যুক্তরাজ্যের অর্থ ও নগর বিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ডেভেলপারের কাছ থেকে একটি ফ্ল্যাট উপহার নিয়েছিলেন। নির্বাচনী হলফনামায় এ ফ্ল্যাট সম্পর্কিত কোনো তথ্য তিনি উল্লেখ করেননি বলে জানা গেছে।
এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, লন্ডনের কিং’স ক্রস এলাকায় অবস্থিত ২ শয্যাকক্ষের সেই ফ্ল্যাটটি ২০০৪ সালে টিউলিপকে উপহার দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামের এক ডেভেলপার। মোতালিফ বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী এবং টিউলিপের খালা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ কোটি ৯৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা) দিয়ে ২০০১ সালের জানুয়ারিতে ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন আবদুল মোতালিফ। বেশ সস্তাতেই পেয়েছিলেন তিনি, কারণ একই বছর আগস্ট মাসে সেই ফ্ল্যাটির পার্শ্ববর্তী আর একটি ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ কোটি ৭৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা)।
যুক্তরাজ্যের ইলেক্টোরাল রোল ডেটার তথ্য জানাচ্ছে, ২০০৪ সালে উপহার হিসেবে পাওয়ার পর কিং’স ক্রসের সেই ফ্ল্যাটটিতে কয়েক বছর ছিলেন টিউলিপ। তারপর তার অন্য ভাই-বোনরা ছিলেন আরও বেশ কয়েক বছর। বর্তমানে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়েছেন টিউলিপ। সেখান থেকে বাৎসরিক ৯০ হাজার পাউন্ড (১ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা) উপার্জন হচ্ছে তার।
৪২ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিক লেবার পার্টির সদস্য হন মাত্র ১৬ বছর বয়সে। ২০১৫ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে পূর্ব লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড আসন থেকে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হন। তারপর থেকে এ পর্যন্ত ওই আসনে চার বার প্রার্থী হয়েছেন টিউলিপ, প্রতিবারই জয়ী হয়েছেন।
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ পর্যন্ত লেবার পার্টির পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্য শাখার ‘লবিং ইউনিট অ্যান্ড ইলেকশন স্ট্র্যাটেজি টিম’-এ সংশ্লিষ্ট ছিলেন তিনি। তার নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রেও এ সংশ্লিষ্টতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
তবে কোনো নির্বাচনী হলফনামায় এ ফ্ল্যাটের ব্যাপারে উল্লেখ করেননি টিউলিপ। হলফ নামায় তিনি যুক্তরাজ্যের হাইগেট এবং হ্যাম্পস্টেড এলাকায় ফ্ল্যাটের ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন।
৭০ বছর বয়সী আবদুল মোতালিফ বর্তমানে পূর্ব লন্ডনে মুজিবুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে থাকেন। মুজিবুল ইসলাম আওয়ামী লীগের একজন সাবেক এমপির সন্তান। এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। তিনি স্বীকার করেছেন যে তিনি ফ্ল্যাটটি ২০০১ সালে কিনেছিলেন, কিন্তু আর কোনো তথ্য জানাননি তিনি।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের এক মুখপাত্র ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, “আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্কিত যে কোনো সম্পত্তির মালিকানা যদি টিউলিপের থাকে, তাহলে তা হবে তার জন্য একটি বড় ভুল।”
আপনার মতামত লিখুন