মিলছে না বোতলের সয়াবিন তেল, খোলা তেলে নৈরাজ্য
লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। এরপর এক সপ্তাহ চলে গেলেও বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলের অধিকাংশ দোকানে বোতলের সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। আর খোলা সয়াবিন তেল নিয়ে এক প্রকারের নৈরাজ্য চলছে। ব্যবসায়ীরা খোলা সয়াবিন তেলের দাম ইচ্ছামতো রাখছে। কোনো কোনো ব্যবসায়ী খোলা সয়াবিন তেল ২০০ টাকা কেজিতেও বিক্রি করছেন।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ, খিলগাঁও, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচাসহ বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যেসব প্রতিষ্ঠান বোতলের সয়াবিন তেল বাজারে ছাড়ে তারা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। দাম বাড়ানোর পরও তারা তেল সরবরাহ করছে না। কবে বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে সেই তথ্যও কোম্পানির লোক দিতে পারছে না।
বাজারে হঠাৎ করে বোতলের সয়াবিন তেল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে গত ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এই দাম বাড়ানোর ফলে এখন বোতলের এক লিটার সয়াবিনের দাম নির্ধারিত হয়েছে ১৭৫ টাকা। আর খোলা সয়াবিনের দাম নির্ধারিত হয়েছে ১৫৭ টাকা।
তবে এ দামে কোথাও সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বেশিরভাগ দোকানেই বোতলের সয়াবিন তেল নেই। দু-একটি দোকানে সীমিত পরিসরে বোতলের সয়াবিন তেল থাকলেও দাম রাখা হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯৫ টাকা পর্যন্ত। আর খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ২০০ টাকা কেজি।
রামপুরায় ২০০ টাকা কেজি সয়াবিন তেল বিক্রি করা আলামিন বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে কোম্পানির লোক বোতলের সয়াবিন তেল দিচ্ছে না। আমাদের কাছেও এখন বোতলের সয়াবিন তেল নেই। আর খোলা সয়াবিন তেল বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই আমরাও বাড়তি দামে বিক্রি করছি। বোতলের তেল বাজারে এলে হয়তো দাম কিছুটা কমতে পারে। তবে কবে নাগাদ বোতলের সয়াবিন তেল আসবে সেই তথ্য কোম্পানির লোক দিতে পারছে না।
মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. আফজাল বলেন, দাম বাড়ানোর আগে থেকেই বাজারে বোতলের সয়াবিন তেল নেই হয়ে গেছে। লিটারে ৮ টাকা দাম বাড়ানোর পরও কোম্পানি বোতলের তেল দিচ্ছে না। কোম্পানির লোকও এখন কম আসছে। তাদের কাছে প্রশ্ন করলে বলে, কোম্পানি থেকে সরবরাহ শুরু করলে তেল দিয়ে যাবে।
বোতলের সয়াবিন তেল বাজারে না থাকায় খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে গেছে বলেও জানান এই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া খোলা সায়বিন এখন ১৮৫ থেকে ১৯৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে দ্রুত বোতলের তেল না এলে দাম আরও বেড়ে যেতে পারে।
খিলগাঁওয়ের কয়েকটি দোকান ঘুরে একটি দোকানে ৪টি বোতলের সয়াবিন তেল দেখা যায়। সাইফুল ইসলাম নামের এই দোকানদার বলেন, আমার কাছে বোতলের যে সয়াবিন তেল রয়েছে, তা আগের কেনা। নতুন দামের সয়াবিন তেল কোম্পানি থেকে এখনো দেয়নি। আমরা বোতলের এক লিটার সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা বিক্রি করছি। নতুন দামের তেল এলে, বোতলের গায়ে যে দাম লেখা থাকবে, সেই দামে বিক্রি করবো।
খোলা সয়াবিনের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খোলা সয়াবিন তেল ১৯৫ টাকা কেজি বিক্রি করছি। সরকার তো খোলা সায়বিনের দাম ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করেছে? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সরকার সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করেছে লিটারে, আমরা বিক্রি করি কেজিতে। ১৯৫ টাকার কমে সয়াবিন তেল বিক্রি করা সম্ভব না। এই দামে যার ইচ্ছা নেবে, না নিলে না নেবে।
শান্তিনগর বাজার ঘুরেও বোতলের সয়াবিন তেল খুব একটা চোখে পড়েনি। আর খোলা সয়াবিন দোকান ভেদে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা যায়। মো. আলম নামের শান্তিনগরের এক ব্যবসায়ী বলেন, সরবরাহ না থাকায় সরকার সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু বাজারে কার্যকর তদারকি নেই। যে কারণে দাম বাড়ানোর পর এক সপ্তাহ চলে গেলেও বোতলের সয়াবিন তেল বাজারে আসছে না। আর খোলা সয়াবিন যারা পাইকারি বিক্রি করে তারাও বাড়তি দাম রাখছে। ফলে আমাদের বাড়তি দামে সয়াবিন বিক্রি করতে হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন