দিনে ফাঁকা, রাতে চাঙা!

পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রাজধানীর শপিং মলগুলোতে কেনাকাটার ধুম পড়েছে। বিশেষ করে আভিজাত এলাকার শপিংমলগুলো ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম হয়ে উঠেছে। তবে এসব শপিংমলে দিন ও রাতে ভিন্ন ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। দিনের বেলা মলে ক্রেতাদের আনাগোনা তুলনামূলক কম থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে যাচ্ছে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শপিং মলে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা অনেক সময় সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে বিক্রেতাদের জন্য।
রাজধানীর বৃহৎ শপিং মল যমুনা ফিউচার পার্কে দুপুরের দিকে ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ দোকানই ফাঁকা। কিছু কিছু দোকানে কয়েকজন ক্রেতার উপস্থিতি থাকলেও সেটি খুবই কম। তবে গৃহিণী, অফিসফেরত ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কেউ কেউ দিনের বেলায় কেনাকাটা করছেন। দুপুরের দিকে কেনাকাটা করতে আসা শারমিন বলেন, ‘আমি ইচ্ছে করেই দুপুরে এসেছি, কারণ তখন ভিড় কম থাকে। রাতে প্রচণ্ড ভিড় হয়, হাঁটাচলা করাই কষ্টকর হয়ে যায়।’
বিক্রেতারাও জানালেন একই কথা। দুপুরের দিকে তাদের বেশিরভাগ সময় বসে কাটাতে হয়, কারণ ক্রেতারা তখন কেনাকাটায় খুব একটা আগ্রহী থাকেন না।
আমি ইচ্ছে করেই দুপুরে এসেছি, কারণ তখন ভিড় কম থাকে। রাতে প্রচণ্ড ভিড় হয়, হাঁটাচলা করাই কষ্টকর হয়ে যায়।
যমুনা ফিউচার পার্কে আসা শারমিন
তবে সন্ধ্যার পর চিত্র পুরোপুরি বদলে যায়। ইফতারের পরপরই ক্রেতারা দলে দলে আসতে শুরু করেন, যা রাত ১০টা পর্যন্ত চলতে থাকে। বিশেষ করে পোশাকের দোকানগুলোতে উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। অনেক ক্রেতাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসছেন ঈদের কেনাকাটা সারতে।
ব্র্যান্ড শপ জ্যান্টেল পার্কের একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘সন্ধ্যার পর আমাদের দোকানে এত বেশি ক্রেতা আসে যে, এক মুহূর্তের জন্যও বসার সুযোগ পাই না। সবাই ঈদের নতুন ডিজাইনের পোশাক খোঁজ করেন।’
শুধু পোশাক নয়, কসমেটিকস, জুতা, ঘর সাজানোর সামগ্রী পণ্য কেনার ক্ষেত্রেও ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। এক ক্রেতা নাজমুল হোসেন বলেন, ‘দিনের বেলা সুযোগ হয় না তাই রাতে আসতে হয়। ভিড় হলেও কেনাকাটা রাতেই জমে।’
বিক্রেতারা আশা করছেন, ঈদের শেষ দুই দিনে বেচাকেনা আরও অনেক বেড়ে যাবে। এক পোশাক বিক্রেতা সালমান বলেন, ‘এখনো ঈদের আরও কয়েক দিন বাকি। শেষের দিকে বেচাকেনা কয়েক গুণ হয়। এখনই প্রচুর ক্রেতা আসছে, তবে ঈদের ঠিক আগে দুই দিন আমাদের সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়।’
রাতের দিকে ভিড় বেশি হওয়ায় আমাদের নিরাপত্তা টিম সতর্ক রয়েছে। শপিং মলে নিরাপত্তা ক্যামেরা ও বাড়তি কর্মী নিয়োজিত করা হয়েছে, যাতে কেউ কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার না হন।
যমুনা ফিউচার পার্কের নিরাপত্তা কর্মী
কসমেটিকস বিক্রেতা মেহেরাব বলেন, ‘ঈদের আগে মেয়েরা বেশি কেনাকাটা করেন। বিশেষ করে মেহেদি, প্রসাধনীর দোকানগুলোতেও রাতের দিকে প্রচণ্ড ভিড় হয়।’
শপিং মল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। রাতের দিকে ভিড় বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে।
শপিং মলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন বলেন, ‘রাতের দিকে ভিড় বেশি হওয়ায় আমাদের নিরাপত্তা টিম সতর্ক রয়েছে। শপিং মলে নিরাপত্তা ক্যামেরা ও বাড়তি কর্মী নিয়োজিত করা হয়েছে, যাতে কেউ কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার না হন।’
বিক্রেতারা বলছেন, শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার চাপ এড়াতে হলে ক্রেতাদের এখনই কেনাকাটা করে নেওয়া উচিত। তবে বেশিরভাগ ক্রেতাই শেষ মুহূর্তে কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন, কারণ তখন বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়। ফলে আগামী কয়েক দিন শপিং মলের ভিড় আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এবারের ঈদ কেনাকাটা তাদের প্রত্যাশার চেয়েও ভালো হবে এবং শেষ মুহূর্তের বিক্রি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে।
টিএই/জেবি
আপনার মতামত লিখুন