বসুন্ধরায় পুরুষের পছন্দে কটন পাঞ্জাবি, নারীদের ভারতীয়-পাকিস্তানি পোশাক

রাজধানীর অভিজাত মার্কেট বসুন্ধরা শপিং মলে কম-বেশি সারা বছরই ক্রেতার আনাগোনা থাকে। তবে ঈদ উপলক্ষে বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে এই মার্কেটটি। দুপুর থেকে নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত এখানে চলে কেনাকাটা। শপিং মলটিতে ঈদের পোশাক কিনতে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষজন। চাঁদ রাত পর্যন্ত এখানে ভিড় থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বসুন্ধরা শপিং মলে পুরুষের ঈদের পোশাক হিসেবে বেশি পছন্দ কটনের পাঞ্জাবি। আর নারীরা খুঁজছেন ভারতীয় ও পাকিস্তানি নানা ডিজাইনের বাহারি পোশাক। পুরুষদের পাঞ্জাবি ৬০০ থেকে শুরু হয়ে সর্বোচ্চ ১০/১৫ হাজার টাকায় মিলছে। নারীর পোশাকের দাম বেশ চড়া। দোকানের মান ও ব্র্যান্ডভেদে তা অর্ধ লাখ টাকাও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
মার্কেটটির আলবেলি, রিচম্যান, দর্জিবাড়ি, ভিকটর, নিউস্টাইল, জান্নাত ফ্যাশন, লামিসা কালেকশন, রুপ ফ্যাশন হাউজ, লাইভ শপিং, লুবনান, স্পিড লাইভসহ বেশ কিছু দোকান ঘুরে জানা গেছে, এবার পুরুষ ক্রেতাদের চাহিদা বেশি কটন আর নারীরা ভারতীয় এবং পাকিস্তানি পোশাক খুঁজছেন। এই মার্কেটে পুরুষ ক্রেতার চেয়ে নারী ক্রেতার সংখ্যা বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
সামনে ঈদ এজন্য নতুন পোশাক কিনতে এসেছেন। তবে সুতির চেয়ে তার পছন্দ কটন। কারণ বাচ্চারা গরমে অল্পতে হাঁপিয়ে ওঠে। সামনে প্রচুর গরম হবে। এজন্য তিনি ছেলেকে হাফ হাতা কটন কাপড়ের শার্ট কিনে দিতে চান। আড়ং ছোটদের কাপড়ে সেরা।
ক্রেতা তোফাজ্জল হোসেন
মাঝারি দামের দোকানগুলোতে ভিড় বেশি চোখে পড়েছে। উচ্চ দামের পোশাকের চাহিদা থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা কম।
সন্ধ্যার পর নারী ক্রেতাদের ভিড় তুলনামূলক বাড়ে জানিয়ে একাধিক বিক্রেতা বলেন, নারীরা সাধারণত দিনের বেলা সাংসারিক কাজে ব্যস্ত থাকেন। ফলে তারা সন্ধ্যার পর মার্কেটে আসছেন। আর কেনাকাটা করছেন গভীর রাত পর্যন্ত। তাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে লেহেঙ্গা, থ্রিপিস ও শাড়ি। তবে ভারতীয় ও পাকিস্তানি কাপড়ের চাহিদা বেশি।
শপিং মলটির দ্বিতীয় তলায় থাকা রিচম্যানের সেলস এক্সিকিউটিভ আবির জানালেন, তাদের শো-রুমে সবচেয়ে কটন কাপড়ের পাঞ্জাবি বেশি চলছে। আর এই পাঞ্জাবির দাম দুই হাজার থেকে সর্বোচ্চ ছয় হাজার টাকা। এছাড়াও রয়েছে কটন হাফ হাতা শার্ট, জিন্সের প্যান্ট। একই চিত্র ইনফিনিটিতেও। সেখানে পুরুষদের পছন্দ কটন।
লাইভ শপিংয়ের আরিফুর রহমান মুন্না নামে একজন সেলসম্যান জানালেন, তাদের দোকানে সবচেয়ে বেশি চলছে কটনের পাঞ্জাবি। যার দাম ৬০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে।
লুবনানের সেলসম্যান ইয়াসিন জানালেন, তাদের মূলত শার্ট ও পাজামার কালেকশন। তবে কটনের পাঞ্জাবি তাদের ক্রেতারা বেশি পছন্দ করছেন।
দর্জিবাড়ির সেলস এক্সিকিউটিভ রিফাত শেখ ঢাকা মেইলকে বলেন, তাদের দোকানে জ্যাকোয়ার্ড ফেব্রিকস, কটন ফেব্রিকস, খাদি ও আদি ফেব্রিকসের পাঞ্জাবি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে তাদেরও কটন পাঞ্জাবি বেশি পছন্দ করছেন ক্রেতারা। তাদের দোকানের প্রতিটি পাঞ্জাবি দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে।
মার্কেটটিতে পাঞ্জাবির নামকরা ব্র্যান্ড ইল্লিয়িনের শো-রুমে বেশ ভিড় চোখে পড়েছে। এখানে সাধারণত তিন হাজার টাকার নিচে কোনো পাঞ্জাবি পাওয়া যায় না। আর সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা দামের পাঞ্জাবিও রয়েছে। এখানকার বেশির ভাগ ক্রেতা উচ্চবিত্ত বলে জানিয়েছেন দোকানিরা।
তাদের শো-রুমে সবচেয়ে কটন কাপড়ের পাঞ্জাবি বেশি চলছে। আর এই পাঞ্জাবির দাম দুই হাজার থেকে সর্বোচ্চ ছয় হাজার টাকা। এছাড়াও রয়েছে কটন হাফ হাতা শার্ট, জিন্সের প্যান্ট। একই চিত্র ইনফিনিটিতেও। সেখানে পুরুষদের পছন্দ কটন।
রিচম্যানের সেলস এক্সিকিউটিভ আবির
আর নারীর পোশাকের ব্যাপারে সেলসম্যান সজীব জানালেন, তাদের দোকানটিতে ভারতীয় পোশাকে ভরপুর। লেহেঙ্গা, কটি, জামা, পুঁথির কাজ করা থ্রিপিস। তাদের কাপড় ছয় হাজার থেকে শুরু করে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তারা নারী ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। দিনের বেলা তেমন ভিড় না থাকলেও সন্ধ্যার পর তারা দম ফেলানোর ফুসরত পান না।
নারীরা যে ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাক বেশি কিনছেন সেটা নিউ স্টাইলের সেলসম্যান শাকিলও জানালেন। তার মতে, পাকিস্তানি পোশাকগুলোর অধিকাংশ কাজ করা। ফলে সেগুলো নারীদের পছন্দ বেশি। এছাড়াও পাকিস্তানি কাপড়ের চাহিদাও বেশি তাদের কাছে। বিশেষ করে লেহেঙ্গা, কামিজ, গাউন ও থ্রিপিসগুলো।
নোয়াখালীর সায়মা ও সামিহা এসেছিলেন লেহেঙ্গা কিনতে। তাদের মতে, ভারতীয় লেহেঙ্গা একমাত্র বসুন্ধরার দোকানগুলোতেই পাওয়া যায়। এ খবর শুনেই তারা এসেছেন। তবে তখনো তারা বিভিন্ন ঘুরছিলেন। সাথে ছিল তাদের বাবা ও মা। তারাও এক দোকান থেকে আরেক দোকান দুই মেয়েকে নিয়ে ছোটাছুটি করছিলেন। তার ফাঁকে তাদের সাথে কথা হয়।
এই মার্কেটের দোকানগুলোতে নারীদের পোশাকের মধ্যে পুঁথির কাজ করা, জর্জেট ও নেটের ওপর কাজ কাপড়ই বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে শাড়ির কালেকশন থাকলেও সেগুলোর প্রতি বয়স্ক নারী ছাড়া তরুণীদের তেমন আগ্রহ দেখা গেল না।
মার্কেটটিতে পাকিস্তানি পোশাক ক্রেতাদের নজরে আনতে কেউ কেউ আবার দোকানের সামনের সাদা গ্লাসে সাদা কাগজে লিখে সাঁটিয়ে দিয়েছেন। তাতে লেখা রয়েছে ‘এখানে পাকিস্তানি আনস্টিচ থ্রিপিছ পাওয়া যায়।’
মার্কেট ঘুরে দেখা গেল, প্রতিটি ফ্লোরে নারীদের আধিক্য। তবে পুরুষদের দোকানগুলোতেও মোটামুটি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেল আড়ংয়ের আউটলেটে। সেখানে টানা কয়েকটি ফ্লোরে রীতিমতো ক্রেতারা কাপড় কিনতে যুদ্ধ করছেন। প্রতিটি ফ্লোরে নারী পুরুষ বাচ্চা থেকে উঠতি সবার কাপড় কিনতে শত শত নারী পুরুষ হাজির হয়েছেন। সবার পছন্দ কটন কাপড়।
মোহাম্মদপুরের রিং রোড থেকে এসেছেন তোফাজ্জল হোসেন ও তার স্ত্রী এবং দুই ছেলে সন্তান। চার বছরের ছেলের জন্য পাঞ্জাবি ও হাফ হাতা শার্ট দেখছিলেন তিনি। সেই ফাঁকে তার সাথে কথা হয়। তিনি বলছিলেন, সামনে ঈদ এজন্য নতুন পোশাক কিনতে এসেছেন। তবে সুতির চেয়ে তার পছন্দ কটন। কারণ বাচ্চারা গরমে অল্পতে হাঁপিয়ে ওঠে। সামনে প্রচুর গরম হবে। এজন্য তিনি ছেলেকে হাফ হাতা কটন কাপড়ের শার্ট কিনে দিতে চান। তার মতে, আড়ং ছোটদের কাপড়ে সেরা।
এমআইকে/জেবি
আপনার মতামত লিখুন