খুঁজুন
রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫, ৮ আষাঢ়, ১৪৩২

সামাজিক ‘নেটওয়ার্ক’ হারিয়েছে পুলিশ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭:১৮ অপরাহ্ণ
সামাজিক ‘নেটওয়ার্ক’ হারিয়েছে পুলিশ

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত পুলিশ ফোর্স কখনও ছিল না। সদস্য সংখ্যা কম থাকার কারণে অপরাধ দমন ও প্রতিরোধে নানা পদ্ধতি ও উপায় হাতে নিতে হয়েছে পুলিশকে। বিশেষ করে এলাকাভিত্তিক অপরাধ যেমন- চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ যে কোনো অপরাধ দমন ও প্রতিরোধে স্থানীয় কমিউনিটির সাহায্য নিত পুলিশ। যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট এলাকার অপরাধী এবং বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে খুব সহজেই খবর পেত পুলিশ প্রশাসন। যা ‘কমিউনিটি পুলিশিং’ ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত।

জানা যায়, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সঙ্গে স্থানীয় সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জড়িত থাকতেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির এলাকাভিত্তিক স্থানীয় নেতাকর্মীরা এখন পলাতক। ফলে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে ‘কমিউনিটি পুলিশিং’ ব্যবস্থা। এখন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অপরাধের বিষয়ে আগাম কোনো খবর আসছে না পুলিশের কাছে। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে নতুন করে কারা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন, সে বিষয়েও কোনো তথ্য পাচ্ছে না পুলিশ। বিষয়টি বুঝতে পেরে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে নানা অপরাধ ঘটাচ্ছেন।

জনবল সংকটের কারণে এলাকাভিত্তিক অপরাধ দমন ও প্রতিরোধে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। দেশের জনসংখ্যার আনুপাতিক হার অনুযায়ী পুলিশের জনবল অনেক কম। দেশে ৮০০ থেকে ৯০০ জনের বিপরীতে রয়েছেন একজন পুলিশ। ইউএন (জাতিসংঘ) স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ৪০০ জন নাগরিকের বিপরীতে একজন পুলিশ থাকার কথা বলা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক পুলিশের ঘাটতি পূরণ এবং অপরাধ দমনে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার বিকল্প নেই

এদিকে, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী সরকারের পতনের পর ডিএমপিতে অনেক রদবদল হয়েছে। থানাগুলোর ওসি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত বদলি করা হয়েছে। বদলি করে যাদের ঢাকায় আনা হয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশের ডিএমপিতে কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ফলে তারা এখনও ঠিক মতো ঢাকার রাস্তাঘাট চেনেন না। এর মধ্যে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়া। ঢাকার নতুন পুলিশ সদস্যরা স্থানীয়দের কাছ থেকে এখন কোনো তথ্য পাচ্ছেন না।
কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা মূলত পুলিশের সামাজিক নেটওয়ার্ক, এটি খবর ও তথ্য নেওয়ার মাধ্যম। এর মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ প্রশাসন।

dhakapost

এ বিষয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে এলাকায় নিয়মিত পুলিশ আসত। বিশেষ করে রাতে টহল দিত। তারা এসে কমিউনিটি পুলিশিংয়ে যারা নিয়োজিত ছিলেন তাদের কাছ থেকে অপরাধ ও অপরাধীদের তথ্য নিতেন। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে চুরি কিংবা ছিনতাইয়ের ঘটনা কম হতো। কিন্তু এখন পুলিশ তেমন আসে না, কারও কাছ থেকে খবরও নেয় না। পুলিশের তৎপরতা না থাকায় এখন চোর ও ছিনতাইকারীরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়।

রাজধানীর মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা কাজল শেখ বলেন, আগে রাত-বিরাতে পুলিশ আসত। এলাকার মুরুব্বিদের সঙ্গে আড্ডা দিত, এলাকার খোঁজখবর নিত। ফলে চোর ও ছিনতাইকারীরা কিছুটা হলেও ভয়ে থাকত। কিন্তু এখন পুলিশ আসে না, এলাকার কারও কাছ থেকে তথ্যও নেয় না। অপরাধীরা এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কেউ কিছু বলার সাহস দেখাচ্ছে না।

যে কারণে দরকার কমিউনিটি পুলিশিং
পুলিশ জানায়, তাদের জনবল সংকটের কারণে এলাকাভিত্তিক অপরাধ দমন ও প্রতিরোধে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। দেশের জনসংখ্যার আনুপাতিক হার অনুযায়ী পুলিশের জনবল অনেক কম। দেশে ৮০০ থেকে ৯০০ জনের বিপরীতে রয়েছেন একজন পুলিশ। ইউএন (জাতিসংঘ) স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ৪০০ জন নাগরিকের বিপরীতে একজন পুলিশ থাকার কথা বলা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক পুলিশের ঘাটতি পূরণ এবং অপরাধ দমনে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার বিকল্প নেই।

আগে রাত-বিরাতে পুলিশ আসত। এলাকার মুরুব্বিদের সঙ্গে আড্ডা দিত, এলাকার খোঁজখবর নিত। ফলে চোর ও ছিনতাইকারীরা কিছুটা হলেও ভয়ে থাকত। কিন্তু এখন পুলিশ আসে না, এলাকার কারও কাছ থেকে তথ্যও নেয় না। অপরাধীরা এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কেউ কিছু বলার সাহস দেখাচ্ছে না রাজধানীর মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা কাজল শেখ
তবে পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা ব্যাহত হলেও অপরাধ দমনে নাগরিকদের সাহায্য নেওয়ার জন্য পুলিশ ভিন্ন আঙ্গিকে কাজ করা শুরু করেছে। ‘নাগরিক কমিটি’ বা ‘সিটিজেন ফোরাম’ নামে একটি পদ্ধতি নিয়ে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। এর মাধ্যমে নাগরিকদের নতুন করে পুলিশিং ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সিটিজেন ফোরাম নিয়ে কাজ চলছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। সিটিজেন ফোরামের মাধ্যমে কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।

dhakapost
গত ১৫ বছরে পুলিশ বড় ধরনের অপরাধ করেছে, আমরা লজ্জিত : পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম ।
অন্যদিকে, কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার কাজ করা হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটেছে। যেমন- এর সঙ্গে সম্পৃক্তরা মিথ্যা মামলার হুমকি দিয়ে অনেকের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করতেন। এ ছাড়া ঘনিষ্ঠ অপরাধীদের বাঁচাতে তারা নানা রকম মিথ্যা তথ্য দিতেন পুলিশকে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা এখন পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কারণ, স্বেচ্ছাচারিতা ও পক্ষপাতমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন অনেক কমিউনিটিপ্রধান। বিশেষ করে দলীয় পরিচয়ে যারা এখানে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ কারণে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা নতুন করে আর সচল করা হয়নি।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ‘সিটিজেন ফোরাম’ গঠন নিয়ে কাজ চলছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। সিটিজেন ফোরামের মাধ্যমে কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর
যা বলছেন মাঠ পর্যায়ের পুলিশ
এ বিষয়ে ডিএমপির বিভিন্ন থানার অফিসার ইনচার্জদের (ওসি) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অপরাধ দমনে স্থানীয়দের সহায়তার প্রয়োজন আছে। কারণ, পুলিশের একার পক্ষে প্রতিটি এলাকার গিয়ে অপরাধীদের চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। তবে, এখন একটু সমস্যা হচ্ছে। বিগত কমিটিগুলোর সদস্যরা আওয়ামী লীগের লোকজন ছিলেন। তাদের অনেকে পালিয়ে গেছেন, আবার অনেকে বিভিন্ন অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ফলে নতুন করে লোকজন নিয়ে এ কমিটি আর করা হয়নি। এটি আসলেই বড় ধরনের সমস্যা। কারণ, এসব কমিটি করতে হলে আবারও রাজনৈতিক দলের লোকজনকে নিয়ে আসতে হবে। তারা আসলে ফের নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠবে। তবে, যেভাবেই হোক পুলিশিং ব্যবস্থার সঙ্গে নাগরিকদের যুক্ত করতে হবে। তা না হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির এক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, আগের কমিটিগুলোর বিরুদ্ধে অনেক অনেক অভিযোগ রয়েছে। তাই এসব কমিটি এখন আর সক্রিয় করা সম্ভব নয়। তবে, আমরা স্থানীয় সুশীল সমাজকে সম্পৃক্ত করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশের সঙ্গে কমিউনিটির একটি সেতুবন্ধন তৈরি হবে।

dhakapost

ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি থানার ওসিকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন দ্রুত নাগরিক কমিটি বা সিটিজেন ফোরামের কার্যক্রম চালু করেন। থানাগুলো এ কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। তারা দল-মত নির্বিশেষে নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করছেন। স্থানীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, খেলোয়াড়, চিকিৎসক, শিক্ষক ও ধর্মীয় নেতাদের কমিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।

কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা এখন পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কারণ, স্বেচ্ছাচারিতা ও পক্ষপাতমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন অনেক কমিউনিটিপ্রধান। বিশেষ করে দলীয় পরিচয়ে যারা এখানে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ কারণে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা নতুন করে আর সচল করা হয়নি ডিএমপির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)
থানা পুলিশের প্রত্যাশা, জনগণ আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করলে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে।

যেভাবে শুরু কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার
পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা শুরু হয় ১৯৯৪ সালে থেকে। ওই সময়ে তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কে এম‍ শহীদুল হক, যিনি পরবর্তীতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হন; মূলত তিনিই এ ব্যবস্থা চালু করেন। ১৯৯৪ সালে ময়মনসিংহে হঠাৎ করে বেড়ে যায় চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। ওই পরিস্থিতিতে তৎকালীন এসপি আহমাদুল হক গঠন করেন ‘টাউন ডিফেন্স পার্টি’। এটি মূলত কমিউনিটি পুলিশিংয়ের একটি অংশ। ঠিক সে সময়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কে এম শহীদুল হক কমিউনিটি পুলিশিং নিয়ে কাজ শুরু করেন, যা পরবর্তীতে ডিএমপিসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি: সমন্বয়ক নাহিদের বিরুদ্ধে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫, ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ
১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি: সমন্বয়ক নাহিদের বিরুদ্ধে মামলা

ফেনীর সিভিল সার্জন অফিসে চাকরির জন্য ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির একটি অডিও ফাঁস হওয়ায় সমন্বয়ক নাহিদ ও চাকরিপ্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

শুক্রবার (২০ জুন) রাতে জেলার পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার ইফতেখার হাসান ভূঁইয়া বাদী হয়ে পরশুরাম মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল হাকিম মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। যদিও অভিযুক্ত নাহিদ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দাবি করছেন, অডিওটি তার নয়, এটি এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) দিয়ে তৈরি।

মামলার আসামিরা হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ রাব্বি (২৮)। তিনি পরশুরাম পৌর এলাকার কোলাপাড়া গ্রামের নুরুন্নবীর ছেলে। মামলার অপর আসামি আব্দুল কাদের (৩০) অনন্তপুর গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ডা. মো. ইফতেখার হাসান ভূঁঞা হাসপাতালে অবস্থানকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি অডিও পেয়েছেন। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলা সমন্বয়ক নাহিদ রাব্বি ফেনীর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ‘অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক’ পদে অর্থের বিনিময়ে এক চাকরি প্রার্থীকে নিয়োগ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ১০লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। দুই মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের কথোপকথনে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। এ জন্য নাহিদ রাব্বিকে প্রধান আসামি করে দুজনের বিরুদ্ধে তারা এ মামলাটি করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত নাহিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নাহিদ দাবি করেছেন, ফাঁস হওয়া অডিওটি এআই দিয়ে তৈরি। এমন ঘটনার সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত নন।

তবে অডিওটির কথোপকথনের সত্যতা চাকরিপ্রত্যাশী যুবক আবদুল কাদের নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সমন্বয়ক পরিচয়দানকারী নাহিদ আগে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের আগে তিনি আন্দোলন–সংগ্রামে না থেকেও বিভিন্ন সময় নিজেকে সমন্বয়ক দাবি করে এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। মূলত তার মুখোশ উন্মোচন করতে এমন কৌশল তিনি বেছে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেনী জেলার সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমান ছাত্র প্রতিনিধি মুহাইমিন তাজিম বলেন, ফেনী জেলাসহ ৬ উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো কমিটি নেই। কোথাও কোনো সমন্বয়কও নেই। তবে জেলাসহ প্রতিটি উপজেলায় ছাত্র প্রতিনিধি আছে একাধিক জন। পরশুরামের নাহিদ রাব্বি একজন ছাত্র প্রতিনিধি। রাব্বি একজন ভালো মানের সংগঠক, তিনি এমন কাজ করতে পারেন, তা বিশ্বাস হচ্ছে না।

ফেনী জেলার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ রুবাইয়েত বিন করিম বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষায় কোনো অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই। যারা লেনদেন করতে চাইছেন, তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ও মেধার ভিত্তিতে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে।

ঘুষ লেনদেনের অডিও ফাঁস হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ঘটনায় ইতোমধ্যে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থাকে জানানো হয়েছে। তারা এ বিষয়ে কাজ করছেন।

ফেনী সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন পদের ওই নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ১১৫টি পদের বিপরীতে ১২ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। শুক্রবার অনুষ্ঠিত ওই পরীক্ষায় প্রতিটি পদের জন্য গড়ে ১০৮ জন লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন।

শুরু হবে কি বিশ্ব যুদ্ধ ?

ইরানের ৩ পরমাণু স্থাপনায় মার্কিন হামলা, উত্তেজনা তুঙ্গে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫, ১১:২০ পূর্বাহ্ণ
ইরানের ৩ পরমাণু স্থাপনায় মার্কিন হামলা, উত্তেজনা তুঙ্গে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ভেতরে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমাবর্ষণ করেছে। এর পরপরই ইরানি কর্তৃপক্ষ একাধিক বিবৃতি ও পদক্ষেপের মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

আঘাতপ্রাপ্ত স্থাপনাগুলো হলো- ফোরদো, নাতান্জ ও ইসফাহান।

এক বিবৃতিতে ইরানের পারমাণবিক সংস্থা (AEOI) বলেছে, ‘আজ (শনিবার) ভোরে ফোরদো, নাতান্জ ও ইসফাহানের স্থাপনাগুলোতে শত্রুর বর্বরোচিত হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও বিশেষভাবে পারমাণবিক অস্ত্র না ছড়ানোর চুক্তি (NPT)-এর সরাসরি লঙ্ঘন।’

তারা আরও দাবি করেছে, ‘এই আক্রমণ আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর নিষ্ক্রিয়তা ও অংশগ্রহণের ছায়ায় সংঘটিত হয়েছে, যা নিন্দনীয়।’

বিবৃতিতে বলা হয়, এই স্থাপনাগুলো আইএইএ-র পর্যবেক্ষণাধীন ছিল এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেই এ হামলার দায় স্বীকার করেছেন—যা আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন।

সংস্থাটি জাতিসংঘ ও বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ‘বিশ্ব সম্প্রদায় যেন এই ‘আদিম যুগের’ আইনে ফিরে যাওয়াকে প্রতিহত করে এবং ইরানের ন্যায্য অধিকার সমর্থন করে।’

ইরানের পারমাণবিক সংস্থা আরও জানায়, ‘শত্রুর ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও দেশের হাজার হাজার বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞের প্রচেষ্টায় জাতীয় উন্নয়নের এই পথ বন্ধ হবে না। ইরান তার আইনগত অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’

এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরআইবি (IRIB) জানিয়েছে, হামলায় ফোরদো স্থাপনাস্থলের প্রবেশদ্বার ও বহির্গমন গেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গণমাধ্যমটি আরও জানায়, ইরানের কাশান ও ইসফাহানে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, যেখানে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর চারপাশে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছিল।

এদিকে ক্বোম প্রদেশের মুখপাত্র মর্তেজা হেইদারি বলেন, ‘শত্রুপক্ষ ফোরদোর অংশবিশেষে সফলভাবে আঘাত হেনেছে।’

তবে মার্কিন হামলার আগেই পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আগেই খালি করা হয় জানিয়ে আইআরআইবি-এর রাজনৈতিক উপপরিচালক বলেন, ‘তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা হামলার অনেক আগেই খালি করা হয়েছিল।’

এদিকে এ হামলার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরানের অভ্যন্তরে পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক পদক্ষেপ নিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে মধ্যপ্রাচ্যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের সম্ভাবনা তীব্রতর হলো এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়তে পারে।

সূত্র: মেহর নিউজ

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংসের প্রতিশ্রুতি রেখেছি : নেতানিয়াহু

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫, ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংসের প্রতিশ্রুতি রেখেছি : নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার সময় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা হবে বলে তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেই প্রতিশ্রুতি তিনি রেখেছেন।

ইরানের তিনটি পরমাণু কেন্দ্র লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর তিনি মন্তব্য করেন। এছাড়া ইরানে হামলা চালানোর জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন নেতানিয়াহু।

রোববার (২২ জুন) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার পর ইসরায়েলি জনগণের উদ্দেশে হিব্রু ভাষায় এক ভিডিওবার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। সেখানে তিনি জানান, এই মার্কিন সামরিক অভিযান সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে চালানো হয়েছে।

তিনি বলেন, গত ১৩ জুন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী যে অভিযান শুরু করেছিল, তা যুক্তরাষ্ট্র এখন সম্পূর্ণ করে ফেলেছে।

নেতানিয়াহু বলেন, “অভিযানের শুরুতেই আমি আপনাদের বলেছিলাম— ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস হবে, যেভাবেই হোক। আমি সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছি।”

তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে ফোন করেন এবং অভিনন্দন জানান। নেতানিয়াহু বলেন, “ওই ফোনালাপ অত্যন্ত উষ্ণ ও আবেগপূর্ণ ছিল। ট্রাম্প আমাকে, আমাদের সেনাবাহিনীকে এবং পুরো জাতিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আমিও তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।”

নেতানিয়াহু আরও বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আজকের বিশ্বে মুক্তচিন্তার নেতৃস্থানীয় নেতা। তিনি ইসরায়েলের এক অসাধারণ বন্ধু, এমন বন্ধু আর কেউ নেই।”

ইরানের বিরুদ্ধে এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও ইসরায়েলকে সহযোগিতা করার জন্য একাধিকবার ট্রাম্পকে ধন্যবাদও জানান নেতানিয়াহু।