‘আমরা আন্দোলন করেছি গণতন্ত্র ও সংসদ নির্বাচনের জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য নয়’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, যারা আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাচ্ছেন, তাদের এই উদ্দেশ্য ষড়যন্ত্রমূলক। গ্রামে গঞ্জে অনেকের পায়ের তলার মাটি নেই, স্থানীয় সরকার নির্বাচন করে তারা পায়ের তলার মাটি করতে চাচ্ছে। আমরা আন্দোলন লড়াই করেছি গণতন্ত্র ও সংসদ নির্বাচনের জন্য। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য লড়াই করিনি। ঘোড়ার আগে গাড়িতে উঠতে হয় না।
তিনি বলেন, বিএনপির জনপ্রিয়তা দেখে কিছু দল বা মানুষ হিংসা করে বিএনপিকে দুর্নাম করার চেষ্টা করছে। বিএনপি ভারতেই তাবেদারী করে না। বিএনপি নির্দোষ দল না, লক্ষ্য লক্ষ্য নেতাকর্মীকে মধ্যে একজন খারাপ হতে পারে। কিন্তু তাদের ছাড় দেয়া হবে না। আপনারা আমাদের তথ্য দেন, যদি কারো বিরুদ্ধে প্রমাণ দিতে পারেন তাহলে আমি মির্জা আব্বাস কথা দিচ্ছি সে বিএনপিতে থাকতে পারবে না।
২৫ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) নগরীর ডন চেম্বার মোড়ে জেলা বিএনপির জণসভায় যোগ দিয়ে এ কথা বলেন মির্জা আব্বাস।
মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামীলীগের সময় আমি এই নারায়ণগঞ্জের মিটিং করতে এসেছিলাম। আমার নেতাকর্মীরা অনেক ভয়ে হলেও নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে বসার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু আজ কোনো ভয় ছাড়াই এই লাখো মানুষের মাঝে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছি। প্রথমে আমাদের নিজেদের মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে পরে জাতির মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে। ৭১ সালে আমরা অনেক কষ্ট করে স্বাধীন করেছি। দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে কিছু নাই, স্বাধীন হয়েছি ৭১ এ। আমরা বাংলাদেশকে পরপর ২ বার স্বৈরাচার মুক্ত করেছি। প্রথমে এরশাদ পরে শেখ হাসিনাকে পতন করিয়েছি। কেউ ২য় স্বাধীনতা বলবেন না। এতে স্বাধীনতাকে ও সেই শহীদদের ছোট করা হয়, আপনারা স্বৈরাচারের পতন বইলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, সরকার পতনের আগে ৩ আগস্ট শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের সাথে সভা করেছিলো। সেখানে অনেকেই বক্তব্য বলেছে, শেখ হাসিনার মরলেও নাকি তার সাথে আছে। অনেকে আবার বলেছে আমরা আপনার সাথে থাকতে চাই। সেই বক্তব্য দেওয়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট এখনো ভাঙ্গা হয়নি। তাদের কেউকে গ্রেফতার করা হয়নি। যতদিন আপনারা সেই সবার বক্তব্য শুনে, তাদের সিন্ডিকেট না ভাঙ্গবেন তাদের গ্রেফতার না করেছেন ততদিন এই দ্রব্যমূল্য কমবে না। এই নারায়ণগঞ্জে অনেক কুলাঙ্গার আছে, যারা এখন ঘরে বসে আছে। আর ভারত থেকে নির্দেশ আসলে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য কাজ করে। ওরা বলে নির্বাচনের কথা যারা বলে তারা নাকি জাতির শত্রু। শেখ হাসিনা ১৫ বছর থেকেছিল, আপনারাও থাকেন, দেখেন পারেন কিনা। মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে চায়।
জণসভায় তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে যারা মিথ্যা মামলা এখনও জেলে পচে মরছে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হোক। আওয়ামী লীগ সরকার থাকতে তাদের কারণেই পুলিশ এদেরকে ছাড়তে পারেনি। কিন্তু এ সরকার থাকা অবস্থায় কেন তাদের ছাড়া হচ্ছে না তা আমার জানা নেই। আমি মনে করি তাদেরকে বিনা শর্তে মুক্তি দেওয়া হোক। এদেশের মানুষের ঐক্য কখনও কেউ ভাঙতে পারবেন না। মানুষ শান্তি চায়, নিরাপদে বাঁচতে চায়। কিন্তু যারা এই শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না তাদের জনগণ ছেড়ে দেবে না। এই সরকারের কাছে আমাদের দাবি ছিলো দ্রব্যমূল্য কমানোর ও সুষ্টু নির্বাচন দেওয়া। এই সরকার আসার সময় আমরাই সমর্থন করেছিলাম। আমরা বলেছি এ সরকারকে সফল করতে হবে, যদি এ সরকার ব্যর্থ হয় তাহলে দেশের জনগণ ব্যর্থ হয়ে যাবে। কিন্তু যদি আজীবন ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র হয় তাহলে সেই ষড়যন্ত্র আমরা রুখে দিবো। অনেকেই বলে যারা নির্বাচন চায় তারা দেশের ভালো চায় না, যারা এগুলো বলেছে তারা এই ১৭ বছর কই ছিল ? আমরা নিজেদের জন্য নির্বাচন চাই না। অনেকেই ধরে নিয়েছে নির্বাচন হলেও বিএমপি ক্ষমতায় আসবে। তারা ধরে নিয়েছে কারণ তারা বুঝেছে এই দেশে বিএনপিকে মানুষ চায়।
সভায় নারায়ণগঞ্জ জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মাসকুল ইসলাম রাজীবের সঞ্চালনায় ও জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহবায়ক শরীফ আহমেদ টুটুল, ১ম যুগ্ম আহবায়ক মুস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু, সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান সদস্য সচিব আবুল ইউসুফ খান টিপু জেলা যুবদলের আহবায়ক সাদিকুর রহমান সাদেক সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি সহ জেলার বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এসময় জেলার বিভিন্ন উপজেলা, থানা, নগর-মহানগর, ওর্য়াডের নেতা কর্মীরা দলে দলে মিছিল নিয়ে সমাবেশ সফল করার উদ্দেশ্যে যোগদান করেন।
আপনার মতামত লিখুন