নিজেই মামলা করে নিজেই আইন হাতে তুলে নিলেন কাশিয়াডাঙ্গা থানার হাসনা হেনা : থানায় জিডি « বিডিনিউজ৯৯৯ডটকম

নিজেই মামলা করে নিজেই আইন হাতে তুলে নিলেন কাশিয়াডাঙ্গা থানার হাসনা হেনা : থানায় জিডি

কে এম মাইনুল ইসলাম
আপডেটঃ ২৪ মে, ২০২২ | ৩:৩২
কে এম মাইনুল ইসলাম
আপডেটঃ ২৪ মে, ২০২২ | ৩:৩২
Link Copied!

উজ্জ্বল দাশ (স্টাফ রিপোর্টার)ঃ ক্ষমতার অপব্যবহার করে যারা নিরীহ মানুষদের জায়গা-জমি নামমাত্র মূল্যে বা বিনামূল্যে দখল করে, তাদের ভূমিদস্যু বলা হয়। তারই এক জলন্ত দৃষ্টান্ত রাজশাহী কাশিয়াডাঙ্গা থানার হাসনা হেনা ও তার ছেলে রায়হান। এ যেন মা ছেলের এক সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ফাঁদ। এমনই একটি অভিযোগ উঠে এসেছে রাজশাহী কাশিয়াডাঙ্গা থানার কাশিয়াডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়পাড়ার হাসনা হেনা ও তার ছেলে রায়হান এর বিরুদ্ধে।

মা ছেলে মিলে গরীব অসহায় মানুষের জায়গা জমি জবর দখলের জন্য মিথ্যা ও হয়রানি মূলক মামলা দায়ের সহ অসহায় মানুষদের প্রতিনিয়ত জান মালের হুমকি প্রদর্শন পূর্বক জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছেন। ভূমিদস্যু হাসনা হেনা তার ছেলে রায়হান এর পরামর্শক্রমে এবং সহযোগীতায় মানুষের জমি জবর দখল করার জন্য নিজেই কোর্টে মামলা দায়ের করেন, আবার নিজেই কোর্টের আদেশ অমান্য করে জোর পূর্বক মানুষের জমি দখল করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাশিয়াডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়পাড়ার মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে মোঃ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মোসাঃ হাসনা হেনা রাজশাহী বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ১৩/০৪/২০২২ ইং তারিখে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৩৭০ পি/২২(কাশিয়াভাঙ্গা) ধারাঃ ফৌঃ কাঃ বিঃ আইনের ১৪৫, প্রসেস নং-৫৯২(২)।

বিজ্ঞাপন

পরবর্তীতে উক্ত বিবাদমান জমি সংক্রান্তে কাশিয়াডাঙ্গা থানার সতর্কীকরণ নোটিশ নং-০৯, তারিখ-১৪/০৪/২০২২ খ্রিঃ মোতাবেক উভয় পক্ষকে সতর্কীকরণ নোটিশ প্রদান করা হয়। নোটিশে বলা হয় “এতদ্বারা বিজ্ঞ আদালতের আদেশে আদিষ্ট হইয়া আপনাদের উভয় পক্ষকে সুত্রোক্ত মামলা সংক্রান্তে সর্তক করা যাইতেছে যে, বিবাদমান তফসিল ভুক্ত সম্পত্তি সংক্রান্তে ভোগ দখল ও মালিকানা লইয়া দরখাস্তকারী প্রতিপক্ষের বিরদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে সূত্রে বর্ণিত মামলা দায়ের করিয়াছেন। উক্ত মামলার প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখার জন্য অফিসার ইনচার্জ, কাশিয়াডাঙ্গা থানাকে নির্দেশ প্রদান করিয়াছেন।

বিজ্ঞ আদালতের আদেশ মোতাবেক, উভয় পক্ষকে নোটিশ প্রদান করা যাইতেছে যে, বিজ্ঞ আদালতে মামলা নিম্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিবাদমান সম্পত্তিতে আইন-শৃংখলার অবনতি ঘটাইবেন না এবং শান্তি শৃখলা বজায় রাখিবেন। যদি কোন পক্ষ ‘আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটান তাহলে তাহাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হইবে”।

কিন্তু সরেজমিনে আরো দেখা যায়, মোসাঃ হাসনা হেনা মানছেন না কোর্টের আদেশ, আবার না-মানছেন থানার সতর্কীকরণ নোটিশ। এ যেন এক মহিলা মাফিয়া ডন। সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ কালীন মোসাঃ হাসনে হেনা গণমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে থেকে এক প্রকার পালিয়ে যান এবং বিবাদমান জমির কাছে গণমাধ্যম কর্মীগণ কোর্ট এবং থানার সতর্কীকরণ নোটিশ অমান্য করে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন তার (বিবাদমান জমির) ছবি তুলতে গেলে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের খারাপ অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ সহ জান মালের হুমকি প্রদান করে বলেন- থানা-কোর্ট সব তার পকেটে থাকে, তাই তিনি যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। থানা-কোর্ট নাকি তার এবং তার ছেলের পকেটে থাকে।

বিজ্ঞাপন

পরবর্তীতে বিবাদমান জমির বিবাদী মোঃ রফিকুল ইসলাম কোর্ট এবং থানার সতর্কীকরণ নোটিশ অমান্য পূর্বক খারাপ অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ সহ জান মালের হুমকি প্রদান করার জন্য গত ২১/০৫/২০২২ ইং তারিখে কাশিয়াডাঙ্গা থানায় বাদী হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। যাহার নং-৮৪৫। বিবাদমান জমির তফসিলঃ জেলা- রাজশাহী, থানা- পবা, হাল-কাশিয়াডাঙ্গা, মৌজা-কাশিয়াডাঙ্গা, জেএল নং-হাল-৫৫ এর মধ্যে, আর এস-৪৯, ৭৮৪, আর এস-৬৬, সাবেক দাগ নং-৪৭৯, হাল-৫৭৫, আমবাগান, জমির পরিমানঃ ০.২০ শতকের কাত ০.০৪১৩ একর।

উক্ত বিবাদমান জমির বিষয়ে হাসনে হেনা কোর্ট এবং থানার সতর্কীকরণ নোটিশ কোনটাই মানছেন না বলে বিবাদমান জমির ঘটনা স্থল থেকে গণমাধ্যম কর্মীগণ গত ১০/০৫/২০২২ইং তারিখে কাশিয়াডাঙ্গা থানার কর্তব্যরত পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এস আই) মুক্তারুল ইসলামকে মুঠফোনে বিষটি জানতে চাইলে তিনি বলেন যে, কোর্ট এবং থানার সতর্কীকরণ নোটিশ না মানায় মোসাঃ হাসনে হেনা অপরাধ করেছেন। অভিযোগ পেলে সুষ্ঠ তদন্তপূর্বক হাসনে হেনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মামলার বিবাদী রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি সামান্য একজন রাজ মিস্ত্রী। কোন রকম ভাবে তিনি তার জীবন যাপন করে যাচ্ছেন। তিনি তার জীবনের শেষ সম্বল দিয়ে সামান্য কিছু জমি কিনেছেন। তার জমির কাগজপত্র সবকিছু ঠিক থাকা সত্ত্বেও হাসনে হেনা, তার ছেলে রায়হান ও নাইম জোর পূর্বক জমি ছিনিয়ে নিতে চাইছেন। বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীগণ সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান জনাব কালাম মহোদয়কে মুঠোফোনে অবগত করিলে তিনি বলেন, তিনি উভয় পক্ষের জমির কাগজপত্র দেখেছেন।

মূলত রফিকুল ইসলাম এর কেনা জমির কোন প্রকার সমস্যা নেই। মোসাঃ হাসনে হেনা এবং নাইম রফিকুল ইসলামকে হয়রানী করার জন্য দলীয় প্রভাব খাঁটিয়ে জমি জবর দখলের অপচেষ্টা করছেন এবং আমি (ইউপি চেয়ারম্যান কালাম) আপোষ মিমাংসার চেষ্টা করিলে তা আর হয় নাই, কারণ হাসনে হেনা এবং নাইম কেউ সঠিক কাগজপত্র প্রদর্শন করতে পারেন নাই। তিনি আরো বলেন, আমার (ইউপি চেয়ারম্যান কালাম) জানামতে রফিকুল ইসলাম একজন সরল প্রকৃতির মানুষ এবং তার (রফিকুল ইসলাম) জমির সকল কাগজপত্র ঠিক ঠাক আছে এবং তিনি মোসাঃ হাসনে হেনা, রায়হান এবং নাইম এর অমানবিক আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।

এই বিবাদমান জমির পাশেই থাকেন গ্রামের একজন বিধবা মহিলা যার নাম লাইলি (৪৫) তিনি সহ গ্রামের অনেকেই গণমাধ্যমকে বলেন, কাশিয়াডাঙ্গা থানার হাসনে হেনা ও তার ছেলে রায়হান ভূমিদস্যু বলে পরিচিত। তারা মা ছেলে মিলে বেছে বেছে গরীব অসহায় মানুষের জমি আত্মসাৎ করার জন্য বিভিন্ন প্রকার হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে বিপদে ফেলেন এবং মানুষকে প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যান। লাইলি আরো বলেন, আমি নিজেও তাদের মা ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠিত হয়ে আর্তমানবতার জীবন যাপন করছি।

ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম বলেন, নাইম ও তার জমি জোর করে দখল করার জন্য গত ১৩/০৪/২০২২ ইং তারিখে মিথ‍্যা মামলা দায়ের করেছেন। যাহার নং- ৩৭৩, প্রসেস নং-৫৯১(২) এবং এই সকল প্রকার মিথ‍্যা মামলায় সহযোগিতা করে যাচ্ছেন রায়হান ও রানা। জমির দাগ নম্বর একই, দাগ নং- ৫৭৫, রানার পিতার নাম- রহিম, গ্ৰাম- চিথুলপুর এবং নাইমের পিতার নাম দুলাল হোসেন এবং গ্ৰাম কাশিয়াডাঙ্গা, তাদের সবার থানাই কাশিয়াডাঙ্গা। এই হাসনে হেনা, রায়হান, নাইম এবং রানা সবাই ভূমিদস্যু বলে মন্তব্য করেছেন রফিকুল ইসলাম। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এর মন্তব্য এরা সবাই দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এই সব অপকর্ম করে যাচ্ছেন।

বিষয়ঃ: