড্রাইভার মেহেদী হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় কনস্টেবল ওহাব পালিয়ে যান। তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির দুই লাখ টাকা, একটি ওয়াকিটকি, একটি হ্যান্ডকাফ এবং সাতটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

বগুড়ার ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল আলম জানান, ভিকটিম রাব্বির বাবা সেলিম শেখ পলাতক কনস্টেবল ওহাবসহ সাত জনের বিরুদ্ধে অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলা করছেন। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অপর পলাতক আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
আপনার মতামত লিখুন