বেলকুচির তামাই উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের পুনর্মিলন অনুষ্ঠিত

কেউ ক্যামেরায় বন্দি করছেন মুহূর্ত, কেউ হাঁটছেন স্মৃতির অলিগলি দিয়ে ক্লাসরুমের পুরোনো বেঞ্চের পাশে। কারও চোখে খেলে যাচ্ছে শৈশবের রঙিন দিনগুলোর ছায়া যেখানে বইয়ের পাতায় ছিল স্বপ্ন, মাঠে ছিল ছুটোছুটি আর প্রতিদিনের স্কুলজীবনে ছিল একেকটা গল্প।
আবার কেউ এসেছেন লুঙ্গি পরে গ্রাম্য ঐতিহ্য ও পরিচয়ের প্রতীক হয়ে। যেন প্রমাণ দিচ্ছেন, শহরের চাকচিক্য নয়, শিকড়ই আসল ঠিকানা।
“শিকড় থেকে দিচ্ছে ডাক, আয় রে ছুটে…” এই আবেগী স্লোগানকে কেন্দ্র করে রবিবার সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী তামাই বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক হৃদয়স্পর্শী ঈদ পুনর্মিলনী।
১৯৬৬ থেকে ২০২৫ প্রায় ছয় দশকের পথচলার সঙ্গী প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা যেন আবারও সময়ের দেয়াল ভেঙে ফিরে এসেছিলেন সেই চেনা উঠানে। প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন প্রায় ১২০০ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থী। সেই দিনের স্কুলমাঠ যেন রূপ নেয় স্মৃতি, আনন্দ আর ভালোবাসার এক মহোৎসবে।
সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সূচনা হয় দিনের আনুষ্ঠানিকতার। এরপর বের হয় এক বর্ণাঢ্য র্যালি যা তামাইয়ের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার বিদ্যালয়ে ফিরে আসে। মুখরিত হয়ে ওঠে পথঘাট, গর্বিত মুখে হাঁটেন প্রাক্তনরা, কাঁধে স্মৃতির ঝুলি আর হৃদয়ে ভালোবাসার ইতিহাস।
ঈদ পুনর্মিলনী উদযাপন কমিটির সভাপতি বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির রাজশাহী বিভাগীয় সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম বলেন,
এই মিলনমেলা শুধু ঈদের নয়, এটা আমাদের শিকড়ের সঙ্গে নতুন করে বন্ধন গড়ার সুযোগ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকারের যুগ্ম সচিব আব্দুল খায়ের মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ খাঁন লিটন।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও যুগ্ম সচিব মো. গোলাম আজম, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব আব্দুস সালাম, বেলকুচি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি), প্রতীক মন্ডল, আলহাজ্ব ফজলার রহমান তালুকদার, আলহাজ্ব শামসুল হক খান, আলহাজ্ব আব্দুল্লাহ আল মামুন, আব্দুল আজিজ সরকার, হাফেজ আবু শাহীন মল্লিক সহ আরও অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান শিক্ষকবৃন্দ।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা জানান, এই স্কুলেই জীবনের প্রথম মঞ্চে উঠি, কলম ধরি। আজ যখন নিজের সন্তানকে নিয়ে এখানে এসেছি, বুঝতে পারছি এই বিদ্যালয়ই আমাকে গড়ে দিয়েছে।
অনেকে এসেছেন ঢাকা থেকে, কেউ আবার বিদেশ থেকে ছুটি নিয়ে। ঈদ-পূর্ব এই সময়টিকে কেন্দ্র করেই তাঁরা ফিরে এসেছেন গ্রামের বাড়িতে নিজ নিজ শিকড়ে।
এই মিলনমেলা ছিল শুধু দেখা হওয়ার উপলক্ষ নয়, বরং তা ছিল স্মৃতিকে ছুঁয়ে দেখা, শিকড়কে নতুন করে চেনা। প্রাক্তনরা প্রতিজ্ঞা করেছেন এই বন্ধন শুধু ঈদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, চলবে সারা বছরজুড়েই।
আপনার মতামত লিখুন