খুঁজুন
বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২৯ মাঘ, ১৪৩১

কৌশলে ক্রেতাদের করা হচ্ছে জিম্মি

কৃত্রিম সংকটে বাজারে মিলছে না সয়াবিন তেল, বেজায় ক্ষুব্ধ ভোক্তারা

মোঃ হাসানুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১০:০৪ অপরাহ্ণ
কৃত্রিম সংকটে বাজারে মিলছে না সয়াবিন তেল, বেজায় ক্ষুব্ধ ভোক্তারা

বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেল সয়াবিন, পাম অয়েলের বাজার স্থিতিশীল। দেশেও যে পরিমাণে সয়াবিন, পাম অয়েল আমদানির পাশাপাশি পাইপ লাইনে রয়েছে তাতে আসন্ন রমজানে সংকট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু রমজানের এক মাস আগেই ব্যবসায়ীরা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর সেই পুরোনো পথে হাঁটছেন। এমনকি বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ভোক্তাদের জিম্মি করে চলছে ভয়ানক কারসাজি।

বাজার অনুসন্ধান বলছে- বাজারে প্রতি সপ্তাহেই সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফলে ছুটির দিন শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজার ও পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে তেল না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভোক্তারা। অনেকেই সয়াবিনের বিপরীতে বাধ্য হয়ে সরিষার তেল নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বিক্রির জন্য তেল না পেয়ে বিক্রেতারাও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। গত দুই মাস ধরে চাহিদার তুলনায় কম পেলেও সপ্তাহ ধরে কোম্পানিগুলোর ৮-১০টি পণ্য নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। তা না হলে তেল দেওয়া হচ্ছে না। এতে এক প্রকার সয়াবিন তেলশূন্য হয়ে পড়ছে খুচরা বাজার। এতে রীতিমতো বিড়ম্বনায় পড়ছেন ভোক্তা।

এদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে গুটিকয়েক দোকানে তেল পাওয়া গেলেও সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে না। এমনকি বোতলজাত তেলের গায়ের মূল্য মুছে বিক্রি করা হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন- লিটারপ্রতি সয়াবিন তেলের মূল্য গিয়ে ঠেকেছে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারী) রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ও পাড়া-মহল্লার মুদি দোকান ঘুরে ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। শুধু তাই নয়, খুচরা বাজারে চাহিদামতো বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে এই অবস্থা। খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, তারা চাহিদামতো বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ পাচ্ছেন না। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, প্রতি বছরই মিল মালিকেরা রমজানের আগে তেলের দাম বাড়ানোর জন্য একই কাজ করে। পাইকারি, ডিলার ও খুচরাবাজারে সয়াবিনের সরবরাহ কমিয়ে এক ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। পরে দাম বাড়িয়ে দেয়। এবারও একই পথে তারা হাঁটছেন বলে খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশে ভোজ্য তেলের দর স্থিতিশীল রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার ভ্যাট ছাড় দিয়েছে। কিন্তু এখন মিলাররা তেলের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। গত জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে সয়াবিন তেলের দাম বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়েছে ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গত ২৩ জানুয়ারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশীরউদ্দিনের বৈঠক হয়। তবে সে বৈঠকে সয়াবিন, পাম অয়েলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের মতামত চেয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই প্রতিবেদন এখনো জমা পড়েনি। ভোজ্য তেল পরিশোধন কারখানার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানিয়েছে, ২০১১ সালে সরকার একটি নীতিমালা করে। নীতিমালা অনুযায়ী, সয়াবিন তেলের দাম সময়ে সময়ে বৈশ্বিক বাজার ও অভ্যন্তরীণ খরচের সঙ্গে সমন্বয় করার কথা। বর্তমানে ডলার ও অন্যান্য খরচ বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় আমরা সরকারের নীতিমালা মেনেই দর সমন্বয় করতে বলেছি।

বলা প্রয়োজন, মাত্র দুই মাস আগে গত ৯ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মিল মালিকদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সয়াবিন, পাম অয়েলের দাম সমন্বয় করেছে। তখন বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি আট টাকা বাড়িয়ে ১৬৭ থেকে ১৭৫ টাকা, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়। এছাড়া, বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৮১৮ থেকে বাড়িয়ে ৮৬০ টাকা করা হয়। কিন্তু এখন আবার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান বলেছেন, আসন্ন রমজানে তেলের দাম বাড়বে না।

এদিকে প্রস্তাব অনুযায়ী দর সমন্বয়ের আগেই বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে গেছে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বাজারে চাহিদা অনুযায়ী সয়াবিন তেলের সরবরাহ নেই। ফলে পণ্যটির দাম বাড়তি। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) তাদের প্রতিবেদনে সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার বিষয়টি জানিয়েছে।

কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, গুলশান সহ কিছু বাজারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুচরা বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেছেন, তারা চাহিদামতো সয়াবিন তেলের সরবরাহ পাচ্ছেন না। কোম্পানিগুলো ঠিকমতো তেল দিচ্ছে না। তারা বলেন, ডিলারদের পাঁচ কার্টন তেল অর্ডার দিলে এক থেকে দুই কার্টন পাওয়া যায়। ফলে বাজারে এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। আর বাধ্য হয়েই তারা ক্রেতাদের সাথে দরকষাকষি করছেন।

উল্লেখ্য, দেশে প্রতি বছর ভোজ্য তেলের চাহিদা ২৩ থেকে ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে আড়াই লাখ টন তেল দেশে উত্পাদিত হয়। বাকি ২০ থেকে ২১ লাখ টন ভোজ্য তেল আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে রমজানে চাহিদা ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টন।

তথ্য বলছে, আসন্ন রমজানে সরকার তেলের দাম বাড়াতে চাইছে না। সেজন্য রোজা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভ্যাট ছাড় অব্যাহত রেখেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খান বলেন, দাম বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেই। বর্তমান দরেই সয়াবিন বিক্রি করতে হবে। কিন্তু বাজার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত।

সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশীরউদ্দিন বলেছেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের যে দাম দেখছি, তাতে দেশে দাম বাড়ার কোনো কারণ দেখি না। একই অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, দেশে নিত্যপণ্যের কয়েকটি বৃহৎ কোম্পানি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। এ অবস্থায় আমাদের সহযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থা থেকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থায় যেতে হবে।

কুরুচির বই বিক্রি ও জয় বাংলা স্লোগান

মুচলেকায় ছাড়া পেলেন বিতর্কিত প্রকাশক শতাব্দী ভব

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:৫৭ অপরাহ্ণ
মুচলেকায় ছাড়া পেলেন বিতর্কিত প্রকাশক শতাব্দী ভব

অমর একুশে বইমেলায় কুরুচির মহিলা খ্যাত বিতর্কিত তসলিমা নাসরিনের বই রাখাকে কেন্দ্র করে ‘সব্যসাচী’ স্টলে হামলা ও হট্টগোলকে কেন্দ্র করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার বাংলা একাডেমির সচিব ও বইমেলা টাস্কফোর্স কমিটির প্রধান সেলিম রেজা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সোমবারের ঘটনায় ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। তারপর আমরা একটি সিদ্ধান্তে আসব।

এদিকে ‘সব্যসাচী’ প্রকাশনার স্টলে বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বই বিক্রি ও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্টল ভাঙচুরের পর পুলিশ প্রকাশক শতাব্দী ভবকে আটক করে। সোমবার সন্ধ্যায় আটকের পর রাত ১২টার দিকে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। হামলার পর থেকে বন্ধ রয়েছে স্টলটি।

মূলত অমর একুশে বইমেলায় সব্যসাচী স্টলে লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বই রাখা নিয়ে কয়েক দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তেজনা ছড়াচ্ছিল। এরই মধ্যে সোমবার সন্ধ্যায় ‘তৌহিদি জনতা’র নামে একদল লোক স্টলটিতে হামলা চালায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম গণমাধ্যমে বলেন, তসলিমা নাসরিনের বই রাখায় বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলায় সব্যসাচী প্রকাশনার স্টলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সোমবার সন্ধ্যায় তৌহিদি জনতার নামে একদল লোক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে শতাব্দী ভবকে বইমেলায় পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে নিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে আটজন এবং শতাব্দী ভবকে থানায় নেওয়া হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। পরে পৃথক মুচলেকা নিয়ে সোমবার রাতেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন একদম স্বাভাবিক বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, শতাব্দী ভবর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে বাংলা একাডেমি। এটা তাদের বিষয়। স্টল বন্ধ থাকার কোনো নির্দেশনা আমরা দেইনি। পরে লেখক, প্রকাশক সমিতিসহ সংশ্লিষ্টরা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে তিনি জানান।

এদিকে হামলার পর সব্যসাচীর প্রকাশক শতাব্দী ভবর স্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, হুমকির বিষয়টি ২ দিন আগেই পুলিশকে জানিয়েছিলেন। তার এমন দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিসি মাসুদ আলম বলেন, এ বিষয়টি আমরা জানি না। তার স্ত্রীর সঙ্গে আমার কখনো কথা হয়নি। আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। আমরা যখন জেনেছি তখন এটা নিয়ে কাজ করেছি।

জানা যায়, চলতি বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে সব্যসাচী প্রকাশনা সংস্থার স্টলে (১২৮ নম্বর স্টল) রাখা হয়েছিল তসলিমা নাসরিনের বিতর্কিত বই ‘চুম্বন’। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েক দিন ধরেই নানা বিতর্ক চলছিল। সোমবার সন্ধ্যায় একদল লোক স্টলটিতে গিয়ে প্রকাশককে ঘিরে ধরে স্লোগান দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ প্রকাশক শতাব্দী ভবকে বইমেলায় তাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে নিয়ে যায়। পরে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষও ঘিরে রাখেন উত্তেজিত জনতা। তারা দাবি করেন, শতাব্দী ভব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটাক্ষ করে ইসলামপন্থিদের ‘জঙ্গি’ বলে গালাগাল করেছেন এবং মেলায় এসে ‘জয় বাংলা/জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে সাধারণ-জনতার ওপর হামলা করেছেন।

জানা যায়, শতাব্দী ভব হামলার শঙ্কার কথা আগেই বলেছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভিডিও বার্তাও দিয়েছিলেন। তার স্ত্রী সানজানা গণমাধ্যমকে বলেন, তসলিমা নাসরিনের বই রাখার কারণে ২ দিন ধরে কিছু লোক সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে আমাদের স্টল গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিল। এই বিষয়টি পুলিশ এবং বইমেলা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা বই সরিয়ে নিতে বললে, বই সরানো হয়েছে। তারপরও স্টলে হামলা করেছে।

এমন হুমকির বিষয়ে খোদ লেখিকা তসলিমা নাসরিনও সোমবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

একুশে বইমেলায় স্টলে হামলার ঘটনায় সোমবার রাতেই এক বিবৃতিতে কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, এ হামলা বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকার ও দেশের আইনের প্রতি চরম অবমাননার প্রতিফলন। এমন সহিংসতা এ মহান সাংস্কৃতিক আয়োজনের মুক্তচিন্তার চেতনাকে লঙ্ঘন করে। যা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারি মাতৃভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী ভাষা শহিদদের স্মরণে অনুষ্ঠিত হয়। একুশে বইমেলা আমাদের লেখক ও পাঠকদের প্রতিদিনের মিলনমেলা।

এদিকে শোভা প্রকাশনী (প্যাভিলিয়ন-৩) থেকে মেলায় এসেছে আবদুল হাই শিকদারের বই ‘জ্যোতির্ময় জিয়া এবং কালো মেঘের দল’।

একাদশ দিনে নতুন বই ৯১টি:
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগ জানায়, মঙ্গলবার মেলার একাদশ দিনে নতুন বই এসেছে ৯১টি। এ পর্যন্ত মেলায় মোট নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ৮২৮টি। এর মধ্যে গল্পের বই ১০৫টি, উপন্যাস ১৫৪, প্রবন্ধ ৩৫, কবিতা ২৫৩, গবেষণা ১৬, ছড়া ১১, শিশুতোষ ১৭, জীবনী ২৬, রচনাবলি ৬, মুক্তিযুদ্ধ ৭, নাটকের বই ১০টি।

এছাড়া বিজ্ঞান ১৮, ভ্রমণ ১০, ইতিহাস ২৪, রাজনীতি ১২, চিকিৎসাশাস্ত্র ২, ভাষার বই ৫, গণঅভ্যুত্থান ৫, ধর্মীয় ১৫, অনুবাদ ৬, অভিধান ২, সায়েন্স ফিকশন ৬ ও অন্যান্য ৮০টি।

স্টলে তসলিমা নাসরিনের বই রাখা নিয়ে হট্টগোল

মহানগর প্রতিনিধি, ঢাকা
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:৫৬ অপরাহ্ণ
স্টলে তসলিমা নাসরিনের বই রাখা নিয়ে হট্টগোল

অমর একুশে বইমেলায় সোমবার সব্যসাচী নামে একটি স্টলে নির্বাসিত বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বই রাখাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। এ সময় প্রকাশনীর স্টলটিতে একদল যুবক হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অবশ্য পরে মেলার ১২৮ নম্বর স্টলটি বন্ধ করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিন সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ। স্টলটির সামনে শত শত যুবক ও উৎসুক জনতা জড়ো হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সব্যসাচী প্রকাশনীর স্টলে কেন তসলিমার বই রাখা হয়েছে-একদল যুবক গিয়ে এর কারণ জানতে চান। এ সময় স্টলের মালিক তাদের কোনো কথা না বলে উলটো ‘জয় বাংলা মুক্তিপাক, মৌলবাদ নিপাত যাক’ স্লোগান দেন। সেই সঙ্গে কয়েকজনকে মারধরও করা হয়। পরে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে অন্য যুবকরা সেই স্টলে গিয়ে হামলা চালায়।

এ ঘটনার পর ঘটনাস্থলে ছুটে যান রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম। তিনি উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলেন, এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। তাকে আমরা থানায় নিয়ে যাব। আমরা সবাই চাইব, এ ঘটনায় যেন কোনো কালিমালেপন না হয়। একুশের বইমেলা আমাদের সবার প্রাণের মেলা।

এ সময় সেখানে থাকা যুবকরা বলেন, আমাদের পুলিশের কাছে দাবি ছিল, যে ব্যক্তি হামলা করেছে, তাকে আটক করা। তারা তা করেছেন। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

আদানিকে বিদ্যুতের পুরোটাই দিতে বলেছে বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:৫১ অপরাহ্ণ
আদানিকে বিদ্যুতের পুরোটাই দিতে বলেছে বাংলাদেশ

ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডায় অবস্থিত আদানি পাওয়ারের উৎপাদন সক্ষমতা ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। এর পুরোটা বাংলাদেশে সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না। গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ভারতীয় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আদানি গ্রুপ। আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুম সামনে রেখে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) এক শীর্ষ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বার্তাসংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশ আদানি পাওয়ারকে ভারতে তার ১৬শ’ মেগাওয়াট প্ল্যান্ট থেকে সরবরাহ সম্পূর্ণরূপে পুনরায় শুরু করতে বলেছে। শীতের সময়ে কম চাহিদা এবং অর্থপ্রদান নিয়ে বিরোধের কারণে সরবরাহের পাশাপাশি বিক্রিও কমে যাওয়ার তিন মাসেরও বেশি সময় পরে বাংলাদেশ এ কথা জানাল।

২০১৭ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশের সঙ্গে ২৫ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল আদানি। ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে অবস্থিত সংস্থাটি তাদের ২ বিলিয়ন ডলারের প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিটের প্ল্যান্টটির প্রতিটি থেকেই একচেটিয়াভাবে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করে তারা।

রয়টার্স বলছে, অর্থপ্রদানে বিলম্বের কারণে ভারতীয় এই কোম্পানিটি গত বছরের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশে সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনে। এর ফলে গত ১ নভেম্বর তাদের একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে প্ল্যান্টটি প্রায় ৪২ শতাংশ সক্ষমতায় কাজ করছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড রয়টার্সকে জানায়, তারা আদানির কোম্পানিকে মাসে ৮৫ মিলিয়ন বা ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার করে পরিশোধ করছে। এখন চাহিদা বাড়ায় দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করতে বলেছে।

বিপিডিবি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রয়টার্সকে বলেন, আমাদের প্রয়োজন অনুসারে, তারা দ্বিতীয় ইউনিটটি সিঙ্ক্রোনাইজ করার পরিকল্পনা করেছে, কিন্তু উচ্চ কম্পনের কারণে তা হয়নি। কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে সোমবার থেকে ইউনিটটি পুনরায় চালু করা যায়নি।

রেজাউল করিম আরও বলেন, বর্তমানে আমরা মাসে ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিচ্ছি। আমরা আরও বেশি অর্থ পরিশোধের চেষ্টা করছি এবং আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, বকেয়া কমিয়ে আনা। ফলে এখন আদানির সঙ্গে কোনো বড় সমস্যা নেই।

আদানি পাওয়ারের মুখপাত্র এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের আহ্বানে তাৎক্ষণিক সাড়া দেননি। যদিও গত ডিসেম্বরে আদানির একটি সূত্র জানিয়েছিল, বিপিডিবির কাছে তাদের প্রায় ৯০০ মিলিয়ন বা ৯০ কোটি ডলার বাকি আছে। ওই সময় বিপিডিবি চেয়ারম্যান বলেছিলেন, এই বকেয়ার পরিমাণ ৬৫ কোটি ডলার।

বিদ্যুতের দাম নির্ধারণে আদানির সঙ্গে বিরোধ আছে বাংলাদেশের। রয়টার্সের হিসাবে, অন্যান্য ভারতীয় বিদ্যুতের চেয়ে প্রায় ৫৫ শতাংশ বেশি অর্থে বাংলাদেশের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র।

এদিকে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের একটি আদালত। ওই কমিটির প্রতিবেদন এ মাসে সামনে আসতে পারে। তখন আদানির সঙ্গে চুক্তিটি নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হতে পারে বলে জানায় রয়টার্স।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত বছরের আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলনের মুখে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পালিয়ে যান হাসিনা। এরপর গত সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনার সময়ে স্বাক্ষরিত প্রধান জ্বালানি চুক্তিগুলো পরীক্ষা করার জন্য বিশেষজ্ঞদের প্যানেল নিয়োগ করে অন্তর্বর্তী সরকার।