“অনলাইন ভিত্তিক মানবিক প্লাটফর্ম”
“সেচ্ছায় রক্তদান মধুপুর ধনবাড়ি ঘাটাইল ও টাঙ্গাইল” মুলত অনলাইন ভিত্তিক অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সেচ্ছাসেবী প্লাটফর্ম। ২০২১ সালে মানবসেবার মহৎ উদ্দেশ্য কে বুকে ধারন করে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে চলছে আর্ত মানবতার কল্যাণে।
সংগঠনের উদ্দ্যমী সেচ্ছাসেবী ইমরান হাসানের তত্ত্বাবধানে এবং কিছু মানবিক ও ত্যাগী স্বেচ্ছাসেবীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্তরিক প্রচেষ্ঠা সেই সাথে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাসহ সকলের আন্তরিক ভালোবাসায় শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার ব্যাগ ব্লাড ডোনেট করা হয়েছে। সেই সাথে বেশ কয়েকটি ফ্রি ব্লাড গ্রুপ ক্যাম্পেইন করা হয়েছে। যে ক্যাম্পেইনের মুল উদ্দেশ্য জনসাধারণকে রক্তদানে উৎসাহ প্রদান ও বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা।
বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে বিশেষ করে বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ইত্যাদি কেন্দ্রীক বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করে থাকে সংগঠনটি। এমন সব প্রোগ্রামে বৃক্ষরোপন, সমাজ সচেতনাতামুলক ক্যাম্পেইন কিংবা ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং করা হয়ে থাকে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবেশের ইতিবাচক পরিবর্তন কিংবা সমাজের অসঙ্গতি বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজের কল্যাণে ভূমিকা পালনে সচেষ্ট সেচ্ছায় রক্তদান সংগঠনটি।
মানুষ সামাজিক জীব। মানবদেহের রক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বেঁচে থাকার জন্য রক্ত অপরিহার্য। কেমিক্যাল ল্যাব কিংবা মেডিক্যাল ল্যাবে বিজ্ঞানিদের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে ও রক্তের কোন বিকল্প তৈরী সম্ভব হয় নি। এক ফোঁটা রক্ত তৈরী করা অসম্ভব ই নয় রীতিমতো দূর্সাধ্য ব্যাপার। রক্ত সার্বজনীন, যার মধ্যে ভেদাভেদ নেই কোন ধনী কিংবা দরিদ্রের মধ্যে। ভেদাভেদ নেই জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের মধ্যে। প্রয়োজনীয় শর্ত পূরন করে রক্তের গ্রুপ মিললেই এক জন সাদা বর্ণের ব্যক্তি একজন কালো বর্ণের ব্যক্তিকে যেমন রক্ত দিতে পারবে ঠিক তেমনি একজন দরিদ্র একজন ধনীকে রক্ত দান করে জীবন বাঁচাতে সহযোগিতা করতে পারে। এখানে নেই কোন ভেদাভেদ। সকল শ্রেণির রক্তের বর্ণ এক লাল। সেচ্ছায় রক্তদান উচ্চমানের মানবিক কাজ। আপনার এক ব্যাগ রক্তে হাসি ফুটতে পারে অপর জীর্ণ -শীর্ণ, মুমূর্ষু কোন প্রাণে।
যেকোন জরুরি রোগীর ক্ষেত্রে, দূর্ঘটনা পতিত ব্যক্তির জন্য ইমার্জেন্সি রক্তের প্রয়োজনে, রক্তশূণ্যতায়, সিজারের ক্ষেত্রে বা যেকোন অপারেশন পরবর্তী রক্তশূণ্যর ক্ষেত্রে। ক্যন্স্যার আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে, থ্যালাসেমিয়া রোগীসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির জন্য রক্তের যোগান দিতে সেচ্ছায় রক্তদান মধুপুর ধনবাড়ি ঘাটাইল ও টাঙ্গাইল সংগঠনটি সর্বাত্মক কাজ করে থাকে।
সংগঠনের সেচ্ছাসেবীরা ব্যক্তিগত, পেশাগত কিংবা পড়াশোনা জনিত বিভিন্ন বিষয়ে ব্যস্ত থাকার পরেও, আর্ত মানবতার কল্যানে ও মানবিক মুল্যবোধ থেকে অসহায়, মুমূর্ষু রোগীদের মুখে হাসি ফুটাতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নিজেদের মুল্যমান সময় ও শ্রম দিয়ে বিভিন্ন মানুষের সাথে যোগাযোগ করে কাঙ্ক্ষিত গ্রুপের রক্ত সংগ্রহ করে থাকে। এতে অনেক সময় দেখা যায় সেচ্ছাসেবকদের নিজেদের অর্জিত অর্থ ব্যায় হয়ে যায়। অথচ তারা কোন পারিশ্রমিক নেন না, শুধুমাত্র সেচ্ছায় এ মানবিক কাজ সম্পাদনা করে থাকে।
সিংগারবাড়ী নবজাগরণ সমাজ সেবা সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও সেচ্ছায় রক্তদান মধুপুর ধনবাড়ি ঘাটাইল ও টাঙ্গাইলের সক্রিয় ও উদ্দ্যোমী সেচ্ছাসেবী খন্দকার বদিউজ্জামান বুলবুল জানান, আমাদের দেশের অনেকেই রক্ত দানে ভয় পায়। অনেকেই মনে করেন রক্তদানের ফলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে কিংবা রক্ত স্বল্পতা হবে। যার ফলে কিছু কুসংস্কার ও অজ্ঞতার ফলে অনেকেই রক্তদানে নিরুৎসাহিত হয়। তবে, রক্তদানে কোনো সমস্যা হয় না। কেননা একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের শরীরে পাঁচ-ছয় লিটার রক্ত থাকে। এর মধ্যে সাধারণত ২৫০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার রক্ত দান করা হয়, যা শরীরে থাকা মোট রক্তের মাত্র ১০ ভাগের এক ভাগ। রক্তের মূল উপাদান পানি, যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পূরণ হয়।
• রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। রক্তদানের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ‘বোনম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্তকণিকা জন্ম হয়, ঘাটতি পূরণ হয়।
• বছরে তিনবার রক্তদান শরীরে লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা বাড়িয়ে তোলে ও নতুন কণিকা তৈরির হার বাড়ায়।
• নিয়মিত রক্তদানকারীর হার্ট ও লিভার ভালো থাকে।
• স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে পাঁচটি পরীক্ষা সম্পূর্ণ বিনা খরচে করা হয়। এর মাধ্যমে জানা যায় শরীরে অন্য বড় কোনো রোগ আছে কি না। যেমন—হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, এইচআইভি (এইডস) ইত্যাদি।
• রক্তদান অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়তা করে।
• রক্তে কোলস্টেরলের উপস্থিতি কমাতে সাহায্য করে।
• শরীরে অতিরিক্ত আয়রনের উপস্থিতিকে বলে Hemochromatosis। নিয়মিত রক্তদান এই রোগ প্রতিরোধ করে।
• স্থূলদেহী মানুষের ওজন কমাতে রক্তদান সহায়ক।
• মুমূর্ষুকে রক্ত দিলে মানসিক তৃপ্তি মেলে।
রক্তদানে কোন ক্ষতি হয় না তবে রক্তদানের শর্তগুলো না মেনে রক্তদান করলে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা আছে। তাই আমাদের রক্তদানের পূর্ব শর্তগুলো অবশ্যই জেনে রাখা উচিত। রক্তদানের শর্তগুলো হলো-
• রক্তদাতাকে সুস্থ থাকতে হবে এবং ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৫০ কেজি ওজনের যেকোনো মানুষ রক্তদান করতে পারে।
• দাতার রক্তের স্ক্রিনিং টেস্ট বা রক্ত নিরাপদ কি না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা।
• ভরপেটে খাওয়ার চার ঘণ্টা পর রক্ত দেওয়া শ্রেয়।
• কোনো রূপ এনার্জি ড্রিংক রক্তদানের আগে সেবন না করাই ভালো।
• যাঁদের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শে রক্তদান করতে পারেন।
যেসকল ব্যাক্তিরা চাইলেও রক্তদান করতে পারবেন না। অথাৎ যাঁদের রক্তদান করা নিষেধ-
• ক্যান্সার, হিমোফিলিয়া, ম্যালেরিয়াসহ জীবাণুঘটিত কোনো রোগী।
• এইচআইভি বা এইডস আক্রান্ত রোগী।
• মাদক সেবনকারী।
• হেপাটাইটিস-বি ও সি-র এন্টিজেন পজিটিভ যাঁদের। পরবর্তী সময় তা নেগেটিভ হলেও রক্ত দেওয়া যাবে না।
• গর্ভবতী মহিলারা।
• যাঁদের অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট হয়।
• যাঁরা বারবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন।
• গত তিন মাসের মধ্যে রক্তদান করেছেন এমন মানুষ।
• যাঁদের শরীরের কোনো স্থানের গ্ল্যান্ড (লিম্ফনোড) ফুলে গেছে। বিশেষ করে ঘাড়, গলায়, হাতের নিচের গ্লান্ড।
রক্তদান মানবিক ও নৈতিক কাজ। দেশে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন পূরণে বহুলাংশে চাহিদার যোগান দিয়ে চলেছে অনলাইন ভিত্তিক ব্লাড সংগঠনগুলো। স্বেচ্ছায় রক্তদান মধুপুর ধনবাড়ি ঘাটাইল ও টাঙ্গাইল এদের অন্যতম। সেচ্ছায় মানবিক সংগঠনগুলোর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মাধ্যমে অসহায়, মুমূর্ষ মানুষের মুখে হাসি ফুটুক এ আশা ব্যক্ত করছি।
আপনার মতামত লিখুন