খুঁজুন
রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫, ৮ আষাঢ়, ১৪৩২

ফিরে দেখা ২০২৪

অভ্যুত্থানে অগ্নিগর্ভ ছিল ময়মনসিংহ, মণ্ডা-পায়েসের জিআই স্বীকৃতি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮:০৬ অপরাহ্ণ
অভ্যুত্থানে অগ্নিগর্ভ ছিল ময়মনসিংহ, মণ্ডা-পায়েসের জিআই স্বীকৃতি

কালের আবর্তে বিদায় নিয়েছে ঘটনাবহুল আরও একটি বছর। দুয়ারে উঁকি দিচ্ছে নতুন বছর। আওয়ামী লীগের বিতর্কিত ডামি নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ২০২৪ শুরু হলেও শেষ হয়েছে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের মধ্যে দিয়ে। ময়মনসিংহ বিভাগে অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী হিসেবে বিদায় নেওয়া বছরটিতে ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থান রয়েছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই বিভাগের পতিত সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিদের একসঙ্গে ‘পলায়ন’ এর বিষয়টিও ছিল নজিরবিহীন। 

বিজ্ঞাপন

ছাত্র-জনতার লাশের সারি আর দীর্ঘ না করতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ আর নন্দিত ভাবমূর্তির প্রশংসা কুড়িয়েছে তার নিজ জেলা শেরপুরেও। তার বলিষ্ঠ পদক্ষেপে সেনাবাহিনীর সহায়তায় সারাদেশের মতো ময়মনসিংহ রেঞ্জের ৩৬টি থানাতে পূর্ণোদ্যমে কাজে ফিরেছে পুলিশ। জনরোষ থেকে সচল হয়ে ওঠেছে থানাগুলোর নানাবিধ কার্যক্রম। বেশ কয়েকবার সেনাপ্রধান স্বচক্ষে শেরপুর ও গৌরীপুরের কার্যক্রম পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতনদের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বক্ষণিক তৎপরতায় সব শঙ্কা কাটিয়ে নির্বিঘ্নে ১ হাজার ৭৬৫টি পূজা মণ্ডপে উৎসবের আমেজে নির্দ্বিধায় দুর্গোৎসব পালন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সাফল্য-ব্যর্থতার বছরটিতে ময়মনসিংহ বিভাগের সীমান্তবর্তী তিন জেলার মানুষকে সামলাতে হয়েছে আকস্মিক বন্যার ধকল। বিদায়ী বছরটিতেই জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে মুক্তাগাছার মণ্ডা ও শেরপুরের ‘ছানার পায়েস’। মাদক বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ৫ নভেম্বর ২৮ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) কর্তৃপক্ষের বহিষ্কারের বিষয়টিও ছিল চর্চিত। পরবর্তী সময়ে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তি করে মমেক ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ৮ শিক্ষার্থী ও ইর্ন্টান চিকিৎসককে কলেজ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। নিজের সহোদর চাচার হাতে ওমর ফারুক সৌরভ (২৪) নামে এক যুবকের লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড কাঁদিয়েছে সবাইকে।

বিজ্ঞাপন

সাফ ফুটবলে বিজয়-বৈজয়ন্তী উড়ানো বাংলার ৬ বাঘিনী দেশের নারী ফুটবলের জাগরণের গ্রাম হিসেবে পরিচিত ধোবাউড়ার কলসিন্দুর গ্রামকে করেছে আলোকোজ্জ্বল। বছরজুড়ে ক্রীড়াঙ্গণে স্থবিরতা থাকলেও শেষ সময়ে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট ও জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করে নিন্দিত লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মির নিজ বিভাগ ময়মনসিংহেও ছিলেন আলোচিত-সমালোচিত।

বিজ্ঞাপন

এসব কারণেই গ্রেগেরিয়ান ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে খসে পড়া বছরটি ময়মনসিংহবাসীর স্মৃতিতে উদ্ভাসিত থাকবে অনন্ত সময়। অতীতের সব দুঃখ-গ্লানি, বেদনা আর হতাশাকে ভুলে বৈষম্য দূরীকরণ আর সাম্য ফিরিয়ে আনার নতুন প্রত্যয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ এই অঞ্চলের বাসিন্দারা।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমালোচিত তাপসী তাবাসসুম

ডামি নির্বাচন, অতঃপর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের বিতর্কিত ডামি ভোটে ময়মনসিংহের ২৪টি সংসদীয় আসনে জয় লাভ করে আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ না করলেও ভোটারবিহীন নির্বাচনে ২৪টি আসনেই জয় পায় আওয়ামী লীগ। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছিল চরমে। যার প্রভাব পড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে। গত ৫ আগস্টের পর থেকেই দলটির রাঘব-বোয়াল সব নেতারা ‘পলাতক’ রয়েছেন। তাদের খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ঢেউ লাগে রাজনৈতিক সচেতন জেলা ময়মনসিংহেও। ২০২৪ সালের ৬ জুলাই ময়মনসিংহে সর্বপ্রথম বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন নগরীর ঐতিহ্যবাহী আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয়  কলেজ থেকে শিক্ষার্থীদের বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিলটি নগরীর টাউন হলে এসে শেষ হয়। ধীরে ধীরে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে শুরু করে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে ১৯ জুলাই নগরীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সশস্ত্র হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও পুলিশ। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন কলেজ শিক্ষার্থী রোদোয়ান হাসান সাগর (১৯)। এদিন ময়মনসিংহসহ সারাদেশে উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে জারি হয় কারফিউ। পরদিন ২০ জুলাই কারফিউ ভঙ্গ করে সারাদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম গৌরীপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নির্বিচারে গুলি চালালে নূরে আলম রাকিব, বিপ্লব হাসান ও জুবায়ের আহমেদ শহীদ হন। এরপর ময়মনসিংহসহ সারাদেশে আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করলে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীসহ ময়মনসিংহের মন্ত্রী ও এমপিরা। ওই সময় স্থানীয় মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।

পালিয়ে যান দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

আওয়ামী লীগ নেতাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে গণঅভ্যুত্থানে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সৌমিত্র শেখর। এ নিয়ে শিক্ষাঙ্গনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. ফজলুল হক এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে।

ফুটবলকন্যা সানজিদা-তহুরা

ক্রীড়াঙ্গণে কলসিন্দুরের নারী ফুটবলারদের কৃতিময় সাফল্য  

আন্তর্জাতিক ফুটবলে ছেলেদের কোনো সাফল্য না থাকলেও আশা জাগিয়েছে নারী ফুটবল। সাফের শিরোপা ধরে রাখার পাশাপাশি মেয়েরা অনুর্ধ্ব-১৬ ও অনুর্ধ্ব-১৯ আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। দেশের নারী ফুটবলে শক্তি ও সম্ভাবনার কথা জানান দেওয়া ফুটবলের আকাশে চাঁদ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার সিনিয়র, শামসুন্নাহার জুনিয়র, তহুরা খাতুন, সানজিদা আক্তার ও শিউলি আজিম ময়মনসিংহের সীমান্তঘেষা শেষ উপজেলা ধোবাউড়ার কলসিন্দুর গ্রামের সন্তান। সাফ শিরোপাতেও তারা রেখেছেন নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের ছাপ। ওই টুর্নামেন্টে তহুরা ভুটানের বিপক্ষে ৩টি, ভারতের বিপক্ষে ২টি ও শামসুনাহার জুনিয়র একটি গোল করে আন্তর্জাতিক মহলে উজ্জ্বল করেন বাংলাদেশের মুখ। বছরের শেষ প্রান্তে এসে জেগে ওঠে ময়মনসিংহের ক্রীড়াঙ্গণ। জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এবং আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের সফল আয়োজন অনন্য মর্যাদায় মহিয়ান করেছে ময়মনসিংহকে।

যুবদল নেতার মৃত্যুতে তোলপাড়, বহিষ্কার অ্যাকশনে বিএনপি

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ময়মনসিংহের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ ঘটে। মাঠ থেকে আওয়ামী লীগ লাপাত্তা থাকলেও পুরোদমে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় রয়েছে বিএনপি, জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। এরই মধ্যে ঘটে যায় একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ নগরীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলামের (৪০) মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গণে তোলপাড় শুরু হয়। এদিকে, দলে শৃঙ্খলায় আনতে হার্ডলাইন কৌশল গ্রহণ করে বিএনপি। বহিষ্কারের মুখে পড়েন দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ও ভালুকা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফখরউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুসহ প্রায় ডজন খানেক নেতা। এ ঘটনায় আতঙ্কে ছিলেন দলটির বেশিরভাগ শীর্ষ সারির নেতারাও। দলটির নির্বাহী কমিটিতে জায়গা করে নেন আন্দোলন-সংগ্রামের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ। তিনি দলটির নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে অভিষিক্ত হন।

জিআই পণ্য হিসাবে মুক্তাগাছা মণ্ডা ও ছানার পায়েস এর স্বীকৃতি  

স্বাদে-ঘ্রাণে অতুলনীয় মুক্তাগাছার মণ্ডার কদর দেশজুড়েই। অনন্য এই মিষ্টিকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। একইভাবে শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী ‘ছানার পায়েস’ পেয়েছে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি। তারা মণ্ডা ও ছানার পায়েসের স্বাদসহ গুণগত মান বজায় রাখতে নিজেদের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছেন।

জামালপুর কারাগারে বিদ্রোহে নিহত হন ৬ বন্দি

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন কারাগারে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। ময়মনসিংহ বিভাগের মধ্যে একমাত্র জামালপুর কারাগারে বিদ্রোহে নিহত হন ৬ বন্দি। জেলারসহ আহত হন ১৯ জন। প্রায় ১০ ঘণ্টা গোলাগুলির পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় স্থানীয় প্রশাসন। এরপর কারা অধিদপ্তরের নির্দেশনায় শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করে জামালপুর কারাগার। বিদায়ী বছরটিতে আলোচিত এই ঘটনা ছাড়াও বিএনপির রাজনীতিতে অভ্যন্তরীণ বিরোধ দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

এরই জের ধরে গত ৩১ আগস্ট শহরের দেওয়ানপাড়া মোড়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হন ৩০ নেতাকর্মী। এছাড়া মামলা থেকে নাম কাটার জন্য স্থানীয় বকশিগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব মাহবুবুর রহমান লাভলুকে ফোন করেন যুবমহিলা লীগের সভাপতি জহুরা বেগম। এ ঘটনার একটি অডিও কল রেকর্ড ফাঁস হলে যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান লাভলুকে কেন্দ্র থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে মারা যাওয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতার নামে মামলা, র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়ে হাসপাতালে বশেফমুবিপ্রবির শিক্ষার্থী, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ক্যাম্পাস ছাড়েন দুই শিক্ষক। এছাড়া গত ১১ সেপ্টেম্বর জামালপুরের মেলান্দহে নিজ ঘর থেকে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় শাহিনা বেগম নামে এক সেনা সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নেত্রকোণায় পুলিশের অস্ত্র ও গুলি লুট; টংক আন্দোলনের নেতার মৃত্যু

গত ৪ আগস্ট সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন চলাকালে নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার শ্যামগঞ্জ বাজারে পুলিশের গাড়িতে হামলা করে ৭টি অস্ত্র ও ৪২০ রাউন্ড গুলি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় উত্তেজিত আন্দোলনকারীরা ৬ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে আহত করে। এতে ভাঙচুর হয় পুলিশের গাড়ি। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ৭ আগস্ট শিক্ষার্থীরা রং তুলি দিয়ে শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম মুছে দিয়ে ‘নেত্রকোণা বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি ব্যানার বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের সামনে ঝুলিয়ে দেয়। এরপর শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এর আগে এই বছরের গত ২৩ মার্চ উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেরাতলী গ্রামের বাড়িতে মারা যান ঐতিহাসিক টংক আন্দোলনের সংগ্রামী নারী কুমুদিনী হাজং। ৯২ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মারা যান। কমিউনিস্ট নেতা কমরেড মনি সিংহের নেতৃত্বে টংক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হয় দুর্গাপুরের হাজং সম্প্রদাযয়ের কুমুদিনী হাজংয়ের স্বামী লংকেশ্বর হাজং। তৎকালীন পুলিশ ১৯৪৬ সালে কুমুদিনী হাজংকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে রাশিমনি হাজংয়ের নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। সেখানে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান রাশিমনি হাজং ও সুরেন্দ্র হাজং। এ সময় পুলিশের দুইজন সদস্য নিহত হন ওই ঘটনায়। যা ছিল দেশের তৎকালীন সময়ে বিশ্বব্যাপী আলোচিত একটি ঘটনা।

৪ মাস পর শেরপুর কারাগারের কার্যক্রম শুরু

বিগত ৪ আগস্ট শেরপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকারি গাড়ির ধাক্কায় দুই কলেজ ছাত্রের মৃত্যুতে শেরপুর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই দিনই শেরপুর কারাগারেও ঘটে হামলার ঘটনা। এতে অস্ত্র লুট, বন্দি পালিয়ে যাওয়াসহ নানা অঘটনের সূত্রপাত হয়। প্রায় ৪ মাস কারাগারের কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর গত ১২ ডিসেম্বর ফের শুরু হয়েছে  শেরপুর জেলা কারাগারের কার্যক্রম।

সেই সঙ্গে বিগত ৩৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে আকস্মিক বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় জেলার ৫টি উপজেলার দুই লাখেরও বেশি মানুষ। এতে ৪৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। ভেঙে পড়ে প্রায় ৮ হাজার ঘড়বাড়ি। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে শেরপুর সদরের দোজা পীরের দরবারে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ছিল বহুল আলোচিত।

এই প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছেন নেত্রকোণা জেলা প্রতিনিধি চয়ন দেবনাথ মুন্না, জামালপুরের জেলা প্রতিনিধি মুত্তাছিম বিল্লাহ এবং শেরপুরের জেলা প্রতিনিধি মো. নাইমুর রহমান।

গাজীপুরে বিপুল পরিমান বিদেশি মাদকসহ ২ যুবক আটক

গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫, ১০:৫৯ অপরাহ্ণ
গাজীপুরে বিপুল পরিমান বিদেশি মাদকসহ ২ যুবক আটক

২১ জুন ২০২৫, শুক্রবার বেলা ১১:৩০ এর দিকে গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি চৌকস দল গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার জৈনা ফুটওভার ব্রিজের নিচে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মাদকদ্রব্যসহ দুই যুবককে আটক করেছে।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ জানতে পারে, ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের পাকা রাস্তা উপরে মাদক পাচারের উদ্দেশ্যে একদল মাদক কারবারি অবস্থান করছে। খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঢাকাগামী একটি প্রাইভেটকার (মডেল-এন-২১-০০৭৬) থামিয়ে তল্লাশি করে। এ সময় গাড়ির ভেতর থেকে ৪টি প্লাস্টিকের বক্সে রাখা ১৬০ বোতল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভারতীয় বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়।

আটককৃতরা হলো: ১. ইমন হোসেন (২৪), পিতা-মৃত আমির হামজা, গ্রাম-বোয়ালকান্দি, থানা-চৌহালী, জেলা-সিরাজগঞ্জ। ২. আরিফ হোসেন বাপ্পী ওরফে বাবু (২৪), পিতা-মৃত শাহাবুদ্দিন সাং- রৌহা জামতলা বাজার, ডাকঘর কুমলী, থানা- নেত্রকোনা সদর, জেলা – নেত্রকোনা ।

তাদের সঙ্গে থাকা অপর সহযোগী পালিয়ে যায়।ডিবি পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে আটক কৃতরা স্বীকার করেছে তারা শ্রীপুর থানাধীন মাওনা এলাকার একজন মাদক ব্যবসায়ী তাজুল ইসলামের নিকট মাদক বিক্রির উদ্দেশ্যে এসেছিল।

আটক কৃতদের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় মামলা নং-৪৫, তারিখ-২১/০৬/২০২৫, ধারা-৩৬(১) টেবিল ২৪(খ)/৪১ অনুযায়ী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে। পলাতক আসামি তাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।

আসামিদের আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

শিক্ষা থেকে দূরে থাকায় বাঙালি মুসলমান সমাজ শত বছর পিছিয়ে গেছে: ফজলুল হক

মহানগর প্রতিনিধি, ঢাকা
প্রকাশিত: শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫, ১০:৫৬ অপরাহ্ণ
শিক্ষা থেকে দূরে থাকায় বাঙালি মুসলমান সমাজ শত বছর পিছিয়ে গেছে: ফজলুল হক

বাংলা একাডেমি’র সভাপতি বিশিষ্ট চিন্তক ও লেখক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেছেন, “ব্রিটিশরা আসার পর স্কুল-কলেজের শিক্ষা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকায় বাঙালি মুসলমান সমাজ ১০০ বছর পিছিয়ে যায়‌। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বই পড়া তথা শিক্ষার বিকল্প নেই।’

শুক্রবার বিকেলে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বুক অলিম্পিয়াডের জাতীয় পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বুক অলিম্পিয়াড বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির সভাপতি লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী মাহফুজ ফারুকের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বুদ্ধিজীবী গবেষক ও লেখক ড. কাজল রশীদ শাহীন, বুদ্ধিজীবী লেখক ও সংগঠক নাহিদ হাসান, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, ‘এবং বই’য়ের সম্পাদক ও লেখক ফয়সাল আহমেদ এবং ‘স্বরে অ’ প্রকাশনীর প্রকাশক আবু বকর সিদ্দিক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বুক অলিম্পিয়াড বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সেঁজুতি হাসান।

বুক অলিম্পিয়াডের মধ্যমে দেশ সেরা পাঠক হিসেবে জাতীয় পর্বে প্রথম স্থান অধিকার করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাবিবা আক্তার মিম, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিতা বিশ্বাস এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানিয়া আক্তার।

বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার হিসেবে সম্মাননা ক্রেস্ট, সনদপত্র এবং বই তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে আগত অতিথিদের বই দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। বিষয় ভিত্তিক পরীক্ষা, লেখক কথন, উপস্থিত কুইজ, অনুভূতি প্রকাশসহ বই বিষয়ক বিভিন্ন সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এসব পর্বে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ বিষয়ক লেখক ও গবেষক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার এবং কবি ও কথাসাহিত্যিক মনোয়ার লিটন।

অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্বে উপস্থাপনা করেন বুক অলিম্পিয়াডের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কে এইচ খান রোহান, সদস্য সৌরভ মন্ডল এবং সাদিয়া আফরিন।

সারাদেশের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সহস্রাধিক শিক্ষার্থীরা বাছাই পর্বের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। বাছাই পর্বে উত্তীর্ণ শতাধিক বিজয়ীকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় পর্ব।

অলিম্পিয়াডে প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত বই আল মাহমুদের ছড়া-কিশোরকবিতাগ্রন্থ ‘পাখির কাছে ফুলের কাছে’, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘আম আঁটির ভেঁপু’, জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ ‘বনলতা সেন’, হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘ময়ূরাক্ষী’, মাহফুজ ফারুকের লেখা ‘বুকপিডিয়া’ এবং ইমরান মাহফুজ সম্পাদিত লিটলম্যাগ ‘কালের ধ্বনি’র জুলাই অভ্যুত্থানে আহত কবি ও লেখক সংখ্যা পাঠ শেষে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।

বাংলাদেশের জন্য ৫০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন বিশ্বব্যাংকের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫, ১০:৫০ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশের জন্য ৫০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন বিশ্বব্যাংকের

বাংলাদেশের জন্য আরও ৫০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তার অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রতি ডলার সমান ১২৩ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ছয় হাজার ১৫০ কোটি টাকা।

ওই টাকা বাংলাদেশের আর্থিক স্বচ্ছতা, সরকারি খাতের জবাবদিহিতা এবং আর্থিকখাতের স্থিতিশীলতা বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হবে।

শনিবার (২১ জুন) বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস এ তথ্য জানায়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি টেকসইভাবে বৃদ্ধির জন্য সরকারি অর্থায়ন কীভাবে পরিচালিত হয় তার উন্নতি গুরুত্বপূর্ণ। সরকার তার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও উন্মুক্ত এবং জবাবদিহিতামূলক করার জন্য উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ নিচ্ছে, যাতে তারা জনগণকে আরও ভালো সেবা দিতে পারে। এই অর্থায়ন সরকারের নীতিমালা এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামোকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে যাতে একটি শক্তিশালী, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি গড়ে তোলা যায়। যা সবার উপকার করে। গত সপ্তাহে অনুমোদিত আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে, আমরা এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়নে সরকারকে সহায়তা করছি।

বিশ্বব্যাংক জানায়, বর্তমানে, মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত সবচেয়ে কম, যা জনগণের কাছে মানসম্পন্ন পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত করছে। এই কর্মসূচি অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহের উন্নতির লক্ষ্যে সংস্কারগুলোকে সমর্থন করবে। এই সংস্কারগুলো আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম অনুশীলনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে কর প্রশাসন এবং নীতি নির্ধারণকে আরও স্বচ্ছ এবং দক্ষ করে তুলবে।

এই অর্থায়ন আন্তর্জাতিক মানের সাথে আর্থিক প্রতিবেদনের সমন্বয় সাধন এবং স্বচ্ছতা বাড়ানোর মাধ্যমে কর্পোরেট সুশাসন এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কাঠামোকেও শক্তিশালী করবে। এটি ব্যাংকিংখাতে দুর্বলতা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংককে সম্পূর্ণ সমাধান ক্ষমতা প্রদান করে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা উন্নত করতে সহায়তা করবে।

সংস্কারের তৃতীয় ধাপটি সরকারি খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং দক্ষতা উন্নত করবে। ২০২৭ সালের মধ্যে, সমস্ত সরকারি প্রকল্প মূল্যায়ন নথি জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করতে হবে। প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতির ঝুঁকি কমাতে সরকারি ক্রয় ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক সরকারি ক্রয় (ই-জিপি) ব্যবহার, সুবিধাভোগীর মালিকানা প্রকাশ এবং মূল্যসীমা অপসারণ করতে হবে। সরকারিখাতে আর্থিক জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা উন্নত করার জন্য, নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক কার্যালয়ের নিরীক্ষা ক্ষমতাও জোরদার করা হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর স্বাধীন তথ্য স্বচ্ছতা উন্নত করবে, এর ফলে দেশের মানুষের জন্য উন্নত পরিষেবা সরবরাহ সম্ভব হবে।

এ অর্থায়নের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশকে মোট নতুন প্রতিশ্রুত তিন দশমিক শূন্য সাত বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ালো। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশকে ৪৬ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান, সুদমুক্ত এবং ঋণ অনুমোদন করেছে।