খুঁজুন
রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫, ৮ আষাঢ়, ১৪৩২

সামাজিক ‘নেটওয়ার্ক’ হারিয়েছে পুলিশ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭:১৮ অপরাহ্ণ
সামাজিক ‘নেটওয়ার্ক’ হারিয়েছে পুলিশ

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত পুলিশ ফোর্স কখনও ছিল না। সদস্য সংখ্যা কম থাকার কারণে অপরাধ দমন ও প্রতিরোধে নানা পদ্ধতি ও উপায় হাতে নিতে হয়েছে পুলিশকে। বিশেষ করে এলাকাভিত্তিক অপরাধ যেমন- চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ যে কোনো অপরাধ দমন ও প্রতিরোধে স্থানীয় কমিউনিটির সাহায্য নিত পুলিশ। যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট এলাকার অপরাধী এবং বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে খুব সহজেই খবর পেত পুলিশ প্রশাসন। যা ‘কমিউনিটি পুলিশিং’ ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত।

জানা যায়, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সঙ্গে স্থানীয় সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জড়িত থাকতেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির এলাকাভিত্তিক স্থানীয় নেতাকর্মীরা এখন পলাতক। ফলে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে ‘কমিউনিটি পুলিশিং’ ব্যবস্থা। এখন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অপরাধের বিষয়ে আগাম কোনো খবর আসছে না পুলিশের কাছে। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে নতুন করে কারা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন, সে বিষয়েও কোনো তথ্য পাচ্ছে না পুলিশ। বিষয়টি বুঝতে পেরে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে নানা অপরাধ ঘটাচ্ছেন।

জনবল সংকটের কারণে এলাকাভিত্তিক অপরাধ দমন ও প্রতিরোধে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। দেশের জনসংখ্যার আনুপাতিক হার অনুযায়ী পুলিশের জনবল অনেক কম। দেশে ৮০০ থেকে ৯০০ জনের বিপরীতে রয়েছেন একজন পুলিশ। ইউএন (জাতিসংঘ) স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ৪০০ জন নাগরিকের বিপরীতে একজন পুলিশ থাকার কথা বলা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক পুলিশের ঘাটতি পূরণ এবং অপরাধ দমনে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার বিকল্প নেই

এদিকে, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী সরকারের পতনের পর ডিএমপিতে অনেক রদবদল হয়েছে। থানাগুলোর ওসি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত বদলি করা হয়েছে। বদলি করে যাদের ঢাকায় আনা হয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশের ডিএমপিতে কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ফলে তারা এখনও ঠিক মতো ঢাকার রাস্তাঘাট চেনেন না। এর মধ্যে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়া। ঢাকার নতুন পুলিশ সদস্যরা স্থানীয়দের কাছ থেকে এখন কোনো তথ্য পাচ্ছেন না।
কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা মূলত পুলিশের সামাজিক নেটওয়ার্ক, এটি খবর ও তথ্য নেওয়ার মাধ্যম। এর মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ প্রশাসন।

dhakapost

এ বিষয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে এলাকায় নিয়মিত পুলিশ আসত। বিশেষ করে রাতে টহল দিত। তারা এসে কমিউনিটি পুলিশিংয়ে যারা নিয়োজিত ছিলেন তাদের কাছ থেকে অপরাধ ও অপরাধীদের তথ্য নিতেন। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে চুরি কিংবা ছিনতাইয়ের ঘটনা কম হতো। কিন্তু এখন পুলিশ তেমন আসে না, কারও কাছ থেকে খবরও নেয় না। পুলিশের তৎপরতা না থাকায় এখন চোর ও ছিনতাইকারীরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়।

রাজধানীর মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা কাজল শেখ বলেন, আগে রাত-বিরাতে পুলিশ আসত। এলাকার মুরুব্বিদের সঙ্গে আড্ডা দিত, এলাকার খোঁজখবর নিত। ফলে চোর ও ছিনতাইকারীরা কিছুটা হলেও ভয়ে থাকত। কিন্তু এখন পুলিশ আসে না, এলাকার কারও কাছ থেকে তথ্যও নেয় না। অপরাধীরা এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কেউ কিছু বলার সাহস দেখাচ্ছে না।

যে কারণে দরকার কমিউনিটি পুলিশিং
পুলিশ জানায়, তাদের জনবল সংকটের কারণে এলাকাভিত্তিক অপরাধ দমন ও প্রতিরোধে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। দেশের জনসংখ্যার আনুপাতিক হার অনুযায়ী পুলিশের জনবল অনেক কম। দেশে ৮০০ থেকে ৯০০ জনের বিপরীতে রয়েছেন একজন পুলিশ। ইউএন (জাতিসংঘ) স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ৪০০ জন নাগরিকের বিপরীতে একজন পুলিশ থাকার কথা বলা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক পুলিশের ঘাটতি পূরণ এবং অপরাধ দমনে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার বিকল্প নেই।

আগে রাত-বিরাতে পুলিশ আসত। এলাকার মুরুব্বিদের সঙ্গে আড্ডা দিত, এলাকার খোঁজখবর নিত। ফলে চোর ও ছিনতাইকারীরা কিছুটা হলেও ভয়ে থাকত। কিন্তু এখন পুলিশ আসে না, এলাকার কারও কাছ থেকে তথ্যও নেয় না। অপরাধীরা এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কেউ কিছু বলার সাহস দেখাচ্ছে না রাজধানীর মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা কাজল শেখ
তবে পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা ব্যাহত হলেও অপরাধ দমনে নাগরিকদের সাহায্য নেওয়ার জন্য পুলিশ ভিন্ন আঙ্গিকে কাজ করা শুরু করেছে। ‘নাগরিক কমিটি’ বা ‘সিটিজেন ফোরাম’ নামে একটি পদ্ধতি নিয়ে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। এর মাধ্যমে নাগরিকদের নতুন করে পুলিশিং ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সিটিজেন ফোরাম নিয়ে কাজ চলছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। সিটিজেন ফোরামের মাধ্যমে কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।

dhakapost
গত ১৫ বছরে পুলিশ বড় ধরনের অপরাধ করেছে, আমরা লজ্জিত : পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম ।
অন্যদিকে, কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার কাজ করা হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটেছে। যেমন- এর সঙ্গে সম্পৃক্তরা মিথ্যা মামলার হুমকি দিয়ে অনেকের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করতেন। এ ছাড়া ঘনিষ্ঠ অপরাধীদের বাঁচাতে তারা নানা রকম মিথ্যা তথ্য দিতেন পুলিশকে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা এখন পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কারণ, স্বেচ্ছাচারিতা ও পক্ষপাতমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন অনেক কমিউনিটিপ্রধান। বিশেষ করে দলীয় পরিচয়ে যারা এখানে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ কারণে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা নতুন করে আর সচল করা হয়নি।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ‘সিটিজেন ফোরাম’ গঠন নিয়ে কাজ চলছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। সিটিজেন ফোরামের মাধ্যমে কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর
যা বলছেন মাঠ পর্যায়ের পুলিশ
এ বিষয়ে ডিএমপির বিভিন্ন থানার অফিসার ইনচার্জদের (ওসি) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অপরাধ দমনে স্থানীয়দের সহায়তার প্রয়োজন আছে। কারণ, পুলিশের একার পক্ষে প্রতিটি এলাকার গিয়ে অপরাধীদের চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। তবে, এখন একটু সমস্যা হচ্ছে। বিগত কমিটিগুলোর সদস্যরা আওয়ামী লীগের লোকজন ছিলেন। তাদের অনেকে পালিয়ে গেছেন, আবার অনেকে বিভিন্ন অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ফলে নতুন করে লোকজন নিয়ে এ কমিটি আর করা হয়নি। এটি আসলেই বড় ধরনের সমস্যা। কারণ, এসব কমিটি করতে হলে আবারও রাজনৈতিক দলের লোকজনকে নিয়ে আসতে হবে। তারা আসলে ফের নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠবে। তবে, যেভাবেই হোক পুলিশিং ব্যবস্থার সঙ্গে নাগরিকদের যুক্ত করতে হবে। তা না হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির এক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, আগের কমিটিগুলোর বিরুদ্ধে অনেক অনেক অভিযোগ রয়েছে। তাই এসব কমিটি এখন আর সক্রিয় করা সম্ভব নয়। তবে, আমরা স্থানীয় সুশীল সমাজকে সম্পৃক্ত করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশের সঙ্গে কমিউনিটির একটি সেতুবন্ধন তৈরি হবে।

dhakapost

ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি থানার ওসিকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন দ্রুত নাগরিক কমিটি বা সিটিজেন ফোরামের কার্যক্রম চালু করেন। থানাগুলো এ কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। তারা দল-মত নির্বিশেষে নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করছেন। স্থানীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, খেলোয়াড়, চিকিৎসক, শিক্ষক ও ধর্মীয় নেতাদের কমিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।

কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা এখন পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কারণ, স্বেচ্ছাচারিতা ও পক্ষপাতমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন অনেক কমিউনিটিপ্রধান। বিশেষ করে দলীয় পরিচয়ে যারা এখানে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ কারণে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা নতুন করে আর সচল করা হয়নি ডিএমপির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)
থানা পুলিশের প্রত্যাশা, জনগণ আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করলে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে।

যেভাবে শুরু কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার
পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা শুরু হয় ১৯৯৪ সালে থেকে। ওই সময়ে তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কে এম‍ শহীদুল হক, যিনি পরবর্তীতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হন; মূলত তিনিই এ ব্যবস্থা চালু করেন। ১৯৯৪ সালে ময়মনসিংহে হঠাৎ করে বেড়ে যায় চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। ওই পরিস্থিতিতে তৎকালীন এসপি আহমাদুল হক গঠন করেন ‘টাউন ডিফেন্স পার্টি’। এটি মূলত কমিউনিটি পুলিশিংয়ের একটি অংশ। ঠিক সে সময়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কে এম শহীদুল হক কমিউনিটি পুলিশিং নিয়ে কাজ শুরু করেন, যা পরবর্তীতে ডিএমপিসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

‘মুজিবীয় শুভেচ্ছা’ জানানো সেই ছাত্রদল নেতাকে শোকজ

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫, ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ
‘মুজিবীয় শুভেচ্ছা’ জানানো সেই ছাত্রদল নেতাকে শোকজ

গাজীপুরে বিএনপির দলীয় পথসভায় বক্তব্য দেওয়ার পুরোনো এক ভিডিও সামনে আসার পর শ্রীপুর উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি নাহিদ হাসানকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

শনিবার (২১ জুন) শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জিয়াউল করিম মোড়ল রিফাত গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে।

গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক সরকার মো. রাকিব হোসেন স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়, ‘শ্রীপুর উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের দায়িত্বশীল পদে থেকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আপনার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. সোহাগ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবাল জনির উপস্থিতিতে জেলা কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।’

জানা যায়, শ্রীপুরের প্রহলাদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়েছিল ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ। ওই কমিটিতে নাহিদ হোসেনকে সভাপতি করা হয়।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভাষ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি তারও চার-পাঁচ মাস আগের।

সাত সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহস্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. এসএম রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে বক্তব্য রাখছেন নাহিদ হোসেন।

তিনি বক্তব্যের এক পর্যায়ে সবার উদ্দেশে বলেন, ‘আমি প্রহলাদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে মুজিবীয় শুভেচ্ছা জানাই।’

সে সময় রফিকুল ইসলাম তার কাছ থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেন।

গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবাল জনি বলেন, ‘এক সময় যখন ছাত্রদলের কোনো নেতাকর্মীকে আন্দোলনে পাওয়া যেত না, তখন নাহিদ হোসেন আমাদের পাশে থেকে রাজনীতি করেছেন।’

এ বিষয়ে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি নাহিদ হাসানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ভুল করে ভারতে ঢুকে গেলেন বিজিবি সদস্য, পতাকা বৈঠকে ফেরত

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫, ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ
ভুল করে ভারতে ঢুকে গেলেন বিজিবি সদস্য, পতাকা বৈঠকে ফেরত

চাঁপাইনবাবগঞ্জে চোরাকারবারিদের তাড়া করতে গিয়ে দিকভ্রান্ত হয়ে ভারতে ঢোকে পড়া এক বিজিবি সদস্যকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ। গত শনিবার (২১ জুন) ভোর ৫টার দিকে ভারতে ঢুকে পড়ার পর রাত পৌনে ১০টার দিকে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাকে ফেরত আনে বিজিবি।

এর আগে জেলার সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জহূরপুরটেক সীমান্তে বাংলাদেশে মহিষ চোরাচালানের সময় ২ মহিষ আটক করে বিজিবি। পরে আরো ২টি মহিষ ধরতে চোরাকারবারিদের তাড়া করতে গিয়ে ওই বিজিবি সদস্য দলছুট হয়ে ভুলক্রমে কাঁটাতারের বেড়াবিহীন সীমান্তের ওপারে ভারতে ঢুকে পড়েন।

বিজিবির ওই সদস্য হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (৫৩ বিজিবি) জহূরপুরটেক সীমান্ত ফাঁড়িতে (বিওপি) কর্মরত ল্যান্স নায়েক মতিউর রহমান।

স্থানীয় সূত্র ও বিজিবি জানায়, শনিবার ভোরে মেইন আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার ১৯/৭ এসের কাছ দিয়ে নিজ টহলদলের সঙ্গে চোরাকারবারি তাড়া করতে গিয়ে দলছুট হয়ে ভুলক্রমে কাঁটাতারের বেড়াবিহীন সীমান্তের ওপারে ভারতে ঢুকে পড়েন ল্যান্স নায়েক মতিউর। ইউনিফর্ম পরিহিত সশস্ত্র অবস্থায় ওপারে কাশবন এবং ঝোপজঙ্গলে হারিয়ে যান তিনি। সকাল ৭টার দিকে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে বিজিবির শেষ যোগাযোগ হয়।

সীমান্ত বিধি অনুযায়ী বিজিবি কর্মকর্তারা তাকে নির্দেশনা দেন কাছের বিএসএফ ক্যাম্পে যোগাযোগ করতে। এরপরই মতিউরের ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যায়।
এদিকে নির্দেশনা অনুযায়ী মতিউর কাদাপানির মধ্যে সীমান্তের প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের ৭১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের পিরোজপুর ক্যাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিএসএফ তাকে হেফাজতে নেয়।

এর মধ্যেই বিজিবি কর্মকর্তারা বিএসএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। দিনব্যাপী যোগাযোগের পর রাত পৌনে ১০টায় সীমান্ত পিলার ১৯/১ এসের কাছে বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাকে অক্ষত অবস্থায় ফেরত আনে বিজিবি।

৫৩ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফাহাদ মাহমুদ রিংকু বলেন, পতাকা বৈঠকে বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ৭১ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন কমান্ড্যান্ট অশোক কুমার জুবে।

তিনি বলেন, ঘটনার পর বিজিবি রাজশাহী সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ইমরান ইবনে এ রউফ সীমান্ত পরিদর্শন করেন।

অধিনায়ক আরো বলেন, নিছক দুর্ঘটনাক্রমে এ ঘটনার পর বিএসএফ ওই বিজিবি সদস্যকে আরো আগেই দিনের আলোয় ফেরত দিতে পারত। কিন্তু তারা তা করে নি। তারা রাতের অন্ধকারে ফেরত দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন, গত ৪ জুন সকাল ৭টায় ওই একই সীমান্ত দিয়ে মদ্যপ ও সশস্ত্র অবস্থায় গালি দিতে দিতে এক বিএসএফ সদস্য বাংলাদেশের ৩শ গজ ভেতরে লোকালয়ে ঢুকে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে বিজিবি তাকে উদ্ধার করে ওইদিন সকাল সাড়ে ১১টায় ফেরত দেয়। কিন্তু বিজিবি সদস্য ফেরত দিতে বিএসএফ অনেক দেরি করেছে।

১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি: সমন্বয়ক নাহিদের বিরুদ্ধে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫, ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ
১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি: সমন্বয়ক নাহিদের বিরুদ্ধে মামলা

ফেনীর সিভিল সার্জন অফিসে চাকরির জন্য ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির একটি অডিও ফাঁস হওয়ায় সমন্বয়ক নাহিদ ও চাকরিপ্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

শুক্রবার (২০ জুন) রাতে জেলার পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার ইফতেখার হাসান ভূঁইয়া বাদী হয়ে পরশুরাম মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল হাকিম মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। যদিও অভিযুক্ত নাহিদ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দাবি করছেন, অডিওটি তার নয়, এটি এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) দিয়ে তৈরি।

মামলার আসামিরা হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ রাব্বি (২৮)। তিনি পরশুরাম পৌর এলাকার কোলাপাড়া গ্রামের নুরুন্নবীর ছেলে। মামলার অপর আসামি আব্দুল কাদের (৩০) অনন্তপুর গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ডা. মো. ইফতেখার হাসান ভূঁঞা হাসপাতালে অবস্থানকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি অডিও পেয়েছেন। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলা সমন্বয়ক নাহিদ রাব্বি ফেনীর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ‘অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক’ পদে অর্থের বিনিময়ে এক চাকরি প্রার্থীকে নিয়োগ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ১০লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। দুই মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের কথোপকথনে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। এ জন্য নাহিদ রাব্বিকে প্রধান আসামি করে দুজনের বিরুদ্ধে তারা এ মামলাটি করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত নাহিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নাহিদ দাবি করেছেন, ফাঁস হওয়া অডিওটি এআই দিয়ে তৈরি। এমন ঘটনার সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত নন।

তবে অডিওটির কথোপকথনের সত্যতা চাকরিপ্রত্যাশী যুবক আবদুল কাদের নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সমন্বয়ক পরিচয়দানকারী নাহিদ আগে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের আগে তিনি আন্দোলন–সংগ্রামে না থেকেও বিভিন্ন সময় নিজেকে সমন্বয়ক দাবি করে এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। মূলত তার মুখোশ উন্মোচন করতে এমন কৌশল তিনি বেছে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেনী জেলার সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমান ছাত্র প্রতিনিধি মুহাইমিন তাজিম বলেন, ফেনী জেলাসহ ৬ উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো কমিটি নেই। কোথাও কোনো সমন্বয়কও নেই। তবে জেলাসহ প্রতিটি উপজেলায় ছাত্র প্রতিনিধি আছে একাধিক জন। পরশুরামের নাহিদ রাব্বি একজন ছাত্র প্রতিনিধি। রাব্বি একজন ভালো মানের সংগঠক, তিনি এমন কাজ করতে পারেন, তা বিশ্বাস হচ্ছে না।

ফেনী জেলার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ রুবাইয়েত বিন করিম বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষায় কোনো অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই। যারা লেনদেন করতে চাইছেন, তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ও মেধার ভিত্তিতে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে।

ঘুষ লেনদেনের অডিও ফাঁস হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ঘটনায় ইতোমধ্যে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থাকে জানানো হয়েছে। তারা এ বিষয়ে কাজ করছেন।

ফেনী সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন পদের ওই নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ১১৫টি পদের বিপরীতে ১২ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। শুক্রবার অনুষ্ঠিত ওই পরীক্ষায় প্রতিটি পদের জন্য গড়ে ১০৮ জন লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন।