টাঙ্গাইলের ঘাটাইল
ভাটায় কয়লার বদলে পুড়ছে কাঠ, বিপর্যস্ত পরিবেশ
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩৮টি ভাটায় শুরু হয়েছে ইট তৈরির কাজ। এসব ইটভাটার অধিকাংশেই পোড়ানো হচ্ছে কয়লার বদলে কাঠ। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রহীন এসব ইটভাটার অধিকাংশই গড়ে ওঠেছে আবাদি জমি ও লোকালয়ে। ফলে এসব ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পরিবেশ। কমছে কৃষি জমির পরিমাণ ও ফসল উৎপাদন। ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছে না। কেউ কেউ ঝামেলা থেকে নিজেদের রক্ষার জন্যই এমন জানিয়েছেন পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
ভাটা মালিক সমিতির সূত্রে জানা গেছে, উজেলায় অর্ধশতাধিক ইটভাটা থাকলেও এ বছর ৩৮টি ভাটা ইট পুড়ছে। তার মধ্যে ২১টি ইট ভাটার নিবন্ধন আছে। ১৪টি ভাটা চলছে শুধু হাইকোর্টের রিট করে। অবশিষ্ট ৩টি ভাটা কোন আইনে চলছে তার কোন তথ্য নেই তাদের কাছে।
ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৯ অনুযায়ী, একটি ইটভাটা স্থাপনের আগে সরকারের ১০টি দপ্তর থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। এ আইনের উদ্দেশ্য ছিল ২০২০ সালের মধ্যে পোড়া ইট শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা। তবে এ অঞ্চলে উল্টো প্রতি বছরই ভাটার সংখ্যা বাড়ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাটার চারপাশে থাকা ফসলি জমিতে বেড়ে ওঠা ধান, বিভিন্ন কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন রবিশস্য ঝুঁকিতে পড়েছে। ইট তৈরিতে ব্যবহৃত মাটির সবটাই যাচ্ছে ফসলি জমি থেকে। অথচ কৃষিজমি রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ। নজরদারি নেই পরিবেশ অধিদপ্তরেরও।
উপজেলার উত্তর খিলগাতী গ্রামের কৃষক জামাল হোসেনের ভাষ্য, একটি ইটভাটা থেকে অন্যটির দূরত্ব বেশি নয়। সব ভাটা স্থাপন করা হয়েছে ফসলি জমির মাঝখানে। এতে ফসলের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত তিনি। এভাবে চলতে থাকলে একসময় অবৈধ ইটভাটার দাপটে ঘাটাইল উপজেলা মরুভূমিতে পরিণত হবে বলে মনে করেন একই গ্রামের কলেজছাত্র মোঃ শান্ত মিয়া।
সংগ্রামপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, মানিকপুর মোড়ে গ্রাম সংলগ্ন তিন ফসলি জমিতে খুবই ছোট আকারের চিমনি দিয়ে ফরিদ নামে ভাটা স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে পাহাড়ের লাল মাটি ও গাছের বিশাল স্তূপ করে রাখা। যেখানে কৃষি জমির মাটি কাটা আইনগত একেবারেই নিষিদ্ধ, ভাটার মালিক মনসুর আলী দিন দুপুরে প্রকাশ্যে মাটি কাটছেন।
ধলাপাড়া বিল-জলঙ্গি বংশাই ইট ভাটায় গিয়ে দেখা যায়, ভাটার চারিপাশে গাছের স্তূপ। বিধি অনুযায়ী কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর কথা থাকলেও আইন ও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ভাটার মালিক বনের কাঠ দিয়ে ইট পোড়াচ্ছেন। তাছাড়াও চলমান ৩৮ ভাটার মধ্যে ১৮টিই সংরক্ষিত বনের তিন কিলোমিটারের মধ্যে ও জনবসতিপূর্ন এলাকায়। এ ভাবে ৩৮টি ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোয়ায় যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, অন্য দিকে ফসলি জমির মাটি গভীর করে কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। যত্রতত্র ইট ভাটা গড়ে উঠায় হাইড্রলিক ও ট্রাকের চাপে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ছোট ছোট রাস্তা অল্পদিনেই ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
ভাটায় বনের কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা ওয়াদুদুর রহমানের ভাষ্য, ‘এ বিষয়ে আমি সব ধরনের প্রয়োজনীয় ও কার্যকরি ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি শাহজাহান আলী বলেন, ‘পাহাড়ের লাল মাটি ও বনের কাঠ ইট ভাটায় না নিতে কড়া ভাষায় নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। তার পরেও কেউ আইন অমান্য করলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনে আমাদের সমিতি সর্ব প্রকারের সহযোগিতা করবে।’
এ ব্যপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন ইসলাম বলেন, কয়লার বদলে যেখানে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে সে সব ইটভাটার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। অচিরেই সে সব ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবেও জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন