আন্তর্জাতিক আশ্রয়ের জন্য অন্য দেশে যাচ্ছেন হাসিনা

বাংলাদেশ এক অদ্ভুত দেশ- যেখানে রাজনীতির ভাঁজে ভাঁজে বিশ্বাসঘাতকতা, স্বৈরাচারী মনোভাব, মুহুর্তেই পটপরিবর্তন। ঢাকার সূর্য তখন মধ্যগণ থেকে কিছুটা হেলে পড়েছে, আর বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা পুরো ঢাকা শহরের দখল নিয়েছে। একদল এগিয়ে যাচ্ছে হাসিনার তৎকালীন বাসভবন গণভবনের দিকে। সরকারের অবস্থা বেগতিক দেখে শেখ হাসিনা পালালেন তার নিজস্ব রাজপ্রাসাদ ছেড়ে, স্বৈরাচারের গদির মায়া ভুলে পালাতে বাধ্য হলেন।
পেছনে পড়ে থাকলো স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৭ বছরের দুঃশাসনের ক্ষত। চারিদিকে দুরাচারের প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছিল সবাই। এমন পরিস্থিতিতে হাসিনা তার বহু দিনের বন্ধু রাষ্ট্র ভারত থেকে আশ্রয় নেন। ভারত তার জন্য ছিল এক প্রকার সোনার ডিম পাড়া হাঁস, তবে সেই হাঁস হারানোর বেদনা এবার ভারতেও অনুভূত হচ্ছে।
হাসিনার উপস্থিতি দিল্লিতে ভারত সরকারের জন্য এখন একটা অস্বস্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ভারত সরকার এখন তাকে দিল্লি থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে গেছে, তবে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে সে বিষয়ে কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সূত্রগুলো বলছে, তাকে সম্ভবত ইস্টার্ন কমান্ডের কোনো নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত তার অবস্থান নিয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। দিল্লি এই বিষয়টি রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় বিষয় হিসেবে নিয়েছে, তাই এসব নিয়ে কোনো মন্তব্য করছে না।
ভারতীয় মিডিয়া দাবি করছে, হাসিনার ভিসার মেয়াদ কিছুদিনের জন্য বাড়ানো হয়েছে, যদিও পাসপোর্ট না থাকলেও তিনি এক রকম আন্তর্জাতিক ও দেশীয় আইনকে তোয়াক্কা না করেই ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই সুবিধা পেয়েছেন। তবে, ভারতের পক্ষ থেকে শোনা গেছে, তারা হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে আগ্রহী নয়। তারা তাকে অন্য কোনো দেশে সেফ এক্সিট দিতে চাচ্ছে।
ভারতীয় মিডিয়ায় আরো একটি তথ্য উঠে এসেছে যে, হাসিনা সম্ভবত যুক্তরাজ্যে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, তবে সে সময় লন্ডন তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে অস্বীকার করে। এর পর থেকেই হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
এই বিষয়টি আরো জটিল হয়েছে যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাসিনার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান, হত্যা, গুম, ক্রসফায়ার, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের মতো গুরুতর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের কারণে বাংলাদেশ সরকার ভারতকে চিঠি পাঠিয়ে হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছে। তবে ভারত এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
হাসিনার ভবিষ্যৎ গন্তব্য এবং তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো নিয়ে পুরো আন্তর্জাতিক মহলে এখন একধরনের অস্বস্তি ও জল্পনা-কল্পনা চলছে। তবে হাসিনার সবশেষ গন্তব্য ও অবস্থান নিয়ে নিশ্চিত হতে চাই বাংলাদেশের মানুষ।
আপনার মতামত লিখুন