খুঁজুন
মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪, ৩০ আশ্বিন, ১৪৩১

গণহত্যায় জড়িত শেখ হাসিনার দোসররা কিভাবে পালাল: বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:৫৯ পূর্বাহ্ণ
গণহত্যায় জড়িত শেখ হাসিনার দোসররা কিভাবে পালাল: বিএনপি

সাম্প্রতিক ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যার সহযোগী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দোসর মন্ত্রী-এমপিসহ আওয়ামী লীগ নেতারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে দেশ ছেড়ে পালালেন সেই প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। এছাড়া গণ-অভ্যুত্থানের দুই মাসের মাথায়ও গণহত্যায় জড়িতদের মধ্যে যারা এরই মধ্যে হত্যা মামলার আসামি হয়েছেন, তারা কেন গ্রেফতার হচ্ছেন না- সেই প্রশ্নও তুলেছেন দলটির নেতারা।

দলের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কয়েকজন সদস্য এসব বিষয়ে প্রশ্ন তুলে আলোচনা করেন। তারা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে তারা (শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আ.লীগ নেতা) পালালেন তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিষয়টি তারা সরকারের কাছেও জানতে চাইবেন।

বৈঠকে প্রায় ১৬ বছর ধরে বিএনপিসহ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে কথা বলেন কয়েকজন নেতা। কথা বলেন এসব মামলায় সাজা প্রসঙ্গেও। তারা বলেছেন, এ বিষয়টি সরকার এখনো গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। যা দুঃখজনক। স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

কমিটির একজন সদস্য জানান, তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখতে পেয়েছেন, পতিত শেখ হাসিনা সরকারের এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, মন্ত্রী, সংসদ-সদস্য বিদেশে পালিয়ে গেছেন। তাদের কাউকে কাউকে ভারতের বিভিন্ন মাজার ও পার্কেও দেখা গেছে। বিএনপির নেতারা মনে করেন, হত্যা মামলার পরেও এসব আসামি কিভাবে পালালেন, কারা তাদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে, এসব বিষয়ে জনমনে যথেষ্ট প্রশ্ন ও উদ্বেগ আছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী একটি সূত্র জানিয়েছে, সোমবারের সভায় দেশের চলমান পরিস্থিতি, গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়েও সদস্যরা আলোচনা করেন। তারা বুঝতে চাইছেন, দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার কিভাবে সংস্কার করতে চাইছে, সংস্কারের রোডম্যাপ কেন দেওয়া হচ্ছে না, সংস্কার কবে নাগাদ হবে- এসব বিষয়েও বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতাদের মধ্যে নানা প্রশ্ন আছে। বৈঠকে সব কর্মকাণ্ডে সরকারের ধীরগতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কয়েকজন নেতা। এর পেছনে কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা সে ব্যাপারে সজাগ থাকার কথা বলেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, চলমান পরিস্থিতি, সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে তারা আলোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন।

সংস্কারের বিষয়ে দলীয় অবস্থান ঠিক করতে ৬ কমিটি: বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগের বিষয়ে দলীয় অবস্থান ঠিক করতে ছয়টি কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। এই কমিটির সদস্যরা অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কার বিষয়ে দলের কর্মকৌশল ঠিক করে তা জাতির সামনে তুলে ধরবেন। দলের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে তাদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছেও মতামত এবং সুপারিশ তুলে ধরা হবে। গঠিত কমিটিগুলো হলো- সংবিধান সংশোধন, বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসংক্রান্ত।

সূত্র জানায়, মূলত সরকার গঠিত কমিটির সংস্কারবিষয়ক কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে দলের কৌশল তৈরি ও সে অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক কাজ প্রণয়ন করতে কাজ করবেন তারা। সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করলে বিএনপি যাতে তাদের পরামর্শ তুলে ধরতে পারে- সেই প্রস্তুতিও নেবে এসব কমিটি।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবিত ৬টি কমিটির মধ্যে সংবিধান পুনর্গঠন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। সদস্য আছেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, অধ্যাপক ড. মাহফুজুল হক সুপন ও অধ্যাপক ড. নাজমু জামান ভূঁইয়া ইমন। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারকে। সদস্য হলেন- অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি মোহাম্মদ রইস উদ্দিন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বিচারক ইকতেদার হোসেন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম। পুলিশ বিভাগ সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। সদস্য হচ্ছেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জহিরুল ইসলাম, সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম, সাবেক ডিআইজি খোদা বক্স ও সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান। প্রশাসন সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে। সদস্যরা হলেন- সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আবদুল হালিম, ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সাবেক সচিব মনিরুজ্জামান খান। দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক হিসাবে সাবেক বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি শরফুদ্দিন চাকলাদার ও বিচারপতি এএফএম আবদুর রহমানের নাম রয়েছে। সদস্য হচ্ছেন- ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ও সাবেক সচিব আবদুর রশিদ। নির্বাচন কমিশনবিষয়ক সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানকে। সদস্য হচ্ছেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সাবেক সচিব আবদুর রশিদ।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে তা তারা বিশ্লেষণ করেছেন। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, তা তারা কীভাবে সম্পন্ন করতে চাইছে তা স্পষ্ট করতে হবে। পাশাপাশি সংস্কারের রোডম্যাপ কেন দেওয়া হচ্ছে না বা সংস্কার কবে নাগাদ হবে- এসব বিষয়েও আরও স্পষ্টীকরণ চাইছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। তারা মনে করেন, সংস্কারের সরকার সময়ক্ষেপণ করছে।

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও এজেডএম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। তারেক রহমান লন্ডন থেকে এবং মির্জা ফখরুল, আমির খসরু ও ইকবাল হাসান দেশে ও বিদেশ থেকে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।

পাট খাতের খেলাপি ঋণ নবায়নে বিশেষ ছাড়

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪, ১:০১ পূর্বাহ্ণ
পাট খাতের খেলাপি ঋণ নবায়নে বিশেষ ছাড়

পাট খাতের ব্যবসায়ীরা তাদের খেলাপি ঋণ দেড় শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে নবায়ন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ খাতের ঋণের বিপরীতে আরোপিত সুদ ও আবশ্যকীয় ক্ষেত্রে ঋণের আসল বা এর অংশ বিশেষ একটি ব্লক হিসাবে স্থানান্তর করে ১০ বছরের জন্য নবায়ন করা যাবে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহককে এক বছরের জন্য কিস্তি আদায় স্থগিত সুবিধা দেওয়া যাবে।

এ বিষয়ে সোমবার (১৪ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে পাট খাতের খেলাপি ঋণের সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের জন্য অর্থ উপদেষ্টার কাছে আবেদন করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ওই চিঠিটি সার্কুলারের সঙ্গে সংযুক্ত করে দিয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, পাট খাতের প্রতিটি গ্রাহকের প্রতিটি ঘটনায় গুনাগুন বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের সুদ ও আবশ্যকীয় ক্ষেত্রে আসল বা এর অংশবিশেষ ব্লক হিসাবে স্থানান্তর করে ১০ বছরের জন্য নবায়ন করা যাবে। এক্ষেত্রে গ্রাহককে এক বছরের জন্য ঋণের কিস্তি পরিশোধের বিষয়ে স্থগিত সুবিধা দেওয়া যাবে। এক বছর পর থেকে ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। ঋণ নবায়নের ক্ষেত্রে গ্রাহককে কমপক্ষে দেড় শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিতে হবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, জাতীয় অর্থনীতিতে পাট খাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ইতোপূর্বে পাট খাতের কাঁচা পাট ব্যবসায়ীদের খেলাপি ঋণ নবায়নে একাধিকবার ছাড় দেওয়া হয়েছে। এবার পাটকল কারখানাগুলোর উদ্যোক্তাদের ছাড় দেওয়া হলো।

ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডিসহ ২০ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:৫৬ পূর্বাহ্ণ
ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডিসহ ২০ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব

অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মিফতাহ উদ্দিন সহ ২০ কর্মকর্তাকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বরাবর চিঠি দিয়েছেন দুদকের তদন্ত দলের প্রধান এবং উপ-পরিচালক মো. ইয়াসির আরাফাত।

চট্টগ্রাম ভিত্তিক ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ঋণের নামে ইসলামী ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের ঘটনার বিষয়ে বক্তব্য এবং সাক্ষ্য প্রদানের জন্য তাদের দুদকের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

অভিযুক্তদের আগামী ২০-২৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ে দুদকের সেগুন বাগিচা প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত থেকে লিখিত বক্তব্য, প্রমাণ উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রামের চাকতাই শাখার গ্রাহক মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের ঋণের যাবতীয় কাগজপত্র এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টৈর সত্যায়তি কপি সঙ্গে রাখতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

চিঠি অনুযায়ী অভিযুক্ত কর্মকর্তারা হলেন- ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ডিএমডি মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (ইভিপি) মিয়া মো. বরকত উল্লাহ, ইভিপি মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী, এসএভিপি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন চৌধুরী, ইভিপি মোহাম্মদ সিরাজুল আলম, ভিপি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সরকার, চট্টগ্রামের চাকতাই শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (এসপিও) খাজা মোহাম্মদ খালেদ, মোহাম্মদ আলী আসগর, এসএভিপি আমান উল্লাহ, এসপিও সরওয়ার কামাল, এসপিও মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ, জুনিয়র অফিসার সিরাজ, প্রিন্সিপাল অফিসার (পিও) নাহিদ আঞ্জুমান সুমী, জুনিয়র অফিসার মো. ইসতিয়াক জকি, সিনিয়র অফিসার মো. আশরাফ, সিনিয়র অফিসার জোনায়েদ হোসাইন, সিনিয়র অফিসার সাহাদাত হোসাইন, জুনিয়র অফিসার মো. কলিম উল্লাহ চৌধুরী, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. আশরাফ উদ্দিন ও এসপিও ইফতিখার সাদী রিপন।

বাজরে আগুন, জিম্মি সাধারণ মানুষ

সিন্ডিকেটে বন্ধ ঢাকা ও চট্টগ্রামের ডিমের আড়ৎ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:৫২ পূর্বাহ্ণ
সিন্ডিকেটে বন্ধ ঢাকা ও চট্টগ্রামের ডিমের আড়ৎ

সারাদেশে চলছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বাজার অগ্নিশর্মা। সরকারের তদারকি সংস্থাগুলোর অভিযান ঠেকাতে সিন্ডিকেট করে পাইকারি পর্যায়ে ঢাকার তেজগাঁও ও চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে আড়তের ব্যবসায়ীরা ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছে।

গত রোববার রাত থেকে আড়তে আনা হয়নি কোনো ডিম। ফলে সোমবার সকাল থেকে বিক্রিও বন্ধ ছিল। এমন পরিস্থিতিতে খুচরা বাজারে পণ্যটির দাম আরও বেড়েছে। প্রতি ডজন (১২ পিস) ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে রেকর্ড ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়।

এবিষয়ে সোমবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কাওরান বাজার পরিদর্শন শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পণ্যের সিন্ডিকেট করে যারা দাম বাড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখনো যারা সিন্ডিকেট করে কারসাজির চেষ্টা করছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি আরও বলেন, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যেসব পণ্যের সরবরাহ ঘাটতি আছে সেগুলোর বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দ্রব্যমূল্যের দাম না কমাকে ব্যর্থতা হিসাবে মনে করেন কিনা প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, না, বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দুই মাস যথেষ্ট সময় নয়। তবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সৃষ্টির মাধ্যমে সবকিছুকেই নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর ফার্মের মুরগির ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। বেঁধে দেওয়া দাম অনুসারে উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা হওয়ার কথা। সে হিসাবে খুচরা পর্যায়ে এক ডজন ডিমের দাম হয় ১৪২ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে রোববার পর্যন্ত প্রতি ডজন ১৭০ টাকায় বিক্রি হলেও সোমবার ১৮০-১৯০ টাকায় ডিম বিক্রি হয়।

দুই সপ্তাহ ধরে ডিমের বাজারে অস্থিরতা ঠেকাতে মাঠে নামে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। যৌক্তিক মূল্যে ডিম বিক্রি না করায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করেছে। পাশাপাশি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ফার্ম থেকে প্রতিপিস ১১ টাকায় কিনে পাইকারি আড়তেই ১৫ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। সে কারণে ভোক্তা পর্যায়ে এই ডিম ১৬-১৮ টাকার ওপরে বিক্রি হয়েছে। আর এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে রাজধানীর ২২ জন ব্যবসায়ী। এছাড়া তেজগাঁও ডিম আড়তদারদের কারসাজিতে ২০ দিনে ভোক্তার পকেট থেকে ২৮০ কোটি টাকা লুটে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।

তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ জানান, সরকার খুচরা পর্যায়ে ডিমের যে দাম নির্ধারণ করেছে, তার চেয়ে বেশি দাম দিয়ে খামারিদের কাছ থেকে ডিম কিনছেন তারা। এ কারণে বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দামে। উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেন, গতকাল (রোববার) রাতে তারা পাইকারিতে ডিম বিক্রি করেছেন প্রতিটি ১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে। এই ডিম তারা কিনেছেন ১২ থেকে ১২ টাকা ২০ পয়সা দরে। তিনি জানান, তেজগাঁওয়ে দৈনিক ১৪-১৫ লাখ ডিম আসে। ঢাকায় ডিমের চাহিদা এক কোটি। তেজগাঁওয়ের বাইরে কিছু জায়গায় অনেকে ঠিকই উচ্চ দামে ডিম বিক্রি করছেন। কিন্তু বাড়তি দামে কেনাবেচার কারণে শুধু তাদের দায়ী করা হচ্ছে, অভিযান চালানো হচ্ছে। এজন্য ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।

তিনি বলেন, সরকারের নিয়ম না মানলে জরিমানা ও শাস্তি হতে পারে। তাই এখন বিক্রি বন্ধ রেখে কী করা যায়, সে উপায় খুঁজছি। আজ (সোমবার) ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে সেখানে সভা থাকায় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি।

সোমবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুচরা পর্যায়ে ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৯০ ও সাদা ডিম ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ফার্মের মুরগির দামও চড়া। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকা ও সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-২৯০ টাকা।

এদিন দুপুরে কাওরান বাজারের চিত্র, এই বাজারের কোনো দোকানে ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে না। শুধু একটি দোকানে কয়েকটি লাল ও দুই ডজনের মতো সাদা রঙের ডিম পাওয়া গেছে। এসব ডিমের ডজন ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। যদিও সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই লাল ডিমগুলো বিক্রি হয়ে যায়।

পাহাড়তলীতে ডিমের আড়তে তালা:
সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করতে না পারায় চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে সোমবার সকাল থেকে আড়তগুলো বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে চট্টগ্রামে ডিমের বাজার আরও অস্থির হয়ে উঠছে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে উৎপাদন পর্যায় থেকে প্রতিপিস ডিম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা করে কিনতে এবং পাইকারিতে সেটি ১১ টাকা ১ পয়সা করে বিক্রি করতে। কিন্তু উৎপাদন পর্যায় থেকে ডিম কিনতে খরচ পড়ছে ১৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে ১৫ পয়সা। খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ টাকায়। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে ক্রয়-বিক্রয় করতে না পারায় আড়ত বন্ধ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বেঁধে দেওয়া দামে ডিম ক্রয় ও বিক্রি করা যাচ্ছে না।

তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, ডিমের আড়তদাররা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ও ডিমের দাম বাড়াতে আড়তগুলো বন্ধ রেখেছে। এতে ভোক্তাপর্যায়ে ডিমের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া তারা (আড়তদাররা) প্রশাসনকে অসত্য তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।

পাহাড়তলী বাজারের আড়তদার কামরুল হুদা গণমাধ্যমে বলেন, আমরা ডিমের ব্যবসা নিয়ে উভয় সংকটে আছি। উৎপাদন পর্যায় থেকে ডিম ক্রয় করলে রসিদও দেওয়া হচ্ছে না। ভোক্তা অধিকার থেকে আমাদের কাছে ক্রয়ের রসিদ চায়। আমরা কীভাবে ক্রয়ের রসিদ দেব? রসিদ না থাকায় আমাদের জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু উৎপাদন পর্যায়ে যে বেশি টাকা রাখছে। সেটি ভোক্তা অধিকার শোনে না। ডিম ক্রয় করতে না পারায় আমাদের আড়তগুলো আপাতত বন্ধ রাখছি।